Wednesday, October 30, 2024

My Pension from Nov.24

FOR FEB21 : BP=40500 DA=00 COMM=6300 FMA= 500 NET = 34700



FROM MAR21 : BP= 40500 DA( 3% )=1225 REC=00 COMM=6300 DIS=00 IR=00 OLD=00 FMA=500 TDS=00 NET=35925 PNBHOGBD

FROM JULY22 : BP=40500 : DA (8% )=3240 REC=00
COMM=6300 DID=00 IR=00 OLD=00 FMA=500 TDS=00 NET=37940
40500 -6300 = 34200+ 500 + 38240 ( 8% DA ) =37940

FROM DEC22 : BP=40500 : DA ( 12% )= 8100 REC = 00 COMM = 6300 DID = 00 IR = 00 OLD = m00 FM 500 TDS = 00 NET = 42800
40500 - 6300 = 34200 + 500 + 8100 ( 20% DA ) = 42800

FROM JAN24 : BP=40500 : DA ( 25% )= 10125 REC =<00 COMM = 6300 DID=00 IR = 00 OLD = 00 FMA= 500 TDS = 00 NET = 44825

FROM NOV24 : BP = 40500 : DS ( 30% ) = 12150 REV = 00 COMM : 6300 DID = 00 IR = 00 OLD = 00 FMA = 500 TDS = 00 NET = 46950

Thursday, October 10, 2024

প্রগাঢ় বিশ্বাস

প্রগাঢ় বিশ্বাস


আসলে সাপলুডো নয়, চরাচরে ঝরছে কালো হলাহল 
ঘরেও বাইরে ঝরা পাতার মত উড়ে আসছে বিষ ।

যেখানেই বসতঘড়ি উপরের ছানি উড়ে যায় বারবার 
তীব্র রোদ, বৃষ্টির জল, ঝড়ের হাওয়ায় নড়ে বিশ্বাসবোধ ।
বুকে জড়ানো বর্মে জং ধরে । নিমেষে ভেঙে পড়ে যায় 
রাতের আঁধারের মতো সময় । ঋতুহীন কাটে বিষন্ন কাল ।

অনাথ বাতাস করুণ দোলায় কাঁপিয়ে দেয়
কোথা যায় নদী একাকী ? শ্মশান বন্ধু  নেই তার ।অক
 ক্রমশ শরীরে প্রস্থ কমে কমে অদৃশ্য হতে বাকি নেই ।
অচিন মাঝি সন্ধ্যার আঁধারে নৌকা নিয়ে পথ ভুলে যায়
 পলকা জলের ভেতর চাঁদ ঢুকে গেলে ঢেউ দুলে ওঠে ।

নোনাজল, পলি আর নুড়িবালি সব ইতিহাস জানে ।
তাদের ছোটো ছোটো বুকে লেখা আছে সব দিনলিপি 
এই গ্রামদেশেও বেদনায় আহত কবি লেখেন রক্তকবিতা 
সবুজ মাঠের দিকে তাকিয়ে ভাবেন, কখন আদিগন্ত 
সোনালি গালিচাতে একাকার হবে সারাদেশ

 দুচোখে এক প্রগাঢ় শ্বাস নিয়ে জাগে মায়ার পলক ।

Tuesday, September 24, 2024

কোভিড পরবর্তী শরীরের যত্ন

কোভিড পরবর্তী শরীরের যত্ন

 নিয়মিত শরীরচর্চা, ধ্যান, নির্মেদ শরীর, নেশামুক্ত ও দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন, সামাজিক কাজকর্মে জড়িয়ে থাকা, ক্রোধ সংবরণ, শরীর সম্পর্কে উদাসীন না থেকে নিয়মিত চেক আপ করিয়ে বিধিবদ্ধভাবে জীবনযাপন ও মনের প্রশান্তি শরীরকে অনেক সুস্থ রাখবে । অতিরিক্ত মাংসভক্ষণের ও পানীয়সেবনের অভ্যাস দূর করতে হবে । পাশাপাশি মোবাইল ফোনের ব্যবহার কম করতে হবে । এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, কোভিড ভ্যাকসিন গ্রহণকারী তরুণদের ক্ষেত্রে এই জাতীয় দুর্ঘটনা বেশি দেখা যাচ্ছে । দায় এড়াবার উদ্যেশ্যে তাৎক্ষণিক আবিস্কৃত কৌভিড ভ্যাকসিনের কুফল প্রকাশ্যে আসছে না । একটু ভারিক্কি শরীরের তরুণদের এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে ।

Monday, August 26, 2024

ধরগো তোরা, হাতে হাতে ধরো...

ধরগো তোরা, হাতে হাতে ধরগো...

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

হড়পা বানের নাম শুনেছিলাম। এবার চাক্ষুষ করলাম আমরা । দেখলাম গোটা রাজ্য কিভাবে তছনচ হয়ে যায় তার ভয়াল তান্ডবে । প্রকৃতির এই উদ্দাম মত্ততায় আমাদের প্রতিবেশি রাষ্ট্র বাংলাদেশও উপদ্রুত । কাঁটাতারের ওপার থেকেও ভেসে এসেছে হাহাকার । আমরা জল আর পানিতে ভাগ করি । কিন্তু তার তো কোনো সীমানা নেই । খেপে গেলে সে সসাগরার দখল নিতে চায় । আমরা প্রকৃতিকে চিনি না । প্রকৃতির রুদ্ররোষের খবর জানি না । যে প্রকৃতি আমাদের সবকিছু দেন তাঁকে আমরা ধ্বংস করি । তাঁর বুক টেনে চিরে ফেলি । প্রকৃতি সহ্য করতে করতে একদিন ফুঁসে ওঠেন ক্রোধে । প্রতিশোধের হাতিয়ার নামিয়ে দেন জনপদে । 

পৃথিবীতে যখন মানবতার সংকট দেখা দেয়, যখন মানুষের লোভ গগনচুম্বী হয়ে ওঠে, মনুষ্যত্ব বিপন্ন হয় তখনই প্রকৃতি জেগে ওঠে মানুষকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলে দেন । মানষের ঘুমিয়ে পড়া বিবেককে জাগানোর জন্য প্রকৃতি মাঝে মাঝে তার আয়ুধ প্রয়োগ করেন । আর তাতে মানুষের বিবেক জাগ্রত হয় । প্রতিবেশিকে আপন মনে হয় । দুঃখে, দুর্দৈবে, দুর্দিনে পাশাপাশি কাঁধে কাঁধ লাগাতে ইচ্ছে হয় । একে অন্যকে সাহস জাগাতে ইচ্ছা হয় । প্রতিবেশীর পাশে দাঁড়াতে সাধ জাগে । আবার এসময়ে আসল বান্ধবকেও চেনায় । পরিচয় হয় সৎ প্রিয়জনের সঙ্গে । এবারের বন্যায় প্রকৃতি আমাদের সে পাঠ দিয়ে গেছেন । কিভাবে আর্ত মানুষের পাশে মানুষই দাঁড়িয়ে পড়ে তা আমরা দেখেছি । আর্ত মানুষ এবারে দেখেছেন সাংসদ না থাকুক সজ্জন, সৎ জন, প্রিয়জন তাঁদের পাশে আছেন । একটা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় থেকে আমরা অন্যপ্রদেশের দুর্যোগে আমাদের সাধ্যমতো সম্বল নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছি । আর আমাদের দুর্দিনে সেই প্রিয় প্রতিবেশিদের দেখলাম হিমশীতল প্রতিক্রিয়ায়, মধ্যরাতের নীরবতায় । আবার এমন প্রতিবেশীও দেখলাম যারা অকারণ অন্ধ অজ্ঞ দোষারোপ করে শুধু চিলচিৎকার করে গেছে এই দুঃসময়ে । এরা নিজেদের দুর্দিনেও ত্রাতা হবার যোগ্যতা অর্জন করেনি । একদিন বোধ হবে এদের । এরা নিজের দেশের বিপন্নদের সেবায়ও লাগেনি । শুধু কল্পিত শত্রুর বিরুদ্ধে ফাঁকা আওয়াজ করে গেছে । কারো প্রতি ক্ষোভ নেই আমাদের ।  বরং এইসময়ে আমরা নিজেরা পরস্পর কাছাকাছি হওয়ার সুযোগ পেয়েছি । নিজেরা নিজেদের চিনতে পেরেছি । শুধু একরাশ নীরব অভিমান আর ভাঙা বুকের পাঁজর দিয়ে আমরা আবার আমাদের সংসার গড়ব ।

জল কমে গেছে অনেকটা। পলিবিছানো প্রলয়ভূমির উপর নিথর হয়ে থাকা বাস্তুভূমিতে কপর্দকহীন অশ্রুসম্বল বন্যার্তরা ফিরছেন । যেন কোনো যুদ্ধবিধ্বস্ত বিষাদভূখন্ডে ফিরছে সর্বহারা ভূমিপুত্রকন্যারা । এবারে সংকট দেখা দেবে খাদ্য ও পানীয় জলের । ঘরে রাখা খাদ্যশস্যসহ সব ফসল মাঠে মারা গেছে । কৃষকের ঘরের আয়ের উৎস শেষ । অপেক্ষা করতে হবে নতুন ফসল আসা পর্যন্ত । 

এই আর্তসময়ে সরকারের নিকট আমার বিনীত আবেদন, আগামী ফসল ঘরে ওঠা পর্যন্ত প্রতিটি আর্ত পরিবারে বিনামূল্যে রেশনসামগ্রী বিলির ব্যবস্থা করা হোক । ধান ও অন্যান্য শস্যবীজ ও সার-ঔষধের ব্যবস্থা করা হোক বিনামূল্যে। ততদিন পর্যন্ত হাতখরচা হিসেবে নিয়মিত কিছু আর্থিক অনুদান দেওয়া হোক । শিশু, বৃদ্ধ, অসহায় ও অসুস্থদের তালিকাভুক্ত করে তাদের যথাযথ পরিষেবার আওতায় আনা হোক । একা সরকারের পক্ষে সবদিক রক্ষা করা সম্ভব নয় । হৃদয়বানগণ ও সামাজিক সংগঠনের সদস্যরাও আর কটাদিন পাশে থাকুন । বিশ্বাস আমরা আবার শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়াবই ।

শিল্পী তাঁর কল্পনা, মেধা ও মননকে কাজে লাগিয়ে তাঁর শিল্পকে নান্দনিক করে তোলেন । তাঁর সৃজন বিপর্যস্ত হলে ক্ষুব্ধ হন তিনি । পরিত্যক্ত শিল্পের উপর আবার বোলান তাঁর চারুতুলি । প্রকৃতিও তেমনি । তাঁর এই বিধ্বংসী তান্ডবের অন্তরালেই রয়েছে সৃজনের বীজ । যা তিনি নিয়েছেন দ্বিগুণ করে ফিরিয়ে দেবেন আমাদের । কারণ আমরা প্রকৃতির সন্তান । তিনি শুধু শাসন নয় । সোহাগও আমাদের করবেন ।

Saturday, August 10, 2024

আমাদের অমৃতকাল অতিক্রম ও কবিতায় স্বদেশভাবনা

আমাদের অমৃতকাল অতিক্রম ও কবিতায় স্বদেশভাবনা

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

স্বদেশপ্রেম মনুষ্যচরিত্রের একটি স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য । মানুষ পৃথিবীর অধিবাসী হলেও নির্দিষ্ট ভৌগোলিক ও সামাজিক পরিবেশে জন্মগ্রহণ করে এবং সেখানে বেড়ে ওঠে । তার পরিচয় হয় একটা বিশেষ দেশের অধিবাসী হিসেবে । সেটাই তার জন্মভূমি তার মাতৃভূমি এবং তার স্বদেশ । সে দেশের মাটি আলো বাতাস জলে তার জীবন বিকশিত হয় । তার ফলে সেই ভূখণ্ডের প্রতি মানুষের একটি স্বাভাবিক আকর্ষণ তৈরি হয় । এই আজন্ম আকর্ষণ থেকে সেই ভূমির প্রতি মানুষের অনুরাগের যে বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায় বা তার প্রতি একটা প্রেম ভালোবাসা তৈরি হয় তাকেই স্বদেশপ্রেম বলা হয় । নিজের দেশ জাতি এবং মাতৃভাষার প্রতি তীব্র মমত্ববোধ ও আনুগত্যই দেশপ্রেম । যার দেশের প্রতি গভীর উপলব্ধি এবং ভালোবাসা থাকে তিনিই দেশপ্রেমিক । দেশপ্রেমিক দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ । একজন দেশপ্রেমিক মানুষ নিজের কথা না ভেবে পরের মঙ্গলের জন্য বা দেশ ও দশের কল্যাণের জন্য আত্মোৎসর্গ করে থাকেন । মহৎ মানুষের চিন্তা কর্ম সবসময় সমাজকেন্দ্রিক ও দেশকেন্দ্রিক । তাঁরা সবসময় দেশ ও জাতি ও সমাজকে নিয়ে দেশের কল্যাণ সাধনা সম্পর্কে নিজেকে ব্যাপৃত রাখেন । সমাজের মানুষের মধ্যে সব ধরনের মানবিক গুণাবলি জাগিয়ে তোলার স্পৃহা থাকে দেশপ্রেমিকের মনে । একজন দেশপ্রেমিক সৈনিক যেমন দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তেমনি সাহিত্য শিল্পকলা ও অন্যান্য নন্দনচর্চার মাধ্যমেও দেশপ্রেমিকের পক্ষে দেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটানো সম্ভব । সাহিত্যসৃজনের ক্ষেত্রে স্বদেশপ্রেম সঞ্চার করে সাহস শক্তি সৌন্দর্য ও মহিমা । সাহিত্যস্রষ্টা ও শিল্পী তার সৃজনের মাধ্যমে নিজেকে দেশপ্রেমিক হিসেবে প্রতিপন্ন করেন এবং দেশের মানুষের মধ্যে উদার মানবপ্রেমিক মানবিক গুণাবলিসহ দেশপ্রেমের ভাবধারা সঞ্চারিত করেন । স্বদেশপ্রেম বিশ্বপ্রেমেরও একটি অংশ । স্বদেশপ্রেমের ভেতর দিয়ে বিশ্বপ্রেমের এক মহৎ উপলব্ধি ও মানবিক জাগরণ ঘটে থাকে । পৃথিবীতে বহু বীর বিপ্লবী ত্যাগী এবং মহৎ দেশপ্রেমিক এসেছেন । সেই সঙ্গে এসেছেন বহু দেশপ্রেমিক কবি ও সাহিত্যিক । প্রতিটি দেশপ্রেমিক মানুষের কাছে তার দেশ সকল দেশের সেরা এবং সব দেশের রানি ।

দেশপ্রেম একটি আবেগ । আবেগ সাহিত্যের বিভিন্ন ধারাকেও পুষ্ট করে । কবিতায় দেশপ্রেমের আবেগ থেকে সৃষ্টি হয় দেশপ্রেমের কবিতা । সেই সব কবিতায় দেশপ্রেমের প্রতি গভীর মর্মবোধের পরিচয় পাওয়া যায় । দেশপ্রেম জাগানিয়া কবিতা বাংলাকবিতাকেও সমৃদ্ধ করেছে । ভারতবর্ষের অন্তরে মাতৃভূমির প্রতি গভীর অনুরাগ বৃদ্ধি করে স্বদেশপ্রেম সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে রামায়ণ, মহাভারত মহাকাব্য ছাড়াও গীতা, উপনিষদ, পুরাণ-উপপুরাণ ইত্যাদির বাণী আর দর্শনের প্রভাব অতি প্রাচীন । 'জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী' ( রামায়ণ, লঙ্কাকাণ্ড ) অর্থাৎ জননী জন্মভূমি স্বর্গ থেকেও শ্রেষ্ঠ । রামায়ণের এই মহতবাণীর আবেদন প্রতিটি ভারতবাসীর প্রাণে প্রাণে প্রাচীন শাস্ত্রে ভারত ভূমি প্রশস্তি করা হয়েছে পূণ্যভূমি ও কর্মভূমি রূপে গীতার কর্মযোগে উল্লিখিত 'মরিলে স্বর্গ তরিলে দেশ' বাণী স্বদেশপ্রেমেরই অমল উৎস । তদুপরি বিভিন্ন পুরাণ উপ-পুরাণে বর্ণিত কাহিনি ও প্রতিষ্ঠিত দর্শনে ভারতীয়দের প্রাণে জুগিয়ে আসছে জন্মভূমির যশ, মান বৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য আত্মোৎসর্গের প্রেরণা । 

বাংলা কবিতায়ও বিভিন্ন সময়ে কবিরা দেশপ্রেমের আবেগসংবেদী কবিতা রচনা করে গেছেন ।  দেশপ্রেমের চেতনায় সমৃদ্ধ তাঁদের কবিতা আমাদের বাংলাকাব্যের সম্পদ হয়ে রয়েছে । প্রাচীন বাংলাকাব্যের উদাহরণ পর্যালোচনা করলে আমরা সেখানেও স্বদেশভাবনার কিছু কিছু প্রমাণ পাই । বাংলা সাহিত্যে প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদ বা চর্যাগীতিকায় বৌদ্ধ সহজিয়া সিদ্ধাচার্যরা সেসময়ে যে পদগুলি রচনা করেন তার মধ্যে স্বদেশভাবনা এখনকার মত এতটা স্পষ্ট ছিল না । তাই আজকের দিনের মত দেশভাবনার উজ্জ্বল প্রকাশ তখনকার কবিতায় এতটা প্রতিফলিত হয়ে ওঠেনি । তাঁদের কবিতায় তাঁরা তাঁদের বসতভূমি ও ভূখণ্ডের প্রকৃতির কথা কিছু কিছু তুলে ধরেছেন । সেটা দেশপ্রেম না হলেও দেশ পরিচিতি হিসেবে  কিছুটা  আভাস পাওয়া যায়– উঁচা উঁচা পাব তহি বসই শবরী বালী । / মৌরঙ্গী পিচ্ছ পিরিহিন শবরী গীবত গুঞ্জরী মালী । এখানে তাদের বাসভূমির অর্থাৎ স্বভূমির পরিচয় পাওয়া যায় । 'নৌবাহী নৌকা টান অ গুণে'– সরহপাদের এই পদটিসহ বিভিন্ন পদে তৎকালীন নদীমাতৃক বাংলার ভূপ্রকৃতি, জলপথে যাতায়াত বা যোগাযোগ ব্যবস্থার চিত্র ফুটে ওঠেছে ।

চর্যার কবিদের মতো মধ্যযুগের কবিদের কাব্যেও স্বদেশের ধারণা আধুনিক কালের কবিদের মতো ততটা স্বচ্ছতা নিয়ে আসেনি । তা কখনো নিসর্গের মধ্যে ব্যস্ত আবার কখনো প্রকৃতিকে ভালোবেসে তার ভেতর দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে স্বদেশকে । কখনো বা মাতৃভাষাকে ভালবাসার মধ্য দিয়ে স্বদেশ প্রীতির কথা তুলে ধরা হয়েছে উদাহরণস্বরূপ মধ্যযুগের অন্যতম কবি আব্দুল হাকিমের নূরনামা কাব্যের ' বঙ্গবাণী' কাব্যাংশে দেখা যায়– 'যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী । / সেসব কাহার জন্ম নির্ণয় না জানি ।। / দেশী ভাষা বিদ্যা যায় মন ন জুয়ায় । /  নিজ দেশ ত্যাগী কেন বিদেশ ন যায় ।। /  মাতা পিতামহ ক্রমে বঙ্গেত বসতি । / দেশী ভাষা উপদেশ মনে হিত অতি । আব্দুল হাকিম ছাড়াও মধ্যযুগের অনেক কবির কবিতায় সরাসরি না হল প্রচ্ছন্নভাবে স্বদেশপ্রেম স্থান লাভ করেছে । মধ্যযুগের সর্বশেষ বড় কবি রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র তাঁর 'অন্নদামঙ্গল' কাব্যে বাংলাদেশের বর্ণনা ও গুণগান করেছেন । তাঁর আগে আলাওল এবং পরে রামনিধি গুপ্তের কবিতায় স্বদেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় । মধ্যযুগের শেষে ও আধুনিক যুগের প্রথমদিকে অর্থাৎ যুগ ও সন্ধিক্ষণের কবি ঈশ্বর গুপ্ত জন্মভূমিকে মায়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন তার স্বদেশ প্রীতি ও জন্মভূমি কবিতায়ই সর্বপ্রথম স্বদেশপ্রেম অত্যন্ত জীবন্ত হয়ে উঠেছে । ' জানো না কিন্নর তুমি / জননী জন্মভূমি / যে তোমার হৃদয়ে রেখেছে ।।/  থাকিয়া মায়ের কোলে / সন্তানের জননী ভুলে / কে কোথায় এমন দেখেছে?

উনবিংশ শতাব্দীতে সমগ্র ভারতে জাতীয়তাবাদের ভাবনার বিস্তার ঘটেছিল । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধপরবর্তী কালে উপনিবেশিকবাদের অবসান সমগ্র পৃথিবীতে এক অপরিহার্য পরিণতি হিসেবে জাতীয়তাবোধের জন্ম দিয়েছিল । পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এই সময় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মাধ্যমে উপনিবেশিকতাবাদের অবসান ঘটিয়ে স্বাধীনতার আস্বাদ গ্রহণ করে । ভারতবর্ষে প্রায় ২০০ বছর ধরে ইংরেজ উপনিবেশিকতাবাদের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল । এদেশে অহিংস আন্দোলনের পাশাপাশি সশস্ত্র বিপ্লব ইংরেজ শাসককে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য করেছিল । সে সময়ে সাহিত্যে, সঙ্গীতে, নাটকে, কবিতায় ইংরেজ শাসকের স্বৈরাচারী দিকটি প্রকটভাবে প্রকাশিত হয়েছিল । সেই সাথে সাধারণ জনগণের মধ্যে দেশাত্মবোধের চেতনা জাগ্রত হয়েছিল । ১৮৮২ সালে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত 'আনন্দমঠ' উপন্যাসের সংস্কৃত-বাংলা মিশ্রভাষায় রচিত একটি বন্দনাগীতি একদিকে জাতীয়তাবাদকে উদ্বুদ্ধ করতে যেমন মন্ত্রের মতো কাজ করেছিল পাশাপাশি ইংরেজ উপনিবেশিকতাবাদের ভিতকেও নাড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল । পৃথিবীর সব দেশে সর্বযুগে প্রকৃত লেখকরা তাঁদের সাহিত্যের মধ্যে স্বদেশচেতনা ও জাতীয়তাবোধের চেতনাকে ধারণ করে থাকেন । মধুসূদনও ( ১৮২৪– ১৮৭৩ ) দক্ষতার সাথে এটিকে ধারণ করে নিপুণ হাতে অনবদ্য সাহিত্যসম্ভার সৃষ্টি করেছিলেন । তাঁর রচনায় স্বদেশভাবনা ঐকান্তিক রূপে বিকশিত হয়েছিল । স্বদেশের প্রতি তার ভালোবাসার প্রকাশ সুদূর ভার্সাই নগরীতে বসে লেখা 'কপোতাক্ষ নদ' কবিতাটি উজ্জ্বল নিদর্শন । তাঁর সৃষ্টিতে পৌরাণিক ভাবনার মধ্যে যুগচেতনার সুচিত্রিত প্রকাশে স্বদেশভাবনা পূর্ণতা লাভ করেছে । এই সময়ের কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ( ১৮৩৮–১৯০৩ ) রচনা করেন বৃত্রসংহার ( ১৮৭৫–৭৭ ) । তিনি শুধু একজন কবি ছিলেন না একজন একনিষ্ঠ দেশপ্রেমিকও ছিলেন ১৮৬৫ সালে প্রকাশিত তার রচনা 'বীরবাহু' কাব্যে তিনি প্রকাশ্যে ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা করেছিলেন । ১৮৭৫ সালে 'পলাশীর যুদ্ধ' মহাকাব্য প্রকাশিত হলে কবি নবীনচন্দ্র সেন ( ১৮৪৭–১৯০৯ ) ব্রিটিশ সরকারের রোষানলে পড়েছিলেন স্বজাতিবোধ ও স্বদেশানুরাগ ছিল তাঁর কাব্যের মূল সুর যা তাঁর কবিত্ব শক্তিকে উদ্দীপিত করেছিল । নবীনচন্দ্রের চিন্তাভাবনা অনেক পরিমানে বঙ্কিমচন্দ্রের দ্বারা প্রভাবিত ছিল ।

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 'বাংলার মাটি বাংলার জল' গানটি রচনা করেন । তাঁর অকৃত্রিম মানবতাবোধ থেকে উঠে এসেছে দেশপ্রেম । জগতের আনন্দযজ্ঞে ভারতীয়ত্বের শুভ সূচনার বিশ্বায়ন ঘটেছে রবীন্দ্রনাথেরই হাত ধরে । আধুনিক দুনিয়ার বিশ্বায়নের স্থায়ী ছাপ রেখেছে তার স্বদেশভাবনা। তাই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধায় দেশের মানুষ জাতীয় সংগীত গেয়ে ওঠে–'জনগণমন অধিনায়ক জয় হে / ভারত ভাগ্য বিধাতা । তিনি উদাত্ত কন্ঠে উচ্চারণ করেন– হে মোর চিত্ত পুণ্য তীর্থে জাগোরে ধীরে / এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে' ।

বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলাম ( ১৮৯৯–১৯৭৩ ) এক বিস্ময়কর প্রতিভা । তাঁর কাব্যভুবন নানা রঙে, নানা বর্ণে রঞ্জিত । বহু ভাবনা তাঁর কাব্যের অঙ্গনের পরিধিকে বিস্তৃত করেছে । তাঁর শক্তিশালী কাব্যভাবনার একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য স্বদেশপ্রেম । ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় তাঁর জাতীয়তাবাদী চেতনায় সমৃদ্ধ কবিতাসমূহ দেশবাসীর মনে স্বদেশপ্রেম উজ্জীবিত করতে সক্ষম হয়েছিল । তাঁর অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশি, সাম্যবাদী, সর্বহারা, ফনিমনসা ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থ তার উজ্জ্বল উদাহরণ । তাঁর বিদ্রোহী, কান্ডারী হুঁশিয়ার, আমার কৈফিয়ত, আগমনী ইত্যাদি কবিতায় অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রকাশ পেয়েছে । কবি নজরুলের কবিতায় দেশাত্মবোধের পাশাপাশি মানবপ্রেম ও প্রকাশ পেয়েছে । পরাধীন ভারতবর্ষে সংগঠিত স্বাধীনতা সংগ্রামে নজরুল দেশবাসীকে সশস্ত্র বিপ্লবের মন্ত্র দীক্ষিত করেন । আসন্ন স্বাধীনতা সম্পর্কে তিনি ছিলেন গভীর আশাবাদী । দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা ছিল বলেই তিনি উচ্চারণ করেন–'ওই গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায় ভারতের দিবাকর / উদিবে সে রবি আমাদেরই খুনে রাঙিয়া পুনর্বার'  ( কান্ডারী হুশিয়ার ) ।

দেশভাগের যন্ত্রণা এবং উদ্বাস্তুজীবন বাংলাকবিতায় এক নতুন ধারার জন্ম দেয় । ইতিহাসের চেতনার সঙ্গে দেশবিভাজনের ট্রমাতাড়িত মানুষের জীবনের তীব্র ট্রাজেডিকে ঘিরে গভীর অনুভূতির প্রকাশ পেয়েছে সেইসময়ের কবিতায় । দ্বিজাতিতত্ত্বের খাঁড়ার ঘায়ে ভাগ হওয়া রাষ্ট্রের যে যন্ত্রণা আমাদের দেশের স্বাধীনতার প্রাক্কালে শুরু হয়েছিল তা যেন আজও এই ভূখণ্ডের মানুষের পিছু ছাড়ছে না । সেই যে স্বাধীনতার তাৎক্ষণিক ঘোষণায় 'বাংলার লক্ষ্য গ্রাম নিরাশার আলোহীনতায় ডুবে নিস্তব্ধ নিস্তেল ( ১৯৪৬–৪৭ / জীবনানন্দ দাশ ) তা অতি সম্প্রতিক মুহূর্তেও কুটিল দংশন করতে ছাড়ছে না । কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত 'পূর্ব-পশ্চিম', 'উদ্বাস্তু' কবিতায় দেশভাগের যে যন্ত্রনা ফুটিয়ে তুলেছেন এই উপমহাদেশের ভূখণ্ডে তা কিছুদিন পরপরই যেন ঘুরে ফিরে আসে ।স্বাধীনতার কালের সময় থেকে বাংলাকবিতা দেশভাগ ও দেশত্যাগ স্মৃতিকাতর হয়ে উচ্চারিত হয়েছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতায় । ঘুরে ফিরে এসেছে দেশভাগ তার 'যদি নির্বাসন দাও', ,জনমদুখিনী, 'দুঃখের গল্প' 'সাঁকোটা দুলছে' কবিতাগুলোতে । স্মৃতিকাতরতায় কবিকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে । শঙ্খ ঘোষের কবিতায়ও দেশভাগ,জন্মভূমি, উদ্বাস্ত জীবন এক বিশেষ অনুষঙ্গ । দ্বিখন্ডিত দেশের বেদনায় রয়েছে দেশপ্রেমের নিহিত পাতাল ছায়া । খন্ডিত ভূখণ্ডকে নিয়ে নতুন ভাবে বাঁচার ভাবনা এসেছে সেই সব কবির চেতনায় যাঁরা দেশবিভাগ দেখেছেন কাছে থেকে । যাঁরা তার শিকার হয়েছেন । তাঁদের কবিতায় দেশভাগের প্রত্যক্ষ অভিঘাত প্রভাব পড়েছে । নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, উৎপল কুমার বসু, তারাপদ রায়, মিহির দেব, স্বপন সেনগুপ্ত, দিলীপ দাস প্রমুখের কবিতায় দেশভাগ এবং নতুন দেশের অনুভূতি নতুন দেশকে ঘিরে স্বপ্ন,  প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির বেদনা ইত্যাদি ফুটে উঠেছে নতুন ধারার কবিতায় ।

নতুন জন্ম নেওয়া দেশ, নতুন ভূখণ্ড, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো প্রাদেশিক চেতনাকে নিয়ে সম্মিলিত দেশাত্মবোধ, স্বদেশপ্রেম নতুন মাত্রায় দেখা দিয়েছে বর্তমান প্রজন্মের কাছে । তাঁদের পূর্বসূরী দেখিয়ে দেন সেই পথ । নতুন দেশভাবনার পাঠ দেন উত্তর-পূর্বের শ্রেষ্ঠ কবি শক্তিপদ ব্রহ্মচারী– 'যে কেড়েছে বাস্তুভিটে, সেই করেছে ভয় / আকাশ জুড়ে লেখা আমার আত্মপরিচয় / হিংসাজয়ী যুদ্ধে যাব আর হবেনা ভুল / মেখলা পরা বোন দিয়েছে একখানা তাম্বুল ! / এবার আমি পাঠ নিয়েছি আর কিছুতে নয় /  ভাষাবিহীন ভালোবাসার বিশ্ববিদ্যালয় / বাংলা আমার আই ভাষা গো বিশ্ব আমার ঠাঁই, / প্রফুল্ল ও ভৃগু আমার খুল্লতাত ভাই ।' এখানেই রয়েছে নতুন স্বদেশচেতনার বোধ । বহভাষাভাষী মানুষের বহুত্ববোধের ভাবনা । বিভিন্ন জাতি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে সহানুভূতি ভ্রাতৃত্ববোধ ও বোঝাপড়া গড়ে তোলার এবং তাদের মধ্যে শান্তি ও সহযোগিতার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার কথা থাকে স্বাধীন ভারতবর্ষে । 

স্বদেশ প্রেমের স্বরূপ হল নিজের দেশের জনগোষ্ঠীর প্রতি প্রেম সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রেম ও রাজনৈতিক চিন্তা চেতনার মাধ্যমে মাতৃভূমির বিভিন্ন বিষয়ে সুরক্ষার প্রচেষ্টা । সেই চেতনায় আজকের কবি লেখেন– 'একটা কুয়োর ভেতর থেকে কিভাবে জেগে উঠছে অন্য পৃথিবী । / মাঠের ভেতর সাধারণ একটা কুয়ো, কিভাবে আজও আমাদের হাতে ধরে এগিয়ে নিয়ে চলেছে অন্ধকার থেকে আলোর পথে । ( জালিয়ান ওয়ালাবাগ/ সৌমিত বসু ) । আমাদের স্বাধীনতা ইতিহাসের এক নৃশংস ঘটনাকে প্রতিটি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে কবি দেশের স্বাধীনতাকে জেগে ওঠার কথা ব্যক্ত করছেন, 'একটা কুয়োর ভেতর যদি ঢুকে পড়ে গোটা পাঞ্জাব কিংবা গ্যালন / গ্যালন রক্ত,/  ঠিক তখনই জেগে উঠে ফিনিক্স পাখিরা, / আশ্চর্যভাবে ডানা মেলে জন্ম নেয় কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী / হাজার হাজার মানুষের বুকে এঁটে থাকা ঘৃণ্য বুলেট, সমস্ত গা বেয়ে / গড়িয়ে পড়া গরম কুমকুম । / আজও আমি অবাক হয়ে দেখি একটা কুয়োর ভেতর থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসছে উন্মুক্ত কৃপাণ / একটা কুয়োর ভেতর থেকে কিভাবে জেগে উঠছে ভারতের স্বাধীনতা । । ( জালিয়ানওয়ালাবাগ সৌমিত বসু ত্রিধারা আগস্ট ২০২২ ) । দেশ ভাবনায় স্নাত হওয়া আরেক কবি লেখেন– 'শোনো লোলিতা, যার মা নেই সে পরাধীন–তার আগুনে / আলো নেই / তার চোখের জলে আগুন নেই / কেবল আলো ডাক পাওয়ার জন্য অনেক অযুত নিযুত / অন্ধকার তাকিয়ে আছে । / আগামী বলে দেবে কবিতার ভিতরে কতটা নক্ষত্র ছুঁয়ে / মাকে জড়িয়ে আছে মূলে / হে ভারত হে ভার্গব গীতবিতান আমার ! ( আলোগান / সুনীল মাজি, জলপাই দ্বীপের আলো, ব্লগজিন, আশ্বিন, ১৪২৮ ) । এই সময়ের কবির কাছে 'দেশ আসলে তোরণের মতো যেখানে লেখা থাকে / ওয়েলকাম / পতাকার ছায়ায় খুব নিবিড় হয়ে দেশ ঘুমোয় । / নির্জন সাঁকোতে বাঁশি বাজতে থাকে । / জাতীয় পশু ও জাতীয় পাখি থাকা মানে একটা / দেশ থাকা / দেশজুড়ে হাওয়া গানের সুরে ডুবে যেতে যেতে / আমি কেবল দেশ আঁকি, মানচিত্র আঁকি । (দেশ / সুবীর সরকার,ত্রিধারা, আগস্ট ২০২২ ) ।

ধীরে ধীরে স্বাধীন ভারতবর্ষ ৭৫ বছর পেরিয়ে এসেছে । ১২ মার্চ ২০২৩ থেকে দেশ জুড়ে পালিত হয়েছে আজাদী কা অমৃত মহোৎসব । স্বাধীনতাযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো, তাদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করা, উপলব্ধি করা এবং নতুন প্রজন্মের কাছে দেশের ভার তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে ইতিহাসের পাঠ নেওয়া এই উৎসবের নিহিত বার্তা । নতুন প্রজন্ম আজ দেশের প্রধান মুখ । সাহিত্যে তাদের দেশভাবনা কিভাবে কতটা প্রকাশিত হচ্ছে তাও আজ আলোচনার বিষয় । অনেকে বলছেন, আজকের প্রজন্ম শুধুমাত্র ক্যারিয়ারের পেছনে ছুটছে । নিজস্ব উন্নতি, প্রতিষ্ঠার পেছনে তারা নিজেকে নিয়োজিত রাখছে । দেশ ও জাতির প্রতি কর্তব্যে তাদের মধ্যে অনীহা দেখা যাচ্ছে । আসলে কিন্তু তা নয় । নতুন প্রজন্মের সৃজনে, কবিতায় প্রতিফলন ঘটছে স্বদেশপ্রেমের । পূর্বজদের ভাবনা, তাদের দেশভাগের যন্ত্রণা, ইতিহাস চেতনাকে আধার করে এই প্রজন্মের কবিরা তাদের সৃষ্টিকে তুলে ধরেছেন । তারা স্পষ্টই জানেন আমাদের দেশের স্বাধীনতা কিভাবে এসেছে । তাঁদের বোধে রয়েছে 'শীততাপ বিছানা ছেড়ে বনবাদাড়কে করেছিলে বালিশ /কাবুলি, কাগজ-ওয়ালার কষ্টরূপ নিয়ে খুঁজেছ মুক্তির পথ–/  সয়েছ বুটের ঘা, গারদের কামড়, সহযোগীর কষ্ট করুণ চোখের ভাষা / জানি / পঁচাত্তর বছর মানে সাড়ে সাতষট্টি হাজার দিন আমাদের বোধোদয়ে / নেহাত কম নয়; ( অধিনায়ক, দুই / চন্দন পাল, ত্রিধারা ২০২১ ) । আর এক কবি উচ্চারণ করেন, 'আশ্বিনের প্রতীক্ষার শেষে সোনাঝরা সকাল / বেড়িয়ে আসি পাখিদের সাথে ধান শির শিস দেখে /  বুনো পাখি জানে এ ধান তার, আমি জানি আমার / এক মুঠো ধান হতে শত মুঠো ধানে খুঁজি আমি-/  অমিয় মাতৃদুগ্ধ, পাখি খোঁজে জীবন বেনামী । / আর গেয়ে উঠি পাখিদের সাথে মনের কথা / ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথা ( অমিয় মাতৃদুগ্ধ / রাজীব পাল, ত্রিধারা, আগস্ট ২০২১ ) । এই সময়ের শক্তিমান মেধাবী ও অগ্রজ কবি লেখেন, ১. ঋত্বিক ঘটকের / বঙ্গবালার মুখের মতো চাঁদ /  লিখেছি প্রেমের পত্রে, / স্বাধীনতা, তুমি / বলেছিলে, যেন / গান্ধীর হাতে ভাঙা বাংলা অক্ষরের / ছাঁচ ! ২.  ভালবাসা পেলে সব /লন্ডভন্ড করে যাব না, বরং লণ্ডভণ্ডকে দেব / বিদগ্ধ সৃজন । / যেদিকে চোখ যায়, যাব না / যাব না বরং সৃষ্টিকে পায়সান্ন করে খাব / সম্পন্নের মতো ( দুটো মন্ত্র / মিলন কান্তি দত্ত, জলপাই দ্বীপের আলো, ব্লগজিন, আশ্বিন ১৪২৮ ) । কবির বার্তা এখানে ধ্বংসাত্মক নয় । বাংলাদেশের কবি রফিক আজাদের মতো তিনি মানচিত্র ছিঁড়ে খাবার আগ্রাসী ক্ষুধা প্রদর্শন করেন না । তিনি বরং বিদগ্ধ সৃজনের কথা বলেন । কবি সত্যজিৎ দত্তের উচ্চারণেও এরকম স্বাধীন ভাবনার প্রকাশ পেয়েছে । 'পতাকা উড়ছে দিব্যি এখন / দিনে এবং রাতে / ঘর চাইলাম, কাপড় দেহে /ভাত চাইলাম পাতে / হাত রয়েছে জোড়া জোড়া / কাজ চাইলাম হাতে / পতাকা উড়ছে দিব্যি এখন / দিনে এবং রাতে ( পতাকা / সত্যজিৎ দত্ত, ত্রিধারা, আগস্ট, ২০২২ ) । চলমান শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের প্রারম্ভেই শুরু হয়েছে স্বিধীনতার অমৃতকাল । এই সময়ের নবীন কবিদের কবিতায় কালের ছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে । সময়ের গমনকে তাঁরা অনুসরণ করেন তাঁদের কবিতায় । এই প্রজন্মের কবিদের কাছে 'দেশ বলতে কেবল মানচিত্র নয় / শুধুই দেশের মাটি নয় / ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটিয়ে যাদের রোজগার / বরফের চাদরে যারা সীমান্ত রক্ষা করে / বর্শা নিক্ষেপ করে শত কোটি মানুষের / লজ্জাকে সম্মানে বদলে দেয় / এরাই তো গর্বের দেশ, দেশের প্রকৃত কান্ডারী ।' ( দেশপ্রেম / রঞ্জিত রায়, ত্রিধারা, আগস্ট ২০২১ ) । এই সময়ের কবি স্পষ্টভাবেই বলেন– 'পূর্বপুরুষ থেকে প্রাপ্ত রক্তে এখনো কিছু বিন্দু বেঁচে / আছে দেশপ্রেম, /  টগবগে করা স্নায়ু, চোখে জল গড়াতেই চোখ খুলে দেখি / পতাকার মাঝে ভারত মা বিশ্বাসের চোখে আহবান করছে/ যাকে আমি সেদিন ছত্রিশগড়ের দন্তে বাড়ায় দেখেছি মোমবাতি হাতে / বলছে– / এসো আমার অমৃতপুত্র, সূর্যসন্তান, আমি জানি আমার অস্তিত্ব বাঁচাতে / প্রাণ দিতে এবং নিতে তোমরা পিছপা হবে না কখনো । ( সেই দিন পুলবামাতে / অমিত সরকার / । অতি সাম্প্রতিক সময়ের কয়েকজন প্রতিনিধিস্থানীয় কবীদের কবিতায় দেখছি দেশপ্রেম বা দেশ ভাবনা নানা আঙ্গিকে ধরা দিচ্ছে—

১. বিপ্লবীদের স্বপ্ন সত্যি হোক, /  আমাদের হাত ধরে । / স্বাধীন গান গাইব তখন / স্বাধীনতার তরে । ( স্বাধীনতা কাগজের বুকে / সম্রাট শীল ) ।
  ২. শতাব্দীর জনরোলে নন্দিত হয় বীর শহীদদের আত্মা, / বেজে ওঠে নম্র শপথ, তোমাদের রক্তঋণ ভোলার নয় । / আমাদের প্রতিটি রোম কুপিয়ে ভালোবাসার পরশ / সূর্যস্নাত ভোরের পুণ্য আলোয় বেঁচে থাকুক শহীদেরা ( বীর শহীদ / গোপাল বণিক ) ।

৩. দেশ মানে শহীদের রক্তরাঙা /  স্বাধীনতার সূর্য / দেশ মানে একতার মন্ত্র গাথা / আমার ভারতবর্ষ ( দেশ মানে / পিংকু চন্দ ) ।

৪. বয়স্ক কাঁটাতারে তর্জনী ছোঁয়ালেই /  কোথা থেকে যেন ভেসে আসে বিপ্লবের গর্জন, / আমার বন্য সুখের নির্জনতায় /  কফিন ভর্তি স্বদেশীদের যুদ্ধের সূত্র লুকিয়ে... / আর আমার মানচিত্রে ইতিহাস গড়তে / ঘর দখল করেছে আগামীর সুভাষ ( ঘর দখল পলাশ পাল ) ।
    ৫. তেরঙার মাথায় আগুন বরণ বাঁধা / সে আগুন বুকে নিয়ে জাগো / যজ্ঞের ভারতের উজ্জ্বলতা পুনর্জাগরণে  । /  যতই হোক জমাট বাধা দুর্গন্ধবেদীমূলে / উত্তরে তেরঙ্গা উজ্জ্বলতায় সাহস ও স্বপ্ন পাই ( তেরঙার বেদীমূলে / পঙ্কজ কান্তি মালাকার / ।

৭. স্বর্গের দেশ ঘুমিয়ে আছে বুকের উপর / নিশ্চিন্তে শ্বাস নিচ্ছি শান্তিপুরে / ভেতরে আমি অহংকারী ভাবি / ভারতের রক্ত গোটা শরীরজুড়ে ( জীবননদী / রাহুল শীল ) ।
৮. দেশপ্রেমে মাতোয়ারা হয়ে; / আজীবন থাকতে চাই দেশে । /  ভালবাসতে চাই এই দেশকে । / মৃত্যুর পরেও যেন ফিরতে চাই নানারূপে ( ফিরতে চাই দেশে / সুরমা আকতার ) ।

দেশাত্মবোধক কবিতার মধ্য দিয়ে যে আন্তরিকতা ও দেশপ্রেমের দৃঢ় অনুভূতি প্রকাশ পায় তা বর্তমান প্রজন্মের কবিদের মধ্যেও সমানভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে । কবিতায় দেশের প্রতি ভালোবাসা, দেশভাবনা ও দেশপ্রেম প্রদর্শনের মাধ্যমে কবি মিশে যেতে পারেন দেশের প্রকৃতি ও মাটির অফুরন্ত গুণ ও সৌন্দর্য আহরণে । প্রকৃত দেশপ্রেমের কবিতা শুধুমাত্র একটি ভূখণ্ডের থাকে না । তা হয়ে ওঠে সত্যিকারের বিশ্বমাত্রার কবিতা । কবি ও পান বিশ্বমাতৃক পরিচিতি । এই প্রজন্মের কবিদের কবিতায় আমাদের দেশের স্বাধীনতাযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ, দেশরক্ষায় অতন্দ্র সৈনিকের লড়াইকে ঘিরে দেশাত্মবোধক কাব্যসৃজন এদেশের মাটি ও নিসর্গ সৌন্দর্যকে আবর্তন করে মুখর হয়ে ওঠে । অতি সাম্প্রতিক কবিদের সৃজনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে দেশের স্বাধীনতা রক্ষার স্বপ্ন যা তাদের আজন্ম অর্জন । সময়ের প্রতিঘাতে বাংলাকবিতায় বহু বাঁকবদল ঘটেছে । আমাদের কয়েক দশকের হতাশাদীর্ণ কবিতা অতিক্রম করে সমকালের কবিরা আবার তাঁদের শব্দ কুশলতা ও ভাষা ব্যবহারের দক্ষতায় দেশপ্রেম প্রকাশের বৈচিত্র অনুভব করছেন । এও এক আশার সৃজন ।

Thursday, July 11, 2024

অশোকানন্দ রায়বর্ধনের পরিচয়পঞ্জী

আমার সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জী ও সাহিত্যকর্ম
১) নাম : অশোকানন্দ রায়বর্ধন
২) বাবাi ও মার নাম : প্রয়াত মনোরঞ্জন বর্ধন, ঊষারানি বর্ধন
৩) জন্মের তারিখ : ১১ জানুয়ারি, ১৯৫৬

৫) পেশা : অবসরপ্রাপ্ত সরকারি বিদ্যালয় পরিদর্শক
৬) শিক্ষাগত যোগ্যতা : বাংলা
ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ও বিএড 
৭) সংক্ষিপ্ত পরিচয় :
জীবনের প্রথম পাঠ শুরু ডিব্রুগড় শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ প্রতিষ্ঠিত অখণ্ডমণ্ডলেশ্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে । পরবর্তী সময়ে বাবার চাকরির সুবাদে ত্রিপুরার পেচার‌থল, বক্সনগর,কুলাইসহ বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন ধলাই জেলার কুলাই হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে ষষ্ঠ থেকে একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন  ( ১৯৭৩ )। বিলোনিয়া মহাবিদ্যালয় ( অধুনা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাবিদ্যালয় ) থেকে ১৯৭৬ সালে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেছেন । ১০৭৯ সালে সহকারী শিক্ষক হিসাবে সাব্রুম উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয় যোগদান করেন । পরবর্তী সময়ে পদোন্নতি পেয়ে প্রধানশিক্ষক পদে দায়িত্ব পালন করেন জয়কুমার রোয়াজা পাড়া উচ্চ বুনিয়াদি বিদ্যালয় এবং উত্তর দৌলবাড়ি উচ্চ বনিয়াদী বিদ্যালয়ে । ২০১৫ সালে বিদ্যালয়ের পরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতি পান এবং সরাসরি বিদ্যালয় পরিদর্শক পদে যথেষ্ট  নিষ্ঠার সাথে কাজ করে ২০১৬ সালে অবসর গ্রহণ করেন ।


৮ ) সাহিত্যকর্ম : 

সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় বিদ্যালয়ের মুখপত্র 'আন্তর'-এ কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে তাঁর লেখালেখি শুরু । নবম শ্রেণিতে পাঠকালীন বিদ্যাiukলয়ের মুখপত্রের সম্পাদনার দায়িত্ব পান । কবি হিসেবে পরিচিতি শুরু হলেও তিনি রাজ্যের একজন সাহিত্যসমালোচনা ও সমাজবিষয়ক প্রবন্ধরচনাকার । লোকসংস্কৃতি ও আঞ্চলিক ইতিহাসবিষয়ক গবেষণাকর্মে রত ।ইতোমধ্যে তাঁর বহু কবিতা, গল্প ও গবেষণামূলক প্রবন্ধ দেশের ও দেশের বাইরে নানা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে । অনেকগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনারে তিনি তাঁর গবেষণামূলক প্রবন্ধ পাঠ করে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছেন । ইন্টারনেট ব্যবস্থার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ার ফলে ইতোমধ্যে ভারতে ও ভারতের বাইরের বিভিন্ন স্থানের বেশ কয়েকটি  সাহিত্য ও লোকসংস্কৃতি বিষয়ক ওয়েবিনারে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি । এই বয়সেও সংস্কৃতি ও আঞ্চলিক 
ইতিহাস নিয়ে নিরন্তর গবেষণা ও লেখালেখিতে রত আছেন। নিজের গবেষণা সংক্রান্ত কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি না থাকলেও রাজ্যের বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট গবেষকের গবেষণাপত্র রচনা ক্ষেত্রে ক্ষেত্রসমীক্ষা ও অন্যান্য বিষয়ে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তিনি ।সংশ্লিষ্ট গবেষকগণও তাঁদের গবেষণাপত্রে তাঁর সাহচর্য বিষয়ে বেশ যত্ন সহকারে উল্লেখ্য করেছেন । সেই সুবাদে সম্প্রতি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষিকা ইশিতা ভৌমিকের গবেষণাপত্রের সহতত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব ও পালন করেছেন তিনি । 
তিনি নাটক লেখা ও অভিনয়েও দক্ষ ।জীবনে বহু নাটকে অভিনয় করেছেন । নাটক লিখেছেন । নাট্যকর্মশালায় প্রশিক্ষণের দায়িত্ব পালন করেছেন । 'ভাঙন' ও 'রাঙামাটির পথে' নামে ত্রিপুরার দুটি টেলিফিল্মে অভিনয় করে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেন ।
রেছেন ।বর্তমানে তিনি বেশ কয়েকটি সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত রয়েছেন । তিনি ত্রিপুরা ওয়ার্কিং জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের রাজ্য কমিটির উপদেষ্টামন্ডলীরও অন্যতম সদস্য । সামাজিক কাজকর্ম, সাহিত্যসৃষ্টি ও গবেষণাকর্মের মধ্যে ডুবে থেকেই তিনি তাঁর বর্তমান অবসর জীবন অতিবাহিত করছেন ।

৯) প্রকাশিত গ্রন্থের তালিকা :

    ক) ত্রিপুরার লোকসমাজ ও সংস্কৃতি ( প্রবন্ধ ), ভাষা, আগরতলা ২০০২ 
    খ) বিনীত চুম্বন ( কবিতা ),  89স্রোত, কুমারঘাট, ২০০৭ 
     গ) ত্রিপুরার লোকসংস্কৃতির তত্ত্বরূপ সন্ধান ও বিষয়বিন্যাস ও বিষয় বিন্যাস (প্রবন্ধ ), স্রোত, কুমারঘাট ২০১৩ 
      ঘ) ত্রিপুরার মগ জনজাতির ইতিহাস ও সংস্কৃতি ( প্রবন্ধ সম্পাদনা ), স্রোত, কুমারঘাট, ২০১৬
i        চ ) জোছনার হাওরে বলিরেখা ( কবিতা ), ত্রিধারা, ২০২২ 
        ছ )  অন্তরে দহন অনন্ত ( মুক্তগদ্য ), ত্রিধারা, ২০২৩ 
         জ ) কুসুমে কুসুমে রেখে যাওয়া চরণচিহ্ন :99 ত্রিপুরায় রবীন্দ্র পদার্পণের ১২৫ বছর ( প্রবন্ধ ), স্রোত, ২০২৩ 
          ঝ ) ফেনী নদীর প্রত্নকথা ও মানুষের উপখ্যান ( আঞ্চলিক ইতিহাস ), স্রোত, ২০২৩ 
          ঞ ) ত্রিপুরার লোক ধর্ম ও লোকাচার ( প্রবন্ধ ) অন্যপাঠ , ২০২৩

১০)  সম্মান,পুরস্কার ও স্বীকৃতি :

           ক ) অগ্রণী পুরস্কার, বিলোনিয়া, ত্রিপুরা ১৯৭৫
           খ ) সংবাদ সাহিত্য পুরস্কার, আগরতলা, ১৯৯৫ 
            গ ) লোকসংস্কৃতি সম্মাননা, মনুবাজার,২০১৫
             ঘ ) সাহিত্য সম্মান– তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর, ত্রিপুরা সরকার ২০১৭
            ঙ ) সমভূমি সাহিত্য সম্মান, বাইখোরা,  দ. ত্রিপুরা ২০১৭
             চ ) সৃজন সাহিত্য সম্মান, ইসলামপুর, উত্তর দিনাlজপুর, প. বঙ্গ, ২০১৮
             ছ ) স্রোত রজতজয়ন্তী প্রকাশনা উৎসব সম্মাননা, সুকান্ত একাডেমি আগরতলা, ২০১৯ 
             জ ) বনতট সাহিত্য সম্মান, কাঞ্চনপুর, উত্তর ত্রিপুরা ২০২০ 
             ঝ ) দেবদ্বীপ সম্মান, শান্তির বাজার, ২০২২ 
              ঞ ) গবেষক সংবর্ধনা, ত্রিপুরা রবীন্দ্র পরিষদ, উদয়পুর ২০২৩
              চ ) বরিষ্ঠ সাংবাদিক সম্মাননা, ত্রিপুরা ওয়ার্কিং জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন, আগরতলা, ২০২৪
               ছ )ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সম্মাননা, বিশ্ব বাঙালি সংসদ বাংলাদেশ, ঢাকা ২০২৪
               জ) সৃষ্টি সাহিত্য সম্মান ২০২৪, সৃষ্টি সাহিত্য পত্রিকা, নলুয়া বিলোনিয়া ।

এছাড়া জাতীয় শিশু বিজ্ঞান কংগ্রেসের 'প্রজেক্ট গাইড' হিসেবে রাষ্ট্রীয় সম্মান ২০০৩ প্রাপক ।

Thursday, June 13, 2024

'মধ্যাহ্নে' কবিতার পাঠগ্রহণ

আমি তিয়াত্তর সালের ওল্ড হায়ার সেকেন্ডারি ( নবম,দশম,একাদশ ) । অক্ষয়কুমার বড়ালের 'মধ্যাহ্নে'  কবিতাটি আমাদের পাঠ্যসূচিতে ছিল । গল্পকার মানিক চক্রবর্তী ও দেবতোষ চৌধুরী ( জুলাই হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল ) ছিলেন আমাদের বাংলার শিক্ষক । ক্লাশ টেনে মানিক স্যর অসাধারণ বর্ণনায় পড়াতেন কবিতাটি । ইলাভেনে রিভিশনের সময় দেবতোষ স্যর আবার পড়িয়েছিলেন। আজো মনে আছে ।

Friday, May 3, 2024

সরস্বতী ও কুন্তী : কিছু কথা 

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

সরস্বতী ও কুন্তী দুটোই নদী । পশ্চিমবঙ্গের হুগলির সপ্তগ্রামের কাছে ত্রিবেণীর শ্মশান‌ঘাটের পাশে সরস্বতী নদী গঙ্গায় মিশেছে । একসময় সপ্তগ্রাম ও ত্রিবেণী শিক্ষা ও সংস্কৃতির পীঠস্থান ছিল । তেমনি পূর্বভারতে সপ্তগ্রাম বড়ো বাণিজ্যবন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল । এই তিন নদীকে কেন্দ্র করে চলত ব্যবসা-বাণিজ্য । কলকাতার আগেই সপ্তগ্রাম ছিল বাংলার বাণিজ্য কেন্দ্র । বাংলার প্রাচীন জনপদ ও পবিত্র স্থান হল এই ত্রিবেণী । ব্যান্ডেল জংশন থেকে ৫ মাইল দূরে অবস্থিত এখানে গঙ্গা-কুন্তী ও সরস্বতীর মিলন ঘটেছে । প্রয়াগের সরস্বতী নদী অন্তঃলিলা । আর হুগলির ত্রিবেণীতে গঙ্গা-সরস্বতী মুক্ত । এই স্থানকে বলা হয় মুক্তবেণী ।  সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতায় পাই– 'মুক্তবেণীর গঙ্গা যেথায় মুক্তি বিতরে রঙ্গে / আমরা বাঙালি বাস করি সেই তীর্থে বরদ বঙ্গে ।' ত্রিবেণীতে গঙ্গাস্নান হিন্দুদের পবিত্র কৃষ্টি । দ্বাদশ শতাব্দীতে রচিত ধোয়ীর  'পবনদূতম' কাব্যে এর উল্লেখ রয়েছে । মুসলমান ঐতিহাসিকগণ এই স্থানকে 'তিরপানি' ও 'ফিরোজাবাদ' নাম দিয়েছেন । ফিরোজ শাহ কিছুকাল এখানে রাজত্ব করেছিলেন । ত্রিবেণীতে মুসলমান আমলের কীর্তি 'জাফরখান মসজিদ' রয়েছে । কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম লিখেছেন– 'বামদিকে হালিশহর দক্ষিণে ত্রিবেণী / যাত্রীদের কোলাহলে কিছুই না শুনি ।' হুগলির ত্রিবেণীও প্রয়াগরাজেরই সংস্করণ । তথ্য বলে, ১৩০৯ সালে শেষবার মাঘী পূর্ণিমায় কুম্ভস্নান হয়েছিল এই তিন নদীর সঙ্গমস্থলে মুসলিম আক্রমণের পর বা ইংরেজ আমলে এই ঐতিহ্য নষ্ট হয়ে যায় ১৯৭৯ সালে কানাডার নৃতত্ত্ববিদ তথা ইতিহাসবিদ অ্যালান মরিনিস ( জন্ম- ৪ ডিসেম্বর ১৯৪৯ ) অক্সফোর্ডে জমা দেওয়া গবেষণাধর্মী কাজের  সূত্রে এই তথ্য প্রকাশ করেন যে, কয়েকশো বছর আগে ত্রিবেণীতে হত কুম্ভমেলা বা কুম্ভস্নান ( Kumbh Mela in Tribeni ) । হুগলি জেলার কুন্তীঘাট বা চন্দ্রহাটি বিড়লা মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কুন্তী নদী । এ নদীও ত্রিবেণীতে মিলিত হয়েছে । কুন্তী দামোদরের একটি শাখা নদী । প্রাচীন ভৌগোলিক তথ্য ব্লেভের মানচিত্র ( ১৬৫০ ) অনুসারে দামোদরের একটি ফ্লোজ মাধ্যম প্রাচীন গুরুত্বপূর্ণ নদী নয়াসরাতে অগ্নি নদীর পাঁচ কিলোমিটার উত্তরে ত্রিবেণীতে যোগদান করেছে । গেস্টাল্ট এর মানচিত্র ( ১৫৬১ ) অনুযায়ী দামোদরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপনদী কুন্তীনদী, যা মিলিত হয় সাতগাঁওয়ের কাছে । তিনটি নদীর মিলনস্থল বলেই জায়গাটার নাম ত্রিবেণী । একসময়ের বাণিজ্যকেন্দ্র সরস্বতীনদীর সঙ্গমস্থল আজ পরিত্যক্ত । কারণ নদী তার নাব্যতা হারিয়েছে । শুধু জোয়ারের সময় একটা ক্ষীণধারার সৃষ্টি হয় ।  কুন্তীনদীর স্রোতধারা এখনও বহমান । জোয়ারের সময় তার দুকূল ভরাট হয়ে যায় । তখন নদীকে অনেক বিস্তৃত দেখা যায় ।
এছাড়া দক্ষিণে অন্ধ্রপ্রদেশেও কুন্তী নামে একটি নদীর অবস্থান জানা যায় । কুন্তীনদী  কেরালার সাইলেন্ট ভ্যালির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ।

Thursday, May 2, 2024

সরস্বতী ও কুন্তী : কিছু কথা

সরস্বতী ও কুন্তী : কিছু কথা 

অশোকানন্দ রায়বর্ধন ।

সরস্বতী ও কুন্তী দুটোই নদী । পশ্চিমবঙ্গের হুগলির সপ্তগ্রামের কাছে ত্রিবেণীর শ্মশান‌ঘাটের পাশে সরস্বতী নদী গঙ্গায় মিশেছে । একসময় সপ্তগ্রাম ও ত্রিবেণী শিক্ষা ও সংস্কৃতির পীঠস্থান ছিল । তেমনি পূর্বভারতে সপ্তগ্রাম বড়ো বাণিজ্যবন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল । এই তিন নদীকে কেন্দ্র করে চলত ব্যবসা-বাণিজ্য । কলকাতার আগেই সপ্তগ্রাম ছিল বাংলার বাণিজ্য কেন্দ্র । বাংলার প্রাচীন জনপদ ও পবিত্র স্থান হল এই ত্রিবেণী । ব্যান্ডেল জংশন থেকে ৫ মাইল দূরে অবস্থিত এখানে গঙ্গা-কুন্তী ও সরস্বতীর মিলন ঘটেছে । প্রয়াগের সরস্বতী নদী অন্তঃসলিলা । আর হুগলির ত্রিবেণীতে গঙ্গা-সরস্বতী মুক্ত । এই স্থানকে বলা হয় মুক্তবেণী ।  সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতায় পাই– 'মুক্তবেণীর গঙ্গা যেথায় মুক্তি বিতরে রঙ্গে / আমরা বাঙালি বাস করি সেই তীর্থে বরদ বঙ্গে ।' ত্রিবেণীতে গঙ্গাস্নান হিন্দুদের পবিত্র কৃষ্টি । মহাভারতের 'বনপর্বে' পুলস্ত্যমুনি হুগলির ত্রিবেণীতে কুম্ভস্নানের কথা উল্লেখ করেছেন । দ্বাদশ শতাব্দীতে রচিত ধোয়ীর  'পবনদূতম' কাব্যে এর উল্লেখ রয়েছে । মুসলমান ঐতিহাসিকগণ এই স্থানকে 'তিরপানি' ও 'ফিরোজাবাদ' নাম দিয়েছেন । ফিরোজ শাহ কিছুকাল এখানে রাজত্ব করেছিলেন । ত্রিবেণীতে মুসলমান আমলের কীর্তি 'জাফরখান মসজিদ' রয়েছে । কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম লিখেছেন– 'বামদিকে হালিশহর দক্ষিণে ত্রিবেণী / যাত্রীদের কোলাহলে কিছুই না শুনি ।' হুগলির ত্রিবেণীও প্রয়াগরাজেরই সংস্করণ । তথ্য বলে, ১৩০৯ সালে শেষবার মাঘী পূর্ণিমায় কুম্ভস্নান হয়েছিল এই তিন নদীর সঙ্গমস্থলে মুসলিম আক্রমণের পর বা ইংরেজ আমলে এই ঐতিহ্য নষ্ট হয়ে যায় ১৯৭৯ সালে কানাডার নৃতত্ত্ববিদ তথা ইতিহাসবিদ অ্যালান মরিনিস ( জন্ম- ৪ ডিসেম্বর ১৯৪৯ ) অক্সফোর্ডে জমা দেওয়া গবেষণাধর্মী কাজের  সূত্রে এই তথ্য প্রকাশ করেন যে, কয়েকশো বছর আগে ত্রিবেণীতে হত কুম্ভমেলা বা কুম্ভস্নান ( Kumbh Mela in Tribeni ) । হুগলি জেলার কুন্তীঘাট বা চন্দ্রহাটি বিড়লা মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কুন্তী নদী । এ নদীও ত্রিবেণীতে মিলিত হয়েছে । কুন্তী দামোদরের একটি শাখা নদী । প্রাচীন ভৌগোলিক তথ্য ব্লেভের মানচিত্র ( ১৬৫০ ) অনুসারে দামোদরের একটি ফ্লোজ মাধ্যম প্রাচীন গুরুত্বপূর্ণ নদী নয়াসরাতে অগ্নি নদীর পাঁচ কিলোমিটার উত্তরে ত্রিবেণীতে যোগদান করেছে । গেস্টাল্ট এর মানচিত্র ( ১৫৬১ ) অনুযায়ী দামোদরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপনদী কুন্তীনদী, যা মিলিত হয় সাতগাঁওয়ের কাছে । তিনটি নদীর মিলনস্থল বলেই জায়গাটার নাম ত্রিবেণী । একসময়ের বাণিজ্যকেন্দ্র সরস্বতীনদীর সঙ্গমস্থল আজ পরিত্যক্ত । কারণ নদী তার নাব্যতা হারিয়েছে । শুধু জোয়ারের সময় একটা ক্ষীণধারার সৃষ্টি হয় ।  কুন্তীনদীর স্রোতধারা এখনও বহমান । জোয়ারের সময় তার দুকূল ভরাট হয়ে যায় । তখন নদীকে অনেক বিস্তৃত দেখা যায় ।
এছাড়া দক্ষিণে অন্ধ্রপ্রদেশেও কুন্তী নামে একটি নদীর অবস্থান জানা যায় । কুন্তীনদী  কেরালার সাইলেন্ট ভ্যালির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ।

Monday, April 29, 2024

pension

Pension for APR24 : BP = 40500 DA = 10125 REC = 0 COMM = 6300 DIS = 0 IR = 0 OLD = 0 FMA = 500 TDS = 0 NET = 44825 TEAM PNB

Friday, April 26, 2024

My Pension from jan–24

FOR FEB21 : BP=40500 DA=00 COMM=6300 FMA= 500 NET = 34700



FROM MAR21 : BP= 40500 DA( 3% )=1225 REC=00 COMM=6300 DIS=00 IR=00 OLD=00 FMA=500 TDS=00 NET=35925 PNBHOGBD

FROM JULY22 : BP=40500 : DA (8% )=3240 REC=00
COMM=6300 DID=00 IR=00 OLD=00 FMA=500 TDS=00 NET=37940
40500 -6300 = 34200+ 500 + 38240 ( 8% DA ) =37940

FROM DEC22 : BP=40500 : DA ( 12% )= 8100 REC = 00 COMM = 6300 DID = 00 IR = 00 OLD = m00 FM 500 TDS = 00 NET = 42800
40500 - 6300 = 34200 + 500 + 8100 ( 20% DA ) = 42800

FROM JAN24 : BP=40500 : DA ( 25% )= 10125 REV =<00 COMM = 6300 DID=00 IR = 00 OLD = 00 FMA= 500 TDS = 00 NET = 44825

Tuesday, April 23, 2024

আবে জমজম ও গঙ্গার জল : মিথের সমন্বয়

আবে জমজম ও গঙ্গার জল : মিথের সমন্বয়

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

গত ১৮ এপ্রিল বাংলাদেশের ঢাকায় বিশ্ব বাঙালি সংসদের একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য যাই । কুড়ি তারিখ অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর ২১ তারিখ আমার সহযাত্রী ত্রিপুরার বিশিষ্ট গল্পকার ও প্রকাশক বিল্লাল হোসেনের এক দাদার বাড়ি মোহাম্মদপুরে যাই তার সঙ্গে দেখা করার জন্যে । বিল্লালের দাদা মোঃ এমরান ঢাকা জগন্নাথ কলেজের মাস্টার্স করা যুবক বর্তমানে ডেভেলাপার । বড়ো ব্যবসা রয়েছে তাঁর । তিনি একা বাড়িতে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন । আমরা যাওয়ার পর তিনি তাঁর আতিথেয়তায় কোন ত্রুটি রাখেননি । আমরা বারবার উঠতে চাইলেও তিনি আমাদের উঠত দিচ্ছিলেন না । আমাদের সঙ্গে জমাটি আড্ডায় মজে ছিলেন সারাক্ষণ । দুপুরে তাঁর পরিপাটি আয়োজনে আতিথেয়তা গ্রহণ করে আমরা যখন বিকেলের দিকে ফিরে আসছিলাম তখন তিনি বিল্লালের হাতে দুই শিশি 'জমজমের পানি' তুলে দেন । একটি আমার জন্যে । আসার পথে আমি অবাক হয়ে ভাবছিলাম আমার তো ছোটোবেলা থেকে 'আবে জমজমে'র প্রতি একটা আগ্রহ ছিল । বাবার স্বাস্থ্যদপ্তরে সরকারী চাকুরীসূত্রে আমার শৈশব ও কৈশোর কেটে ছিল ধলাইয়ের কুলাইতে । সেখানে চিকিৎসক ছিলেন ডা.  কাজী আবদুল মান্নান । তাঁর এক ছোটোভাই কাজী কামাল উদ্দিন আমার সহপাঠী ছিল । একবার আমার ডাক্তারকাকুর বড়োভাই কাজী আব্দুল ওয়াহাব কুলাইতে তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার আরামবাগের গোলানন্দপুর গ্রাম থেকে আসেন । তিনি সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন 'আবে জমজম' এবং আরবের খেজুর । সেই থেকেই আবে জমজমের এবং আরবের খেজুরের প্রতি আমার একটা আগ্রহ তৈরি হয়েছিল । আবে জমজম কখনো না দেখলেও আমার বড় শ্রীমানের এক বন্ধুর আরবে চাকরি করার সুবাদে সেখানকার খেজুরের আস্বাদ গ্রহণ করার সুযোগ আমি পেয়েছি । একবার বিল্লাল হোসেনকেও বলেছিলাম আবে জমজমের প্রতি আমার দুর্বলতার কথা । আর সেটা আজ সত্যিই পরিণত হল । আসলে একটা প্রবাদ আছে, যে যারে চায়, ভজিলে সে পায় । আমার ভাগ্যে এভাবেই এ প্রাপ্তিটা লেখা ছিল বোধহয় ।

মুসলমানদের পবিত্র স্থান কাবা শরীফ । পবিত্র কাবা শরীফের কাবাঘর থেকে মাত্র ২১ মিটার দক্ষিণপূর্বে 'জমজম' নামে একটি কূপের অবস্থান । ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই জমজমের জল অত্যন্ত পবিত্র । তাঁদের বিশ্বাস, জমজমের পানি শুধুমাত্র তৃষ্ণা নিবারণ করে না । এই পানি পানের মাধ্যমে ক্ষুধা দূর হয় এবং রোগবালাই থেকেও নিস্তার পাওয়া যায় । ঠিক আমরা সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যেমন গঙ্গার জলকে পবিত্র মনে করি । রোগ নিরাময়ের উপায় হিসেবে গঙ্গার জল পান করি । গঙ্গাজল ছিটিয়ে কোনো স্থানকে পবিত্র করি । এমনকি মৃত্যু পথযাত্রীর মুখে ও শেষ বারিবিন্দু হিসেবে গঙ্গার জল তুলে দিই ।

হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে কপিল মুনির শাপে ভস্মীভূত সগর রাজার ষাটহাজার পুত্রদের আত্মার মুক্তির জন্য ভগীরথ শিবের কাছ থেকে প্রার্থনা করে গঙ্গাকে মর্তে নিয়ে এসেছিলেন ও পবিত্র গঙ্গাজল দিয়ে তাঁর ষাটহাজার পূর্বপুরুষের আত্মার শ্রাদ্ধকর্মাদি সম্পাদন করে তাঁদের আত্মাকে মুক্ত করেছিলেন । ভগীরথের গঙ্গা আনয়নের  মিথের মতো ইসলামিক মিথেও রয়েছে জমজম কূপ সৃষ্টির কথা । সেখান থেকে জানা যায়, আজ থেকে প্রায় চারহাজার বছর পূর্বে হযরত ইব্রাহিম আল্লাহর আদেশে তাঁর স্ত্রী হাজেরা বিবি ও শিশু পুত্র ইসমাইলকে মক্কার জনমানবহীন পাহাড়ের পাদদেশে নির্বাসন দেন । হযরত ইব্রাহিমের রেখে যাওয়া খুব সামান্য খাদ্যদ্রব্য ফুরিয়ে যাওয়ার ফলে শিশুপুত্র ইসমাইল একসময় ক্ষুধাতৃষ্ণায় কাতর হয়ে কান্নাকাটি করতে থাকে । এতে মায়ের মন চঞ্চল হয়ে ওঠে । নিরুপায় হয়ে বিবি হাজেরা তাঁর শিশুসন্তানের ক্ষুধাতৃষ্ণা নিবারণের জন্য জলের খোঁজে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছোটাছুটি করতে শুরু করেন । বিবি হাজেরা জলের খোঁজে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত সাতবার চক্কর কেটে ফেলেও ব্যর্থ হয়ে ক্লান্ত শরীরে আবার শিশুপুত্রের কাছে ফিরে আসেন । সেখানে এসে তিনি দেখতে পান তাঁর শিশুপুত্র ইব্রাহিমের পায়ের গোড়ালির ঘষায় মাটিতে যেটুকু গর্ত হয়েছে সেখানে মাটির নিচ থেকে জল উঠছে এবং সেখানে একটি ঝরনার সৃষ্টি হয়েছে । এই ঝরনাটি পরবর্তী সময়ে 'জমজমে'র কূপ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে । ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা জমজমের জলকে আল্লাহ তায়ালার বিস্ময়কর কুদরত বলে মনে করেন । হজ ও ওমরাহ পালনকারীরা দেশে ফেরার পথে পরিবার-পরিজনদের জন্য এই জমজমের পানি নিয়ে আসেন । ঠিক আমরা যেমন আনি গঙ্গাজল তীর্থপর্যটনে গেলে ।

অতীতকালে মানুষ প্রকৃতির উপাসক ছিলেন । প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদানের শক্তি সম্বন্ধে অজ্ঞতা হেতু মানুষ তাঁদের পূজা করতেন । সেই হিসেবে সূর্য, চন্দ্র, বায়ু, জল, ঝড়-বৃষ্টি, বজ্র,বিদ্যুৎ ইত্যাদি মানুষের উপাসনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়ায় । অতীতকাল থেকে মানুষের জল সম্বন্ধে একটা গুরুত্বপূর্ণ ধারণা ছিল । জলের জীবনদায়ী ক্ষমতা যেমন মানুষের জীবন রক্ষা করত তেমনি তার কৃষিজ সম্পদকে ফুলেও ফসলে ভরিয়ে দিত । আবার অতিরিক্ত জল প্লাবনের সৃষ্টি করত । তার এই ক্ষমতাকে নিয়ে সুন্দর বুননে গড়ে উঠেছে পৃথিবীর নানা অংশের মানুষের মধ্যে  নানা মিথ । এভাবেই অনেক আদিম লোকপুরাণ, লোকাচার ও লোকবিশ্বাস কালক্রমে ধর্মের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় । হিন্দু-মুসলমান ছাড়া খ্রিস্টান ও ইহুদীদের পবিত্র নদী জর্ডান । তার জলও পবিত্র । সারা বিশ্ব থেকে মানুষ এখনো জর্ডান নদীতে ব্যাপ্টিজম নিতে আসে । জলের পবিত্রতার ভাবনা তারই উদাহরণ । বিশ্বের প্রতিটি ধর্মেই তাই জলের গুরুত্ব ও পবিত্রতার অনুভূতি রয়েছে । আজকের বিশ্বব্যাপী পানীয় জলের যে সংকট সে ক্ষেত্রেও জলের গুরুত্ব নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে আমাদের । হাজার হাজার বছর আগের মানুষের মনে জল সমন্ধে লোকসাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পবিত্র অনুভব আজকের দিনেও আমাদের ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু ।

Sunday, April 14, 2024

চৈতপরবের পাঁচন : লোকচিকিৎসার পাঠ

চৈতপরবের পাঁচন : লোকচিকিৎসার পাঠ

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

বৈশাখ থেকে চৈত্র । এই বারোমাস নিয়ে বাঙালির বর্ষচক্র । তাকে ঘিরে রয়েছে নানা উৎসব । নানা পার্বণ । বাঙালির যাপনের উৎসে রয়েছে কৃষিকর্ম । তাই প্রতিটি পূজাপার্বণ, উৎসবে জড়িয়ে রয়েছে কৃষি ভাবনা । হলকর্ষণ, বীজ বপন থেকে শুরু করে ফসল সংগ্রহ ও নতুন ফসলের প্রথম আস্বাদগ্রহণ, এই প্রক্রিয়াগুলোর প্রতিটি পদক্ষেপে রয়েছে এক একটি বিশেষ বিশেষ আচার অনুষ্ঠান। বিশেষ বিশেষ তিথিতে বিশেষত, দুই মাসের মধ্যবর্তী সময়ে সংক্রান্তিতে কিংবা বর্ষারম্ভ ও বর্ষশেষে পালন করা হয় এইসব অনুষ্ঠান । সব অনুষ্ঠানেই কৃষিজ ফসল, ফলমূল, শাকসবজিকে গুরুত্ব দেওয়া হয় । পরিবারের বা সমাজে কৃষিজ বা প্রকৃতি থেকে সহজলভ্য লতাপাতা, ফলমূল বিশেষ বিশেষ দিনে খাওয়ার রীতি বাঙালি সমাজে বহুদিন যাবত প্রচলিত । এগুলো নানা অঞ্চলে নানা নামে পরিচিত । যেদিনের যে ফল বা যে ফসল পাওয়া যায়, তা আনুষ্ঠানিকভাবে খাওয়ার মাধ্যমে সেই বস্তুটির গুণাগুণ উপলব্ধি করার বার্তা নিহিত থাকে । এই ফলমূল, ফসল ভক্ষণের অনুষ্ঠান বাংলা ও বাঙালি অধ্যুষিত বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে পরিচিত । শ্রীহট্টীয় অঞ্চলে তার নাম 'আটআনাজ' । ঢাকা, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ত্রিপুরায় 'অন্নকূট' । নোয়াখালি, চট্টগ্রাম ও দক্ষিণ ত্রিপুরায় 'পাঁচন' ইত্যাদি । ঐতিহাসিক কারণে প্রাচীন বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের জনগোষ্ঠী বর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়লেও তার সংস্কৃতি সে সঙ্গে বয়ে নিয়ে গেছে ।

সেই সুবাদে নোয়াখালি, চট্টগ্রাম ও সন্নিহিত দক্ষিণ ত্রিপুরার মানুষের সংস্কৃতিতে বর্ষশেষের দিন অর্থাৎ চৈত্র মাসের শেষদিনের শিবের গাজনোৎসব চড়কপূজার পাশাপাশি পারিবারিকভাবে কিছু আচার-অনুষ্ঠান পালন করার রীতি রেওয়াজও রয়েছে । তার মধ্যে খাদ্য সংক্রান্ত উৎসবও রয়েছে । এদিন প্রতি ঘরে পাঁচন রান্না করা হয় । মূল 'পঞ্চব্যঞ্জন' শব্দ থেকে এসেছে পাঁচন শব্দটি । প্রতি বাড়িতে মুড়ি, চিড়া, খই, খইয়ের সাথে দই, ছাতুর নাড়ু ইত্যাদি ঘটা করে খাওয়া হয় । মূলত, এইসব উপাদানের প্রত্যেকটিই মূল কৃষিজ ফসল ধান থেকে প্রস্তুত করা হয় । বেশ কদিন আগে থেকে বাড়িঘরে মুড়ি, চিড়া, খই, খইয়ের ছাতু, সেই ছাতু দিয়ে নাড়ু অর্থাৎ লাবণ বানানোর প্রস্তুতি চলতে থাকে । কৃষিজ বীজ থেকে প্রস্তুত দ্রব্য ভক্ষণের মধ্যে আদিম প্রজননচিন্তা কাজ করে । বীজভক্ষণের মাধ্যমে মানুষ নিজেকে প্রজননক্ষম করার লোকবিশ্বাস বহন করে । তাছাড়া, এই বীজ উৎপাদন করতে গেলে গোষ্ঠীসদস্যের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি আন্তঃসংহতিরও প্রয়োজন পড়ে । উর্বরতাকৃষ্টির সঙ্গে যুক্ত হয় সংহতিচেতনাও । দক্ষিণ ত্রিপুরা অঞ্চলে এই যাদুবিশ্বাসজনিত কারণে নাড়ু বা লাবণ বাঁধার সময় গৃহস্থ বন্ধুরা লৌকিক ছড়া আওড়ে থাকেন– 'টেঁআ বান্ধিয়ের, হ ইসা বান্ধিয়ের, ধন বান্ধিয়ের, জন বান্ধিয়ের........' ইত্যাদি নানাকিছু বন্ধনের কথা বলে । 'জন বান্ধিয়ের' মানে গোষ্ঠীর জনগণের মধ্যে সংহতির বন্ধন সৃষ্টির কথাই বলা হয় । আবার আভিচারিক ক্রিয়ার 'বন্ধন' মন্ত্রের মাধ্যমে অদৃশ্য শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করার আচারের কথাও স্মরণ করিয়ে দেয় ।

কৃষিজ ফসলের পাশাপাশি নানাবিধ সবজির একটি ঘন্ট তৈরি ও খাওয়ার রেওয়াজ আছে এদিন । এই ঘন্টর মূল উপাদান এঁচোড় । তার সঙ্গে নানাবিধ কৃষিজ ফসল শাক, লতাপাতা, ডাঁটা,মূল, তেতো, বুনো লতাগুল্ম, ছোলা, মটর, সিমের বীজ, কন্দ ইত্যাদির মিশ্রণে তৈরি হয় এই পাঁচন । আসলে পঞ্চব্যঞ্জনের কথা থাকলেও মা-বোনেরা বনবাদাড় ঢুঁড়ে সংগ্রহ করেন শতাধিক রকমের উপাদান । চৈত্রসংক্রান্তির প্রস্তুতি আগের দিন থেকেই শুরু হয় । সংক্রান্তির আগের দিনকে বলা হয় 'ফুলবিষু' । এদিন ভোরবেলা উঠেই সংগ্রহ করা হয় ফুল, ফুলের কলি । এগুলো দিয়ে বিকেলের দিকে মালা তৈরি করা হয় । বিকেলের শেষভাগে সন্ধ্যার প্রাকমুহূর্তে বাড়ির উঠোনে বিশকাটালি, বেলকাঁটা, কুলের কাঁটা, মনকাঁটা, শিয়ালমুত্রা গাছ, দ্রোণফুলের গাছ ইত্যাদি রাস্তার, ঝোপঝাড়ের পাশে গজানো বিভিন্ন আগাছা একত্রিত করে তাতে আগুন ধরিয়ে সেই তাপ ও ধোঁয়া শরীরে নেওয়া  হয় । লোকবিশ্বাস এর ফলে শরীরে চর্মরোগসহ অন্যান্য রোগব্যাধি আক্রমণ করতে পারে না । এই লোকাচারটিকে 'জাগ পোড়ানো'  বলা হয় । ঠিক একই রকম লোকাচার বাড়ির দেউড়ির বাইরে করা হয় ।এগুলো পোড়ানোর সময় আগের দিন সন্ধ্যাবেলা শিশুবৃদ্ধ সবাই মিলে সুর করে ছড়া কাটেন–'জাগ রে জাগ, টেঁআ জাগ, হইসা  জাগ, ধন জাগ, জন জাগ' ইত্যাদি বলে । আর সংক্রান্তির দিন ভোরের ছড়া হল– দূর অ রে দূর অ । মাথা বেদনা, গা বেদনা দূর অ । মহামারী দূর অ । ওলাওঠা দূর অ । জ্বরজারি দূর অ ইত্যাদি ।  তারপর স্নান সেরে বাড়ির গৃহপালিত পশুদেরও স্নান করানো হয় । তারপর আগেরদিন গেঁথে রাখা মালাগুলো বাড়ির সদর দরজায়, গৃহপালিত পশুদের গলায় পরিয়ে দেওয়া হয় । এককথায় পরিবারের সকল সদস্যদের পাশাপাশি গৃহপালিত পশুদেরও কল্যাণকামনা করা হয় এদিন । চৈত্রসংক্রান্তির দিন নিমপাতা, হলুদ, গিলে ইত্যাদি ভেষজ উপাদান বেটে গায়ে মেখে স্নান করার পর বাড়ির সদর দরজায় কচি আমের উপর খইয়ের ছাতু ছড়িয়ে দিয়ে আম বলি দেওয়ার রীতি রয়েছে । একে 'শত্তুর ওড়ানো' বা 'শত্তুর কাটা' বলা হয় । লোকবিশ্বাস এতে অশুভশক্তির দমন হয় । এরপরেই মুড়ি, চিড়া, খই, দই, কলা, খইয়ের ছাতু ইত্যাদি সহযোগে ফলাহারের পালা । মধ্যাহ্নে আহার্য হিসেবে নেওয়া হয় বহুবিধ সবজির ঘন্ট অর্থাৎ পাঁচন । এই পাঁচন তৈরি হয় বহুবিধ ভেষজ উপাদান দিয়ে । এই ভেষজ উপাদান গ্রহণের মাধ্যমে শরীর সুস্থ রাখার বিষয়টি নিহিত থাকে । তার মানে এই নয় যে, বছরে একদিন পাঁচন খেলে সারা বছর সুস্থ থাকা যাবে । এর মূল অর্থ, প্রতিটি শাক, লতাপাতা একদিন রান্না করে বাড়ির বয়স্ক মায়েরা তাঁদের উত্তরসূরীদের এগুলোর ভেষজ গুণ সম্বন্ধে পাঠ দিয়ে থাকেন । শারীরিক প্রয়োজনে বছরের অন্য সময়ও যাতে তা ব্যবহারের কথা স্মরণে আসে । আজকের দিনে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে 'আমার স্বাস্থ্য আমার অধিকার' বলে যে ভাবনা প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে তা যে সুদূর অতীতেও আমাদের পল্লীজীবনে নিহিত ছিল তা স্পষ্টই বোঝা যায় । এভাবেই আগেকার দিনে স্বাস্থ্যসচেতনতা গড়ে তোলা হত ।

হালখাতা বা গদিসাইদ : হারিয়ে যাওয়া বাণিজ্যসংস্কৃতি

হালখাতা বা গদিসাইদ : হারিয়ে যাওয়া বাণিজ্য সংস্কৃতি

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

চৈত্র সংক্রান্তির পরদিন শুরু হয় নববর্ষ । নতুন বছরের সূচনালগ্নে প্রতিটি বাঙালি পরিবারে ভালো খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করা হয়ে থাকে । আমাদের খাদ্যকেন্দ্রিক সমস্ত সংস্কৃতিই কৃষিভিত্তিক জীবনের নিদর্শন । একদিন বাঙালির গোলাভরা ধান, পুকুরভরা মাছ ছিল । আর ছিল গৃহপালিত পশুপাখি ও নানারকম বাগিচা ফসল । অতীতের বাঙালির যৌথপরিবার ভাঙতে ভাঙতে আজ পায়রার খোপের মত ফ্ল্যাটবাসী হয়ে গেছে । সেই বিস্তীর্ণ-জমিজিরেত কবেই হারিয়ে গেছে । সর্বশেষ প্রজন্ম নিজের ভদ্রাসনটুকুও প্রোমোটারের হাতে তুলে দিয়েছে নগদ কিছু অর্থ আর একটি বা দুটি ফ্ল্যাট বাড়তি প্রাপ্তির হাতছানিতে । এ যুগে বিশাল ভূখণ্ড সামলানো যেমন দুরূহ তেমনি ফ্ল্যাটের অভ্যন্তরে ছোটো পরিবারের কিছুটা হলেও নিরাপত্তা আসে । এত শত পরিবর্তনের মাঝেও বাঙালি তার সংস্কৃতি নিয়ে বাঁচতে চায় । যতটা সম্ভব লোকাচার পালন করে । জোমাটো ও স্যুইগির হাতছানি থাকলেও অন্তত এই দিনটিতে নিজের মত করে খাবার তৈরিতে মনোযোগ দেয় । মর্যাদা দেয় বাঙালিয়ানাকে ।

কৃষিকেন্দ্রিক জীবনের কারণে এককালে বাঙালির বাণিজ্য কৃষিজ পণ্য নিয়েই শুরু হয়েছিল । বাংলার বণিকেরা কৃষিজ পণ্য ও উপজাত দ্রব্য নিয়ে বাণিজ্যে যেতেন । আমাদের মধ্যযুগীয় কাব্য ও পুঁথিসাহিত্যে সাহিত্যে বাঙালি বণিকদের বাণিজ্যযাত্রার বহু নিদর্শন পাওয়া যায় । চাঁদ সওদাগর, ধনপতি প্রমুখ বণিকেরা মধুকর কিংবা চোদ্দো ডিঙা সাজিয়ে নৌ-বাণিজ্যের মাধ্যমে কৃষিজ পণ্য দেশে-বিদেশে নানা স্থানে নিয়ে যেতেন । কি অন্তর্দেশীয়, কি বহির্দেশীয়, উভয় প্রকার বাণিজ্যে সেকালে বাঙালি বণিকদের একটা শক্ত ভিত্তি ছিল । এই সময়ে বাংলার অর্থনীতির মূল ভিত্তি ছিল কৃষিজ সম্পদ । বাংলা নববর্ষের প্রথমদিন থেকেই তাঁদের বাণিজ্য শুরু হত । বাণিজ্যের হিসাবপত্র খাতায় সংরক্ষণের ব্যবস্থাটিও শুরু হত এদিন থেকেই । প্রাচীন রাজা-জমিদাররাও এদিন তাঁদের রাজকোষ বা কাছারিবাড়িতে সংবৎসরের আদায়কৃত খাজনা লিপিবদ্ধ করতেন । এইদিন প্রজাদের নিমন্ত্রণ করে আপ্যায়ন করা হত । আগেরদিন অর্থাৎ চৈত্রের শেষদিন প্রজারা রাজকোষে সারাবছরের খাজনা জমা দিত ও রাজবাড়ি বা জমিদার বাড়িতে অবস্থান করত । পরদিন অর্থাৎ পয়লা বৈশাখ রাজা-জমিদারগণ প্রজাদের ভুরিভোজে আপ্যায়ন করতেন । এই দিনটিকে বলা হত 'পুণ্যাহ' । তদ্রূপ এদিন ব্যবসায়ীরা তাঁদের নতুন খাতা মহরত করতেন । এটাকে বলা হত 'হালখাতা' । এদিন ব্যবসায়ীরা নতুন খাতা নিয়ে কোন দেবমন্দিরে গিয়ে দেবতার পাদস্পর্শ করিয়ে আনতেন । তাঁদের ব্যবসাকেন্দ্রও এদিন সুন্দর করে সাজানো হত । ব্যবসাকেন্দ্রে বা ব্যবসায়ীর গদিতে সিদ্ধিদাতা গণেশের পূজো এবং লক্ষ্মীপূজো করা হত । খাতার ভেতর আশীর্বাদী ফুল দূর্বা রাখা হত । প্রাচীন মোহর বা রূপার টাকায় সিঁদুর,হলুদ, চন্দন মাখিয়ে তার ছাপ পর পর খাতার প্রথম পৃষ্ঠায় রাখা হত । সিঁদুর দিয়ে আঁকা হত পবিত্র স্বস্তিক চিহ্ন । ব্যবসায়ীর ব্যবসাকেন্দ্র বা গদিতে এই ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আচার পালন করা হত বলে একে 'গদিসাইদ' ও বলা হত । 'সাইদ' একটি আরবি শব্দ । তার অর্থ সৌভাগ্যবান বা মহান । গদিসাইদের মাধ্যমে সৌভাগ্যের সূচনা করাহয় । 'গদিসাইদ' উপলক্ষে এদিন অপরাহ্নে ব্যবসায়ীরা তাঁদের গ্রাহকদের নেমন্তন্ন করতেন এবং মিষ্টিমুখ করাতেন । গ্রাহকও মিষ্টিমুখের পর পুরোনো হিসাব নিকাশ শেষ করতেন এবং নতুন বছরের হিসেবের খাতায় তার নাম উঠিয়ে নিতেন । নতুন খাতায় হালনাগাদ  বা বউনি করার নামই হলো 'গদিসাইদ' ।

হালখাতা শব্দটির উৎস খুঁজতে গিয়ে আমরা দুটি ভাষাতাত্ত্বিক সূত্র পাই । সংস্কৃত 'হল' শব্দ থেকে 'হাল' শব্দটির সৃষ্টি বলে অনুমান করা হয়। 'হল' বা 'হাল' হল আদিম কৃষিযন্ত্র । জমির মাটি কৃষিউপযোগী করে তোলার জন্য হালের ব্যবহার করা হয় । হাল বা 'লাঙ্গল কাঁধে কৃষক'কে বলা হয় হলধর । হালচাষের মাধ্যমে উৎপন্ন পন্য ক্রয়বিক্রয়ের হিসেব যে খাতায় রাখা হয় তাই 'হালখাতা' । আবার ফারসি 'হাল' শব্দের অর্থ 'বর্তমান সময়' । যেমন– হাল আমল, হাল ফ্যাশন, হাল-হকিকত, হালনাগাদ, হালসন ইত্যাদি । হাল সনের হিসেবের যে খাতা তাই 'হালখাতা' । এই হালখাতা উপলক্ষে অনেক ব্যবসায়ী আমন্ত্রণপত্র ও তৈরি করতেন । গ্রাহকদের মধ্যে সেই আমন্ত্রণপত্র বিলি করা হত । এই হালখাতা বা গদিসাইদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও ক্রেতার মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কের বাইরেও একটা সামাজিক সম্পর্ক তৈরি হত । কোন কোন ব্যবসায়ী আবার অক্ষয় তৃতীয়ার দিন এই অনুষ্ঠান পালন করতেন । আগরতলা শহরে অবাঙালি ব্যবসায়ীদের গদিতে রামনবমী তিথিতে এই অনুষ্ঠান পালন করা হয় । মফস্বল থেকে ব্যবসায়ীরা এদিন তাঁদের গদিতে গিয়ে বউনি করেন । বাংলা নববর্ষ এভাবেই একদিন বাঙালি ব্যবসায়ীদেরও সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছিল । আজ আর ততটা দেখা যায় না । শপিং মল আর অনলাইন ব্যবসার দৌলতে এই সংস্কৃতিও হারিয়ে যেতে বসেছে ।

Tuesday, April 2, 2024

My pension from Jan 24

FOR FEB21 : BP=40500 DA=00 COMM=6300 FMA= 500 NET = 34700



FROM MAR21 : BP= 40500 DA( 3% )=1225 REC=00 COMM=6300 DIS=00 IR=00 OLD=00 FMA=500 TDS=00 NET=35925 PNBHOGBD

FROM JULY22 : BP=40500 : DA (8% )=3240 REC=00
COMM=6300 DID=00 IR=00 OLD=00 FMA=500 TDS=00 NET=37940
40500 -6300 = 34200+ 500 + 38240 ( 8% DA ) =37940

FROM DEC22 : BP=40500 : DA ( 12% )= 8100 REC = 00 COMM = 6300 DID = 00 IR = 00 OLD = m00 FM 500 TDS = 00 NET = 42800
40500 - 6300 = 34200 + 500 + 8100 ( 20% DA ) = 42800

FROM JAN24 : BP=40500 : DA ( 25% )= 10125 REV =<00 COMM = 6300 DID=00 IR = 00 OLD = 00 FMA= 500 TDS = 00 NET = 45825

Sunday, March 24, 2024

Sabroom ICP and Land Port : Probabilities, Opportunities and Challenges

Sabroom ICP and Land Port: Probabilities, Opportunities and Challenges.


Asokananda Raybardhan.


Sabroom, a small town that lies in the southern end of Tripura, is a sub division of South Tripura district. The Feni river flowing in the southern part of the town separates it from the neighbouring country of Bangladesh. On the other side of the river Feni lies Ramgarh, a subdistrict of Chattagram. Lately, a Bridge has been raised over the river, connecting Sabroom and Ramgarh. The bridge is named "Bharat Bangladesh Maitri Setu-1", after the  harmonious relationship that exists between both the countries.

This bridge brings forth possibilities of a new trade route. The state of Bharat is making strides in establishing an Integrated Check Post besides the bridge. All these are to ensure opening new horizons to the Indo-Bangla as well as South Asian trade scenario. 

Since ancient times, the river Feni has served as a medium for the people across it to cross over. Apart from it's historical and cultural significance, the region is also geographically and politically aligned in the sweet spot to aid trade ties between the two nations. Especially when the state of Tripura is surrounded by Bangladesh on three sides. There is also a possibility to connect other ASEAN countries, the likes of Mayanmar to south Tripura through Bangladesh, using this route. Although, Arunachal, Manipur and Mizoram share their borders with Mayanmar but those regions are considered very inaccessible. In comparison to those, the route via Bangladesh through Teknaf is more accessible and has been in practice for a long time. The newly constructed maitri bridge in Sabroom will ease our endeavours to access that route. 


Historical Aspect: The aforesaid route that'll be explored in light of the inauguration of Maitri Setu and ICP is not an alien concept to the state of Tripura. Pre Independence, during the princely rule in Tripura, the state maintained a good social and political relationship with Mayanmar (formerly known as Arakan). During the sixth and seventh century, the Pilak region in southern Tripura was considered as a remarkable centre of study by the then Buddhist scholars. Many disciples of the Buddhist school of thinking from Mayanmar and also other parts of the world would visit Pilak then. And, the students and scholars from Mayanmar would cross the feni river using the same route in discussion.


Apart from this, in the year 1857 the waves of Sepoy Mutiny also managed to hit the Chattagram region and in the same year under the leadership of Havildaar Razab Ali Khan a mutiny was staged on 18th and 19th November, which resulted in rebel soldiers looting cash and ammunition and fleeing through the route in discussion. The then capt. P H K Dewool, leader of the 34 regiment, Chattagram, wrote a letter on 18th November to the Major General Sir J Hearsey KCB describing the recent affairs. The letter read,
" I have been informed by a native named Thakur Bux formerly jemadar of Chittagong provincial battalion, whom the mutineerse forced to go some distance with them, that the pay-habilder of number 4- company named Rujab Ali Khan, has assumed command of the detectment, which we hear has crossed the Feny River and entered the territories of Rajah of Tiperah."
(Orlich Leopold Von (1858) - The Mutiny of India: Its origin and its result, T and W Boone, 29 newbond street.).


Clearly the region mentioned here belongs to Sabroom. Implying these revolutionaries fled to Manipur while using the route over Feni via Sabroom. Also, many official documents from that period suggest that many rebel soldiers used the same route to travel to Nepal via Sylhet and Tripura. 
( চট্টগ্রামের সংগ্রামী ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধের সামরিক অভিযান প্রথম খন্ড)

The most recent influence of significance exerted by this route was when in 1971 the beginning of Bangladesh liberation war was marked by the marched procession demanding independence raised their voices in Chattagram. The armed revolt also began in the same region. During that period the Bangladeshi freedom fighters took refuge in Sabroom while crossing Feni via Ramgarh. The revolutionary leaders set up No.1 Sector HQ in Sabroom's Harina region and operated the liberation war from there with Sabroom serving as a strong base.


Positional advantage and Communication services:

The ICT established in Sabroom has not only benefited Sabroom's status but has also managed to put the old City of Ramgarh in the trade map. In a result of which, a rapid growth in infrastructure and other general services is set to be expected in the Hilly regions of Chattagram. Bangladesh's mainland cities will be more accessible through road and railways via Sabroom. In mere 45 minutes, after reaching Ramgarh from Sabroom, one can reach Bishwa road through Baraiyarhat and then head towards any major cities of Bangladesh. Three Seas and river ports of Bangladesh in total can be accessed from Sabroom. Chattagram is a notable port of Bangladesh and also one of the largest. This port is only 72km in distance from Sabroom. In addition, the first deep sea port of Bangladesh situated in Matarbari of Maheshkhali subdistrict of Coxsbazar can be accessed. The same can be said about the fourth sea port. Apart from that, the Mangla port situated in the south west of Bangladesh in Khulna district which is also the nation's second largest and second most busy port can be accessed from Sabroom.


This port is also connected to the rest of the country through railways by the grace of being placed next to Khulna. In addition, Mirsarai economic region of Bangladesh can also be included as a close region to Sabroom ICP. Using the Chattagram port, in only three hours it is possible to bring in transcripment goods deep inside our country. From here, the goods can be decentralised to the rest of the 8 north eastern states in this region using roads and railways. An estimated population of 5crores can be benefitted from this. In present, the North East has to rely on Kolkata Ports for many such goods which have to cross 1200 kms. Getting goods from Chattagram port not only reduces the distance and time but also ensures a massive reduction in fuel consumption. Also, the tax paid by Indian government formerly to the Bangladesh government for using their land to bring in goods from Chattagram port will now be relatively lowered. As the trade route becomes shorter by multiple folds, the small and medium scale businesses will be benefitted as they can now opt for small and cheaper mode of transports. In addition, the cargo building present in the Sabroom ICP will ensure the storage of goods here.



Another notable instance here is, almost every year during the monsoons , the likes of Tripura, Mizoram and Barak valley of Assam are left stranded due to frequent and devastating avalanches. These regions become inaccessible and all means of land transportation are abruptly left at hault. With Sabroom ICP coming into the picture, this could be a permanent solution to this distressing problem. Using Sabroom ICT even the Bangladesh government can make a direct accessible trade route to Sylhet from Mymensingh, through Sabroom via Khowai, Kamalpur, Kailashar and Karimganj of Assam.
Bangladesh can profit from the advance road and transport infrastructure of our state. In addition if the Bangladesh railway is extend to Nazirhat to Ramgarh of Chattagram, this then will ease the logistics. Access to Mayanmar via the city of Teknaf will make Sabroom a trade corridor with respect to not only Bangladesh but South East Asia. An uprise of a river port surrounding the ICP is also highly probable. Case in point, the Muhuri project in Bangladesh. So, this is not impossible as it is also known that Feni would once see many vessels float over it in the past. With time and decreasing depth that has stopped but can be redeemed if need be. If this could be done, then using the Sabroom ICP as a base we can import many goods through river and waterways from the likes of Mirsharai and also get access to their famous tourist spots.



The massive potential in Sabroom's Special Economic Zone, preparations and amenities: The West Jalefa region surrounding the ICP and railway station in Sabroom is witnessing a fast growing project to attain the status of Special Economic Zone to the region. Here, many industries which are mainly dependent on agriculture like tea and food processing, bamboo crafts, textile industry, rubber industry, handicrafts and other small cottage industries will receive huge boost and also formation of new such industries will be experienced in this region. Using this Sabroom ICP as a gateway Tripura and other northeastern states can export processed raw materials as well as raw materials that are in demand in other south Asian countries including the inner territories of Bangladesh and also reduce the transportation cost to many mainland cities of our own country.


Import and Export Opportunities via Sabroom ICP and Land port: 

Sabroom ICP can easily be a gateway for import export of both goods as well as services. Speaking of goods, we may name rubber foremostly. This region produces the best quality rubber. With the advent of SEZ enabled industrial hub in Sabroom, processed as well as raw rubber can be exported and sold outside the country in relatively lower expenses. Apart from this, Tripura and other north eastern states are also known for their superior tea production. During the British era, it was fairly common to see Tripura produced tea being sold in the Chattagram Tea market. Needless to say, post partition, this practice was not to be seen again. However, we stand in a time when this can be a reality again. One more niche produce from the state can be the Queen Pineapple, which has now created a buzz and high demand across the globe. In recent times, these pineapples have been exported to the Arab Emirates. Sabroom ICP can aid this process and also if Sabroom was to turn into an industrial hub slowly, procurement of processed forms of such products will be more viable and hence business will boom. Apart from these, spices, minerals and rare rocks found in northeastern states of the Country can be exported to Bangladesh via Sabroom ICP.
We can also import textile, clothing, fish and dry fish from regions of Bangladesh that were difficult to access previously. Dry fish is a delicacy enjoyed in the northeastern states. Additionally, we can import bricks from Bangladesh at a much cheaper rate.
As far as services are concerned trade ties in tourism , education and health and wellness can and should be strengthened. North-Eastern people in general have to travel thousands of kilometers if they wish to visit a beach and sit and relax by the sea. The Sabroom Maitri Setu-1 enables a route that provides a swift commute to Coxsbazaar beach, which also happens to be the largest beach in this region. There are multiple pilgrimages situated within Bangladesh that are considered very holy by the Hindus, the Hindu population from this side can visit the other side of Feni and attain peace and relaxation. The Bangladeshi people can also use this route to get faster access to Indian railways, some might also opt to tour Tripura and use its airport to move to other parts of India and take a tour of those as well. Many patients from Bangladesh visit India every year to get treatment and healthcare facilities. Generally only the wealthy folks are privy to such services. With this new route enabled, the lower strata of the society might feel more empowered in this manner and find themselves cheaper access to said facilities. People on both sides of the river share similar cultures, languages and attires, so they might feel less alienated when travelling to the other country through this route. Based on such services the hospitality industry is bound to witness a boom in their business, we can also see the rise in numbers of hotels and lodges which will thereby create more vacancies for staffs and give birth to a new work force.


Challenges barring Sabroom ICP and land port from being fully functional:  The Maitri Setu Bridge project commenced its journey in 2015 and had managed to lay the final brick in 2021. On 9th March 2021, PM Narendra Modi and Bangladesh' Prime Minister Sheikh Hasina inaugurated the 412m long and 14.80m wide bridge on a video conference. Almost three years past its inauguration the Maitri Bridge is yet to be deemed as functional. The land port, the construction of which began around the same frame of time as the bridge itself, the project remains yet to be finished. It seems to be a very slow paced endeavor indeed. Although, notably, despite of the presence of staff quarters along with all the necessary amenities, there has been lack of staff required at least to commence the human movement across the bridge.

On the other side of it, Bangladesh shows no significant advancement in its ICP establishment. Only the passenger terminal besides the bridge has been inaugurated on the 14th of last November. And, even that is non functional alike its counterpart. According to sources across the borders, the Ramgarh land port constructions might begin soon. Apart from this, the extension of railways from Nazirhat to Ramgarh is still in its preliminary phase. The scenario seems more in complete disregards to the high hopes peddled on both sides of the border. The people seeks necessary intervention from the higher authorities of both the nation, they hope to see their leaders conducting board meetings if needed be and discuss all the protocols concerning the international borders and come to a swift resolution. People across borders hope their leaders to be lenient for the sake of the prosperity of their people. This bridge holds a lot of emotional value for the people of India and Bangladesh. Which is why there has been an increase of demands where people are being vocal about at least letting the people cross over until the policies over goods and transports are finalized. If this happens, it will only further promote harmony and will also exhibit the demand for local goods among the people on both the sides.


In Conclusion, it can be said that the huge body of work and endeavors taken up concerning the Maitri Setu bridge, ICP and land port in Sabroom is undoubtedly promising of a much much better future for the city. It now holds the huge potential of becoming the trade capital in northeast and also an important connecting spot with respect to the south east Asian countries. Only time is to tell if it realizes that potentials and if we live to see the day when it does. The people are counting days now, with hopeful eyes, looking across the river Feni, on the other side, delving their minds into the infinite possibilities held by the piece of land on the other side. Maitri (allyship) Setu has already brought together countless people, at least in their thoughts and ideas without being functional on paper. Let's hope in its full glory it only serves to do more.


(The writer is an eminent socio-cultural researchist columnist of Tripura. He presented this paper as an invitee guest speaker on the conference, "Technical Consultation On Upcoming ICP in Sabroom  :  Prospects, Opportunities and Challenges", organized by Asian Confluence, a research institute from Shillong.)

সাব্রুম মহকুমার ইতিহাস ও সেকালের সাব্রুম জনপদ

সাব্রম মহাকুমার ইতিহাস ও সেকালের সাব্রুম জনপদ

মহারাজা বীরচন্দ্র মানিক্যের ( ১৮৬২ খ্রি. – ১৮৯৬ খ্রি. ) পুত্র রাধাকিশোর মানিক্য ( ১৮৯৬ খ্রি. – ১৮০৯  খ্রি. ) প্রায় ৪০ বছর বয়সে ত্রিপুরা সিংহাসনে আরোহন করেন । যুবরাজ থাকাকালীন সময়েই তিনি ত্রিপুরারাজ্যের শাসন পরিচালনার বিষয়ে তাঁর দক্ষতার ছাপ রেখেছিলেন । মহারাজা বীরচন্দ্র মানিক্যের মহিষী ভানুমতী দেবীর অকাল প্রয়াণে ব্যথিত হয়ে মহারাজা কিছুদিনের জন্য বৃন্দাবনধামে চলে গিয়েছিলেন । তখন ত্রিপুরারাজ্য ও তৎসন্নিহিত চাকলা রোশনাবাদ অঞ্চলের জমিদারি পরিচালনার জন্য বীরচন্দ্র মানিক্য একটি মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেছিলেন । যুবরাজ রাধাকিশোর মানিক্য ছিলেন সেই মন্ত্রিপরিষদের সভাপতি । মহারাজা বীরচন্দ্র মানিক্যের অনুপস্থিতিতে তিনি বেশ বিচক্ষণতার সঙ্গে রাজকার্য ও শাসনকার্য পরিচালনা করেছিলেন ।

সিংহাসনে আরোহণের পর পরই তাঁকে কয়েকটি প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন হতে হয় । ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ১২ জুন এক বিধ্বংসী ভূমিকম্পে রাজবাড়িসহ রাজ্যের অনেক দালানকোঠা ভেঙে পড়ে । সেগুলি মেরামত করতে গিয়ে এবং কারুকার্যমন্ডিত নতুন প্রাসাদ নির্মাণ করতে গিয়ে তাঁকে আর্থিক সংকটে পড়তে হয় । এদিকে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে তাঁর পুত্র বীরেন্দ্রকিশোরকে যুবরাজ পদে নিয়োগ করার পরেই শুরু হয় প্রাসাদ ষড়যন্ত্র । এই নিয়ে বড় ঠাকুর সমরেন্দ্রচন্দ্র দেববর্মণ সরব হয়ে ওঠেন । ইংরেজ সরকারের কাছে নালিশ করেন তিনি । মামলাও হয় । অন্যদিকে ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে সারা ত্রিপুরারাজ্যব্যাপী অনাবৃষ্টির ফলে কৃষিজ ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয় । ফলে পাহাড়ে কন্দরে খাদ্যশস্যের অভাব দেখা দেওয়ায় প্রজা সাধারণের দুঃখ দুর্দশা শুরু হয় । তখন তিনি দুঃস্থ প্রজাদের বিনামূল্যে খাদ্য সুস্থ সরবরাহ করেন । ধীরে ধীরে তিনি সমস্ত সংকট কাটিয়ে উঠে প্রশাসনিক সংস্কারে হাত দেন । প্রশাসনকে গতিশীল করার লক্ষ্যে ১৮৯৮ সালেই তিনি একটি কার্যনির্বাহী সভা গঠন করেছিলেন । প্রশাসনিক সুবিধার জন্য পূর্বের তিনটি বিভাগের স্থলে পাঁচটি বিভাগ সৃষ্টি করেন । নতুন দুটি বিভাগের প্রধান কার্যালয় গড়ে তোলা হয় বিলোনিয়া ও খোয়াইতে ।

রাধাকিশোর মানিক্য ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে পুলিশ ও তহশিল বিভাগকে আলাদা করেন । পুলিশ বিভাগকে তহশিল ও রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় । পুলিশ ও তহশীল বিভাগকে পৃথক করার পর ত্রিপুরা রাজ্যে অনেকগুলি নতুন নতুন থানা ও তহশিল কাছারি গড়ে তোলা হয় । সে সময় ত্রিপুরা রাজ্যে প্রথম পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট নিযুক্ত হয়েছিলেন জে. সি. দত্ত । সেই সময়েই সাব্রুম থানা ও তহশিল কাছারি স্থাপন করা হয়েছিল । বর্তমানে যেখানে থানার দালানটি রয়েছে তার বেশ কিছুটা দক্ষিণে সামনের দিকে তরজার ছানি ও তরজার বেড়া দেওয়া চৌচালা বড় ঘর ছিল । পাশেই বড়বাবু থাকতেন । এর লাগোয়া একটি লম্বা একই প্যাটার্নের ঘরই ছিল ব্যারাক । এই থানার একটু পূর্বদিকে অর্থাৎ বর্তমানে যেটি সাব্রুম দ্বাদশ শ্রেণি বালিকা বিদ্যালয় সেখানেই ছিল মহকুমা শাসকের কার্যালয় । আরেকটু এগুলো পূর্ব দিকে বর্তমান এসডিপিও অফিসের পাশেই ছিল জেলখানা । মহকুমা শাসকের অফিসের উল্টোদিকে যে রাস্তা নেমে গেছে তার শেষ প্রান্তে বাঁদিকে দৈত্যেশ্বরী কালীবাড়ি । তারপরে ছিল তহশিল কাছারি । মোটা মোটা কাঠের খুঁটির উপর চাম্পা কাম্পা বেড়া ও প্রথমে তরজার ও পরে টিনের ঘর ছিল তহশীল কাছারি । তহশিল কাছারির উল্টোদিকে ছিল ক্লাব হাউস । ছিল একটি বিশাল প্রেক্ষাগৃহ । সেসময়ের বিনোদনের কেন্দ্র ছিল এই হল ঘরটি । একটু দূরেই দক্ষিণে নদীর ঘাট । এই ঘাটে প্রচুর নৌকা বাঁধা থাকত । মূলত তহশিল অফিসের তরফ থেকে বনজ সম্পদের কর আদায়ের জন্য এই ঘাটটি ব্যবহৃত হত । পশ্চিমদিকে আরেকটি ঘাট ছিল যা বাজার ঘাট নামে পরিচিত ছিল ।  এই চত্বরটিকে কেন্দ্র করেই তার চারপাশে সেকালে সাব্রুম জনপদ গড়ে উঠেছিল । তখনকার সময়ে দাতব্য চিকিৎসালয়টিও মহকুমা শাসকের কার্যালয়ের পূর্ব পাশে ছিল । দীর্ঘকাল পর্যন্ত সাব্রুমের মানুষজনের হাটবাজার ছিল রামগড়েই । ত্রিপুরা রাজ্যের ভারতভুক্তির পর সাব্রুম বাজার গড়ে ওঠে । সেই সময় রামগড়ে ই পি আর ক্যাম্প ছিল । তারা সাব্রুম থেকে মানুষ গেলে হামলা-হুজ্জতি করত । পরে রামগড় বাজারের ব্যবসায়ী বা অন্যান্য সজ্জন ব্যক্তিরাও ভারতীয়দের পরামর্শ দেন যে তাঁরা যেন এপারে আসা যাওয়া বন্ধ করে দেন । কারণ কোনরূপ সমস্যা হলে তাঁরা রক্ষা করতে পারবেন না । এর পরেই অনাদি চৌধুরী, ভেগু চৌধুরী, গোপাল রায়চৌধুরী ১৯৪৯ সনের দিকে মডেল স্কুলের মাঠে মেলার আয়োজন করেন । সামনে বৈশাখ মাস । তাকে কেন্দ্র করে মেলার আয়োজন করেন গোপাল রায়চৌধুরী । তখন থেকে তাঁর মৃত্যুর কিছুদিন পূর্ব পর্যন্তও তিনি সাব্রুম মেলার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে ছিলেন । শেষের দিকে তিনি বয়সের ভারে সম্ভব না হলেও মেলার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকতেন । সেদিন মেলায় লোকসমাগম বাড়ানোর জন্য সাপ্তাহিক হাট সংযুক্ত করে দেওয়া হত । মেলা হত একমাসব্যাপী । ১৯২৩ থেকে ১৯২৫ সালের দিকে সাব্রুমে ২২–২৩ ঘরের মতো বাঙালি পরিবার ছিল । দৌলবাড়ির একাংশ থেকে সাব্রুম পর্যন্ত ত্রিপুরিরা, দোলবাড়ির পশ্চিমাংশ ও ছোটোখিলে মগ জনবসতি ছিল । তবে ছোটোখিলে মুসলমান আধিক্য ছিল । সেসময়ে সাব্রুমে স্কুল ছিল না । স্কুল ও হাসপাতাল ছিল রামগড়ে । বাজারঘাট থেকে সোজা ফেনী নদীর উপর সাঁকো পেরিয়ে মানুষ রামগড় বাজারে যেত । সাব্রুম ছোটোখিলের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী সে সময় রামগড়, অযোধ্যা, দেওয়ানবাজারে কাপড় ও অন্যান্য পণ্যের ব্যবসা করতেন । বর্তমান আনন্দপাড়ার বৃহত অংশের মালিকানা ছিল প্রতাপ নাথের ( সুশীল নাথের বাবা ) । ১৯৩০–৩৫ সালের ও তার কিছু পরের প্রাচীন বাসিন্দাদের মধ্যে ছিলেন অম্বিকা মজুমদার, ভারত চৌধুরী, সতীশ ব্যানার্জি, প্রমোদ দেওয়ান, হেমচন্দ্র চৌধুরী ( প্রয়াত উপাধ্যক্ষ সুনীল চৌধুরীর বাবা ), যামিনী ভূষণ চৌধুরী, দ্বিজেন্দ্র নারায়ন চৌধুরী, অনাদি চৌধুরী, ভেগু চৌধুরী, মনকুমার দত্ত, নবীন চক্রবর্তী, বরা দপ্তরি ( আসল নাম জানা যায়নি ), পরেশ সরকার,  প্রমুখরা । সেই সময়ে গাড়ি-ঘোড়া কিছুই ছিল না । হেঁটে বিলোনিয়া কোর্টে ও আগরতলা যাতায়াত করতে হত । মনুবাজার, জোলাইবাড়ি, শান্তিরবাজার, উদয়পুর নদী পেরুতে হত জুরিন্দা নৌকা দিয়ে ।

১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের ১২ মার্চ ( ২৮ শে ফাল্গুন ১৩১৮ ) উত্তরভারত তীর্থ ভ্রমণের সময় কাশী থেকে সারনাথে যাওয়ার পথে এক মোটর দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর কাশীরাজের বাড়ি নন্দেশ্বর কুঠিতে রাধাকিশোর মানিক্য শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন । 

রাধাকিশোর মানিক্যের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র যুবরাজ বীরেন্দ্রকিশোর ত্রিপুরার সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে মহাসমারোহে বীরেন্দ্রকিশোরের রাজ্য অভিষেক হয় । পরের বছর অর্থাৎ ১৯১০ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে সাব্রুম বিভাগ খোলা হয় । এর আগে এই বিভাগের কাজকর্ম প্রথমে উদয়পুর ও পরে বিলোনিয়া থেকে পরিচালিত হত । ১৯১০ সালের সাব্রুম বিভাগ খোলা হলেও যথেষ্ট পরিকাঠামোর অভাবে প্রায় ১৯৩০ সাল পর্যন্ত বিলোনিয়া থেকেই সাব্রুমের প্রশাসনিক কাজকর্ম চালানো হত । বিলোনিয়ার হাকিমই এই মহকুমার সর্বময় কর্তা ছিলেন । তিনি মাঝে মাঝে বিভাগ পরিদর্শনে আসতেন । প্রথমদিকে ত্রিপুরার রাজপরিবারের ঠাকুর বংশের বিশিষ্ট প্রশাসনিক ব্যক্তিরা সাব্রুমের বড়ো হাকিমের দায়িত্ব পালন করতেন । মহকুমা শাসককে সেকালে হাকিম বলা হত । তিনি প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থা দুটোই দেখতেন । চল্লিশের দশকের পর থেকে ক্রমান্বয়ে যে কয়জন সাব্রুম মহকুমায় হাকিমের দায়িত্বে ছিলেন তাঁদের সবার নাম জানা না গেলেও মোটামুটি ভাবে যোগেন্দ্র গাঙ্গুলী, বিপিন দত্ত, জয়সিং ঠাকুর, কুলেশপ্রসাদ চক্রবর্তী, হরিমোহন মিত্র, মানিক গাঙ্গুলী,সত্যব্রত সরকার প্রমুখরা সাবরুমে হাকিমের দায়িত্ব পালন করে গেছেন । উল্লেখ্য যে, হাকিম যোগেন্দ্র গাঙ্গুলীর পুত্রই হলেন পরবর্তী সময়ের হাকিম মানিক গাঙ্গুলী । মানিক গাঙ্গুলী সাব্রুমের উন্নয়নের জন্য প্রচুর ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন যেহেতু বাবার আমলেও তিনি সাব্রুমে ছিলেন এবং এখনেই বেড়ে উঠেছিলেন সেইজন্য সাব্রুমের প্রতি তাঁর সহানুভূতি ছিল । পরবর্তী সময়ে তিনি জেলাশাসক হয়েও সাব্রুমের উন্নয়নের কথা ভাবতেন । সেইসময়ে সাব্রুমের দরিদ্র এলাকা ও রিফুজি পুনর্বাসিত এলাকা মানিকগড় তাঁর নাম অনুসারে রাখা হয় । সাব্রুমের বিভিন্ন উন্নয়নের মধ্যে রাস্তাঘাট,হাইস্কুল, দৈত্যেশ্বরী মন্দিরের সংস্কার তাঁর আমলে হয়েছিল । 

১৯০৫ সালে সাব্রুম থানা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই এই অঞ্চলে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে । রাজ্যের অন্যান্য অংশের তুলনায় এখানে অপরাধের পরিমাণও কম । আজও সাব্রুমের বারুণীমেলা, রামঠাকুর উৎসব, বৈশাখীমেলা ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে হাজার হাজার লোকের সমাগম ঘটলেও এমন শক্তপোক্ত নিরাপত্তার দরকার হয় না । মানুষ সুশৃংখলভাবে আনন্দ উপভোগ করেন ।

প্রথমদিকে কারা সাব্রুম থানার কর্মকর্তা ছিলেন তার পুরোপুরি তথ্য পাওয়া না গেলেও বিগত শতাব্দীর পাঁচের দশক থেকে বিভিন্ন সময়ে যারা বড়বাবু ও অন্যান্য পুলিশ অফিসারদের দায়িত্বে ছিলেন তাদের যতটুকু সন্ধান পাওয়া যায় তার মধ্যে শৈলেন দত্ত, কিরণ ঘোষ, গোবিন্দ বসাক ( হরিগঙ্গা বসাকের পরিবারের সদস্য ) আবু বর্ধন, অর্ধেন্দু ঘোষ, প্রমুখরা ছিলেন বলে জানা যায় । মহেন্দ্র রায় নামে একজন ছিলেন ৬৩–৬৪ সালের দিকে । দেশভাগ হওয়ার পর প্রথম দিকে সাব্রুম থানার কর্মীরাই সীমান্ত পাহারার দায়িত্বে ছিলেন । সেই সময়ে পাকিস্তানি ই পি আররা মহকুমার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের সীমান্ত জুড়ে চোরাগুপ্তা হামলা হুজ্জতি করত । ভারতীয় ভূখণ্ডে উঠে চাষিদের খেতকৃষি করতে বাধা দিত । এজন্য প্রায়ই সাব্রুম থানা থেকে কর্মীদের গিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হত । এছাড়া সীমান্তের গ্রামগুলিতে গোরু চুরি ছিল নিত্যদিনের ঘটনা । থানাকে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ ফেলে এইসব ঘটনার বিহিত বিধান করতেই ব্যস্ত থাকতে হত । কোন কোন ক্ষেত্রে সাফল্য আসত । কোন কোন ক্ষেত্রে সুরাহা হত না । তার উপর ডাকাতের উপদ্রব তো ছিলই । সীমান্তের মানুষ রাত্রে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারত না । মানুষের সেদিনের ভীতিপূর্ণ দিনগুলোতে সাব্রুম থানায় ছিল একমাত্র ভরসা । এই অবস্থা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য সাব্রুমের যুবকদের নিয়ে সেদিন গঠন করা হয়েছিল ভিলেজ ডিফেন্স পার্টি বা গ্রামরক্ষী বাহিনী । ১৯৬৩–৬৪ সালে যখন মহেন্দ্র রায় সাব্রুম থানার বড়বাবু ছিলেন সে সময় সাব্রুমের যুবকদের নিয়ে যে ভিলেজ ডিফেন্স পার্টি গঠন করা হয়েছিল তার নেতৃত্বে ছিলেন গোপাল রায়চৌধুরী ও হরিনারায়ণ বসাক । গ্রামরক্ষী বাহিনীর সদস্যেরা দুটো দলে ভাগ হয়ে একটি দল কাঁঠালছরির দিকে পাহারা দিতেন আর একটি দল দৌলবারী মগপাড়া পর্যন্ত পাহারা দিতেন । সে সময় গ্রাম রক্ষীদের হাতিয়ার ছিল গোটা কয়েক টর্চ লাইট ও দশটি বল্লম এগুলো দুদিকের দলের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হত । একবার তাদের সাফল্যও আসে । এক জোৎস্না রাতে পাহারার সময় তারা দেখতে পান ফেনী নদী পেরিয়ে ওপার থেকে এপারে উঠে সাব্রুমের দিকে কারা যেন আসছে । গ্রামরক্ষীরা তাদের অনুসরণ করে সাব্রুম বাজারের কাছাকাছি এলে লোকজন ডেকে আটক করে থানায় সোপর্দ করে । গ্রামরক্ষী বাহিনীর কৃতিত্বের জন্য সে সময়ে প্রত্যেককে ১৫ টাকা করে এসপি রিওয়ার্ড দেওয়া হয়েছিল । সেই দলে সাব্রুমের সেদিনের কিশোর এবং আজকের বর্ষিয়ান নাগরিক তিমিরবরণ চাকমাও ছিলেন । ১৯৬৭–৬৮ সালের দিকে সাব্রুম থানার ওসি ছিলেন সেসময়ের দিকপাল ফুটবল খেলোয়াড় বিমল বর্ধন । যিনি কচি বর্ধন নামে খ্যাত ছিলেন । তিনি ক্যারাম খেলাতেও পারদর্শী ছিলেন । সে সময়ের অন্যান্য পুলিশ অফিসারদের মধ্যে ছিলেন চিত্তরঞ্জন দেব । তিনি ত্রিপুরার নামী প্রকাশন সংস্থা অক্ষরের মালিক শুভব্রত দেব এবং রাজ্যের বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক দেবব্রত দেবের বাবা । আর ছিলেন তরুণ অফিসার নির্মলেন্দু চক্রবর্তী এবং রাধামোহন সিনহা । পরবর্তী সময়ে ছিলেন প্রণব বোস, বীরেন মুখার্জি ও বাদল চক্রবর্তী, হরিপ্রসন্ন মজুমদার, দক্ষিণারঞ্জন দে প্রমুখরা । সবার নাম সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি । পুলিশের মধ্যে চিত্তরঞ্জন দে, বীরেন্দ্র লাল দে, ( বি এল দে ) সুবোধ দাস, সুধীর দে, মনোরঞ্জন দাস ( পরে তিনি এসআই পদে উত্তীর্ণ হন ) প্রমুখরা ছিলেন বলে জানা যায় । রাজন্য আমল থেকে বেশ কয়েকজন চৌকিদার এই থানার আওতাধীন বিভিন্ন এলাকায় দায়িত্ব পালন করতেন । এদের মধ্যে কয়েকজনের নাম জানা যায় । কলাছড়ায় ছিলেন অসীম সাহসী ও শক্তিধর খন্ডল ত্রিপুরা । শোনা যায় তিনি একা বাঘের সঙ্গে লড়াই করেছেন । বৈষ্ণবপুর এলাকায় মরণ দাস । তার ছেলেরা বর্তমানে সাব্রুম শহরের প্রতিষ্ঠিত । মনুঘাট এলাকায় পাথরাই ত্রিপুরা ছোটোখিল এলাকায় যাত্রামোহন নাথ এবং সাব্রুমে ছিলেন নিবারণ দে । তার ছেলে নির্মল দে, জেদের বসে শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে পুলিশ অফিসার হয়েছিলেন । কোন এক পুলিশ অফিসার নাকি তার বাবাকে অপমান করেছিলেন । শিলাছরি অঞ্চলে শচীন্দ্র চৌকিদার নামে একজন ছিলেন । লক্ষ্যণীয় যে রাজন্য আমলে এমন সব লোককে এসব পদে নিয়োগ করা হতো যাদের দশাশয় চেহারা ও শক্তি দেখে জনমনে একটা সমীহ তৈরি হত । অপরাধীরাও ভয়ে তটস্থ থাকত । এই সময়ে চৌকিদাররাই সেই আমলে গ্রামের প্রশাসন ধরে রাখতেন ।

অতীতের সাব্রুম থানার কর্মপরিধি পূর্বদিকে বর্তমান করবুক মহকুমার আইলমারা, শিলাছরি, ঘোড়াকাঁপা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল । বিগত শতাব্দীর ষাটের দশকে জলেয়াতে ফেনীনদীর উৎস  স্থলের ভূমির দাবি নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে যে যুদ্ধ হয়েছিল সেখানেও সাব্রুম থানা থেকেই ভারতীয় সৈন্যদের মুভ করানো হয়েছিল । সৈন্য আসার আগে পর্যন্ত থানার কর্মীরাই পাকিস্তানি সৈন্যদের প্রতিহত করে । অনুরূপভাবে সে সময়ে ছোটোখিলের একটি চরভূমিকে নিজেদের বলে দাবি করে পাকিস্তানি সৈন্যরা এই ভূখণ্ডের উপর এসে তাণ্ডব শুরু করেছিল । প্রথমে সাব্রুম থানা থেকে পুলিশবাহিনী গিয়ে তাদের মোকাবেলা করে । তারপর বিএনপি এলে তারা পিছু হঠতে বাধ্য হয় । সেদিন ভারতীয় সৈন্যদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল সাব্রুম থানা ।

আর একটি ঐতিহাসিক ঘটনার সাথে সাব্রুম থানার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তা অবশ্যই উল্লেখ করতে হয় । সাব্রমের সীমান্ত এলাকাকে দুশ্চিন্তা মুক্ত করার একটা সুবর্ণ সুযোগ সাব্রুম থানার হাতে আসে । ষাটের দশকের শেষ দিকে পার্শ্ববর্তী দেশ গণআন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে । পূর্বপাকিস্তানের জনগণ স্বাধীনতার প্রস্তুতি নেয় । সেই সময়ে রাজ্যের ও দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে সাব্রুম থানার গোয়েন্দা সেলও অনুভব করে পারে যে, ওপারে একটা গণঅভ্যুত্থানের সম্ভাবনা রয়েছে । সাব্রুম থানার গোয়েন্দা শাখা তখন তার কর্মতৎপরতা বাড়িয়ে দেয় । যোগাযোগ করা হয় ওপারের স্বাধীনতাকামী নাগরিক রাজনৈতিক নেতা ও সেনা বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে । তাদের নেতাদের এপারে আশ্রয় দেওয়াসহ রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেওয়ার সাথে সাথে তাদের মুক্তিযুদ্ধের অনেক পরিকল্পনা, অনেক অপারেশন এই সাব্রুম থানা থেকেই প্রত্যক্ষভাবে পরিচালিত হয়েছিল । সাব্রুম থানা থেকে দেওয়া ওয়ারলেস মেসেজের মাধ্যমেই সেদিন বাংলাদেশের আসন্ন মুক্তিযুদ্ধ সম্বন্ধে ভারতের প্রতিরক্ষা দপ্তরকে অবহিত করা হয়েছিল ।

২৫ শে মার্চ ১৯৭১ এর মধ্য রাত থেকেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় । প্রথমদিকে রামগড় ক্যাম্প থেকে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাত । অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই রামগড় পাকবাহিনীর করায়ত্ব হয়ে যায় । তারপর এপারের সাব্রুম থানায় হয়ে যায় মুক্তিবাহিনীর গোপন কার্যালয় । বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর একনম্বর সেক্টরের গোপন হেডকোয়ার্টার ছিল সাব্রুম থানা । একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম দেওয়ার পাশাপাশি সীমান্ত অঞ্চলের জনগণের স্থায়ী নিরাপত্তা দানের সুযোগপ্রসারী লক্ষ্যকে সামনে রেখে সেদিন সাব্রুম থানা মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিল । ৭১ এর ২৫ শে মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর থেকে ৪ মে পর্যন্ত রামগড় মুক্তিবাহিনীর দখলে ছিল । পাক বাহিনীর ২৭শে এপ্রিল এবং ৪মে রামগড়  দখল নেয় । মেজর জিয়াউর রহমান দলবল নিয়ে ভারতের সাব্রুমে চলে আসেন । তারপর সাব্রুম থানাসংলগ্ন কংগ্রেস অফিসে আস্তানা গেড়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরের যুদ্ধ পরিচালনা করতে থাকেন । সেসময়ে সাব্ররুমের কংগ্ফিরেস অফিসটি মুক্তিযোদ্দাদের অফিস হিসাবে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছিল । রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এক নম্বর সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন । তিনি এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে সাব্রুম থানায় এসে যোগাযোগ করেন । সাব্রুম থানা ও বিএসএফের সহযোগিতায় তাঁকে আগরতলায় ঊর্ধ্বতন  কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয় । মুক্তিবাহিনী যখন কিছুতেই রামগড় দখল করতে পারছিল না তখন সাব্রুম থানা থেকে সাহায্য করার লক্ষ্যে একটি অপারেশনের ব্লু প্রিন্ট তৈরি করা হয় । তখন সাহসী কনস্টেবল বিএল দে, সুবোধ দাস, মনা বলী, চিত্তরঞ্জন দে প্রমুখসহ একদল পুলিশ রাতের বেলা ফেনীনদী পেরিয়ে রামগড়ে পাকবাহিনীর ক্যাম্প আক্রমণ করে ত্রাসের সৃষ্টি করেছিলেন । পাকবাহিনীর বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেওয়া সাব্রুম থানা থেকে পরিচালিত সেদিনের সফল অপারেশন টির নাম ছিল 'অপারেশন পোড়ামাটি' । সেই আক্রমণে দিশাহারা হয়ে সেদিন পাকবাহিনী রামগড় ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় । রামগড় মুক্তিবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয় । ৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ প্রথম রামগড় পাক সেনাদের দখলমুক্ত হয় রামগড় বাজারে সেদিন উড়ানো হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা । সেদিন সাব্রুম থানা এভাবেই একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্মক্ষণের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল । পরবর্তী সময়ে যখন চাকমা শরণার্থীরা এদেশে এসেছিল তখনও তাদের দেশে প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে সাব্রুম থানা মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিল । ্ঙ্গে্ঙ্গে্ঙ্গে্ঙ্্ঙ্গে্্ঙ্ঙ্গ্ঙ্্ঙ্গে্ঙ

সাব্রুম থানায় একসময় এই বছর জমজমাট কালীপুজো হত । এই পুজো উপলক্ষে কবিগান, বাউল গানের আসর বসত । সেইসঙ্গে কখনো কখনো দুঃস্থদের মধ্যে বস্ত্রদানের ব্যবস্থাও থাকত । এছাড়া নানা সময়ে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডেও এই থানা অংশগ্রহণ করে থাকে । বিভিন্ন জনসচেতনামূলক, আইনি সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান বিদ্যালয়ের ও মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ড্রাগবিরোধী, নারীসুরক্ষা, বাল্যবিবাহ, বধূ নির্যাতন ইত্যাদি বিষয় ও 'প্রয়াস' কর্মসূচি নিয়মিত রূপায়িত হচ্ছে । এককথায় সাব্রুম থানা জনপ্রশাসনিক দায়িত্ব ছাড়া ও সমাজ সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড আজও চালিয়ে যাচ্ছে । ফলে এই থানা সম্পর্কে ঔ জনগণের একটা ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে ।
( রূপান্তর, সম্পাদক–রাজীব মজুমদার, ষষ্ঠ বর্ষ || ১৪২৫ || বইমেলা ২০১৯ সংখ্যায় প্রকাশিত )

তথ্যসূত্র :
১) শ্রীজমালা
২) রাজমালা বা তৃপুরার ইতিহাস–কৈলাশচন্দ্র সিংহ
৩) ত্রিপুরার ইতিহাস–ড. জগদীশ গণচৌধুরী
৪) সুনীল চৌধুরী ( প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ )
৫)গোপাল রায়চৌধুরী ( প্রবীন নাগরিক )

Saturday, March 23, 2024

চাকলা রোশনাবাদের সৃষ্টি

"নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত ছাগলনাইয়া থানার অধীন চাকলে রোশনাবাদ ত্রিপুরার মহারাজের জমিদারিভুক্ত । ১১৪২ ত্রিপুরাব্দে ( ১৭৩২  খ্রিস্টাব্দ ) মহারাজ ছত্রমানিক্যের প্রপৌত্র জগতরাম ঠাকুর বলদাখালের জমিদার আকামাদের সাহায্যে ঢাকা নেজাড়তের সুবিখ্যাত দেওয়ান মীর হাবিবের সহিত সম্মিলিত হয়েন । মীর হাবিব ত্রিপুরা বিজয়ের উত্তম সুযোগ বিবেচনা করিয়া নবাব সুজাউদ্দিনের অনুমতি গ্রহণপূর্বক একদল সৈন্য লইয়া ত্রিপুরার সমতল ক্ষেত্র অধিকার করেন । নবাব সুজাউদ্দিন এই অধিকৃত ক্ষেত্রকে চাকলে রোসনাবাদ এই আখ্যা প্রদান করেন । তদবিধি এই বিস্তীর্ণ জমিদারি চাকলে রোসনাবাদ আখ্যায় অভিহিত হইতেছে । ইহার পরিমান ফল ১৩০.৩৭ বর্গমাইল ।" ( নোয়াখালীর ইতিহাস- প্যারীমোহন সেন, পৃ. সত্তর )

"নবাব সুজাউদ্দিন রাজপরিবারের বিবাদের সুযোগে ত্রিপুরার সমতল ক্ষেত্রকে চাকরি রস্নাবাদ খাদান পূর্বক বার্ষিক ৯২ হাজার ৯৯৩ টাকা কর ধার্য করে রাজা জগৎ মানিক্যকে ( প্রকৃত রাজা নহেন ) জমিদারি স্বরূপ প্রদান করেন । সময় অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগ ।

অনেক দায় দরবারের পর বার্ষিক মাত্র ৫ হাজার টাকার রাজস্ব নির্ধারণপূর্বক জমিদারি স্বরূপ মহারাজা দ্বিতীয় ধর্ম মানিক্য তা প্রদান করা হয় । ত্রিপুরার মহারাজা বাংলার নবাবের অধীন জমিদার শ্রেণীতে পরিণত হন এবং ত্রিপুরার সমতল ক্ষেত্র মূল রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ।" ( ত্রিপুরার ইতিবৃত্ত শ্রী জিতেন্দ্র চন্দ্র পাল পৃ. ৯ )

Tuesday, March 5, 2024

আমার সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জী ও সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কাজকর্ম

সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জী ও সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কাজকর্ম

১) নাম : অশোকানন্দ রায়বর্ধন

২) বাবা ও মার নাম : মনোরঞ্জন বর্ধন, ঊষারানি বর্ধন

৩) জন্মের তারিখ : ১১ জানুয়ারি, ১৯৫৬

৪) ঠিকানা : সাব্রুম নগর পঞ্চায়েত, ওয়ার্ড নম্বর ৩, সাব্রুম, দক্ষিণ ত্রিপুরা

৫) পেশা : অবসরপ্রাপ্ত সরকারি বিদ্যালয় পরিদর্শক

৬) শিক্ষাগত যোগ্যতা : বাংলাভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ও বিএড 

৭) সংক্ষিপ্ত পরিচয় : 

জীবনের প্রথম পাঠ শুরু হয় ডিব্রুগড় শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ প্রতিষ্ঠিত অখণ্ড মণ্ডলেশ্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে । পরবর্তী সময়ে বাবার চাকরির সুবাদে ত্রিপুরার পেচার‌থল, বক্সনগর,কুলাইসহ বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি । ধলাই জেলার কুলাই হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে ষষ্ঠ থেকে একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি  ( ১৯৭৩ )। বিলোনিয়া মহাবিদ্যালয় ( অধুনা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাবিদ্যালয় ) থেকে ১৯৭৬ সালে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেছি । ১৯৭৯ সালে সহকারী শিক্ষক হিসাবে সাবরুম উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয় যোগদান করি । পরবর্তী সময়ে পদোন্নতি পেয়ে প্রধানশিক্ষক পদে দায়িত্ব পালন করি জয় কুমার রোয়াজা পাড়া উচ্চ বিদ্যালয় এবং উত্তর দৌলবাড়ি উচ্চ বনিয়াদী বিদ্যালয়ে । ২০১৫ সালে বিদ্যালয়ের পরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতি পাই এবং সরাসরি বিদ্যালয় পরিদর্শক পদে যথেষ্ট ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে ২০১৬ সালে অবসর গ্রহণ করি ।

৮ ) সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কাজকর্ম : 

সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় বিদ্যালয়ের মুখপত্র 'আন্তর'-এ কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে আমার লেখালেখি শুরু । কবিতা লেখার মাধ্যমে আমার লেখালেখির সূত্রপাত হলেও আমি গল্প, নাটকসহ সাহিত্য-সমাজবিষয়ক মৌলিক প্রবন্ধ রচনা ও লোকসংস্কৃতিবিষয়ক গবেষণাকর্ম ও লেখালেখিতে নিজেকে নিরন্তর নিয়োজিত রেখেছি । বাংলা তথা ভারতীয় সংস্কৃতি নিয়ে আমি কাজ করে থাকি । ইতোমধ্যে আমার বহু কবিতা, গল্প ও গবেষণামূলক প্রবন্ধ রাজ্যের, দেশের ও দেশের বাইরে নানা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে । অনেকগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনারে আমি আমার গবেষণামূলক প্রবন্ধ পাঠ করে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছি । বর্তমানে আন্তর্জাল প্রযুক্তির সুযোগ সৃষ্টি হওয়ার ফলে ইতোমধ্যে ভারতে ও ভারতের বাইরের বিভিন্ন স্থানের বেশ কয়েকটি  সাহিত্য ও লোকসংস্কৃতি বিষয়ক ওয়েবিনারে অংশগ্রহণ করেছি । এছাড়া আমি বহু নাটক, যাত্রাপালা ইত্যাদিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছি । ভাঙন ও রাঙামাটির পথে নামে দুটি টেলিফিল্মে অভিনয় করেছি । কয়েকবার নাটক ও যাত্রা প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছি । বেশ কিছু স্মরণিকা ও লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদনা করেছি । আমার নিজের গবেষণা সংক্রান্ত কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রী না থাকলেও রাজ্যের বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট গবেষকের গবেষণাপত্র রচনা ক্ষেত্রে ক্ষেত্রসমীক্ষা ও অন্যান্য বিষয়ে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি আমি ।সংশ্লিষ্ট গবেষকগণও তাঁদের গবেষণাপত্রে আমার সাহচর্য বিষয়ে বেশ যত্ন সহকারে উল্লেখ্য করেছেন ।

 বর্তমানে সাহিত্যসৃষ্টি ও গবেষণাকর্মের মধ্যে ডুবে থেকেই আমি আমার অবসর জীবন অতিবাহিত করছি ।

৯) প্রকাশিত গ্রন্থের তালিকা :

    ক) ত্রিপুরার লোকসমাজ ও সংস্কৃতি ( প্রবন্ধ ), ভাষা, আগরতলা ২০০২ 
    খ) বিনীত চুম্বন ( কবিতা ),  স্রোত, কুমারঘাট, ২০০৭ 
     গ) ত্রিপুরার লোকসংস্কৃতির উৎসসন্ধান ও বিষয় বিন্যাস (প্রবন্ধ ), স্রোত, কুমারঘাট ২০১৩ 
      ঘ) ত্রিপুরার মগ জনজাতির ইতিহাস ও সংস্কৃতি ( প্রবন্ধ সম্পাদনা ), স্রোত, কুমারঘাট, ২০১৬
       ঙ) ভার্চুয়াল রাই ( কবিতা ), স্রোত কুমারঘাট, ২০১৮ 
        চ ) জোছনার হাওরে বলিরেখা ( কবিতা ), ত্রিধারা, ২০২২ 
        ছ )  অন্তরে দহন অনন্ত ( মুক্তগদ্য ), ত্রিধারা, ২০২৩ 
         জ ) কুসুমে কুসুমে রেখে যাওয়া চরণচিহ্ন : ত্রিপুরায় রবীন্দ্র পদার্পণের ১২৫ বছর ( প্রবন্ধ ), স্রোত, ২০২৩ 
          ঝ ) ফেনী নদীর প্রত্নকথা ও মানুষের উপখ্যান ( আঞ্চলিক ইতিহাস ), স্রোত, ২০২৩ 
          ঞ ) ত্রিপুরার লোক ধর্ম ও লোকাচার ( প্রবন্ধ ) অন্যপাঠ , ২০২৩

১০)  সম্মান,পুরস্কার ও স্বীকৃতি :

           ক ) অগ্রণী পুরস্কার, বিলোনিয়া, ত্রিপুরা ১৯৭৫
           খ ) সংবাদ সাহিত্য পুরস্কার, আগরতলা, ১৯৯৫ 
            গ ) লোকসংস্কৃতি সম্মাননা, মনুবাজার,২০১৫
             ঘ ) সাহিত্য সম্মান– তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর, ত্রিপুরা সরকার ২০১৭
             ঙ ) সমভূমি সাহিত্য সম্মান, বাইখোরা, ২০১৭
             চ ) সৃজন সাহিত্য সম্মান, ইসলামপুর, উত্তর দিনাজপুর, প. বঙ্গ, ২০১৮
             ছ  ) স্রোত রজতজয়ন্তী প্রকাশনা উৎসব সম্মাননা, সুকান্ত একাডেমি আগরতলা, ২০১৯ 
             জ ) বনতট সাহিত্য সম্মান, কাঞ্চনপুর, উত্তর ত্রিপুরা ২০২০ 
             ঝ ) দেবদ্বীপ সম্মান, শান্তির বাজার, ২০২২ 
              ঞ ) গবেষক সংবর্ধনা, ত্রিপুরা রবীন্দ্র পরিষদ, উদয়পুর ২০২৩
              ট ) বরিষ্ঠ সাংবাদিক সম্মাননা, ত্রিপুরা ওয়ার্কিং জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন, আগরতলা, ২০২৪

এছাড়া জাতীয় শিশু বিজ্ঞান কংগ্রেসের 'প্রজেক্ট গাইড' হিসেবে রাষ্ট্রীয় সম্মান ২০০৩ প্রাপক ।

Sunday, March 3, 2024

দোল দোল দুলুনি

দোল দোল দুলুনি
ৱং খেলতে যাবো নি
কেন রে ভাই যাবে না 
খেলার সময় পাবো নি
কেন রে ভাই পাবে না
রাত পোহালেই এক্জাম
টিচার দেবে দাবড়ানি

Saturday, March 2, 2024

ত্রিপুরা ওয়ার্কিং জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের দ্বিবার্ষিক সম্মেলন : প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা

ত্রিপুরা ওয়ার্কিং জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের দ্বিবার্ষিক সম্মেলন  :  প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

সংবাদপত্রের সুপ্রাচীন ইতিহাস রয়েছে । সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে, সঠিক দিশা দেখানোর ক্ষেত্রে সংবাদপত্র অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে । আর এই অভিযাত্রায় সংবাদপত্রকে এগিয়ে নিয়ে যেতে একদল অতন্দ্র সৈনিক সমস্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে থাকেন । এঁরা হলেন সাংবাদিক । এই সাংবাদিকরা একাধারে সংবাদদাতা, সংবাদসংগ্রাহক ও সংবাদলেখক বা সংবাদপরিবেশক । মানুষের কাছে উপস্থাপনের পূর্বে একটি সংবাদকে অনেকগুলি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয় । এই সমগ্র প্রক্রিয়ার সঙ্গে যাঁরা জড়িত তাঁদের আমরা সাংবাদিক বলি । ইংরেজিতে বলা হয় জার্নালিস্ট । সাংবাদিকতা শব্দটি ইংরেজি জার্নালিজমের প্রতিশব্দ । জার্নালের বাংলা অর্থ দাঁড়ায় কড়চা বা রোজনামচা । ধীরে ধীরে অর্থ বিস্তারের ফলে এই জার্নাল শব্দটি দিয়ে পত্রপত্রিকায় ইত্যাদিও বোঝানো হতে থাকে । পত্রপত্রিকার সাথে যুক্ত কর্মরতদের জার্নালিস্ট বলা হয় । বাংলায় তারই রূপান্তর সাংবাদিক ।

একসময় সাংবাদিকের কর্মপরিধি শুধুমাত্র মুদ্রণমাধ্যমে সীমাবদ্ধ ছিল । কিন্তু এই ব্যবস্থায় দীর্ঘ পথপরিক্রমার পর নতুন শতাব্দীতে এসে গণমাধ্যমে আমূল রূপান্তর ঘটে গেছে । এর আগে বিগত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এসেছিল  দৃশ্যশ্রাব্য মাধ্যম টেলিভিশন । বর্তমানে তার অনেক রূপভেদ ঘটে গেছে । সংবাদ জগতে সাম্প্রতিককালে অভূতপূর্ব উন্নয়ন, অগ্রগতি ও অত্যাধুনিক উন্নত প্রযুক্তির ছোঁয়ায় সংবাদ সম্প্রচারের ক্ষেত্রটির ও বিস্তার লাভ ঘটেছে । ফলে গণমাধ্যমের প্রতিটি অঙ্গনে কাজ করা সাংবাদিকের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে । সাংবাদিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও তাঁদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, সামাজিক নিরাপত্তা এবং জীবনের নিরাপত্তা আজও সেই তিমিরই রয়ে গেছে । বিভিন্ন গণমাধ্যমের মালিকরা সরকারের লেজুড়বৃত্তির মাধ্যমে অসম প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে নিজেদের সম্পদের পাহাড় গড়ার দিকেই বেশি যত্নবান । সাংবাদিকদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে তেমন যত্নবান নন । এ কারণেই সাংবাদিকদের প্রয়োজন হয়ে পড়ে নিজস্ব সংগঠনের । যার মাধ্যমে তাঁরা মালিকপক্ষ ও সরকারের কাছে নিজেদের দাবি-দাওয়াগুলো উত্থাপন করতে পারেন ।

ত্রিপুরা রাজ্যে সাংবাদিকদের মহান পেশাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ত্রিপুরা ওয়ার্কিং জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন । সেদিন শুধুমাত্র মুদ্রণমাধ্যমেই সংবাদপত্র প্রকাশিত হত  এই রাজ্যে । কিন্তু বর্তমানে রাজ্যে মুদ্রণমাধ্যমের পাশাপাশি বৈদ্যুতিন মাধ্যমের প্রসার দিনকে দিন বেড়ে চলেছে । ফলে বর্তমানে এই পেশায় বহু তরুণ তরুণীরা এগিয়ে এসেছেন । তাঁরা গণমাধ্যমের জন্য যে পরিমাণ মেধা ও শ্রম বিনিয়োগ করছেন সেই পরিমাণ সাম্মানিক বা বেতন আজও মালিকপক্ষের কাছ থেকে পাচ্ছেন না । সংবাদকর্মীদের বেতন ভাতা ও সুযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে মুদ্রণমাধ্যমের যুগে মালিকপক্ষের যে মানসিকতা ছিল, আজকের উন্নত গণমাধ্যমের ক্ষেত্রেও সেই অবস্থায়ই রয়ে গেছে । ত্রিপুরা ওয়ার্কিং জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অতীতে যেমন এই গণমাধ্যম কর্মীদের পাশে ছিল, তেমনি আজকের দিনের বৃহৎ পরিসরেও তার গঠনমূলক ভূমিকা অব্যাহত রেখেছে । সাংবাদিক ও সংবাদ কর্মীদের সার্বিক স্বার্থরক্ষাই এই সংগঠনের মূল কাজ । ফলে এই সংগঠন সাংবাদিকদের অর্থনৈতিক দাবি দাওয়ার জন্য যেমন সোচ্চার রয়েছে তেমনি তাদের পেশাগত উন্নয়নের জন্য নানা ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মশালার নিয়মিত উদ্যোগও নিচ্ছে । পাশাপাশি নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডেও নিজেদের জড়িয়ে রাখছে । যার ফলে এই সংগঠন আজ ত্রিপুরা রাজ্যের বৃহত্তম সাংবাদিক সংগঠনে পরিণত হয়েছে ।

রাজ্যের সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের প্রাচীনতম ও বৃহত্তম এই সংগঠন এ বছর ৪৫ বর্ষে পদার্পণ করল । এই সংগঠনের উদ্যোগে রাজ্যের কর্মরত সাংবাদিকদের দ্বিবার্ষিক সম্মেলন গত ২৪ শেও ২৫ শে ফেব্রুয়ারি আগরতলার ভগৎ সিং যুব আবাসে অনুষ্ঠিত হয় । সেই সঙ্গে কর্মরত সাংবাদিকদের গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে আয়োজন করা হয় মিডিয়া কর্মশালার । এই কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের যুববিষয়ক ও ক্রীড়ামন্ত্রী টিঙ্কু রায় । এছাড়াও ছিলেন ইন্ডিয়ান ফেডারেশন অফ ওয়ার্কিং জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল বিপিন ধুলিয়ান, কলকাতার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এর প্রাক্তন রেসিডেন্ট এডিটর সুব্রত নাগচৌধুরী, বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমের প্রবীণ ব্যক্তিত্ব চিত্রশিল্পী এম এ তাহের, বাংলাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী মো আবদুল হাদীসহ আরো অনেকে । উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ধ্রুবরঞ্জন সেন । মন্ত্রীমহোদয় তাঁর ভাষণে সাংবাদিকদের অভাব অভিযোগের বিষয়ে সহমত পোষণ করেন এবং তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন । মিডিয়া ওয়ার্কশপে আলোচকগণ সাংবাদিকদের পেশাগত মান উন্নয়নের পক্ষে সহায়ক বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেন । আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্র শিল্পী এম এ তাহের তাঁর বিষয়ভিত্তিক চিত্রসংগ্রহের বিস্তৃত তথ্য আলোচনায় তুলে ধরেন ।

সম্মেলনের দ্বিতীয়দিন অত্যন্ত প্রাণবন্ত ও গণতান্ত্রিক পরিবেশে সংগঠনের বার্ষিক অধিবেশন শুরু হয় । সভার শুরুতে সচিব সুনীল দেবনাথ সম্পাদকীয় প্রতিবেদন ও বার্ষিক হিসেব পেশ করেন । এরপর এই সভার সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বরিষ্ঠ সাংবাদিক বিজয় পাল কিছু সাংগঠনিক প্রস্তাব ও দাবিসনদ পেশ করেন । তারপরেই সম্পাদকীয় প্রতিবেদনের উপর খোলামেলা আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সাংবাদিক তপন বনিক ( কুমারঘাট ), সজলদেব ) কল্যাণপুর ), সুভাষ ঘোষ ( আগরতলা ), তপন রায় ( সাবরুম ),সরযু চক্রবর্তী ( আগরতলা ), অতনু দত্ত ( খোয়াই ), এবং বর্ষিয়ান সাংবাদিক নারায়ণ পাটারী । তাঁরা প্রত্যেকেই আলোচনাকালে কিছু কিছু সাংগঠনিক ত্রুটি বিচ্যুতির প্রতি ইঙ্গিত করেন এবং নতুন কিছু প্রস্তাব সংযোজন এর জন্য আবেদন রাখেন । বিশেষ করে আর্থিক বিষয়ে আরো স্বচ্ছতার প্রয়োজন অনুভব করেন সকলে । নিয়মিত ক্যাশবই লিপিবদ্ধ করা ও অডিটের উপর গুরুত্ব দেন অভিজ্ঞ সদস্যরা । সম্মেলনের দাবী সনদ গুলোর মধ্যে সাংবাদিকদের নিয়োগপত্র, বেতনক্রম, প্রেস এক্রিডিয়েশন, মুখ্যমন্ত্রী জনারোগ্য যোজনার সুবিধা, সাংবাদিকদের পারিবারিক পেনশন, ইত্যাদি দাবি দাওয়ার প্রতি অগ্রাধিকার দেওয়া হয় । বর্তমানে গণমাধ্যমের বহুধাবিস্তৃতির কারণে সংগঠনের লোগো পরিবর্তনেরও প্রস্তাব রাখা হয় । সম্মেলন উপলক্ষে প্রকাশিত সংগঠনের মুখপাত্র 'মাধ্যম'-র প্রচ্ছদে নমুনা লোগোর ছবি ছাপা হয় । লোগোটি নির্মাণে 'মনন মেধা তরঙ্গায়িত মাধ্যম ও সংবাদপত্র–সবকিছুর মিশেল দেওয়া হয়েছে । নীলাভ প্রচ্ছদ‌পটে আলোর নিরন্তর স্ফুরণ–মহাবিশ্বের সৃষ্টির প্রকাশ বুঝিয়েছে । ্প্রস্তাব এসেছে সংগঠনের একটি পতাকা গ্রহণের । সদস্যপদ পদ্ধতির আধুনিককরণেরও । সেইসঙ্গে 'মাধ্যম'কে নিয়মিত প্রকাশ করার ও প্রস্তাব রেখেছেন সংগঠনের প্রাক্তন সচিব নবেন্দু ভট্টাচার্য মহোদয় । এই প্রক্রিয়ার ফাঁকে ত্রিপুরা সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে শুভ্রজিৎ ভট্টাচার্য মহাশয় এইডস মহামারীর ভয়াবহতা সম্পর্কে সাংবাদিকদের সোচ্চার হওয়ার আবেদন রাখেন । তাঁর আলোচনা অত্যন্ত সময়োপযোগী ছিল ।

 অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে নতুন কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় । সভার পক্ষ থেকে সংগঠনের সমস্ত সদস্যদের মতামতকে শ্রদ্ধা জানিয়ে প্যানেল আহবান করা হয় । সভায় উপস্থাপিত তিনটি প্যানেল থেকে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে আগামী দুই বছরের জন্য সংগঠনের রাজ্য কমিটি গঠিত হয় । এই কমিটির সভাপতি বিজয় পাল ও সচিব সুনীল দেবনাথসহ ২১ জন সদস্য রয়েছেন ।

দীর্ঘ সময়ব্যাপী গঠনমূলক আলোচনা সমালোচনার মধ্য দিয়ে এই দ্বিবার্ষিক সম্মেলন শেষ হয় । মূলত যাদের শিক্ষা, দীক্ষা, মেধা, মনন, শ্রম, কৃষ্টি, যোগ্যতা, চিন্তা, চেতনা, আদর্শ, কঠোর পরিশ্রম ও মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে গোটা সংবাদজগৎ পরিচালিত হয়, তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য সহায়ক ভূমিকা গ্রহণের অঙ্গীকারের মাধ্যমে সংগঠনের আগামী পথ চলার দিশা নির্ধারিত হয় এই সম্মেলনে ।

Friday, March 1, 2024

অদ্বৈত মল্লবর্মণের জন্মভিটে ও তিতাসভ্রমণ

অদ্বৈত মল্লবর্মনের জন্মভিটে ও তিতাসভ্রমণ

 অশোকানন্দ রায়বর্ধন

নদী আমার বড়ো প্রিয় । শৈশব থেকে জীবনের এই সন্ধ্যাবেলা অবধি আমি বহু নদী দেখেছি । নদীর শরীরের বহু রকমফের দেখেছি । কোনো নদী টপকে পেরিয়ে যাওয়া যায় । আবার কোনো নদীর বিশালতা দেখে অবাক হয়ে যেতে হয় । ব্রহ্মপুত্র, কপিলী, কুশিয়ারা, বরাক, জুরি, মনু, দেও, ধলাই, হাওড়া বিজয়, গোমতী আর ফেনী দেখতে দেখতে এক জীবন আমি কাটিয়েছি । মাঝে মাঝে দেখেছি গঙ্গা, যমুনা, ময়ূরাক্ষী, মহানন্দা, গোদাবরী ও কাবেরী । বাংলাসাহিত্যের পাঠ নিতে এসে পড়তে হয়েছে বেশ কখানা নদীকেন্দ্রিক উপন্যাস । মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মা নদীর মাঝি, সমরেশ বসুর গঙ্গা, বিভূতিভূষণের ইছামতি, তারাশঙ্করের কালিন্দী, দেবেশ রায়ের তিস্তা পারের বৃত্তান্ত । এইসব উপন্যাস ছাড়িয়ে আমাকে বেশি মাত্রায় আকৃষ্ট করেছে অদ্বৈত মল্লবর্মনের তিতাস একটি নদীর নাম । একে তো তিতাস এর কাছাকাছি আমার বাস্তুভিটে বলে । আর দ্বিতীয়ত, এই উপন্যাসের চরিত্রসৃষ্টির ক্ষেত্রে অদ্বৈতের জেলেজীবন ঘনিষ্ঠতার প্রভাবে । অন্যান্য উপন্যাসিকদের মতো তিনি দুচার দিনের জন্য জেলেঘরের অতিথি নন । তিনি এই যাপনের সঙ্গে নিবিড় ভাবে যুক্ত । তিনি তিতাসপারের জেলেদের সন্তান । তাঁর চোখের দেখা আর অন্তর্দৃষ্টিতে হয়েছে এই উপন্যাসের চরিত্রসৃষ্টি । ফলে এই উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্রই হয়ে উঠেছে রক্তমাংসে জীবন্ত । আর দেশভাগের ফলে এই তিতাসপারের জেলে পরিবারের অনেক উত্তরসূরী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আমার ত্রিপুরায় । তিতাসবেষ্টিত ভূমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বহু মানুষ রয়েছেন এখানে । এপারে । ফলে ভাষা, সংস্কৃতি ও জীবনযাপনের দিক থেকে আমরা গভীর মিল পাই দুই ভূখণ্ডের । শুধু কাঁটাতারের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে 'দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ঘর হইতে শুধু দুই পা ফেলিয়া ।'

বাংলাদেশে কোনদিন যাইনি । আমি জন্মাইওনি ওখানে । তবে আমার মা-বাবা সহ পূর্বপুরুষেরা ছিলেন আবহমান পুববাংলার ভূমিপুত্রকন্যা । তাঁদের মুখে শুনেছিলাম তাঁদের ভদ্রাসনের ও বিশাল ভূখণ্ডের পরস্তাব । মায়ের মুখে শুনতাম তাঁদের পিতৃভূমি নোয়াখালির সোনাগাজি বিষ্ণুপুর কুঠির কালিবাড়ি । আর মাতুলালয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া । তাঁর মুখে শুনতাম কয়েকটা জায়গার নাম কসবা, নবীনগর, বিটঘর, বিদ্যাকূট, সরাইল, ইত্যাদি । কোন দিকে, কোন মহল্লায় কিছুই জানিনা । কোন গ্রামে তার মাতুলালয় তাও জানা হয়নি । অদ্বৈতের তিতাস পড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কথা, তিতাসের কথা কিছুটা জেনেছি । সেই থেকে তিতাসকে দেখার খুব ইচ্ছে আমার । কদিন আগে এল আমার কাছে সে সুযোগ আলাদিনের প্রদীপ এর মতো । আমাদের রাজ্যের বিশিষ্ট কবি তিতাসের সন্তান দিলীপ দাস আমার কাছে জানতে চাইলেন আমি বাংলাদেশে যাব কিনা । ব্রাহ্মণবাড়িয়া গোকর্ণঘাটে তিতাস পাড়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বিতীয় অদ্বৈত গ্রন্থমেলা ২০২৪ । ২০-২১-২২   ফেব্রুয়ারি । তিতাসের আর অদ্বৈতের নাম শুনেই আমি লাফিয়ে উঠলাম । তার উপর আমার পিতামাতৃভূমির কিঞ্চিৎ হলেও দর্শন সুযোগ । দিলীপদার প্রস্তাব আমার কাছে মনে হল যেন কোন এক ফেরেস্তার পাঠানো 'বিপিন মাঝির নাও' । আমি সঙ্গে সঙ্গে লুফে নিলাম তাঁর প্রস্তাব । 'নিয়ে রশা রশি করি কষাকষি পোঁটলা পুটুলি বাঁধি' আমি তৈরি হতে লাগলাম কুড়ি তারিখের জন্য ।

কুড়ি ফেব্রুয়ারি, শিশুসাহিত্যিক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সন্তান বিমলেন্দ্র চক্রবর্তী সস্ত্রীক, কবি মাধব বনিক, কবি ও প্রাবন্ধিক সন্দীপ দে এবং আমি সকাল সাড়ে নয়টা নাগাদ আখাউড়া সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে পা রাখতেই দুজন ভদ্রলোক এগিয়ে এসে আমাদের সঙ্গে পরিচিত হলেন । তাঁদের মধ্যে একজন হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সন্তান তথা সাহিত্যিক ও দ্বিতীয় অদ্বৈত গ্রন্থমেলা ২০২৪ বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব আমির হোসেন । এবং অপরজন তাঁরই অনুগত সহযোগী আব্দুল আজাদ । আমির হোসেন একজন সৃষ্টিশীল সাহিত্যবোধসম্পন্ন সৎ ও আন্তরিক সংগঠক । পেশায় স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক । গণিত বিষয়ের মেধাবী শিক্ষক তিনি । লেখালেখির জগতেও তিনি সুপরিচিত । কবিতা, গল্প, উপন্যাস, শিশুসাহিত্য ও জীবনীসাহিত্যের প্রতিটি শাখায় তিনি তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন । ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাঁর নিজের একটি গ্রন্থাগার রয়েছে । তার নাম 'চেতনায় স্বদেশ' । তাঁর গ্রন্থাগারেও নিয়ে গেছেন আমাদের । সেখানে পরিচয় হয়েছে মো. ইউনুস ভাইয়ের সাথে ।  আমির হোসেনভাই  এবং আজাদ ভাই ধরাধরি করে আমাদের সামানপত্র টোটোতে তুলে আমাদের প্রথমে নিয়ে পৌঁছালেন আখাউড়া । তারপর আবার সেখান থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের প্রান্তে কুরুলিয়া খাল পেরিয়ে কাউতলি মোড়ে সৌধ হিরন্ময়ের পাশে জেলা পরিষদের ডাকবাংলায় পৌঁছে দিলেন । আখাউড়া থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসতে ঘুরে ফিরে বারবার এই তিতাসকে পেরুচ্ছিলাম । গোটা ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে তিতাসনদী শরীরের শিরা উপশিরার মত ঘিরে রেখেছে । কুরুলিয়া খালটি খনন করা হয়েছিল জলপ্লাবন থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে । ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই এই কুরুলিয়া খাল খনন শেষে উদ্বোধন করেন সেই সময়ের লাটবাহাদুর এন্ডারশন সাহেব । এ কারণে এই খালটির আরেক নাম এন্ডারশন খাল । ত্রিপুরার মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মানিক্য বাহাদুরের উদ্যোগে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমে এই খালটি খনন করা হয়েছিল । এই খাল খননের ফলে বর্ষায় তিতাস নদীর জলের চাপ কমে যাওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বন্যারোধ সম্ভব হয় । পাশাপাশি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ভৈরবের জলপথের দূরত্ব অনেকটা কমে যায় । ১৯৭১ সালের শেষ দিকে যখন মুক্তিযোদ্ধারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের চারদিকে অবস্থান নিতে থাকে তখন পাকসেনারা পালিয়ে যাওয়ার সময় ৬ ডিসেম্বর রাজাকারদের সহায়তায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজের অধ্যাপক কে এম লুৎফর রহমানসহ জেলা কারাগারে আটক অর্ধশত বুদ্ধিজীবী ও সাধারন মানুষকে চোখ বেঁধে শহরের এক প্রান্তে কুরুলিয়া খালের পাড়ে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে । তাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত এই হিরণ্ময় সৌধ । 

আমরা ডাকবাংলোয় ঢোকার কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের সঙ্গে এসে দেখা করেন কবি, গীতিকার, কথাশিল্পী, আহ্বায়ক গ্রন্থমেলা কমিটি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুরপরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো আ কুদ্দুস, ইঞ্জিনিয়ার সুমন দত্ত, এডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া, ফারুক আহমেদ ভূঁইয়া, মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ, এস এম ইউনুস ও মালিকরতন শর্মা প্রমুখগণ । কুদ্দুস সাহেব বিসিএস ক্যাডারের অফিসার হলেও এখানকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁর নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে । তাঁরই উদ্যোগে শুরু হয়েছে অদ্বৈত মল্লবর্মনের জন্মভিটে গোকর্ণঘাটে গ্রন্থমেলা । ইতোমধ্যে এই ঘাটে পাশের একটি জায়গাকে দখলমুক্ত করে গড়ে তোলা হয়েছে অদ্বৈত মল্লবর্মণ স্মৃতি গ্রন্থাগার ও গবেষণা কেন্দ্র । তারই লাগোয়া করা হয়েছে একটি মুক্তমঞ্চ । অদ্বৈতের ভিটেকে আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ করার লক্ষ্যে এই এলাকায় আরো কিছু কাজের পরিকল্পনা তাঁর রয়েছে ।

কুড়ি তারিখ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী দিন বিকেলবেলা আমাদের গাড়ি করে গোকর্ণঘাটে অনুষ্ঠান মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয় । কিছুক্ষণের মধ্যেই মেলা প্রাঙ্গণে এসে উদ্বোধন করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশ সুপার জনাব মো শাফায়াত হোসেন । তিনিও লেখালেখির সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন । পাশাপাশি সরকারি কর্তব্যবোধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার গুরু দায়িত্ব পালন করছেন । অনুষ্ঠান মঞ্চে সভাপতি হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মো আ কুদ্দুস, উদ্বোধক জেলা পুলিশ সুপার শাখায়াত হোসেন ছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন বাচিক শিল্পী সাংগঠনিক সম্পাদক বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ মো মনির হোসেন, সাবেক কাউন্সিলার আলহাজ্ব ফেরদৌসুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বাহার মোল্লা, কবি ও প্রাবন্ধিক অশোকানন্দ রায়বর্ধন শিশু সাহিত্যিক বিমলেন্দু চক্রবর্তী, পশ্চিমবঙ্গের কবি ও গবেষক ড. বিপ্লব মন্ডল । প্রত্যেকেই তাঁদের অনুভব ব্যক্ত করেন । প্রথম দিন উদ্বোধনী পর্ব শেষ করে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে সভা মঞ্চে আসতে আসতে অন্ধকার নেমে আসে । তাই মঞ্চের পেছনে নির্বাক শুয়ে থাকা ইতিহাস তিতাসকে সেদিন ভালো করে দেখতে পাইনি । শুধু মোটরচালিত নৌকোগুলোর চলাচলের শব্দ পাচ্ছিলাম কিছুটা দূরে । জেটির পর বিশাল আঁধার ছাড়া আর কিছু দেখতে পাইনি। তখনও মনের পর্দায় ভাসছিল অদ্বৈতের আঁকা ভরাযৌবনা তিতাসের ছবি ।

রাতের দিকে ঘরে ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পরদিন সকালে নাস্তা করার জন্য দাওয়াতে দিলেন আজাদ ভাই । এই আজাদ ভাইয়ের সঙ্গে বাংলাদেশে পা দিয়েই পরিচয় । অদ্ভুত মানুষ তিনি । ঢাকায় জন্মস্থান হলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা শেষ করার সুবাদে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্থায়ী বসবাস করছেন । আমাদের সাহায্য করার জন্য তিনি এক পায়ে খাড়া । পরদিন তাঁর ফ্ল্যাটে দাওয়াত সেরে তাঁর সহায়তায় একটি গাড়ি নিয়ে আমরা চলে গেলাম কবি মাধব বণিকের এক আত্মীয়বাড়িতে মাধবপুরে । পথেই পেলাম আমাদের রাজ্যের বামুটিয়া থেকে নেমে আসা লোহার নদীকে । প্রায় সদর উত্তরাঞ্চলের সীমান্তের কাছাকাছি এলাকা ধরে বাংলাদেশের প্রান্ত দিয়ে পৌছুলাম মাধবপুর । মাধবপুর আত্মীয় বাড়িতে সযত্ন ভুরিভোজের পরেই আমাদের আবার ফিরতে হল । মনের ভেতর তাড়া দিচ্ছিল তিতাসের দেখা পাওয়ার । এছাড়া এদিন সঞ্জীবের আলোচনা ছিল । একটু বেলা থাকতেই আমরা গিয়ে হাজির হলাম তিতাসকে দেখার জন্য । কিন্তু হায়  তিতাস ! কিছুতেই মেলাতে পারলাম না অদ্বৈতের তিতাস আর আজকের তিতাসের সঙ্গে । বিশাল এক নির্জন চত্বরের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে  তিতাস । তার যেটুকু ক্ষীণধারা রয়েছে তাও সবটাই কচুরিপানায় ঢাকা । তার মাঝেই পথ করে বয়ে চলেছে ছোটো ছোটো নৌকো আর মাঝারি আকারের বালির নৌকো । সবই যন্ত্রচালিত । ছোট নৌকোগুলি শুধু যাত্রী পারাপার করছে । দূরপাল্লার যাত্রীলঞ্চ কিছুই নেই এখন এঘাটে । এক বিধ্বস্ত ইতিহাস যেন চড়ার বুকে অসহায় পড়ে আছে । নদীর দুপারের চর জুড়ে  নানা আবর্জনার স্তুপ । কিন্তু আমরা জানি না আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল আরো এক বিপন্ন বিস্ময় । মেলা প্রাঙ্গণের সামনে অদ্বৈত মল্লবর্মনের ভাস্কর্যটি আলোহীন পড়ে আছে । অদ্বৈতের বাস্তুভিটেতে গিয়ে দেখলাম ছোট্ট একটা কুঁড়েঘর । অদ্বৈতের স্মৃতিকে বহন করে নিরবে দাঁড়িয়ে আছে । ভাবছিলাম এত যে উদ্যোগ আয়োজন তাঁকে ঘিরে, কুদ্দুস সাহেব যদি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে চলে যান তাহলে কি তা অব্যাহত থাকবে ?

দ্বিতীয়দিন অসাধারণ আলোচনা করলেন সঞ্জীব দে তিতাসের দর্শন নিয়ে । অভিনব বিষয়নির্বাচন ও তাঁর বাচনশৈলীতে সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছিল । প্রতিদিন অনুষ্ঠানে উপচে পড়া ভিড় দেখে বোঝা যাচ্ছিল এখানকার মানুষের প্রাণে জড়িয়ে আছেন অদ্বৈত মল্লবর্মণ । শেষ দিন বৃষ্টির জন্য অনুষ্ঠান সংক্ষেপ করতে হয় । এদিন কবি মাধব বণিকের আলোচনা ছিল । কম কথা বলার মানুষ এই দুইদিন রীতিমতো উত্তেজনায় ছিলেন, কিভাবে তিনি বক্তব্য রাখবেন তা নিয়ে । যাইহোক বসন্তের বৃষ্টি তাকে টেনশনমুক্ত করে গেল । শেষদিন মঞ্চে আবৃত্তি করেন তিতাস আবৃত্তি সংগঠনের সদস্যবর্গ ও বিশিষ্ট আবৃত্তিকার মো মনির হোসেন, শামস মিঠু ( ভোলা ) ও সৈয়দ ফয়সাল আহমেদ ( ঢাকা ) । আলোচনা করেন নাট্যব্যক্গোতিত্কব ও সংগঠক এবং আলাউদ্দিন সংগীতাঙ্গনের প্রাক্তন সচিব আব্দুল মান্নান সরকার । তিনি অদ্বৈতের তিতাস একটি নদীর নামের নাট্যরূপায়ণের প্রসঙ্গের অবতারণা করেন এবং রামপ্রসাদ চরিত্রে তাঁর অভিনয়ের কথা উল্লেখ করেন । গোকর্ণ ঘাটের মালো সম্প্রদায়ের মানুষেরা পরিবেশন করেন নাটক 'অদ্বৈত এর অল্পকাহিনি' । প্রতিদিন এই মেলায় ঘোরার শেষে আমরা গোকর্ণঘাট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক পরিমল ভৌমিকের চেম্বারে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে আসি । অদ্বৈত মল্লবর্মণ সম্পর্কে গবেষণাকর্মের জন্য বা জানার আগ্রহে কেউ গোকর্ণঘাট এলে অবশ্যই পরিমল বাবুর সঙ্গে দেখা করেন । অমায়িক সজ্জন মানুষ তিনি । এলাকায় শ্রদ্ধার পাত্রও । তাঁর ওখানেই শেষদিন দেখা হয়ে যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশেষ ব্যক্তিত্ব ও অসাম্প্রদায়িক মানুষ জয়দুল হোসেনের সঙ্গে ।

রাতে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে ছোটো শ্রীমান সৌগতর মেসেজ পেলাম । কাল বাড়ি ফেরার সময় যেন একটা ফুলের চারা নিয়ে আসি । সমস্যায় পড়ে গেলাম । সকালেই তো চলে যাব আমরা । কোথায় পাবো ফুলের চারা এত রাতে । দিনের বেলা রাস্তাঘাটে যে ফুলের চারা দেখেছিলাম তা প্রায় সবই আগরতলায় পাওয়া যায় । বললাম সে কথা । ছেলে জানাল যে কোনো ফুলের চারা হলেই হবে । শুধুমাত্র প্রতীকি কিছু একটা নিয়ে যাওয়া । ছোটোবেলায় ঠাম্মার কাছে সাত ভাই চম্পা ছাড়া আরও নানাফুলের গল্প শুনেছে । ফুলের চারা দিয়ে সে ঠাম্মার দেশের বাড়ির স্মৃতি ধরে রাখতে চায় । তার আবেগপ্রবণ কথাটা শুনে মনটা কেমন হয়ে গেল । পরদিন আমাদের এগিয়ে দিতে এসেছিলেন ভাবীকে সঙ্গে নিয়ে জয়দুলভাই, ফারুকভাই সহ আরো কয়েকজন । ফারুকভাইকে ছেলের আবদারের কথাটি পাড়তেই তিনি ঠিকানা বলে দিলেন কাছেই এক নার্সারীর । সঞ্জীবকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে একটা গোলাপের চারা নিয়ে এলাম । ফেরার পথে ভারি নাস্তা খাইয়ে জয়দুলভাইরা আমাদের সিএনজিতে তুলে সজলচোখে বিদায় জানালেন । যেন কন্যাবিদায় করছিলেন বাপের বাড়ির মানুষেরা । আমি ট্রলিটা সিএনজির পেছনে রাখলাম । আর সযত্নে ফুলের চারাটি হাতে নিয়ে গাড়িতে বসলাম । আমার শ্রীমান তার ঠাম্মার উদ্দেশ্যে দেশের বাড়ির ফুল নিবেদন করবে এ গাছে হৃদয়ের মতো লালগোলাপ ফুটলে । মনে মনে বললাম, বিদায় বাংলাদেশ । বিদায় পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি ।