খেজুরগাছে হাঁড়ি বাঁধো মন....
অশোকানন্দ রায়বর্ধন
ছয়ঋতুর লীলাবিলাসের মধ্য দিয়েই গড়িয়ে যায় মানবজীবন । এই চক্রেরই একটা ঋতু শীতকাল । শীতকালে দরিদ্র মানুষের জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায় । প্রতিটি হিমের রাত তাদের জন্যে যন্ত্রণা বয়ে আনে । কিন্তু তার বিপরীতে শীতের ইতিবাচক দিকও রয়েছে । শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে নানারকম সব্জীতে কৃষিক্ষেত্র উপচে পড়ে । শীতের আর একটা আকর্ষণ হল খেজুরের রস । গ্রামজীবনে শীতের সঙ্গে খেজুরের রসের একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে । শীতের মরসুমেই গ্রামে গ্রামে ভোরবেলা গৃহস্থের ঘরে ঘরে বাংলার গৌরবের আর ঐতিহ্যের প্রতীক খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের ধুম পড়ে যায় । এই মধুবৃক্ষের রস দিয়ে তৈরি হয় নানারকমের পায়েস, পিঠেপুলি, নলেনগুড় ইত্যাদি ।
একসময় অভিভক্ত দক্ষিণ ত্রিপুরা ছিল খেজুর রসের ভান্ডার । সেসময়ে প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই দুচারটে খেজুরগাছ তো অবশ্যই ছিল । প্রায় বাড়ির সীমানা এলাকায়, খেতের আলের উপর খেজুরগাছ অবশ্যই শোভা পেত । আসাম-আগরতলা জাতীয় সড়কের প্রায় সবটাতেই রাস্তার দুপাশের ঢালগুলোতে একসময় খেজুরগাছ দেখতে পাওয়া যেত । বিশেষ করে দক্ষিণ দিক থেকে বাসে করে যাওয়ার সময় মাতাবাড়ি পেরুলে উদয়পুর শহরে প্রবেশের আগে রাস্তার বাঁদিকে শুকসাগর জলা । বিস্তীর্ণ ফাঁকা মাঠ । এই মাঠে প্রচুর খেজুরগাছ দূর থেকে দেখা যেত । কিন্তু কালের বিবর্তনে রাজ্যের প্রায় সর্বত্রই খেজুরগাছ বিলুপ্তির পথে এগিয়ে গেছে ।
খেজুররসের একটা মিস্টি গন্ধ একসময় সকালসন্ধ্যা গ্রামের পরিবেশ মাতিয়ে রাখত । গ্রামের শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেই খেজুরের রসের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ত । ঘরে তৈরি নানারকম পিঠেপুলি খেজুরের রসে ডুবিয়ে খাওয়া হত মহানন্দে । খেজুরের রস একটি জনপ্রিয় পানীয় । সন্ধ্যাবেলা আর ভোরবেলার কাঁচা রস খাওয়ার আগ্রহ ছিল প্রত্যেকের । বিশেষ করে 'সন্ধ্যারস'র স্বাদ ছিল অনবদ্য । খেজুরের রস থেকে ঝোলাগুড়, দানাগুড়, পাটালি বা নলেনগুড় তৈরি হয় । আজ সে আনন্দ হারিয়ে যেতে বসেছে খেজুরগাছের অভাবে এবং খেজুর রস সংগ্রহের দক্ষ শ্রমিক বা গাছির অভাবে ।
খেজুরগাছ প্রায় পাঁচ ছয় বছর বয়স থেকে শুরু করে পঁচিশ ত্রিশ বছর পর্যন্ত রস দিয়ে থাকে । গাছ যত পুরোনো হয় গাছের রস দেওয়ার ক্ষমতা তত কমে আসে । তবে পুরোনো গাছের রস তুলনামূলকভাবে বেশি মিস্টি হয় । সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝি থেকে খেজুরগাছ কাটা শুরু হয় এবং এই গাছকাটা পর্ব ফাল্গুনমাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত চলে । বলাবাহুল্য শীত যত বাড়ে খেজুরগাছ থেকে রস তত বেশি ঝরে । রসের স্বাদও মিস্টি হয় । এই শীতকালের মধ্যে যেদিনের আকাশ মেঘলা থাকে সেদিনের রস ঘোলাটে হয় । রস ঝরেও কম । রসের স্বাদওততটা ভালো হয় না । মূলত পৌষ ও মাঘ মাস খেজুরের রসের ভরা মরসুম ।
খেজুরগাছ থেকে রসসংগ্রহ অত্যন্ত দক্ষ শ্রমিকদের কাজ । গ্রামদেশে এই শ্রমিকদের 'গাছি' বলা হয় । কোথাও কোথাও এদের 'শিউলি'ও বলা হয়ে থাকে । রস সংগ্রহের মরসুম আসার প্রাকমুহূর্তে এই গাছিরা ছেনি, বাটালি, বাঁশের নলি, কাঠি, হাঁড়ি, দড়ি ইত্যাদি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে । অত্যন্ত ধারালো ছেনি-বাটালি দিয়ে দক্ষতার সঙ্গে খেজুরগাছের পাতাযুক্ত ডালাগুলো কেটে ছেঁটে পরিষ্কার করে কান্ডের একটা অংশ রস সংগ্রহের উপযোগী করে তোলেন । এই কাজটাকে বলা হয় 'গাছ ছোলানো' । এই গাছ ছোলার সময় একটা দিক লক্ষ্য রাখেন দক্ষ গাছিরা । গাছ এমনভাবে ছোলা হয় যাতে গাছের কাটা অংশে ভালোভাবে রোদ পড়ে । তারজন্যে গাছের পূর্ব ও পশ্চিমদিকে পর্যায়ক্রমে কাটা হয় । খেজুরগাছ কেটে তা থেকে রস সংগ্রহ কয়েকটি পর্যায়ের মধ্য দিয়ে চলে । গাছ ছোলার পর প্রথম কয়েকদিন গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয় না ।কাটা অংশে রোদ লাগানো হয় । তারপরে কাটা অংশের দুধার ধরে ইংরেজি 'V' অক্ষরের মতো সরু নালির মতো করে কেটে নিচের দিকে এক জায়গায় মিলিয়ে দেওয়া হয় । সেখানে সরু বাঁশের টুকরো নলের মতো করে গেঁথে দেওয়া হয় । ওপরে গাছের ডগায় কলসিতে বাঁধা দড়ি আটকিয়ে নিচে কলসি ঝুলিয়ে দেওয়া হয় । সারারাত গাছ থেকে চুয়ানো রস নল বেয়ে হাঁড়ির ভেতর জমা হয় । সকালবেলা সেই রস সংগ্রহ করা হয় । পর্যায়ক্রমে সংগৃহীত এই রসের কয়েকটা নাম রয়েছে । প্রথমদিনের রস 'জিরান্তিরস' বা 'জিরানকাটার রস' , দ্বিতীয়দিনের রস 'দোকাটা' । তৃতীয়দিনের রস 'তেকাটা' । পরপর তিনচারদিন রস সংগ্রহের পর দু-তিনদিনদিন গাছ শুকানোর জন্য গাছকাটা বন্ধ রাখা হয় । এই পর্যায়কে 'জিরান্তি' বলা হয় । তারপর আবার কাটা শুরু হয় । 'জিরান্তিরস' বা 'জিরানকাটার রস' খুবই সুস্বাদু হয় ।
খেজুরের রসকে জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হয় গুড় । খেজুরের রস জ্বাল দেওয়ার ফলে এক পর্যায়ে রস ঘন হয়ে পাওয়া যায় ঝোলাগুড় । অঞ্চলভেদে একে 'লালি' বা 'রাব'ও বলা হয় । ঝোলাগুড়কে আরো কিছুসময় জ্বাল দেওয়ার পর পাওয়া যায় 'দানাগুড়' । এই দানাগুড়কে আরো কিছুসময় জ্বাল দিয়ে নির্দিষ্ট পরিমান ঘন করে নেওয়ার পর নানা আকৃতির পাত্রে সংগ্রহ করা হয় বা বিভিন্ন রকম ছাঁচে ঢেলে নেওয়া হয় । একে বলে 'পাটালি' বা 'নলেন গুড়' । একসময় গাঁঘরে এই গুড় তৈরি ক্ষুদ্র শিল্পের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল । ত্রিপুরার উদয়পুর-বিলোনিয়া-সাব্রুমের প্রায় প্রতি ঘরে খেজুরের গুড় তৈরি হয় শীতকালে । বিশেষ করে উদয়পুরের জামজুরি ও খিলপাড়ার খেজুরগুড় ছিল রাজ্যে বিখ্যাত । স্থানীয় এটি প্রবাদ রয়েছে–'জামজুরির যশ । খাজুরের রস' ।
খেজুর, খেজুরের রস আমাদের জীবন ও সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে । লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় খেজুর, খেজুরের রসের উপস্থিতি রয়েছে । খেজুর গাছ কাটা নিয়ে আঞ্চলিক গান রয়েছে― 'ঠিলে ধুয়ে দেরে বউ গাছ কাটতে যাব/সন্ধ্যের রস ঝাড়ে আনে জাউ রান্ধে খাব' । বাংলা প্রবাদ-প্রবচনেও আমরা খেজুর বিষয়টি পাই । যেধরনের আলাপ প্রাসঙ্গিক নয় । শ্রোতাদের বিরক্তির উৎপাদন করে, মিথ্যা, অবান্তর এবং হাস্যরসাত্মক মনে হয় সেজাতীয় আলাপকে 'খেজুরে আলাপ' বা 'খাজুইরগা আলাপ' বলা হয় । চূড়ান্ত অলস বোঝাতে 'গোঁফ-খেজুরে' প্রবচনটি ব্যবহার করা হয় । খেজুর গাছের তলায় শুয়ে থাকা ব্যক্তিটির গোঁফের উপর পাকা খেজুর পড়েছে, কিন্তু সে এত অলস যে ভাবছে সেটাও মুখে চিবিয়ে খেতে হবে । কত কষ্টকর বিষয় । কতটা পরিশ্রমের ! বাংলা লোকসাহিত্যে আর একটা অমূল্য সম্পদ ধাঁধায় ও খেজুর গাছের প্রসঙ্গ রয়েছে । 'মাইট্টা গোয়াল কাঠের গাই/বাছুর ছাড়া দুধ পাই' অথবা 'মাটির হাঁড়ি কাঠের গাই/বছর বছর দোয়াইয়া খাই' ।–( খেজুর গাছ ) । এমনি নোয়াখালির একটি ছদ্ম-অশ্লীল ধাঁধায় পাই–'দোম্বাই যাই জাপটাই ধরি/করে টানাটানি/মৈদ্দ আনে খিলি মাইচ্ছে/ভিৎরে হড়ে হানি' ।–( খেজুর গাছ থেকে রস পড়া ) । আমাদের নানা স্থাননামেও খেজুরপ্রসঙ্গ রয়েছে । খেজুরগাছের প্রাচুর্যের কারণে স্থানের নাম রয়েছে―খেজুরি (পশ্চিমবঙ্গ ), খাজুরা (যশোহর, বাংলাদেশ ), খেজুরবাগান ( আগরতলা, ত্রিপুরা ) । বিয়ের গানে রঙ্গরসিকতায় খেজুরকাঁটার উল্লেখ পাওয়া যায়–'বেয়াইরে বইতো দিয়ুম কি/খাজুর কাঁডার মোড়া বানাইয়ের/ বেয়াই বইতে লজ্জা কি ?/এমন মোড়াৎ বেয়াই/ কনদিন বইতা হাইরছনি ?'
খেজুরগুড় লোকঔষধরূপেও প্রচলিত । খেজুরগুড় হজমে সাহায্য করে । আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে । ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে । সর্দি-কাশি ও ভাইরাল জ্বরের হাত থেকে রক্ষা করে । দেহে হরমোনের সমতা বজায় রাখে । খেজুর গুড় প্রাকৃতিক চিনি বা ন্যাচারাল সুগার । আজকাল চিনির ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক এড়ানোর জন্য প্রাকৃতিক চিনি বা স্টেভিয়া ইত্যাদির ব্যবহার চলছে । সেইক্ষেত্রে খেজুরের গুড়ের এই স্থান নেওয়ার ক্ষমতা থাকলেও তা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে । একসময় কাঁচা খেজুরের বিচি পানের সঙ্গে সুপারির বিকল্প হিসেবে খাওয়ার রেওয়াজ ছিল ।
এছাড়া খেজূরের বিচি শিশুদের খেলার সামগ্রীও । তেমনি পাতা দিয়ে নানা খেলনা ও শিল্পোপকরণও তৈরি হয় । খেজুরগাছ পাখিদের নিরাপদ বাসস্থান । বন্য ও গৃহপালিত পশুর হাত থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য খেজুর পাতা দিয়ে বেড়া দেওয়া হয় ।
খেজুর, খেজুরগাছ, খেজুরের রস কবিদের ও নজর এড়ায়নি । কবির ভাষায় পাই–'খালি কলসি রেখে দিলে ভরে যায় রসে/সেই রসে দিয়ে জ্বাল মন জুড়াই সুবাসে' কিংবা 'এমন শীতল মিস্টি কোথায় আছে নীর/পানমাত্র তৃষিতের জুড়ায় শরীর' । রস সবার আকাঙ্ক্ষার বিষয় । শীতের রস যেমন গ্রামজীবনে সবার মনে রসসঞ্চার করে তেমনি সাহিত্য ও সংস্কৃতিতেও 'রস' একটি বিশেষ নান্দনিক বিষয় । বৈষ্ণবশাস্ত্রে আমরা পঞ্চরসের সন্ধান পাই । শান্ত,সখ্য, দাস্য, বাৎসল্য ও মধুর বা উজ্জ্বলরস । তেমনি নাট্যশাস্ত্রেও রয়েছে নবরস । শৃঙ্গার, হাস্য, করুণ, রুদ্র, বীর, ভয়ানক, বীভৎস, অদ্ভুত ও শান্তরস । তেমনি বাংলার বাউলদের গূঢ় সাধনায়ও রয়েছে রসপর্যায় । বাউলদের সাধনা রসের সাধনা । দেহকে কেন্দ্র করে বাউলদের সেই গোপন সাধনা । নারীকে নিয়ে তাঁদের সাধনপদ্ধতি এগিয়ে যায় । বাউলদের মতে রজ, বীর্য ও রসের কারণে এই দেহের সৃষ্টি । এগুলোকে বাঁচিয়ে রেখেই তার দেহসাধনা ।সেটাকে বাউলরা বলেন 'বস্তুরক্ষা' । বস্তুরক্ষা তাঁদের ধর্ম । বাউলদের হেঁয়ালিপূর্ণ গানেও রস শব্দটি পাওয়া যায় প্রায়শই । 'রস' তাদের পরিভাষা । বাউলদের গান বুঝতে হলে তাদের পরিভাষা বুঝতে হয় । পরিভাষা ব্যবহার করে বাউলদের গানের মধ্যে তাদের সাধনপদ্ধতির গোপন ইঙ্গিত থাকে । খেজুরগাছ, খেজুররস তাদের গানের মধ্যে তাই ব্যবহৃত হয় । ভবা পাগলার গানে পাই–
খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধো মন/খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধো মন/ও গাছে জোয়ার আসিলে/ও গাছ কাটো কুশলে/কোনার দড়ি যেন পড়ে না তলে/কত গ্যাছো গ্যাছে মারা/নীচে পড়ে হয় মরন ।
আর একটি বাউল গানে আছে–
আমার গোঁসাইরে নি দেখছ খাজুর গাছতলায়/গোঁসাই ল্যাজ লাড়ে আর খাজুর খায়।
আবার অন্যত্র পাই–
যদি রস খাবি মন নলিন দানা/গাছে ভাঁড় বেঁধে দেনা বেঁধে দেনা ।
বাংলা কথাসাহিত্যের অসাধারণ রূপকার কথাসাহিত্যিক নরেন্দ্রনাথ মিত্রের একটি অসাধারণ ছোটোগল্প 'রস' । খেজুরের রস ও গুড় তৈরির পেশায় নিযুক্ত গাছি মোতালেবের প্রেম ও দাম্পত্যজীবনকে ঘিরে অন্তর্দ্বন্দ্বময় জীবনচিত্র ফুটে উঠেছে এই গল্পে । একটি সাধারণ ঘটনা সাহিত্যিকের কলমের যাদুতে কিভাবে রসোত্তীর্ণ হয়ে উঠতে পারে এ গল্প তার উজ্জ্বল উদাহরণ । এই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র গাছি মোতালেব । তার নারীভোলানোর অসীম ক্ষমতা । এই গুণের কারণে সে সফল প্রেমিক । তার ছলনায় ধরা দেয় ফুলবানু-মাজু । এই দুই নারীকে ঘিরে তার পেশাগত জীবন ও জৈবিক তাড়না আবর্তিত হয়েছে । লেখক সময়ের প্রবাহে তুলে ধরেছেন খেজুরের রস, মোতালেব-ফুলবানু-মাজুর সংসারযাপন, কল্পনা-কামনা-প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি ইত্যাদি । সমাজের এক নিবিড় ও তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ প্রতিফলিত হয়েছে তাঁর কলমের ছোঁয়ায় ।
এই গল্পটিকে হিন্দি চলচ্চিত্রে রূপায়িত করা হয়েছে । সেখানে অমিতাভ বচ্চন অসাধারণ অভিনয় করেছেন ।
একসময় গ্রামের যত্রতত্র বিনা পরিচর্যায় বেড়ে উঠত এই মূল্যবান খেজুরগাছ । বলা হয়ে থাকে, এই খেজুরগাছের জন্ম আরবে । তা সত্ত্বেও কালক্রমে বাংলা ও তৎসন্নিহিত অঞ্চলের নিজস্ব বৃক্ষ হয়ে ওঠে এটি । কিনতু বর্তমানে নানাকারণে এই মধুবৃক্ষ দিনদিন কমে আসছে । তার পেছনে যে কারণগুলো রয়েছে তার মধ্যে প্রধান হল–
ক ) পরিবেশ দূষণ ও নগরায়ণের ফলে ভূমির গঠনগত পরিবর্তন
খ) রাস্তাঘাট প্রশস্ত করতে গিয়ে নির্বিচারে খেজুরগাছ কেটে ফেলা
গ) জ্বালানি হিসাবে খেজুরগাছ কেটে ব্যবহার
ঙ ) মানুষের নতুন নতুন বাড়িঘর নির্মানের ফলে খেজুরগাছ কাটা
চ ) দক্ষ গাছির অভাব ও বর্তমান গাছিদেরও রস সংগ্রহে আগ্রহের অভাব
ছ) খেজুরের রস সংগ্রহের সময় বাদুড়, চামচিকেজাতীয় প্রাণী খেয়ে যাওয়ার ফলে নিপা ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হবার ভয় ইত্যাদি ।
কিন্তু এই বৃক্ষটি বৈজ্ঞানিকভাবে চাষ ও পরিচর্যা করলে তার উৎপাদিত ফসল গ্রামীন অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে । এ ব্যাপারে সরকারের বন ও উদ্যান দপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্প এবং সামাজিক বনায়ণ কর্মসূচিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সামাজিক সচেতনতাও সৃষ্টি করা যেতে পারে ।