ত্রিপুরায় ঈদ উদযাপন : ধর্ম ও লোকসাংস্কৃতিক পরম্পরা
অশোকানন্দ রায়বর্ধন
আদিমযুগে মানুষের উৎসব পালনের সঙ্গে কৃষিজীবনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। ঘরে ফসল ওঠার পরে মানুষের মন আনন্দে ভরে উঠত । পরবর্তীকালে ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক জীবনেও তার প্রতিফলন ঘটে । বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর মানুষ বৎসরের বিভিন্ন সময় ধর্মকেন্দ্রিক বিভিন্ন উৎসব পালন করে থাকেন । ফলে এইসব উৎসবের সঙ্গে আদিম যুগের উৎসবের লৌকিক বিষয়গুলোও যুক্ত হয়ে পড়ে । ধর্মীয় বিধিসম্মত বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে পূর্বতন লৌকিক সাংস্কৃতিক বিষয়গুলোও যুক্ত হয়ে যায় । বিভিন্ন ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে যখন মানুষ তাঁদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো পালন করেন তখন তা হয়ে যায় আচরণের ধর্ম ও আনুষ্ঠানিকতার ধর্ম । এই আচরিত ধর্ম ও অনুষ্ঠানগুলোর মধ্য দিয়ে কে কোন ধর্মের মানুষ তাও বোঝা যায় । আচার অনুষ্ঠান ও বিধিবিধানের মাধ্যমে ধর্মাচরণ করা হলেও তার মধ্যে দুটি ভাব লক্ষ্য করা যায় । একটি জাতীয় ধর্মাচরণ ও অন্যটি সর্বজনীন ধর্মাচরণ । ধর্মের এই সমন্বয়ধর্মিতার কারণে একটি বিশেষ ভূখন্ডে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ তাদের নিজ নিজ ধর্ম পালন করেন । পাশাপাশি যখন অন্যান্য ধর্মীয় মানুষের প্রতিও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে থাকেন তখন তা বিশ্বজনীন রূপ লাভ করে । ধর্মচেতনা শুধুমাত্র মানুষের আচার আচরণের উপর প্রভাব ফেলেনা । মানুষের ভাবনা ও চিন্তার জগৎকেও নিয়ন্ত্রণ করে । এই বিষয়টি ধর্মনির্বিশেষে বাঙালির জনজীবনে ও মননে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে । ধর্মনির্ধারিত আচার-আচরণের পাশাপাশি আজও বাঙালিজীবনে প্রাচীন সর্বপ্রাণবাদ ও জাদুবিশ্বাস ইত্যাদির প্রভাব রয়েছে যা পুরুষানুক্রমে অর্জিত ।
বিশ্বের মুসলমান জনগণের শ্রেষ্ঠ উৎসব ঈদ বছরের দুইসময়ে দুইবার ঈদ পালিত হয় । ঈদ উল ফিতর ও ঈদুল আযহা । ঈদ মানে উৎসব । ঈদ মানে আনন্দ । বিশ্বের অন্যান্য অংশের মুসলমান জনগণের সাথে বাংলাদেশের জনগণ ও ঈদের সময় আনন্দে মেতে ওঠেন । পাশাপাশি বৃহত্তম রাষ্ট্র আমাদের ভারতেও এই উৎসব যথাযথ মর্যাদা ও আনন্দের সঙ্গে পালন করা হয় । ভারতে বিভিন্ন ভাষাভাষী জাতিগোষ্ঠীর বাস । এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে বৃহত্তর অংশের হিন্দু জনগণ যেমন রয়েছেন তেমনি মুসলিম সহ অন্যান্য ধর্মীয় জনগোষ্ঠীও রয়েছেন । তাঁদের প্রত্যেকেই নির্দিষ্ট দিনগুলোতে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে থাকেন । ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম ও ত্রিপুরা বাংলাদেশসন্নিহিত রাজ্য ।বাংলাদেশের মতোই এইসব রাজ্যে কমবেশি বাঙালি জনগণ রয়েছেন । এবং তাদের অনেকেই মুসলমান ধর্মাচরণ করে আসছেন বহুদিন ধরে । ত্রিপুরা রাজ্যের তিনদিকেই বাংলাদেশের সীমান্ত । স্বাধীনতা-পূর্বকালে রাজন্য আমলে এই রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের বৃহত্তর অংশের নিবিড় যোগাযোগ ছিল । তাছাড়া সিলেট, কুমিল্লা ও নোয়াখালী বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ত্রিপুরার রাজার জমিদারী ছিল । ত্রিপুরার জমিদারী অংশের নাম ছিল 'চাকলা রোশনাবাদ' । সেই সূত্র ধরে ত্রিপুরারাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে বাঙালি মুসলমানগণ বসবাস করে আসছেন । সেই সঙ্গে তাঁরা তাঁদের নিজস্ব ধর্মাচরণও করে আসছেন । স্বীয় ধর্মাচরণ পালনের পাশাপাশি তাঁরা প্রতিবেশী বাঙালি হিন্দু ও অন্যান্য উপজাতীয় জনগণের সঙ্গে সম্প্রীতির মেলবন্ধন গড়ে তুলেছেন । দীর্ঘদিন ধরে ত্রিপুরা রাজ্যে সম্প্রীতির বাতাবরণের একটা চিরাচরিত ঐতিহ্য রয়েছে । প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক থাকার ফলে ঈদ উৎসবে এখানে পালিত ধর্মীয় ও লৌকিক আচার অনুষ্ঠানের মধ্যে কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে হলেও আদিম লৌকিক ও প্রাচীন হিন্দু রীতিনীতির ক্ষীণ প্রভাব এখনো রয়ে গেছে । তাছাড়া আমাদের এই উপমহাদেশে মুসলিমদের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, বহিরাগতরা এসে এখানে মুসলমান ধর্ম প্রচার করেছেন । তার আগে এদেশের জনগণ হিন্দুজনগোষ্ঠীরই অংশ ছিলেন । ফলে বংশ-পরম্পরাক্রমে পালন করে আসা লোকায়ত বিশ্বাসজনিত কিছু কিছু হিন্দু রীতিনীতির প্রভাব তো রয়েই গেছে । আদিতে তো আরব এবং সিরিয়ার দামেস্কের জনগোষ্ঠীর আদিবাসীরা ঈদ উৎসবের মতো একধরনের সামাজিক উৎসব পালন করত । সেরকম ত্রিপুরার ঈদ উৎসবেও আদিম সংস্কৃতিচর্চার প্রভাব রয়েছে যা পরবর্তী সময়ে ধর্মপ্রচারকদের প্রভাবে ইসলাম ধর্মীয় উৎসবে রূপ নেয় ।
ত্রিপুরা রাজ্যে ঈদের দিনের পূর্ব থেকে একমাসব্যাপী যে ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্য দিয়ে মুসলমান জনগণ অতিবাহিত করেন তার মধ্যে কিছু কিছু সামাজিক মেলবন্ধনের সূত্র খুঁজে পাওয়া যায় । রোজার দীর্ঘ একমাস সময় ধরে মুসলমানগণ সিয়াম কিয়াম, কুরআন তেলাওয়াত, দান-খয়রাত ইত্যাদি কর্মের মাধ্যমে প্রতিবেশীর সঙ্গে সহনশীল ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তোলেন । এ সময় তাঁরা দরিদ্র মুসলমানদের মধ্যে যেমন সাহায্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন । তেমনি এই সময়ে প্রতিবেশী কোন হিন্দু বা উপজাতীয় মানুষের ঘরে কোন দরিদ্র মুসলমান কোনরকম সাহায্য বা সন্ধ্যায় রোজার শেষে ইফতারের জন্য আহার্য প্রার্থনা করলে প্রতিবেশী অন্য ধর্মাবলম্বী গৃহবধূ কিন্তু আগত প্রার্থীকে তাঁর সাধ্যমত ধান-চাল, সবজি কিংবা মুড়ি,চিড়া, খই ইত্যাদি থালায় সাজিয়ে দিয়ে আপ্যায়ণ করে থাকেন । রোজার মাস এলে গ্রামের ফকির-মিসকিনদের রোজার শেষে ইফতারি সংগ্রহের এই দৃশ্য এখনো প্রায়শই দেখা যায় । এছাড়া রমজান মাস জুড়ে এখানকার নানা সংগঠন সামাজিক সংস্থা ও রাজনৈতিক দল সন্ধ্যায় ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেন । সেখানে ধর্ম-জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই একত্রিত হন এবং ইফতার মাহফিলে অংশগ্রহণের পাশাপাশি পারস্পরিক সৌহার্দ্য পূর্ণ ভাব বিনিময় করেন ।
আমাদের শৈশবের দেখেছি আমাদের সঙ্গে পাঠরতা মুসলিম মেয়েরা ঈদের আগের দিন বিকেলে মেহেন্দি পাতা সংগ্রহ করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ত । গৃহস্থবাড়ির সীমানায় সেকালে মেহেন্দি, নিশিন্দা ইত্যাদি গাছ দিয়ে বেড়া দেওয়া হত । এগুলো যেমন সীমানা নির্দেশক বেড়া ছিল কিংবা গোরু-ছাগলের প্রবেশ প্রতিবন্ধক তেমনি এগুলোর ঔষধি গুণও ছিল । গৃহস্থরা মেহেন্দি গাছের ডালা কেটে ছেঁটে বেড়ার একটা সুন্দর রূপ দিতেন । হিন্দু গৃহস্থের বাড়ির বেড়া হলেও মুসলমান মেয়েরা এখান থেকে মেহেন্দি পাতা সংগ্রহ করত । মেহেন্দিকাঁটায় যাতে বাচ্চা মেয়েগুলোর হাত কেটে ছড়ে না যায় তার জন্য গৃহকর্তা কিংবা বাড়ির মেয়েরা এসে তাদের সাহায্য করতেন । মেহেন্দি সংগ্রহের এই বিষয়টা অনেকটা আমাদের হিন্দুবাড়ির পূজার ফুল তোলার মতো মনে হত । বাঙালি হিন্দুদের চৈত্রসংক্রান্তির আগের দিনের 'ফুলবিশু' অনুষ্ঠান এবং চাকমাদের বিঝুর আগের দিনের 'ফুলবিঝু' অনুষ্ঠানের ব্যাপক মিল পাওয়া যায় । এই দুটি অনুষ্ঠানই আদিম সংস্কৃতিজাত । তারপর সংগ্রহীত পাতা শিলনোড়ায় বাটার ধুম পড়ে যেত । কারণ ঈদের দিন মেয়েরা মেহেন্দির রঙে হাত রাঙাত ও চিত্রাঙ্কন করত । এখন এসব উঠে গেছে । এখন আর কষ্ট করে আগের মত মেহেন্দি সংগ্রহ করে বেটে নিতে হয় না । বাজারে বিভিন্ন নামিদামি কসমেটিক কোম্পানির প্যাকেটজাত মেহেন্দি পাওয়া যায় । এখন হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে মেয়েরা বিবাহ বা অন্য অনুষ্ঠানে হাতে মেহেন্দি ব্যবহার করেন । ঈদ উৎসবের মেহেন্দি আজ সর্বজনীন রূপ পেয়েছে । এই মেহেন্দির ঔষধি গুণ রয়েছে । ত্বকের পরিচর্যার লোকঔষধ মেহেন্দি ব্যবহারের মধ্যে আদিম লৌকিক আচারের একটি ধারা লক্ষ্য করা যায় । এই অঞ্চলের এ হিন্দু বাঙালি ঘরে এখনো চৈত্র সংক্রান্তির দিন ও বিবাহে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে নিশিন্দা হলুদ গিলা ফল ইত্যাদি গায়ে মেখে স্নান করার রেওয়াজ রয়েছে ।
ঈদের দিন সকালে এই রাজ্যের মুসলমান জনগণ অন্যান্য মুসলমানদের মতোই সকালে নামাজ পড়ার আগে চুল-দাড়ি-নখ ইত্যাদি কেটে, দাঁত মেজে গোসল সেরে নেন । তারপর যার যার সাধ্যমতো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নতুন পোশাক পায়জামা-পাঞ্জাবি-টুপি ইত্যাদি পরে, আতর মেখে ঈদগাহে সমবেত নামাজে অংশগ্রহণ করেন । নামাজ শেষে পরস্পর কোলাকুলি করে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন । এদিন পরবর্তী সময়ে অন্য ধর্মাবলম্বী কোন প্রতিবেশী সঙ্গে দেখা হলে বা সাক্ষাতে গিয়ে কোলাকুলি ও শুভেচ্ছা বিনিময়ও করেন । ঈদগাহে নামাজের শেষে মুসলমানগণ চলে যান গোরস্থানে । সেখানে তারা সারিবদ্ধভাবে পশ্চিমমুখী হয়ে মৃত আত্মীয়-পরিজনের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন । পূর্ব পুরুষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের এই ধারা বহু প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রবহমান । আমাদের্ হিন্দুদের মধ্যেও আশ্বিনের মহালয়ার দিন ও চৈত্রমাসে বারুণী তিথিতে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে স্নান ও তর্পন করা হয় । মূলত পূর্বপুরুষদের বিশেষ দিনে স্মরণ করার এই ধারাটি আদিম জনসংস্কৃতি থেকে এসেছে । আদিতে কিভাবে ঈদ উৎসব পালিত হত তার উৎস অনুসন্ধান করা যথেষ্ট গবেষণাসাপেক্ষ । তবুও এইসব অনুষ্ঠানের কিছু কিছু উদাহরণ থেকে এটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে, তারমধ্যে লৌকিক ধর্মের প্রভাব রয়েছে । লৌকিক আচার-অনুষ্ঠানে ধারা এসে মিলিত হয়েছে এখানে । কখনো কখনো শাসকগোষ্ঠীর নির্দেশ অনুসারে কিছু কিছু অনুষ্ঠান যুক্ত ও পরিমার্জিত হয়েছে মাত্র ।
ঈদের দিন ভালোরকম খাওয়া-দাওয়া করার রেওয়াজ এখানকার মুসলমানদের মধ্যেও রয়েছে । এদিন গৃহস্থ ঘরে সেমাই, পায়েস ও নানা রকম পিঠার বিপুল আয়োজন থাকে । সেইসঙ্গে মাছ মাংস মিষ্টি ইত্যাদিও যার যার সাধ্যমতো জোগাড় করেন । অনেকে প্রতিবেশীর ঘরেও সাধ্যমত বিলি করেন যাতে দরিদ্র অংশের মানুষ এই দিনের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হন । প্রতিবেশী হিন্দুদের ও উপজাতীয়দের বাড়িতে পাঠানো হয় 'সিধা' । অর্থাৎ, একটা ডালায় ভর্তি করে এক পরিবারের সারাদিনের আহার্য কাঁচাসামগ্রী, সবজি, মসলা ইত্যাদি দিয়ে আসা হয় সম্প্রীতির নিদর্শন হিসেবে । ঈদের দিনের খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন আসলে আমাদের প্রাচীন কৃষিভিত্তিক সাংস্কৃতিক জীবনধারাকে বয়ে আনে । সারাবছরের পরিশ্রমে সংগৃহীত নিজের ঘরের ফসল ভাগ করে খাওয়ার আনন্দের মধ্যে এক আশ্চর্য উন্মাদনা কাজ করে । এখানকার হিন্দুরাও এদিন পরোক্ষভাবে ঈদ উৎসবে শামিল হন । গৃহস্থ ঘরের পালিত গবাদি পশুর শাবক প্রসবের আগে অনেকেই মানত করেন, পশুটির সুখপ্রসব হলে তার দুধ কিংবা পরিশ্রমের খেতে ভালো ফসল হলে আসন্ন ঈদের দিন নিকটস্থ তাকিয়াতে পিঠা, শিরনি, ফসলের একটা অংশ ও দুধ নিবেদন করবেন । এবং এইদিন তা করেও থাকেন ।
কোথাও কোথাও ঈদ উপলক্ষে গ্রামের মাঠে গ্রামীণ হাডুডু বা কাবাডি, দড়ি টানাটানি,কলসি ভাঙা, কুস্তি-খেলা,ষাঁড়ের লড়াইর পাশাপাশি ফুটবল, ভলিবল, ক্রিকেট ইত্যাদি খেলারও আয়োজন করা হয় । সেই উপলক্ষে সেখানে মেলাও বসে । জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাই এই মেলা ও খেলাধূলা অংশগ্রহণ করেন । মেলা ও খেলাধুলার মাধ্যমে বহু লোকের সমাগম ঘটানো প্রাচীন লোকসাংস্কৃতিক ধারারই উদাহরণ ।
গান ছাড়া বাঙালির কোন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পুর্ণ হয় না । ঈদ উপলক্ষে গৃহস্থবাড়িতে গজল, কাওয়ালী ইত্যাদি গানের জলসা বসে । বর্তমানে বিখ্যাত শিল্পীরা ঈদ উপলক্ষে গান বাঁধেন ও পরিবেশন করেন । স্থানীয় রেডিও ও টিভি চ্যানেলগুলো ঈদ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন । বর্তমান সময়ে ঈদ উপলক্ষে শুভেচ্ছাবার্তা বা ঈদের কার্ড বিনিময় বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে । এছাড়া সাম্প্রতিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এই ছোট্টরাজ্য থেকেও দেশ বিদেশে অবস্থানরত প্রিয়জনদের কাছে ঈদের খুশি আনন্দ আবেগ ভাগ করে নেওয়ার রেওয়াজ তৈরি হয়েছে । এই শুভেচ্ছা বিনিময়ে অন্য ধর্মের মানুষও অংশগ্রহণ করেন ।
এভাবেই ত্রিপুরারাজ্যের মুসলমান জনগণ ধর্মাচরণের মাধ্যমে সংস্কৃতিগত পৃথক সত্তা বহন করে নিজস্ব ধর্মশাস্ত্রীয় রীতি-নীতি, আচার-অনুষ্ঠান মেনে ঈদ উৎসব পালন করলেও তাঁদের কিছু কিছু লোকাচার মূল বাঙালি জনগোষ্ঠীর আদিম লোকধর্ম ও লোকবিশ্বাসের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত । এর ফলে ঈদ উৎসব এখানে সর্বজনীন রূপ লাভ করেছে । সমন্বয়ধর্মীতাই এখানকার ঈদ উৎসবের বিশেষ লক্ষণ । যার মূল ভিত বৃহৎবঙ্গের লৌকিক ধর্ম ও লোকায়ত দর্শন ।