Monday, October 30, 2017

ঝড়ের কাছাকাছি

আকাশে এই মেঘ আসে ৷ এই মেঘ যায় ৷ আরতির দিনগুলোও তেমনি কেটে যায় ৷ বুকে তার চেপে বসা ব্যথা ৷পুরোনো হয়ে যায় সে ব্যথা ৷ চরম অপমানের ব্যথা ৷ তিরিশ বছরের উপর হয়ে গেল ৷ কাউকে বলা যায় না ৷ মনে বেঁধে রেখেছে ক্রোধেও ঘৃণায় ৷ সংসার করতে করতে সবাইকে বুঝিয়েছে ৷ চিনিয়েছে গিরগিটির মতো মানুষগুলোকে ৷ ওরা আপন না পর ৷ তবুও টানাটানির সংসার ৷ আলো আসে ৷ ছায়া আসে ৷ মাঝে মাঝে মরীচিকা ঢুকে পড়ে ৷ হাতছানি দেয় ৷ মায়ায় ভুল করে পরিবারের লোকজন ৷ কারা কারা আসে লিস্টি নিয়ে ৷ কাগজ নিয়ে ৷ দিন পাল্টানোর কথা বলে ৷ দল পাল্টানোর কথা বলে ৷ স্বপ্নের ব্যাপারি সব ৷ ভুলে যায় আরতির ছেলে সুমন ৷ আঠাশ বছর বয়স ৷সে দেখে নি তিরিশ বছর আগের আকাশ ৷ রক্তে ভেজা মাটি ৷ তবুও আরতি বোঝায় সবাইকে ৷ বলে সেদিনের সিঁদুরে মেঘের কথা ৷ অন্যের নাম করে তার উপর বয়ে যাওয়া ঝড়ের কিস্সা  শোনায় ৷ বোঝে না ওরা ৷ তার সংসারের মানুষগুলো ৷ ওদের সামনে অলীক স্বপ্নের হাতছানি ৷

পুরোনো মেঘ আবার ফিরে আসে ৷ আকাশ জুড়ে ৷ সেই মানুষগুলো আবার আসে ৷ সেইদলে তার তিরিশ  বছর আগে দেখা মানুষগুলোও আছে ৷ এদেরকে মানুষ মনে হয় না আরতির ৷ ওদের গায়ে যেন হিংস্র পশুর পোষাক ৷ আরতির সঙ্গে চোখাচোখি হলে ওরা সরে যায় ৷ তার সামনে দাঁড়ায় না ৷ ছেলেকে আর তার বাবাকে রাজি করায় ৷ সব শোনায় আরতি রান্নাঘর থেকে ৷ আগামী সোমবার  মিছিল ৷ ওদের বাড়ির সামনে দিয়ে যাবে ৷ ওরাও যেন যায় ৷ আরতির বুক সাগরের মতো তোলপাড় করে ৷ পাক দিতে থাকে ৷ ঝড়ের প্রস্তুতি নেয় ৷ শেষ প্রতিরোধেরও ৷

দূরে একটা হল্লা শোনা যায় ৷ মিছিলের আওয়াজ ৷ আরতির বুকে ঝড় ৷ সুমন বেরুবে ৷ আরতির চোখে মুখে ক্রোধ ৷ ছেলে মিছিলে যাবে ৷ মিছিল এগিয়ে আসে ৷ আরতি আরো দৃঢ় হয় ৷  ওদের বাড়ির আরো কাছাকাছি আসে মিছিল ৷ একটা বিশৃঙ্খল জটলা রাস্তা জুড়ে এগিয়ে আসে ৷ থমকে যায় সে ৷ মিছিলের সামনে ওটা কে? অচিন্যা?  অচিন সাউ !  হাজার ডঙ্কা বেজে ওঠে তার শরীরে ৷ মুহূর্তে ঘরে ঢুকে যায় সে ৷ বেরিয়ে আসে ধারালো ছেনিটা নিয়ে ৷ ছেলে পা বাড়ায় মিছিলের দিকে ৷ এই সুমন, এক পাঅ বাড়াইবি না কইতাছি ৷ ঘরঅ ঢুক ৷ নইলে আজগা তরে কাইট্টা আমিঅ আত্মঘাতী অয়াম ৷ আচমকা মায়ের অচেনা মূর্তি দেখে থমকে যায় সুমন ৷ এ কি রূপ তার মায়ের!  ভয়ে ঘরে ঢুকে যায় সুমন ৷ বেগতিক দেখে মিছিলটা দ্রুত তাদের ঘাটা পেরিয়ে যায় ৷

সুমনের মাও ঢুকে পড়ে ঘরে ৷ ছেনিটা নিয়ে সুমনের সামনে দাঁড়ায় ৷ ছুঁড়ে ফেলে দেয় ছেনিটা ৷ একটা ধাতব আওয়াজ ওঠে ৷ আর নিজেকে ছুঁড়ে ফেলে তক্তাপোশের উপর ৷ মেঘভাঙা বৃষ্টির মতো ঝাঁপিয়ে কান্নায় ভাসে সে ৷ তিরিশ বছর আগে সেদিনও এমন মিছিল চলে গিয়েছিল তার শরীরের উপর দিয়ে ৷ সেদিনও সামনে ছিল এই অচিন্যা ৷ ছেলেকে বলতে পারে না ৷  শুধু চোখের জলে ভাসে আরতি ৷

মুখ


চাঁদের মানচিত্রে তোমার মুখ আঁকা হয়ে যাবার পর
আমি কেবল শঙ্খউতল বিছানার ছবি দেখি
সেখানে কৌমার্যচিহ্ন লুকিয়ে থাকে বাটিক শিল্পের আড়ালে তছনচ বেডশিট আর দুমড়ানো বালিশের খোল
অনেক গোপন রমনের প্রত্নভাষা ও সাক্ষ্যচিহ্ন ধরে রাখে সন্ধ্যা ভাষায়
শুধু তোমার নির্বিবাদী আঁচল সমস্ত দুঃখ ডুবিয়ে রাখে তার কালো জমিনে

বার্তা



সাঁকোটা না নাড়ানোর জন্যে বাতুলকে অনুরোধ করাও এক অর্বাচীন প্রগলভতা ৷

সার কথা, এতে মনোরোগীর জাগরণ ঘটে অপকর্মটি করার জন্যে ৷তা তার কাছে উল্লাসও বটে ৷

সেই সাঁকোতে পা রাখার আগে জেনে নেওয়া যেতে পারে তার নির্মানশৈলীর প্রকৌশলগত সততার উপকথা ৷

যথাযথ প্রকরণ না মেনে কিংবা আস্থাব্যঞ্জক খসড়াবিহীন যে কোন প্রকল্প হুমড়ি খেয়েই পড়ে ৷
সে সময় কাগজ-কলম আর হাজার ক্যামেরার ফ্ল্যাশ সমস্ত সৎ প্রতিবাদী কণ্ঠকে পুরো অসহায় করে দেয় ৷

শূন্যের উপরের নির্মানকে বার বার নিরস্ত করেছেন পল্লীবাউল ৷

আটঘাট বেঁধে লড়াইয়ের এও এক ব্রাত্য বার্তা ৷

উড়াল



প্রকৃতিকে আমরা নিংড়ে নিচ্ছি বলে
মাঝে মাঝে দখিন সমুদ্রের গর্ভগৃহ থেকে
পাঠানো মিঠে মরুতের সঙ্গে আসে আগুনআঁচ
অগণিত রেণুর সৃজনকাল উড়ে যায়
চূর্ণ হয়ে বৃক্ষহীন পাহড়ের দিকে

হৃদয়ের ভাষাজ্ঞান আহরণের জন্য
যে পাখিদের পাঠালাম নালন্দার ছাত্রাবাসে
ফিরে আর এলো না সে পাখিশাবকের দল
করপোরেট দানাপানির আশায় উড়াল
দেয় আরো দূর দূরান্তের আয়নানগরে

তথাগত



কলিঙ্গবিজয়ের অশুভ স্বপ্নে শুধু শবসাধনা আর
রক্তজমা প্রান্তরের শীর্ষে খন্ডগিরির ধবল দেউল

তারও পরে শরণ নিলাম তথাগতের চরণে
শ্বেত পতাকা আর কপোতের উড্ডয়নস্পৃহা
যুগ যুগ নিভৃত সাক্ষী থেকে কী প্রেম ছড়ালে
গৌতম থেকে গুরুদেব এক দীর্ঘ দেশার্ত সীমা

কিরাতভূমির বিলীয়মান  জনপদের মুখোমুখি
সর্বোচ্চ টিলার মাথায় প্রশস্তিপত্রের ন্যায় গোপনে
চক্ষুদান করে কোন এক
ধ্যানবিন্দু অনুশীলনরত কিরাতবালক

শাক্যসিংহের হাসির ছটা সূর্যালোকের মতো
বিচ্ছুরিত হয় জনপদের শরীরে ৷

পূরবীমায়া



মশারির ব্যবধান দ্বীপের দূরত্ব গড়ে তোলে
গোচারণের অনন্তমাঠ সবুজ ঘাস হারালেও
অবুঝ বিষ্ণুপ্রতিমগণ গৈরিক অসুখী মাঠেই
জীবনের চাঁদোয়াতলায় দিনলিপি লিখে রাখে
রক্তাক্ত দাঁতের অক্ষরে ৷
ভিটের বুকে গোপন কোন মুদ্রা সঞ্চিত না থাকলেও
ঘুঘু যেমন চরে যায় প্রবাদের সূত্র অনুসারে

তেমনি জিওল মাছের মতো বেঁচে থাকা শুধু
আত্মজনের খুনমজ্জায় যেহেতু নিজেরও
রক্তদানের গোপন প্রত্নশ্লোক নিহিত রয়েছে

সেইজন্যেই প্রতি ভোরের পুণ্যস্নান আর সন্ধ্যার পুরবীমায়া ৷

নিদকুমারীর প্রতি



আয়নামহলের রাজকন্যের সাংকেতিক বার্তা
দূরপ্রান্তরের দুয়োরানির মাণিকের পৈঠায় পৌঁছুলে
টিপরাই বাঁশিতে সুর ওঠে জাদুকলিজার

মহলের পালঙ্কে কী বিরহী কন্যে ঘুমে অচেতন থাকে
সোনার কাঠি আর রূপোর কাঠির রূপকথা সূত্রে? 

কে সে?  কোন দানোটা ঘুম পাড়িয়ে রাখে আরশিনগরের একাকী মেয়েটার?

এইসব ভেবে ভেবে টিলার ওপরের টংঘরের নিষাদসন্তান
তার বাঁশিতে নতুন সুর বেঁধে হওয়ায় ভাসিয়ে দেয়
মহলবন্দী রাজকুমারীর ঘুমভাঙানোর গান ৷

আঁধারগড় চুরমার করে ভোরের হাসিকে সঙ্গী করে
সেই গান পৌঁছে যাবে ঘুমকুমারীর নিদমহলে ৷


*  ' জাদুকলিজা ' ত্রিপুরার বরক জনজাতির নিজস্ব সঙ্গীত ঘরানা ৷

Friday, October 27, 2017

ঘা টে পা র ঘা টা তে

মতিনের বুকটা কাঁইপ্পা উডে ৷ এমুন অসময়ে ম্যাগ ক্যারে ৷অহন তো আগন মাস ৷ যৈবন পড়তি মাইয়ার লাহান  নদীর জল কইম্মা আইতাছে ৷ জল বুইজ্জা বুইজ্জা নাও বাইয়া দুই এক খোপ মাছ মারন যায় ৷ বেচলে দুইডা পইসা ঘরঅ আইএ ৷ ম্যাঘ লামলে জল বাড়বো ৷ তহন ত' মাথাৎ বাড়ি পড়বো ৷

মতিন ভাবে ৷ ঘরে পুতুল ৷ তার বউ ৷ ধাত্রী মাসি কইছে, পৌষের মাঝে কী শ্যাষে তার ঘরঅ ফসল আইবো ৷ বউরে ভালা- বুরা খাওয়াইতো ৷ কৈত্তে খাওয়াইবো?  এমুন অইলে!

আস্তে আস্তে দইনের আসমানে ম্যাঘ কালা অইয়া জমা অয় ৷ যদি লামে গিরস্তের কপাল পুড়বো ৷ আগনের সোনালি খেত ভাইস্যা যাইবো ৷ ভাবে মতিন ৷ পুতুলের কথা মনে অইলে তার বুকটা ছাঁত কইরা উডে ৷

ম্যাঘ বুঝে না ৷ ঝমঝমাইয়া নামে ৷#

ছা ড়ি য়া না যা স

      ভর সন্ধ্যেবেলা কে ডাকছে ৷ উঠোনে বেরিয়ে দেখল সাদা থান পরা বয়স্কা এক মহিলা ৷ অন্ধকারে মুখটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না ৷
-দিদি আঁরে চিনছেন নি?
-না তো?  তুঁই কন?
- সুমনের বাপের কথ মনে আছে নি?
-সু ম নে র....বা  প...?
কতো দিন হয়ে গেল ৷ মানুষটার মুখটাও মনে আসে না ত্রিবেণীর ৷ মনে করেই বা কী হবে?  সুমন তখন তিনমাস কী চারমাস বয়সী হবে ৷ মনে মনে ভাবছে যতোটা সম্ভব খরচা করেই অন্নপ্রাশনটা সারবে ৷ বাপের বাড়ির তেমন কাউকে না বললেও চলবে ৷ তারা কিছু মনে করবে না ৷ জামাইর অবস্থা তারা জানে ৷ সুদিনে সারা রাজ্যের আসরে ঘুরে ঘুরে হরিসংকীর্তন করে বেড়ায় ৷ তার আয় দিয়েই বছরের বাকি সময়টা চালিয়ে নিতে হয় ৷ সুধন নামকীর্তনের দলে খোল বাজাত ৷ তার খোলের আওয়াজে মাতোয়ারা হয়ে ভক্তরা তার জামার হাতায়,বুকে সেফটিপিনে গেঁথে দশ, বিশ, পঞ্চাশ টাকার নোট গেঁথে দিয়ে যেত পুরস্কার স্বরূপ ৷ মাঝে মাঝে দু একটা একশো টাকার নোটও ঝুলত ৷আর গানে গলাটাও ছিল অপূর্ব ৷ মাঝরাতের আসর হলে সে পদাবলি গাইত ৷ রাধাকৃষ্ণ লীলার পদ ৷ তাই দলে তার আলাদা একটা কদর ছিল ৷ পুরস্কারের টাকাটা তার উপরি পাওনা ৷ কাজেই এই আয় দিয়ে বুড়ো মা আর ত্রিবেণীকে নিয়ে তিনজনের সংসার টেনে খিঁচে চলে যেত ৷
বায়নার দিনগুলোতে বেশির ভাগ বাড়ির বাইরে কাটাতে হত সুধনকে ৷ ত্রিবেণীর যখন দিনমাস রাত্তিরে সে শাশুড়ির সঙ্গেই শুত ৷ সেদিক থেকে সে নিশ্চিন্ত ৷ তার শাশুড়ি গ্রামের পুরোনো ধাই ৷ অসুবিধে হলে সামলে নেবে সব ৷ কিন্তু ওর পরান পোড়ে মানুষটার জন্যে ৷ কী অবস্থায় না জানি আছে ৷ রাত জেগে কীর্তনের পর একটু ঘুমুতে পারছে তো ৷ একবার গিয়েছিল সে মনুবাজারের কীর্তনের আসরে ৷ বিয়ের পরটাতেই ৷ দলের সবাই বৌদি বৌদি করে ডেকে নিয়ে বসিয়েছিল তাদের ডেরায় ৷ উদ্যোক্তাদের দেওয়া একটা আধভাঙা বেড়ার ঘর ৷ মাটির মেঝে ৷ তার উপর একগাদা খড় বিছানো ৷ তার উপর বিছানার চাদর ফেলে রাত কাটায় কীর্তনিয়ারা ৷ ত্রিবেণীর মনের উসখুস অবস্থা দেখে দলের তিনটে মেয়ের মধ্যে যেটা ফর্সামতো এবং বয়সে বড়ো সে বলে উঠল, বুইজজি  ব'দি ৷ আন্নে কী চিন্তা করেনের ৷ দাদার কথা নি?  আন্ডা হেতেনেরে কনঅ কষ্ট দি না ৷ হেতেনের লাই আলগা বিছনা করি দি ৷ আন্নের মতন অয় না আরি ৷ বলে ইঙ্গিতপূর্ণ চোখ নাচায় ৷ ত্রিবেণীও বৌদিসুলভ বাণ ছাড়ে তুণীর থেকে, আঁই রইছি কন্ডে ৷ আঁই দেখিয়ের নি, তোন্ডা কীঅরঅ ৷ মেয়েটা মাঝে মধ্যে ওর সঙ্গে বাড়িতেও এসেছে ৷ নাম বিশাখা ৷ বৌদির সঙ্গে খুনসুটি করত চঞ্চলা ননদের মতো ৷ বেশি রাতে এলে হাতে হাত ধরে রান্নার কাজে সাহায্যও করেছে ৷ কে জানত ওই কপাল ভাঙবে ত্রিবেণীর ৷ সুমনের অন্নপ্রাসনের মুখে পাড়ায় রটে গেল সুধন কীর্তনিয়া দলের এক মেয়েকে বিয়ে করেছে ৷ পড়ি মরি করে ছেলে কোলে নিয়ে খোঁজ নিতে নিতে আমবাসা কীর্তনের আসরে পায় ৷ সুধন কোনো কথা বলে নি ৷ তার সামনেই বিশাখা যা তা গালমন্দ করে বিদায় দিয়েছে ৷ বাড়ি ফিরে এলে শাশুড়ি নাতির মুখ দেখে ঠাঁই দিয়েছে ৷ প্রবোধ দিয়েছে, চিন্তা ন করিও মা ৷ আঁর হ্যাটে দোষ কইরছে ৷ আঁই তো করি ন ৷ ঠাকুরে চালাই লই যাইবো গই ৷ এর পর শাশুরি মানুষের বাড়ি কাজ করে দিন গুজরিয়েছে ৷ শাশুড়ী কর্মক্ষমতা হারানোর পর সংসারের হাল ধরেছে ত্রিবেণী ৷ ছেলে সুধনের আশায় পথ চেয়ে চেয়ে বুড়িও একদিন চোখ বুজেছে ৷ সংসারে আবার নিঃসঙ্গ ত্রিবেণী ৷ ছেলেও এখন কাছে নেই ৷ গাড়ি চালানো শিখে আসাম আগরতলা সড়কে দশচাকার ট্রাক চালায় ৷ মালিকের বাড়ি গৌহাটি ৷ তাই এদিকে তার আসার সুযোগ কম ৷ তবুও আসে ৷ মাঝে সাঝে ৷
        কতোক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল কে জানে ৷
দিদি আঁরে চিনেন ন?  আঁই বিশাখা ৷ আঁই .....
এতোদিন পর বিশাখা নামটা শুনে চমকে উঠে ৷ কী কইলা?  বিশাখা?  সু ম নে র বা...প ......!  এক তীব্র চিৎকারে সন্ধ্যার আঁধার ফালাফালা করে দৌড়ে ঘরে ঢুকে দুয়ার দিল ৷
আজ একেবারেই নিঃসঙ্গ হল ত্রিবেণী #

Wednesday, October 25, 2017

এ ক দি ন মা টি র

টিলাটা কেটে একেবারে জমি সমান ৷বেরিয়ে পড়েছে লাল মাটি ৷ লালও ঠিক বলা যায়
না ৷ কৃষ্ণদাস গোঁসাই নিজের পোষাকের সঙ্গে মিল পায় এ মাটির ৷ এ রঙ যেন তাকে ছাড়ে না কিছুতেই ৷ গেরুয়া বলে এ রঙকে বাবুরা ৷ নামে কী আসে যায় ৷ রঙটার একটা মাহাত্ম্য আছে ৷ এ পোষাক পরলে মনটা উদাস হয়ে যায়!  একটা আউলা বাউলা ভাব আসে ৷ কৃষ্ণদাস ভাবে আর একতারাটার তারে টোকা দেয় ৷ একটা মৃদু আওয়াজ তাকে সঙ্গ দেয় ৷ মন চলে যায় দূর অতীতে ৷ একটা একলা টিয়া করুণ ডেকে সঙ্গীদের খোঁজে উড়ে যায় মাথার ওপর দিয়ে ৷ কৃষ্ণদাসের খাঁচার ভেতরের অচিন পাখিটাও উড়তে চায় কার খোঁজে ৷ অজান্তেই আঙুলের টোকার সাথে সাথে তার কন্ঠ থেকে গান ওঠে, কোনদিন খাঁচা ছেড়ে পাখি আমার .......৷
এটাই তো জীবন ৷ কেবল ওড়াউড়ি ৷ এ ডাল থেকে ও ডালে ৷ তার পর আর এক ডালে ৷ সেই কবে ছিল তিতাস পারে ৷ বাবার সঙ্গে নাও নিয়ে নেমে পড়ত তিতাসের বুকে ৷ মাছ ধরত ৷ তাই বিকি বাট্টা করে সংসার ৷ সন্ধ্যেবেলায় বটতলায় হরিসভা ৷ বছরের নানা সময় নানা পরব ৷ সুখে দুখে কাটছিল জীবন ৷ একদিন বাবা এসে বলল, নাও তুলন লাগব রে বাবা ৷ এ দেশ ছাড়ন লাগব ৷ খানসেনারা গোকনঘাডঅ ঘাঁডি করছে ৷ যারে তারে ধরতাছে ৷ মারতাছে ৷ সে রাতেই সব ফেলে দেশ ছাড়ে ৷ তারপর শরণার্থী হয়ে মেলাঘর শিবিরে ৷ দেশ স্বাধীন হলেও ওরা আর ফিরে নি ৷ চলে আসে ফেনিপারে ৷ এখানে একটু ভিতরের দিকে খালি জায়গা প্রচুর ৷ আবাদ করে নিলেই হল ৷ মাইল দুয়েক দূরে ফেনি নদী ৷ অঢেল মাছ ৷ সবই উপরআলার ৷ শুধু কইরা খাওন ৷ মনে ধরে কৃষ্ণদাসের বাবার ৷ লও এইহানো থাইক্কা যাই ৷ দলের সবাই সর্দারে কথায় থিতু হয় ৷
তারপর নিস্তরঙ্গ জীবন গড়িয়ে পরিজনদের হারায় কৃষ্ণদাস ৷ সংসারী হয় নি সে ৷ বাপের ভিটেয় আখড়া করে ৷ গানের গলা আর গেরুয়া সম্বল ৷ তাও আর রইল না ৷
পাহাড় টিলা ঘেরা এই জনপদের মাঝ বরাবর রেলরাস্তা হবে ৷ দুভাগ হয়ে গেছে মালোপাড়ার বুক ৷ কৃষ্ণদাসের আখড়াও ভাঙা পড়েছে ৷ আবার ঘরছাড়া ৷ শেষবেলায় ৷ আসলে এ তো পরের জা'গা পরের জমিন ৷ দুদিন ঘর করে থাকা ৷
ভাবতে ভাবতে বেলা যায় ৷ মাটি কাটা গৈরিক প্রান্তরে ড্রজারের যান্ত্রিক শব্দ কমে আসছে ৷ ঘরমুখী সূর্যের আলোর ক্রমমেদুরতা মেখে কালচে হয়ে আসছে ৷ কৃষ্ণদাস শেষবারের মতো নিজের ভিটেয় এসে দাঁড়াল ৷ একতারাটা নামিয়ে একমুঠো লাল ঝুরো মাটি নিয়ে উঠে দাঁড়াল ৷ উড়িয়ে দিল মাটি অস্তগামী সূর্যের দিকে ৷ হাওয়ায় উড়ে এসে ধুলোমাটি কৃষ্ণদাসের গা ভরিয়ে দিল ৷ একতারাটা তুলে নিয়ে গান ধরল, ধূলা মাখো মাখো রে এইতো ব্রজের ধূলা৷ এগিয়ে চলছে কৃষ্ণদাস ৷পেছনে তার দীর্ঘ ছায়া ৷

শারদীয়

শুরু হয়ে গেল শারদ উৎসবের সিরিজ ৷ দেবশিল্পীর বন্দনা দিয়ে সূচনা হয়ে শেষ হবে ভ্রাতৃদ্বিতীয়ায় ৷ নদীর চরে কাশের বনে দুলকি চাল, ভোরের উঠোনে রাতে ফোটা শিউলির শ্বেতশুভ্র শেজ ৷ আকাশে সাদা মেঘের অলস নোঙর ৷ কৃষাণের জীবনে কিছুটা বিরামকাল ৷মাঠে মাঠে বেড়ে স্বপ্নের দিকে অপলক চেয়ে থাকা ৷ প্রিয়জনের মুখে হাসি ফোটানোর ফর্দমালা অন্তরে ৷ বর্ষায় ভেজা খড়ের চাল থেকে চুঁইয়ে পড়া দুখজল শুকিয়ে উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠার প্রস্তুতি ৷ আনন্দযজ্ঞের হোমালোকে উদ্ভাসিত হয়ে এক ঋতুময় কাল কেটে যাবে আমাদের ৷ এ সময়ে মহার্ঘ হলেও সকলের প্রার্থনা হোক শান্তি, কামনা হোক সম্প্রীতি ৷

Tuesday, October 24, 2017

সাধ


মধুমাস ফুরিয়ে এলো
রুমাল এখনো হাতে
জাদু টোনা শিখি নি কিছুই
মেখে দেবো যে তাতে
কোকিলটা এখনো ডেকে যায়
রোজই ভোরের বেলায়
তোমারই নাম রুমালের কোনায়
কেউ তো জানে না হায়
কিছুই বলি নি যে তোমায়
ভালোবেসেছি মনে মনে
থাকবো না যেদিন কাঁদবে সেদিন
তুমি তো সংগোপনে
সেই কালাজাদুতে আমি তোমাকে
বেঁধেছি দুই বেলা
লোকলাজ আর ননদিনজর
তোমায় ধরাবে জ্বালা
নোঙর তুলেছি, পাড়ি দেবো দূরে
আর কটা দিন পরে
জমিয়ে রাখো চোখের নোনা জল সেই সন্ধ্যার তরে
আমার বাতির তেল ফুরোলে
তোমার বাতির আলো
অশ্রু ভরে তোমার প্রদীপে
সেই বাতি যেন জ্বালো

রঙতান


পিচকিরির ওষ্ঠ মুছে দিয়েছে কতো কান্নার ঢল
আবির গুলালে ঢাকা কী পড়ে বল না সহেলি বল
সখার চাতুরি মুঠো মুঠো রাঙায় গোপীজন কাঁচুলি
সন্ধ্যার আকাশ সাক্ষী থেকো নকল রক্তহোলি
ভালোবাসার যদি বসন্তপরব ভালোবাসা তবে কই
রঙিলা মনুরায় রঙের প্লাবনে ক'জনকে ভাসালো সই

আঁধারনামা


হৃদয়কে শৈত্যতাপ নিয়ন্ত্রণে রাখলে
হিম হয়ে যায় না
তার নিজস্ব তাপাঙ্ক হিমঘরের হিসেবের
বাইরে স্বাধীন অবস্থান ৷
যে বেনিয়া লাভবান ছায়াচিত্র চোখ গেঁথে
সহবৎ বিনিময় করে
তার বৃহদাকার আঁশবটিতে
অতিরিক্ত শান দেওয়া থাকে
চকচকে প্রতিফলন কখনো সখনো
উল্লাসকর হয় না ৷
আঁধার নামানোর আগামবার্তার ঢ্যাঁরা পেটানো শুরু হবার পথে
ওহে সাধু, সাবধান!
স্বাদু বাক্যবন্ধ বিলোবার প্রস্তুতি চলছে ৷

সমরশ্লোক


উড়ন্ত চাকিরা নিজেদের সংসার ফেলে
কেন আসে মানুষের বিবর্ণ ভদ্রাসনে
নীল গ্রহের ঐশ্বর্যের দম্ভ আমার হাড়মাংসে
রসকলির ঔজ্জ্বল্য বয়ে বেড়াবার ধুম মচায়
নামাবলির অক্ষরে অক্ষরে বীজমন্ত্র লেখা
আকাশে ও ভূমিতে সীমানার দখলদারির সুলুকসন্ধান
পঞ্চশীলের ওকালতনামা গড়াগড়ি যায় ব্রজের ধূলায়
দিশারী ক্ষেপনাস্ত্র শুধু অদৃশ্য লক্ষ্যবস্তুকেই চেনে

বারুণী পূর্বাভাস

                         এক
সমস্ত আশঙ্কাকে দূরে ঠেলিয়া ফেলিয়া মহাবিশ্বের জেনারেল সূর্যদেব রুদ্র-র নেতৃত্বে মানবসন্তানবাহিনী ঊষাযাত্রা করিয়া মহাপ্রস্থানের পথে ফেনবতী নদী অতিক্রম করিতেছেন ৷ অধিকাংশজন দেবী ত্রিপুরাসুন্দরীর পীঠভূমি দর্শনকামনায় শকটসন্ধানে মনোনিবিষ্ট ৷

#############################
                        দুই
   
আগামীকল্য গোলোকস্থ বাণিজ্যদপ্তরের প্রধানা অধিশ্বরী শ্রীমতী লক্ষ্মীদেবী কমলা তাঁর ধনভান্ডারের সুবর্ণকলস লইয়া সিন্ধুজল ( মর্ত্যের ফেনবতী নদী) হইতে উত্থিত হইবার দিনক্ষণ পূর্বাহ্নেই পঞ্জীকৃত হইয়া আছে ৷ এতোদ্দেশে দেবীর অনুগত ও টঙ্কাপ্রসাদার্থী বণিকগণ পূর্বাহ্নেই নদীতীরবর্তী ভূতপূর্ব চরভূমিতে সাতিশয় আগ্রহে শিবির স্থাপন করিয়া বিগত তৃতীয় দিবসাধিক কাল যাবত তথায় অবস্থান করিতেছেন ৷ অপরদিকে ফেনবতী নদীর দুই তীরবর্তী জনপদের শ্রীশ্রী ব্রহ্মানন্দ গিরি মহারাজের আশীর্বাদধন্য মনুর সন্তানবর্গ এতদিন যে ' ওই পারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস ' এইরূপ বিলাপ করিয়া আক্ষেপ করিতেছিলেন তাহা প্রশমনের সুবর্ণ সুযোগ প্রাপ্তির আশায় পরস্পর বিপরীত তীরবর্তী জনপদে পদার্পন করিয়া চক্ষুকর্ণের বিবাদভঞ্জন করিবার প্রস্তুতি গ্রহণ করিতেছেন ৷এবম্বিধ বার্তা গত সায়াহ্ণে দেবরাজ ইন্দ্রের দপ্তরে পৌঁছাইবামাত্র ইন্দ্রপ্রস্থে সাজ সাজ রব পড়িয়া গিয়াছে ৷ মহারাজ ইন্দ্রদেবের নির্দেশ ইতিমধ্যে অস্ত্রাগার হইতে কয়েক শকট বজ্র নামক মিসাইল রওনা হইয়া গিয়াছে ৷ স্বর্গভূমির জলসম্পদ দপ্তরের প্রধানাধিপতি বরুণদেবকে তলব করিয়া প্রয়োজনীয় নির্দেশও দিয়াছেন ইন্দ্রদেব ৷ স্বর্গের গোলোকধাম ও নন্দনকাননকে সমুহ আক্রমন হইতে রক্ষা করার লক্ষে বিদ্যুৎসকলকে ইতিমধ্যে মর্ত্যলোকের কাজকর্ম গুটাইয়া তথায় ব্যুহরচনার কাজে নিয়োজিত করা হইয়াছে ৷ সর্বশেষ প্রাপ্ত সংবাদে জানা গিয়াছে ফেনবতী নদীর উজানে ও উত্তরাংশে বজ্র নিক্ষেপসহিত আগামীদিবসে তাঁহার পার্বন হইলেও রাজাদেশ শিরোধার্য মনে করিয়া বরুণদেব নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাঁহার কর্মতৎপরতা শুরু করিয়া দিয়াছেন ৷ ফলে আগামী দিবসে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ যারপর নাই ক্ষতির সম্মুখীন হইবেন বলিয়া আশঙ্কা করিতেছেন ৷

মোমছাল


বসন্তোৎসবের পর ফুটপাথ জুড়ে ছড়িয়ে থাকে
কামাতুরদের লালসার লোলুপ দাগ মেশানো রঙের কোলাজ
গাছের আড়াল থেকে ভ্রমর বেরিয়ে যায় রাতের আঁধারে
ধর্ষিত হবার আগে ফুলেরা ঘুমায় শিশুর সরলতা মুখে
কালো কোকিল অন্ধকারেই ক্যামোফ্লেজ করে
হাতড়ে নেয় ভালোবাসার সব পবিত্র মকরন্দ ও মোম

প্রভাতসঙ্গীত


ঈশ্বরে বিশ্বাসের ব্যাপারটা আমার কেমন গোলমেলে মনে হচ্ছে ৷বিশ্বাসে কেষ্টঠাকুর আমার দোরগোড়ায় চলে আসবেন বলা হলেও আমি এ যাবত৷কোনো সুফল দেখিনি ৷ উপরন্তু আমার ষড়ভুজ ঘরের ছয় জ্যামিতিক কোণে সিঁদ কেটে ছয়জন ধোপদরস্ত চিটফান্ড এজেন্ট ঢুকে পড়ে ৷
এরা আমার সামনে ঈশ্বরের চেয়েও উঁচু সিংহাসনের স্বপ্ন দেখাতে চায় ৷এখন নাকি বিশ্বায়নের যুগ ৷আমাকে লহমায় ঘুরিয়ে আনে সব আন্তর্জাতিক শহর ৷ওখানে সুখের দল প্রজাপতির মতো উড়ে উড়ে মানুষ খোঁজে ৷ আমার মতো লোকের নাকি ভীষণ কদর ৷ ওদের বিশেষ ক্যামেরায় আমার কৌমার্য ফুটে উঠেছে ৷
এদের এমন আরো বহুতর কোকিলকন্ঠী আকর্ষক ব্রজবুলিতে আমি মরে গেলাম ৷ এক্কেবারেই মরে গেলাম ৷ এখন আমি একটা জিন্দা লাশ হয়ে লোকালয়ে বেওয়ারিশ ঘুরছি, ফিরছি ৷পরের জা'গা পরের জমিনে যে ঘর আমি বানিয়েছিলাম গুরু গো! সবই এখন সেই ছয় দালালের দখলে ৷
আমি এখন দুবেলা দাহকাষ্ঠ আহরণ করে নিজের চিতা সাজিয়ে চলেছি ৷ বিশ্বাসে গোবিন্দ গোঁসাই নকল শ্রীচরণ বাড়িয়ে দেবেন কিনা সেই দ্বন্দ্বে আছি ৷

টান


আমার সমস্ত টান জমাট হয়ে উঠলে
ভিটে মাটি সব তোমার পায়ে এনে ফেলব
তোমাকে ভালোবাসব তুমুল তোড়ে
তোমার বুকে ব্যথা হলে আমি দশ আঙুলে
হারমোনিয়ামের রিডের এধার ওধার করব
আমি রাস্তার ধারে এক ঝুপড়ি বানাব
ঝাঁপ খোলা থাকবে সকাল বিকাল
আমার সমস্ত কবিতার চিরকুট বিছিয়ে দেব
তোমার বিছানার চাদরের ওপর
আমার সবকিছুর বিনিময়ে চুমু খাব
তোমার কপাল বরাবর ৷

ছায়া


চুর্ণ আরশিতে বিম্বের কুচি
চন্দনগন্ধমাখা শরীর
বিভাজিত হয়
পরমাণুপুরুষের পদচিহ্নের কাছে
রেণুর ধূসর মিছিল ওড়ে
সায়াহ্ণের আকাশের আঁধারে
বজ্রগান বাজতে থাকে
করোটির কোটরে
পাঁচ দরোজা পাঁচ দিকে খুলে
পাহাড়ি ঢালপথে
ক্যানেস্ত্রার বিদ্রূপ ধ্বনিত হয়
কফিনসাদা খই ওড়ে
শীতরাতের রাজপথে
কুপিহাতে পেছনে শোকপায়ে হাঁটে আবছা অচিনসই

চারণ


ঋজুরেখে বহুদূর চলে গেছে
অনন্তগোষ্ঠের অদৃশ্য ছায়াপথ
আর হে, জীবন কেন ছুটে যাবে
সেই চিরনির্ধারিত অচিনসরণীতে
কালের কালো আত্মার দরবারে
প্রশ্ন করা তবে নিরর্থক নালিশ
সেই চির গোচারণেের মুথাঘাসই
শেষ ঠিকানা সকল মায়াহরিণের

চাপাকথা


মনে হয় দুহাতে আগলাও তুমি দশহাতের সংসার ৷ কতো কাজ তোমার! তারই ফাঁকে ফাঁকে তুমি ব্যক্তিগত মোবাইলে হাত রাখো নিভৃতে ৷এদিক ওদিক দুচোখ ঘুরিয়ে খুঁজে নাও নিরাপদ চত্বর ৷ তোমার হাঁড়িতে যখন ভাতের টগবগ নাচন, যখন গরম তেলের কড়াতে ফোঁড়ন দাও ঘটা করে, একটা প্রতিবাদ ও ক্রোধের গুঞ্জন হেঁসেলের পরিবেশে হৈ চৈ করে ওঠে, তখন তুমি অসম্ভব চাপা স্বরে বলে ফেলো সব কথা, করুণ দিনলিপি লেখা ডায়েরির পাতার মতো উড়ে এসে অতি দ্রুত উজাড় হয়ে যায় আমার বুকে ৷
আমিও আমার মোবাইল সবসময় রাখি আমার বুকপকেটে ৷রিংটোনের চেনা সুর আমার হৃদয় জাগায় ৷ আর তোমার আহ্বান যাতে নিরুত্তর ফিরে না যায় তার জন্যে আমি উৎকর্ণ থাকি প্রতি মুহূর্তের সঙ্গে ৷
দেখা না হলেও প্রতিদিনের তোমার কথামালায় আমি বুঝি তোমার চোখে উদ্ভ্রান্ত বালিকার এলোকেশ চৈতের ঝোড়ো হাওয়ায় উড়ে যায় ৷ আমার নিঝুমকথায় তোমার সাহসের ডানা উড়াল শেখে ৷গাঢ় হয় ভালোবাসার মরমি দিনের গুজরান ৷
সারাদিন লুকোচুরি খেলতে খেলতে দিগন্তে সন্ধ্যা দাঁড়ায় এসে একাকী ৷ ঘরে ফেরায় উদ্বেল পাখিদের লন্ঠন বাড়িয়ে দেয় আকাশ ৷ আর পাহাড়ের ঢালে কালো চাদর গায়ে নেমে আসে রাত ৷
তুমি তখনো দরজা ছেড়ে নড়ো না ৷চেয়ে থাকো পশ্চিমের বাসন্তী আকাশের আঁধারগায়ে ৷ তোমার মোবাইলে হঠাৎ পূরবীর বিহ্বল রিংটোন বেজে ওঠে ৷ কেন গো কিশোরী ?