Friday, April 28, 2017

ঘরের মেঝে ঘামছে কেন

দুদিন যাবত ফেসবুক জুড়ে হিতাকাঙ্ক্ষীদের সতর্কবার্তা ছড়িয়ে পড়েছে, ঘরের মেঝে ঘামছে ৷ তাই ভূমিকম্প, সুনামি অবশ্যম্ভাবী ৷ আসলে ঘরের মেঝে ঘামার সঙ্গে ভূমিকম্পের কোনো সম্পর্ক নেই ৷ কদিন যাবত অতিরিক্ত বর্ষণের কারণে বাতাসে আর্দ্রতার বেড়ে যাওয়ায় এমনটা হচ্ছে ৷ বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকার দরুণ বাতাস ঘরের জলীয় বাতাস শোষণ করতে পারছে না ৷ ফলে বাতাসে মিশ্রিত জলীয় বাষ্প অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা মেঝের সংস্পর্শে এসে জলবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে ৷ ছোটোবেলার বিজ্ঞান ক্লাসের একটা পরীক্ষার কথা মনে পড়ছে প্রসঙ্গত ৷ বিজ্ঞানস্যার একটা কাঁচের গ্লাসে একটা বরফের টুকরো ফেলে দেখাতেন ৷ কিছুক্ষণ পরে গ্লাসের বাইরের দিকের দেওয়ালে জলবিন্দু জমছে ৷ স্যার ব্যাখ্যা করার আগে আমরা ভাবতাম, গ্লাসে ফুটো নেই অথচ কী করে গ্লাসের জল বাইরে বেরিয়ে এল ৷ স্যারের ব্যাখ্যায় জানতে পারি গ্লাসে বরফ রাখায় গ্লাসের দেওয়াল স্বাভাবিক তাপমাত্রার নিচে নেমে যায় ৷ ফলে বাইরের বাতাসের সঙ্গে মিশ্রিত জলীয় বাষ্প গ্লাসের শীতল দেওয়ালের সংস্পর্শে এসে জলবিন্দুতে পরিণত হয় ৷ আকাশ থেকে যে বৃষ্টিপতন হয় তার সৃষ্টতত্ত্বটা এরকমই ৷ আর একটা বিষয় বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলে ভেজা কাপড়ও দেরিতে শুকোবে ৷ সেকারণেই আজ দুদিন ঘরে বারান্দায় ভেজা কাপড়ের ছড়াছড়ি ৷ পিচ্চিগুলোর ন্যাপি পাল্টাতে পাল্টাতে মায়েরা জেরবার ৷

Wednesday, April 26, 2017

সন্ধিসুধা

স্কুলপাঠ্য বইয়ে  সন্ধিবিচ্ছেদ অধ্যায়ে 'গো' বিষয়ক দুটো শব্দের সন্ধিবিচ্ছেদ করতে প্রায়ই ভুল করতাম ৷ গো + অক্ষ = গবাক্ষ এবং গো + এষণা = গবেষণা ৷  গবাক্ষ মানে জানলা ৷ গবেষণা মানে কোনো বিষয়ে নিবিড় অনুসন্ধান ৷ অর্থ যাই দাঁড়াক আমার সমস্যা ছিল সন্ধি বিচ্ছেদ নিয়ে ৷ তবে এই অর্থসূত্র ধরেই বাবা আমাকে এই দুটো শব্দের ব্যাপারে আমার সন্ধিবাতের বেদনার উপশমের উপায় বাৎলে দিয়েছিলেন ৷ গবাক্ষ শব্দের উৎস 'গো' 'অক্ষ' মানে গোরুর চোখ  থেকে ৷ আর 'গো' 'এষণা' অর্থাৎ গবেষণাকর্ম এতোই কষ্টকর যেটা ঠাডা দুপুরে গোরু খোঁজার মতো কষ্টকর ৷ প্রসঙ্গক্রমে একটা গল্পও শুনিয়েছিলেন ৷ গল্পটা এরকম - এক গৃহস্থ তার দুধেল গাভিটি হারিয়ে ভাদ্রমাসের রোদের মধ্যে বনবাদাড়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করে ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফিরে এলেন ৷ দাওয়ায় বসে কাতরস্বরে বউকে ফরমায়েশ দিলেন, এক ঘটি খাওয়ার জল দাও না গো, মা! রান্নাঘর থেকে গিন্নি গজগজিয়ে উঠলেন - মিনসের কী মাথাটাথা খারাপ হইছে নি কী?  কর্তা উত্তর দিলেন, ভাদোমাইয়া দুফরে গোরু হারাইলে কথার আগামাথা থাকে না রে বইন ৷ বলাবাহুল্য এর পরে আমার আর  এ দুটো শব্দের সন্ধিবিচ্ছেদে ভুল হয় নি ৷
গোরুর আধার প্রযুক্ত হওয়ার প্রস্তাবে মনে হচ্ছে সন্ধিবিচ্ছেদের অধ্যায়ে আর একটা শব্দ যুক্ত হতে চলেছে ৷ শব্দটি হবে 'গো' + আধার = গবাধার ৷ গোরুর আধারকার্ডের এই নামকরণ যদি হয় না জানি কী পেরেসানিতেই পড়বে নতুন প্রজন্মের পড়ুয়ারা ৷

Thursday, April 20, 2017

চুক্তিপত্র


নস্টালজিক বাঁধের উপর দিয়ে বিষবন্ত সাপ পেরিয়ে গেলে ঠিকানা ভুল হয় ৷
ক্যাকটাসের কাঁটার সোহাগে প্রণয়ের লেশমাত্র নেই ৷শুধু ঝুলবারন্দা তার সোহাগী হয় ৷
চুক্তিপত্রে কতো কথাই লেখা থাকে পান্ডবের রতিশৃঙ্খলার মতো ৷ ভোগের জন্যে টাইমটেবল প্রদর্শন বাধ্যতামূলক ৷
জরাজীর্ণ দলিলপত্র তো অনেক কথাই বলে ৷ বন্টকনামার জন্যে ভাষাশহিদ নিষ্প্রয়োজন ৷
সমস্ত বস্তুবাদী সংগঠন সমস্বরে বিদ্রোহী হয় আর অপেক্ষা করে কখন বিরতির পরও সাথে থাকতে বলবে ৷

Friday, April 14, 2017

চৈত্রশেষের প্রার্থনা

কান্না ভুলে, শোক ভুলে বছরের শেষ দিনে
সবাইকে জড়িয়ে নেবো ভালোবাসার ঋণে ।
বড়ো জনে প্রণাম নিও, ছোটো জনে স্নেহ
অতীত দিনের স্মৃতিটারে মুছে দিও না কেহ ।
পুরোনোকে ঝোলায় ভরে চলব আবার পথে
নতুন বছর বরণ করি সবাইকে নিয়ে সাথে ।

নতুন বছর,নতুন স্বপ্ন,নতুন করে সব নেব
কান্নাটুকু মুছে ফেলে হাসি বিলিয়ে দেব ।
শপথ হোক না নতুন বছরে হাতে হাতে ধরে
হিংসা দ্বেষ ভুলে গিয়ে প্রীতি উঠুক ভরে ।
ধর্ম,বর্ণ,জাত্যাভিমান  থাক না এক পাশে
সবার প্রাণে প্রাণে যেন পবিত্রতা ভাসে ।

Sunday, April 9, 2017

পদাবলি

পদাবলি গুঞ্জনের  সঞ্চারী পেরুবার আগেই জেনে নিতে হবে

কতটা নিদমহলের কাছে পৌঁছে যায় সুরববাহার মসৃন তানে

অন্যথায় অন্ধকূপের পরিত্যক্ত গহ্বরের জমাট মিথেন গ্যাস কেড়ে নেয় প্রাণভোমরা ।

সবকথা খুলে বলার আগে,সব আগল তুলে নেবার আগে
দক্ষিণ সমুদ্রের সঙ্গে সহেলিকথন সেরে নিতে হয় ঊষালগ্নে ।

তারপর সব মঙ্গলাচরণ সম্ভবামির ধুন জাগায় ,
তখনি গানে গানে জেগে ওঠে প্রেমসাধনের বীজকল্প ।

জাগো ওঁ, জাগো প্রেম, জাগো হে !

Tuesday, April 4, 2017

খরাবিষয়ক

মস্তকমুন্ডনের পর বেলতলাবিষয়ক সাবধানতা জানা থাকলে সেদিকে আর কেউ যাবে না । কিন্তু ন্যাড়া পাহাড়ের প্রতি টান কখনো কমে না । সেটা পর্যটন না কি  বাণিজ্যিক সে বিষয়ে সংশয় দীর্ঘদিনের । সমস্ত আদিম ফসল গুলোর পঞ্চত্বপ্রদানের পর বহুজাতিক চাষবাস রমরমিয়ে বেড়ে ওঠে । টিলা পাহাড় নতুন প্রজন্ম বুকে ধরে । ওদের সঙ্গে তেমন ভাব হয়ে ওঠে না । ওরা শুধু বিশাল আকাশটাকে চেনে । আর চেনে বিশ্ববাজার । তারা প্রসাধানপটু । সেজে ওঠে বড়োদের জন্যে । দরদামের জন্যে নিজেরদের তৈরি করে নেয় । ন্যাড়া পাহাড়ের ঘরোয়া উঠোন তাদের পরিচিত  নয় । দুনিয়াপল্লীর নাগরিক তারা ।

পাহাড় শুধু বয়স বাড়িয়ে নিতে থাকে । তার সন্তানের নাড়ির টান ভুলে আকাশের দিকে মুখ করে থাকে শিলাবৃষ্টির অপেক্ষায় । বৃষ্টিপতনেই তার চোখ জলে ভোরে ওঠে । আর হৃদয় শুকোতে থাকে খরায় ।