আ # ত্রিপুরার ত্রিপুরেশ্বরী
র # চর্যাপদে কৃষিজীবনের চিহ্ন
ক্ # জীবনানন্দের ছায়াশরীরিণী নায়িকা
ও কবিতার অনুভবী পাঠক
ত # গদ্যের গলগথা
সু # ক্রুদ্ধ মনীষীদের আরক্তসুন্দর মুখশ্রী
ন্ #বিবেক-মানসে আবির্ভূত শ্রীরামকৃষ্ণ-প্রণামমন্ত্র
দ # একটি গল্পে ভারতের জাতীয় ইতিহাস
র্ # সারদা দেবী ঃ এই বেদনাক্লিষ্ট পৃথিবীতে
দুঃখজয়ের এক আশ্চর্য অভিজ্ঞান
মু # স্বামী বিবেকানন্দ, একটি নাট্যানুষ্ঠান ও
এক অলোকসামান্যা অভিনেত্রী
খ # Angels Unawares-র ভাবালোকে
স্বামী বিবেকানন্দের জীবনদর্শন
শ্ # বিবেকানন্দের ভাষ্যকার
স্বামী রঙ্গনাথানন্দ
রী # হ্যাঁ, আপনাকে বলছি.......
** প্রণম্য অগ্নির দ্বাদশ শিখার বিস্তার
Tuesday, November 21, 2017
আরক্তসুন্দর মুখশ্রী - সন্মাত্রানন্দ
Sunday, November 19, 2017
বানান বিষয়ক
'তोইছা' না 'তोইসা' ( মানে ছোটো নদী) এর উত্তর খুঁজতে গেলে অনেক পেছনে ভাষাসাহিত্যের ইতিহাস খুঁজতে হবে ৷ আমরা জানি সংস্কৃত থেকে আমাদের অনেকগুলো শব্দ এসেছে ৷ আবার এদেশের বিভিন্ন প্রাচীন জনগোষ্ঠীর অনেক শব্দ সংস্কৃতে প্রবেশ করেছে ৷ যেমন 'মীন' শব্দটি মূলত দ্রাবিড় শব্দ ৷ এরকম মঙ্গোলীয় অনেক শব্দ সংস্কৃতে প্রবেশ করেছে বা বলা যেতে পারে অনেক সংস্কৃত শব্দ মঙ্গোলীয় ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছে ৷ কে কার কাছে ঋণী, ইতিহাসের সুদূর অতীত উদ্ঘাটন আজ প্রায় দুঃসাধ্য ৷ 'সা' না 'ছা' কোনটা আগে তা জানতে একটি সংস্কৃত শব্দের কাছে যাচ্ছি ৷ 'বৎস' শব্দের বাংলা অর্থ সন্তান ৷ 'বৎস' শব্দ থেকেই এসেছে ' বাছা' ৷ তার থেকে আদ্যবর্ণ লোপ পেয়ে 'বাছা'৷ তার অর্থও সন্তান ৷ আবার চলতি বাংলা বা আঞ্চলিক বাংলায় 'ছা' ৷ একই অর্থ সন্তান ৷ ককবরকে দেখুন বৎস> বोসা >সা ( বो ছা) > ছা ৷ একই অর্থ দাঁড়ায় ৷ পক্ষান্তরে ছোটোও বোঝায় ৷ তাই মনে হয় দুটো বানানই ঠিক ৷
বানান বিষয়ক
'তोইছা' না 'তोইসা' ( মানে ছোটো নদী) এর উত্তর খুঁজতে গেলে অনেক পেছনে ভাষাসাহিত্যের ইতিহাস খুঁজতে হবে ৷ আমরা জানি সংস্কৃত থেকে আমাদের অনেকগুলো শব্দ এসেছে ৷ আবার এদেশের বিভিন্ন প্রাচীন জনগোষ্ঠীর অনেক শব্দ সংস্কৃতে প্রবেশ করেছে ৷ যেমন 'মীন' শব্দটি মূলত দ্রাবিড় শব্দ ৷ এরকম মঙ্গোলীয় অনেক শব্দ সংস্কৃতে প্রবেশ করেছে বা বলা যেতে পারে অনেক সংস্কৃত শব্দ মঙ্গোলীয় ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছে ৷ কে কার কাছে ঋণী, ইতিহাসের সুদূর অতীত উদ্ঘাটন আজ প্রায় দুঃসাধ্য ৷ 'সা' না 'ছা' কোনটা আগে তা জানতে একটি সংস্কৃত শব্দের কাছে যাচ্ছি ৷ 'বৎস' শব্দের বাংলা অর্থ সন্তান ৷ 'বৎস' শব্দ থেকেই এসেছে ' বাছা' ৷ তার থেকে আদ্যবর্ণ লোপ পেয়ে 'ছা'৷ তার অর্থও সন্তান ৷ ককবরকে দেখুন বৎস> বोসা >সা ( বो ছা) > ছা ৷ একই অর্থ দাঁড়ায় ৷ পক্ষান্তরে ছোটোও বোঝায় ৷ তাই মনে হয় দুটো বানানই ঠিক ৷
Sunday, November 12, 2017
জীবন মাঝি
গানের ভুবন চষে গেছ নবীন বাউল গানের লোক,
গানেই হবে তোমায় প্রণাম গানেই হবে তোমার শোক ৷
তোমার হাতের মন্দিরাটা বোল তুলেছে মাটির গানে,
তোমার হাতের দোতারাতে সাঁই ফকিরের শব্দ আনে ৷
তোমার যে এক স্বপ্ন ছিল ছড়িয়ে যাবে বাংলা গানে,
হৃদমাঝারে রাখব ধরে ছেড়ে দেবার নেইকো মানে ৷
গানের ফিরি করতে করতে পেরিয়ে গেলে পথের সীমা,
গ্রামের দোয়েল ঠোঁটে তুলতে গ্রাম্য গানের মধুরিমা ৷
কাজ যে অনেক বাকি তোমার অসীমান্তিক গানের হাট,
সে কেন যায় এই অবেলায় গানেই যার দিবস কাটে ?
দিন না যেতেই সন্ধ্যে হল কোন বাউলের কারসাজি,
অসময়ে নোঙর তুলল ভাটিয়ালির জীবনমাঝি ৷
বিচ্ছেদগানে দোহার দিচ্ছে তোমার যতো স্বজনগণ,
গানেই হবে তোমার পূজা গানেই হবে তোমায় স্মরণ ৷
আকাশ-এক
বাঘা যতীন স্টেশনের লাগোয়া সাদা রঙের হাইরাজারগুলো
উঁচুতে উঠছে ৷ বড়ো হয়ে উঠছে ওদের সফেদ শরীর ৷
শুধু মানুষগুলো যতো উপরে উঠছে ছোটো হয়ে যাচ্ছে
আর যেন ছায়া ছায়া কালো হয়ে যাচ্ছে ওদের শরীর ৷
ট্রেন ভরে মানুষ ছুটে যাচ্ছে শহরের দিকে
জীবন জীবিকার খোঁজে রাম ও রহিম একাকার
অথচ এতো এতো লোক কুঁকড়ে গিয়েছে মানুষের দাপটে ৷
ইট পাথরের শরীর সম্মিলিত ভাবে শুভ্র হয়ে
উদার আকাশের কাছাকাছি
লোকাল ট্রেনের চৌদ্দ ভুবনেও
অগণিত মানুষ জড়িয়ে নেবার নিত্যবিধান
ক্রমশ মানুষ ছোটো হয়ে যাচ্ছে ইমারতে উঠে যাওয়া,
ট্রেনের ভেতর দুমড়ে থাকা অন্নকামী মানুষ
হে মুর্শিদ, গ্রাম ও শহরের বিপন্ন মানুষদের আরো বড়ো হবার মন্তর দাও
নিদান দাও বিশ্বাস আর মানবিকতার এই জীবনার্ত মানুষজনকে ৷
এই অসহায় যাপননেবাড়িয়ে দাও বাড়িয়ে দাও আত্মার বিস্তার আর প্রাণারাম ৷
কলরব
উচ্চকিত কন্ঠ যদি ঠেকে গিয়ে পাহাড়ে
পাহাড় ফিরিয়ে দেয় প্রতিধ্বনি করে
দোসর জুটিয়ে স্বর দশদিক ঘিরে
আওয়াজ বিদ্রোহী হয় সম্মিলিত স্বরে
ওরা কেমন প্রাণ শব্দ সয় না
ধ্বনির উৎসে দেয় অতর্কিত হানা
স্তব্ধ করে টুঁটি টিপে পাশব উল্লাসে
সত্যবাচী স্বর তাই রক্তনদে ভাসে
তবুও সাহস করে জাগে কলরব
মিছিলে ধ্বনিত হয় আসন্ন বিপ্লব ৷
আকাশ - 2
পরিপাটি বিন্যাসের পর যদি প্রশ্নবোধক হয়ে যায়
স্বপ্নকানাৎ ছিঁড়ে যদি উঁকি দেয় জলকুন্ডলীর কিরণ
গুছিয়ে রাখা সব দস্তাবেজ উড়ে বানকুরালী হাওয়ায়
সন্ধ্যামালতীর নিঝুম নির্যাসে কিছু বিষাদ মেখে যাবে
সাজানো বাগান নিয়ে বড়াই দীর্ঘকাল ধরে রাখা দায়
কে কখন মুড়িয়ে যাবে প্রহরীবিহীন সিংদরোজা ঠেলে
জোছনা রাতের নিঃসঙ্গ মেঘ সরে যাবে ভদ্রাসন ছেড়ে
চাঁদকে আড়াল করে থমকে দাঁড়াবে অন্ধকারের আশায়
অস্ত্রসম্ভারে যদি সুসজ্জিত হয়ে ওঠে সমস্ত সরল কুসুম
প্রিয়নিলয়ে ঘরোয়া রণবাদ্য শুধু সময়ের অপক্ষায় থাকে
অস্ত্রের মুখে ভালোবাসার ব্যরিকেড হতে পারে মহৌষধি
আদিগন্ত প্রসারিত বাহু উদারবন্ধ আকাশ ছুঁয়ে যাবেই
বৃষ্টিকথা
পানছড়ির পাহাড়ের গায় ভ্রাম্যমান মেঘের বিরতি
ছবির মতো স্থায়ী ও প্রামান্য আসঙ্গকথা
চিরকালীন প্রণয়কল্প বুনে চলেছে বিরামবিহীন
মাহ ভাদরেও ঝরে কান্নার অশ্রু বিরহকানাৎ বেয়ে
কোন মেয়ে কৌমাৰ্য হারালো শেষ বাদলের আঁধারে
কার শুধু নগ্ন লাশ পড়ে আছে স্বঘোষিত দেবভোগের
উচ্ছিষ্ট ভান্ডের মতো ৷ ভাদুরে বর্ষার জল ধুয়ে যায় শব
কাদের কান্নায় এ যাবত কেঁদে উঠেছে বনমানবের বুক
কোন প্রমাণপত্র বাতাসেও ওড়ে নি তো কোনদিন
ভালোবাসা তবুও লোমশ বুক বালিশপ্রতিম আস্থাঘর
সমস্ত সমরাস্ত্র নতজানু হয়ে মানবের পায়ে নুয়ে পড়ে
রক্তপিপাসু রণ নয় ৷ হৃৎপিন্ড তাক করা আয়ুধও না
ধারালো ফলা ভেঙে জীবনজল হয়ে ঝরুক জনপদে
নিদকুমারীর প্রতি
আয়নামহলের রাজকন্যের সাংকেতিক বার্তা
দূরপ্রান্তরের দুয়োরানির মাণিকের পৈঠায় পৌঁছুলে
টিপরাই বাঁশিতে সুর ওঠে জাদুকলিজার
মহলের পালঙ্কে কী বিরহী কন্যে ঘুমে অচেতন থাকে
সোনার কাঠি আর রূপোর কাঠির রূপকথা সূত্রে?
কে সে? কোন দানোটা ঘুম পাড়িয়ে রাখে আরশিনগরের একাকী মেয়েটার?
এইসব ভেবে ভেবে টিলার ওপরের টংঘরের নিষাদসন্তান
তার বাঁশিতে নতুন সুর বেঁধে হওয়ায় ভাসিয়ে দেয়
মহলবন্দী রাজকুমারীর ঘুমভাঙানোর গান ৷
আঁধারগড় চুরমার করে ভোরের হাসিকে সঙ্গী করে
সেই গান পৌঁছে যাবে ঘুমকুমারীর নিদমহলে ৷
* ' জাদুকলিজা ' ত্রিপুরার বরক জনজাতির নিজস্ব সঙ্গীত ঘরানা ৷
ভাষা শিক্ষা
একাধিক ভাষা জানা থাকলে ভাষাশিক্ষার্থীর সামনে পাঠদান খুবই সহজ হয় ৷ ভাষা জানার অভিজ্ঞতাকে আমি ক্লাসে ব্যবহার করে বেশ সুফল পেয়েছি ৷ বাংলা ও তার প্রতিবেশী দু তিনটে ভাষায় আমি মোটামুটি বলা, পড়া আর লেখার কাজ চালিয়ে যেতে পারি ৷ আর বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক বাংলা আমি যথাযথ বাচনভঙ্গিতে অনায়াসে বলে যেতে সক্ষম ৷ বাংলা ব্যাকরণ পাঠদানের সময় বেশ কার্যকরী ভূমিকাও গ্রহণ করেছে ৷ বিশেষত ভাষাতত্ত্ব পাঠদানের সময় বাংলা বিভিন্ন উপভাষাসমূহের আলোচনার সময় সেগুলোর উচ্চারণ সহযোগে উদাহরণ উপস্থাপন করলে শিক্ষার্থীরা সহজে বিষয়টা বুঝে নিতে পারে ৷
শিক্ষার্থী বাংলার যে অঞ্চলের অধিবাসী হোক না কেন তাকে মান বাংলায় শিক্ষা গ্রহণ করতে হয় ৷ ফলে বিশেষ অঞ্চলে বসবাসকারী শিক্ষার্থী বাঙালি হলেও তার বাংলা শব্দভান্ডার দুর্বল থাকে ৷ মান বাংলায় ব্যবহৃত কোন বিষয় সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর অজানা হলে সেটা বোঝানোর জন্যে তার নির্দিষ্ট আঞ্চলিক বাংলার শব্দভান্ডারের শরণাপন্ন হতে হয় এবং সেখান যথাযথ প্রতিশব্দ নিয়ে সমস্যা নিরসন সম্ভব হয় অর্থাৎ শিক্ষার্থীকে সংশ্লিষ্ট শব্দ চেনানো বা বিষয় বোঝানো সহজ হয় ৷
বাংলা ব্যাকরণে 'বর্ণের উচ্চারণ স্থান' নামে একটা অধ্যায় আছে ৷ সেখানে বাকযন্ত্রের বিভিন্ন স্থানে জিহ্বার স্পর্শানুযায়ী বিশেষ বিশেষ বর্ণের বিশেষ বিশেষ নাম রয়েছে ৷ সেই অনুযায়ী কন্ঠ্যবর্ণের উদাহরণ হিসেবে ক,খ,গ,ঘ, ঙ কে সহজেই চেনানো বোঝানো যেত ৷ কিন্তু তালব্যবর্ণ, মূর্ধ্যবর্ণকে বোঝাতে বেশ বেগ পেতে হত ৷ দুটোর উচ্চারণ স্থানই আমাদের মুখগহ্বরের ওপরের দিকের শক্ত অংশ ৷ দন্ত্যমূলের পরে যে শক্ত অংশ সেখানে জিহ্বার স্পর্শ পেয়ে উচ্চারিত হয় চ,ছ, জ,ঝ,ঞ ৷ এগুলো তালব্যবর্ণ ৷ আর এই শক্ত অংশের পরে ওপরের দিকের শক্ত অংশে জিহ্বার স্পর্শে উচ্চারিত হয় ট,ঠ,ড,ঢ,ণ ৷ এগুলো মূর্ধ্য বর্ণ ৷কিন্তু পুরো শক্ত অংশ এলাকাকে মান বাংলায় বলা হয় তালু ৷ বিভাজন করলে সম্মুখ তালু ও পশ্চাৎ তালু ৷ কিন্ত সমস্যা হল এই যে, পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন আঞ্চলিক বাংলায় একে তালু বলে না ৷ আর তালু বলে এই অঞ্চলে অন্য তিনটি প্রত্যঙ্গ চিহ্নিত ৷ হাতের চেটো - তালু, পায়ের তলা- তালু আর মাথার ওপরের বহিঃত্বক ৷- তালু ৷ ফলে এ জায়গাটায় এসে শিক্ষারথীরা গুলিয়ে ফেলত ৷ তালব্য বর্ণটা যদিও বা কোনোরকমে বোঝানো যেত ৷ মূর্ধ্য বর্ণে এলে জটিলতা বেড়ে যেত ৷ এক্ষেত্রে আমি একটা মজার চুটকির আশ্রয় নিতাম ৷ গল্পটা এইরকম ৷ নতুন জামাই খেতে বসেছে ৷ শাশুড়ি শুরুতেই ভাতের সঙ্গে দিয়েছেন গরম আলুসেদ্ধ ৷ জামাই ভাতের সঙ্গে আলুসেদ্ধটা মেখে প্রথম গ্রাসটা মুখে তুলতেই গরম আলুসেদ্ধ গিয়ে আটকাল মুখগহ্বরের উপরের অংশে ৷ যন্ত্রণায় জামাই বাবাজি মুখ উপরে তুলে হাঁ করে ছনের ছাওয়া রান্নাঘরের বাঁশের কাঠামোর দিকে তাকিয়ে মুখে হাওয়া টানছে ৷ বুদ্ধিমতী শাশুড়ি বুঝতে পেরে মজা করে জামাইকে জিজ্ঞেস করছেন, উপরের দিকে কী চাইতাছো বাবা ৷ জামাইও সম্বিৎ ফিরে পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে বুদ্ধিদীপ্ত জবাব দেয়, না মা, দ্যাখতাছি ইডি কোন ঝাড়ের বাঁশ ৷ শাশুড়িও মুহূর্তের মধ্যে জবাব দিলেন, ইডি টাকরাপোড়া ঝাড়ের বাঁশ ৷ আমি বলতাম শিক্ষারথীদের, বুজছো নি ৷ এই টাকরাই হইলো মূর্ধা ৷ জিহ্বা এইখানে ছুঁইয়া যে বর্ণগুলি উচ্চারিত হয় সেগুলি মূর্ধ্য বর্ণ ৷ক্লাসশুদ্ধ হাসিতে ফেটে পড়ে জবাব দিত চিনছি স্যার ৷ সারাজীবনেও ভুলতাম না ৷
ঘরে ঘরে ডাক পাঠালো.....
মাটির প্রদীপের শিখা মাটির বুকে তির তির করে জ্বলতে থাকুক কিংবা অট্টালিকার কার্নিশে কার্নিশে সমবেত বৃন্দশিখায় মেতে উঠুক তাদের সম্মিলিত কুচকাওয়াজ এই ধরণীকে মাতিয়ে তোলার জন্যেই নিবেদিত ৷ ভুবনপুরের অন্ধকার দূর করার জন্যেই নিবেদিত প্রাণ নিভৃতে তৈলাধারে সংরক্ষিত রসদকে পাথেয় করে আলোকবন্দনায় রত ৷ যে রাতকীটসমূহ তাদের পক্ষবিধূননের মাধ্যমে বাধার সৃষ্টি করে আলোকযাত্রার সুরম্য উপাসনার, তার কোনো প্রতিবাদ করে না আলোকদল ৷ আজ যে আলোকোৎসবের ক্ষণ ৷ আজ শুধু আলোদান আর আলোকিত হওয়ারই ব্রতক্ষণ ৷ সমবেত আলোবিতরণে নিজেও স্পষ্ট হয়ে ওঠে আলোপ্রদীপ ৷ অপরকলঙ্ক বিকশিত করা আজ আলোকাভিসারীর অভীষ্ট নয় ৷ তিমিরনিশার কলঙ্ক ঘুচানোর, আলোকস্নানে স্নিগ্ধ করার সপ্রদীপ মহড়়া এরাতের লক্ষ্য ৷ অন্তহীন অন্ধকার পথযাত্রীর হাতে আলোকবর্তিকা তুলে দেওয়ার মাঝে পবিত্র হওয়ার যে কুম্ভস্নান সেই স্নানে সিক্ত হয়ে দূরীভূত হয় অন্তরের তমসা ৷ সেই মহাহোমের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশীদার হলেও এক পরম তৃপ্তি পরমানন্দ ৷ আলোর দীপালিকা সেই চিরানন্দের বার্তাবাহক ৷ পবিত্র স্নাতক ৷ আসুন আলোকস্নাত হই অফুরন্ত আলোকুম্ভে ৷
নায়াগ্রা
পরম সৌভাগ্য নাহলে নায়াগ্রার নুপূরেরর আওয়াজ শ্রবণের গোচর হবার নয়
প্রপাতের জলপতনের সাথে যে অশ্রু ঝরে সেও হারিয়ে যায় জলের ধারায়
আঁতুড়ঘরেই যার ভবিতব্য নির্ধারিত তার শরীরের দানের নিবেদন থাকে না
ক্লেদের কাছে ধরা পড়ার অশৌচ অনুভবের প্রাত্যহিক পঞ্জী
ভেতরে কল্লোলে ভেঙে পড়া ঘরোয়া পাড় ৷
কান্নার করুণ ধ্বনি অকূলে হারায় ৷
ভাইফোঁটা
ভাইফোঁটা
তিলক পরাইয়া দেও বইন কপালের মাঝে
ফোঁটা লইয়া যামু রে দি' নিত্যদিনের কাজে
ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দেও যমদুয়ারে কাঁটা
ভাইয়ের লাইগ্গা মমতা যেন বুকের মাঝে আঁটা
আমরা ভাইরা বইনের জইন্ন কতটুকু আর করি
পথের মাঝে দিদির লাশ যায় যে গড়াগড়ি
লাঞ্ছিতা হয় ধর্ষিতা হয় পিশাচ ভাইয়ের হাতে
কজন ভাই লড়াই চালায় সেই পশুদের সাথে
ভাইয়েরা সব জাগো আজকে করো সবাই পণ
মা বোনের ইজ্জৎ রাখতে লড়বো আজীবন
তবেই তো ভাইফোঁটার সঠিক অর্থ হয়
বইনের লাইগ্গা ভাইয়েরাও যমরে করবে জয়
সংকেত
জন্মদাগ মুছে রেখে যদি ভুল চৌরাস্তায় লুকিয়ে
পড়ো তবে কথকতার সংকেত জেগে উঠবে তো ?
তোমার মুখের মেঘপরিব্রাজন কিংবা চোখের প্রপাত
বুকের ভেতর গোপন পিয়ানো বাজানোর মহড়া দেয়
শেষ সংকেত অতিক্রান্ত ৷ গা বেয়ে উপছে পড়ে ঘামজল
শেষবেলায় তুমি রুমাল তুলে ইঙ্গিত দেবে নিশ্চিত
পরিচয়
হাজারো দিবস পালন হয় তিনশো পঁয়ষট্টি দিনে
কতোটা মানবিক এইসব আড়ম্বর তার হিসেব
কোনো খেরোর খাতায় লেখা থাকে না গো পরম গোঁসাই
একতারা নিয়ে আমি আখড়াই বাউল শুধুই
আখর বুনে যাই ৷ অন্তর ছুঁতে পারি কতোটা
সে হিসেব রাখার কোনো বিশ্বস্ত পারদস্তম্ভ নেই
শুধু মন্দিরের সুরেলা আওয়াজ সাক্ষী গোপাল
মাইলের পর মাইল মিছিলে হাঁটলেও সবশেষে
দেখা যায় প্রতিবেশীরা পরস্পর কতো অচেনা
নীলভ্রমণ
নীল সামিয়ানার নীচে আমার ভিটে
উদার অসীম পরস্পর
গাঁথনি ছাউনি প্রেমের ইটে
তাতেই বাঁধব আমার ঘর
নীলের সঙ্গে একা মোটেই নয়
সঙ্গে সফেদ আঁচল
জড়িয়ে নেব তাই দেহময়
যেন শান্ত ফটিকজল
আবর্তন
পাততাড়ি খুলে সেদিন জেনেছিলাম দুনিয়াটা আজব লাটিম"
অবিরাম ঘুরে যাওয়াই তার কাজ বলে গুরুমশাইয়ের ভাষ্য
আঁধিয়ারি ঘেরা কাঁচা চোখজোড়ায় গাঁয়ের হাটচালার ঘেরাটোপে
বলরাম কলুর ঘানির দশাসই বলদজোড়ার ঘূর্ণনকে
উদাহরণ দিলে গুরুমশাই খুশি হয়ে পিঠ চাপড়ে দিয়ে
আমার ভবিষ্যতের দৈববাণী ছড়িয়ে দিতেন সহপাঠীদের ৷
টোলের সবাই সমান হয় না বলেই বেয়াড়া কেউ প্রশ্ন তুলত
পৃথিবীর আবর্তনের শুরুর দিনক্ষণ ৷
গুরুমশাইয়ের টিকিতে তার কোনো জবাব বাঁধা নেই ৷
সেই থেকে আমারও আর জানা হয় নি সেই শুরুর দিনের পরস্তাপ ৷
তবুও আমরা সেই দীর্ঘ পরিক্রমাকে ভেঙে নিই আমাদের মতো ৷
ঘুরন্ত চাকার লুব্রিকেন্টের মতো পুরোনো গ্লানি,কালিমা আর ক্লেদ মুছে ফেলে আবার ভালোবাসায় ভর করে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্যে
আমরাই সৃজন করি নববর্ষ ৷
আমাদের মাঝে প্রেম ছাড়া আর বিলিয়ে দেওয়ার মতো
কিছু থাকে না এই ছিন্ন পাকপ্রণালীতে ৷
নাদ
কেবল আলো ফেরি করে যাও নিমগ্ন পসারিণী
স্বতসিদ্ধ দলিল হলেওঅমানিশা আঁধারময় নয়
তন্ত্রমানব সাধনপিঠে বসে আঁধার দেখে না
ভৈরবী বলে পাশে ডাকে পরমাশক্তিকে
সৃজনের কারুকৌশল সব হৃং, ক্লিং, ফট ৷
আলো জেগে ওঠে জীবনের নাদসংকীর্তনে
অন্ধকার আর আঁধার থাকে না তখন ৷
আলোর পসরা সাজাও দুহাতে ৷ আঁধারে ৷
Friday, November 10, 2017
ডাক
সাঁঝবাতিটা জ্বালিয়ে রেখো দিনের বিদায় হলে
আলোর ভেতর ডুবে যাব গভীর ঘুমের দেশে
আঁধারকুটুম কাঁকন নেড়ে ঘনিয়ে কাছে এলে
আলোপ্রান্তর জুড়ে লিখব তোমার নামটি শেষে
ডুবসাঁতার স্রোতের বাঁকে আজব অভিসার
খিড়কিখোলা হৃদমাঝারে দরজা গড়ে দেবে
ভিতরকোঠা উদোমহারেম আদর পারাপার
ও কালো সই এগিয়ে এসো ৷ আমায় তুলে নেবে ৷
ডেংগি
কদিন পর পরই সিম পাল্টাতে হচ্ছে ৷কোনোটার সার্ভিস ঠিকমতো পাওয়া যায় না ৷ আজ 'আকাশ' ভালো তো কাল 'নেটটক' ৷ সিম নেওয়া কী সহজ ? ফটো লাগবে ৷ আধার লিঙ্ক করাতে হবে ৷ ভোটার আইকার্ড চাই ৷ কে এগুলো সারাক্ষণ বগলদাবা করে নিয়ে বেরোয় ৷ পদে পদে নিজেকে প্রমান দিতে হবে আমি এদেশের নাগরিক ৷ নইলে কী হবে কে জানে ! দেশদ্রোহী কী ? বহিরাগত ?
বহু হ্যাপা সামলে গতকাল ' ইন্ডিলিঙ্ক ' এর একটা সিম নিতে পারল মধুবনি ৷ কিছুতেই কথা বলা যাচ্ছে না ছেলের সঙ্গে কদিন ধরে ৷ কোলকাতা জুড়ে ডেংগির খবর পাচ্ছে টিভিতে ৷ কাগজে ৷'ঘন্টা ধরে' 'দিনভর' 'একটু বসুন' নামের টিভি টক শোগুলো আরো জট লাগিয়ে দিচ্ছে বুকের ভেতর ৷ সন্ধ্যার সিরিয়ালগুলোও দেখা হচ্ছে না দুশ্চিন্তায় ৷
মোবাইল টিপে টিপে ছেলের নম্বরটা বের করল মধুবনি ৷ একটু বেশি রাত করে ৷এ সময় কানেকশনটা পাবে আশা করে ৷ হালকা শীত পড়তে শুরু করেছে ৷ রাত দশটা বাজে ৷ গাঁয়ের ভেতর এখন রাত ৷ রাস্তাঘাট সুনসান ৷ কেবল শহরফেরত লোকদের বাইকের শব্দ পেরিয়ে যাচ্ছে ৷ একটা মাতাল সরকারকে গালাগাল দিতে দিতে বাড়ি ফিরছে ৷ পথচারীদের লক্ষ করে দুএকটা কুকুরের আওয়াজ ৷ কিছুক্ষণ রিং করার পর ওপার থেকে জবাব দিল বাবুন
হ্যাঁ, বলো মা ৷
কী করছিস বাবা ?
কালকের প্রেজেন্টেশানটা রেডি করছি ৷
খাওয়া হয়েছে বাবা ?
হ্যাঁ খেয়েছি ৷
মশারিটা লাগিও ৷ চারদিকটা গুঁজে দেবে তোষকের তলায় ৷ আর জানলাগুলো বন্ধ করে দিও ৷ মশার কয়েলটা জ্বালাবে ৷ না না ৷ কয়েল না ৷ কয়েলে কাজ হয় না এখন ৷ কালকে মশার ধূপকাঠি নিয়ে এসো এক প্যাকেট ৷ বুঝেছো ৷
হ্যাঁ মা৷ হঠাৎ খুক খুক করে কেশে উঠল বাবুন ৷ মায়ের মন ৷
কি রে কাশছিস যে ?
এই একটু সর্দি সর্দি ভাব লাগছে ৷ শরীরটাও......
শরীর খারাপ লাগছে নাকি ৷ডাক্তার দেখিয়েছিস ? জ্বর-টর ?
--------------------------------- ওপার থেকে কোনো উত্তর আসে না ৷
হ্যালো ৷ হ্যালো ৷ হ্যালো ৷ বাবা ৷ বাবুন ৷ হ্যা....
ফোনটা চোখের সামনে আনল মধুবন্তি ৷ সংযোগ কেটে গেছে ৷ শুধু বাবুনের নম্বরটা ভেসে রয়েছে মোবাইলের স্ক্রিনে ৷ সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে মধুবন্তি ৷ একটা কালো মশা উড়ে এসে কামড় দিল তার ফর্সা ডান বাহুতে ৷
Thursday, November 9, 2017
ডেংগি
কদিন পর পরই সিম পাল্টাতে হচ্ছে ৷কোনোটার সার্ভিস ঠিকমতো পাওয়া যায় না ৷ আজ 'আকাশ' ভালো তো কাল 'নেটটক' ৷ সিম নেওয়া কী সহজ ? ফটো লাগবে ৷ আধার লিঙ্ক করাতে হবে ৷ ভোটার আইকার্ড চাই ৷ কে এগুলো সারাক্ষণ বগলদাবা করে নিয়ে বেরোয় ৷ পদে পদে নিজেকে প্রমান দিতে হবে আমি এদেশের নাগরিক ৷ নইলে কী হবে কে জানে ! দেশদ্রোহী কী ? বহিরাগত ?
বহু হ্যাপা সামলে গতকাল ' ইন্ডিলিঙ্ক ' এর একটা সিম নিতে পারল মধুবনি ৷ কিছুতেই কথা বলা যাচ্ছে না ছেলের সঙ্গে কদিন ধরে ৷ কোলকাতা জুড়ে ডেংগির খবর পাচ্ছে টিভিতে ৷ কাগজে ৷'ঘন্টা ধরে' 'দিনভর' 'একটু বসুন' নামের টিভি টক শোগুলো আরো জট লাগিয়ে দিচ্ছে বুকের ভেতর ৷ সন্ধ্যার সিরয়ালগুলোও দেখা হচ্ছে না দুশ্চিন্তায় ৷
মোবাইল টিপে টিপে ছেলের নম্বরটা বের করল মধুবনি ৷ একটু বেশি রাত করে ৷এ সময় কানেকশনটা পাবে আশা করে ৷ হালকা শীত পড়তে শুরু করেছে ৷ রাত দশটা বাজে ৷ গাঁয়ের ভেতর এখন রাত ৷ রাস্তাঘাট সুনসান ৷ কেবল শহরফেরত লোকদের বাইকের শব্দ পেরিয়ে যাচ্ছে ৷ একটা মাতাল সরকারকে গালাগাল দিতে দিতে বাড়ি ফিরছে ৷ পথচারীদের লক্ষ করে দুএকটা কুকুরের আওয়াজ ৷ কিছুক্ষণ রিং করার পর ওপার থেকে জবাব দিল বাবুন
হ্যাঁ, বলো মা ৷
কী করছিস বাবা ?
কালকের প্রেজেন্টেশানটা রেডি করছি ৷
খাওয়া হয়েছে বাবা ?
হ্যাঁ খেয়েছি ৷
মশারিটা লাগিও ৷ চারদিকটা গুঁজে দেবে তোষকের তলায় ৷ আর জানলাগুলো বন্ধ করে দিও ৷ মশার কয়েলটা জ্বালাবে ৷ না না ৷ কয়েল না ৷ কয়েলে কাজ হয় না এখন ৷ কালকে মশার ধূপকাঠি নিয়ে এসো এক প্যাকেট ৷ বুঝেছো ৷
হ্যাঁ মা৷ হঠাৎ খুক খুক করে কেশে উঠল বাবুন ৷ মায়ের মন ৷
কি রে কাশছিস যে ?
এই একটু সর্দি সর্দি ভাব লাগছে ৷ শরীরটাও......
শরীর খারাপ লাগছে নাকি ৷ডাক্তার দেখিয়েছিস ? জ্বর-টর ?
--------------------------------- ওপার থেকে কোনো উত্তর আসে না ৷
হ্যালো ৷ হ্যালো ৷ হ্যালো ৷ বাবা ৷ বাবুন ৷ হ্যা....
ফোনটা চোখের সামনে আনল মধুবন্তি ৷ সংযোগ কেটে গেছে ৷ শুধু বাবুনের নম্বরটা ভেসে রয়েছে মোবাইলের স্ক্রিনে ৷ সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে মধুবন্তি ৷ একটা কালো মশা উড়ে এসে কামড় দিল তার ফর্সা ডান বাহুতে ৷
Tuesday, November 7, 2017
সান্ধ্যভ্রমণ
বেলা শেষ প্রায় ৷ পায়ে পায়ে হেঁটে যাব কোমলসন্ধ্যার
মালতিবাগিচায় ৷ পারাপারের দিনগুজরান
হলে কাজ থাকে না আর ৷ দূরগঞ্জের সাঁজবাতি
ইসারায় ডাকে ৷
কাজ আর কাজ ৷ ফিরিস্তি অনেক দিয়েছি ৷
তোমাকে চপলবুননে ভুলপথ দেখাতে গিয়ে
ধরা পড়ে গেছি বার বার ৷
রুমাল নাড়াব বলে জেব হাতড়েছি ৷ শূন্য হাত
উঠে এসেছে নিঃশব্দে ৷ কী সঞ্চয় হল তবে ?
ট্যাঁক খালি ৷ ঝোলায় কিছু নেই ৷ সন্ততির জন্যে ৷
ভ্রান্ত বার্তায় শুধু যুদ্ধের কথা বলে গেছি অবিরাম
যুদ্ধ করিনি তো মোটেই ৷ পালিয়েছি কেবল ৷
পথ পাল্টেছি অনবরত চতুর কৌশল করে ৷
মেকি গৈরিকে আমি শরীর ঢেকেছি শেষবেলায়
কোথায় পাব যে ভালোপ্রান্তর সূর্যোদয় দেখার ৷