আজ আবার নতুন করে....
অশোকানন্দ রায়বর্ধন
আজ সারাদিন উৎকন্ঠায় ছিলাম । কি জানি কি হয় । ১০৩২৩ শিক্ষকরা আজ বিদ্যালয়ে গেছেন । এ ব্যাপারে তারা আগেই ঘোষণা দিয়েছেন । যেহেতু এই বঞ্চিত শিক্ষকগোষ্ঠীর উপর নানাভাবে দীর্ঘদিন যাবত আক্রমণ চলে আসছিল, আজ না জানি কি ঘটে । কিন্তু না সব উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে আজ শিক্ষক-শিক্ষিকারা পূর্বতন বিদ্যালয়ে গেছেন পুনরায় যোগদানের জন্য । যতটুকু জানা গেছে, দু একটা জায়গায় অতি উৎসাহী ও উটকো উজবুকদের আক্রমণ আর অতি চালাক কিছু প্রধান শিক্ষক বা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের ইচ্ছাকৃত অনুপস্থিতি ছাড়া এইসব শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কোথাও খুব একটা বাধা পেতে হয়নি ।
মধ্যাহ্নের আকাশে নেমে আসা কালো মেঘ তুমুল বর্ষণের পর যখন সরে যায়, তখন চারদিক অনেক বেশি উজ্জ্বল হতে দেখা যায় । দীর্ঘ লড়াই-আন্দোলন করেও যখন দপ্তর বা মন্ত্রিসভাকে টলানো যাচ্ছিল না কিছুতেই, সেই সময়ে খড়কুটো ধরে অথৈ সমুদ্রে বেঁচে থাকার শেষ আশায় শিক্ষক মহাশয়দের তথ্য জানার অধিকারের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট যে উত্তর দিয়েছেন তা জগদ্দল পাথর টাকে মনে হয় কিছুটা নাড়া দিতে পেরেছে । শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পুনরায় কাজে যোগদানের ব্যাপারটায় তাদের ভূমিকা অনেকটা নমনীয় মনে হয়েছে আজ । যারা কাজে যোগ দিয়েছেন, সবাইকে যথাযথ মর্যাদায় সুযোগ করে দিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধানগণ। এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পূর্বনির্দেশ অনুযায়ী অতি দ্রুত তার রিপোর্ট দপ্তরের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন ।
দীর্ঘদিন পরে শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ বিদ্যালয়ে বিদ্যালয়ে কাজে যোগদান করার জন্য আজ মার্জিত ও বর্ণাঢ্য পোশাক পরে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়েছেন । দেখামাত্র শিক্ষার্থীরা দৌড়ে চলে এসেছে তাদের প্রিয় শিক্ষক শিক্ষিকাদের কাছে । সর্বত্রই সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চিরন্তন আবেগঘন পরিবেশ ।
ভুক্তভোগী ছাড়া জানবে না এই কবছরে এই বিপুল পরিমাণ শিক্ষক-শিক্ষিকার অনুপস্থিতিতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার হাল কি হয়েছে । তার উপর গেছে কোভিড মহামারী । অভিভাবকরা শিক্ষার্থী সন্তানদের মানুষ করার জন্য কত টাকা ব্যয় করেছেন প্রাইভেট পড়ানোর জন্য । বিষয় শিক্ষকের অভাবে ও শিক্ষক স্বল্পতার কারণে সন্তানকে নিয়ে ঘুরেছেন এই স্কুল থেকে সেই স্কুল । আর এই ডামাডোলে এবং করোনাকালীন সময়ে দেদার পাশের ফলে শিক্ষার্থীরা ভালো জায়গায় উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের সুযোগও হারিয়েছে । পাশ করা শিক্ষার্থীরা চাকরি পাচ্ছে না । 'করোনা পাশ' বলে তাদের দেগে দেওয়া হচ্ছে ।
যাইহোক, এর মধ্যেই আজ ১০৩২৩ শিক্ষক শিক্ষিকাদের স্কুল চত্বরে দেখে শিক্ষার্থীরা আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠেছে । শিক্ষক সংকটে রাজ্যের শিক্ষার্থীদের যে কি ক্ষতি হয়েছে তা শিক্ষার্থীরা ছাড়া আর কে বেশি বুঝবে ? 'বুঝিবে সে কিসে / কভু আশীবিষে / দংশেনি যারে' ? দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেছে জুরি-মনু-ধলাই-হাওড়া-গোমতী-মুহুরী-ফেনীর স্রোতধারার সঙ্গে । অনেক যন্ত্রণাদগ্ধ প্রাণ চলে গেছে অনন্তের পাঠশালায় । আর দেরি নয় । দপ্তরের শুভ বোধ জাগুক । মন্ত্রিসভা সজাগ হোন । পড়ে দেখুন এইসব 'হাতে মসি, মুখে মসি, মেঘে ঢাকা শিশুশশীদের চোখ মুখের ভাষা । আর রাজনীতি নয় । এবার চাই সহানুভূতি ।
'আজ আবার নতুন করে / ভুলে যাওয়া নাম ধরে ডেকো না / হারানো স্বপন চোখে এঁকো না' । ১০৩২৩ নামে তাঁরা যেন আর চিহ্নিত না হন । তাঁদের দুঃস্বপ্নের রাতগুলো যেন আর ফিরে না আসে । তাঁরা যেন আবার মূলস্রোতে মিশে যেতে পারেন । 'আমাদের গেছে যে দিন / একেবারেই কি গেছে / কিছুই কি নেই বাকি' । না । না । আছে । 'রাতের সব তারাই আছে / দিনের আলোর গভীরে' । আসুন সবাই মিলে রাজ্যের শিক্ষাঙ্গনে দিনের আলো খুঁজে বেড়াই । শুভস্য শীঘ্রম ।
১২.০৮.২০২২.
No comments:
Post a Comment