অশোকানন্দ রায়বর্ধন
ত্রিপুরায় প্রচলিত বাংলাভাষার মধ্যে সম্প্রতি একটা নিজস্বতা তৈরি হচ্ছে । এখানকার বাংলাভাষাটাকে জানতে হলে এই অঞ্চলের ভূগোল ও ইতিহাসকে একটু জানতে হবে । বর্তমান যে ত্রিপুরা তা একসময়ের রাজন্য ত্রিপুরা বা পার্বত্য ত্রিপুরা নামে পরিচিত ছিল । ১৯৪৮ সালের ১৫ অক্টোবর ত্রিপুরার রাজ্য ভারতভূক্ত হয় । রাজন্য আমলে ত্রিপুরার সন্নিহিত পূর্ববঙ্গের কুমিল্লা, নোয়াখালি ও শ্রীহট্টে কিয়দংশ ছিল ত্রিপুরার রাজাদের জমিদারী যা চাকলা রোশনাবাদ বা জিলা ত্রিপুরা নামে খ্যাত । ভারতভাগের পর চাকলা রোশনাবাদের মানুষ তাদের রাজার তালুক ত্রিপুরারাজ্যে আশ্রয় নেন । ফলে ত্রিপুরারাজ্যের বিভিন্ন অংশে তৎসীমান্তবর্তী পূর্ববঙ্গ বা বাংলাদেশের মানুষের ভাষাটাই বেশি প্রচলিত । ফলে ত্রিপুরার উত্তরাংশে সিলেটি প্রভাব রয়েছে । আগরতলা ও তৎসন্নিহিত অঞ্চলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রভাব, উদয়পুর, অমরপুর, সোনামুড়া কুমিলা ও কিয়দংশ নোয়াখালি প্রভাবিত । বিলোনিয়া, শান্তিরবাজার নোয়াখালি, সাব্রুম নোয়াখালি ও চট্টগ্রাম প্রভাবিত । মোটামুটি এরকম হলেও রিহ্যাবিলিটেশনের কারণে কোথাও কোথাও এই সূত্রটি মেলে না । রিফিউজি পুনর্বাসনের কারণে কুমারঘাটে 'চিটাগাং বস্তি' আছে । আবার দক্ষিণের সাতচাঁদে তিতাস পারের মানুষ আছেন । এছাড়া সামাজিক সম্পর্কজনিত কারণে এক অঞ্চলের ভাষাভাষী পরিবারের সঙ্গে অন্য অঞ্চলের মানুষের ভাষা মিশে গেছে । এছাড়া অল্পস্বল্প বাংলাদেশের অন্য জেলার মানুষও রয়েছেন । এককথায় ত্রিপুরা একটা মিনি বাংলাদেশ বলা যায় । আরো কিছু সুক্ষ্ম বিভাজন করা যায়, তবে এই জাতীয় মিশ্রণের ফলে এখানে একটা নতুন ভাষাধারা রূপ নিচ্ছে ভাষাতাত্ত্বিক নিয়মেই ।
No comments:
Post a Comment