Monday, April 29, 2024

pension

Pension for APR24 : BP = 40500 DA = 10125 REC = 0 COMM = 6300 DIS = 0 IR = 0 OLD = 0 FMA = 500 TDS = 0 NET = 44825 TEAM PNB

Friday, April 26, 2024

My Pension from jan–24

FOR FEB21 : BP=40500 DA=00 COMM=6300 FMA= 500 NET = 34700



FROM MAR21 : BP= 40500 DA( 3% )=1225 REC=00 COMM=6300 DIS=00 IR=00 OLD=00 FMA=500 TDS=00 NET=35925 PNBHOGBD

FROM JULY22 : BP=40500 : DA (8% )=3240 REC=00
COMM=6300 DID=00 IR=00 OLD=00 FMA=500 TDS=00 NET=37940
40500 -6300 = 34200+ 500 + 38240 ( 8% DA ) =37940

FROM DEC22 : BP=40500 : DA ( 12% )= 8100 REC = 00 COMM = 6300 DID = 00 IR = 00 OLD = m00 FM 500 TDS = 00 NET = 42800
40500 - 6300 = 34200 + 500 + 8100 ( 20% DA ) = 42800

FROM JAN24 : BP=40500 : DA ( 25% )= 10125 REV =<00 COMM = 6300 DID=00 IR = 00 OLD = 00 FMA= 500 TDS = 00 NET = 44825

Tuesday, April 23, 2024

আবে জমজম ও গঙ্গার জল : মিথের সমন্বয়

আবে জমজম ও গঙ্গার জল : মিথের সমন্বয়

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

গত ১৮ এপ্রিল বাংলাদেশের ঢাকায় বিশ্ব বাঙালি সংসদের একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য যাই । কুড়ি তারিখ অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর ২১ তারিখ আমার সহযাত্রী ত্রিপুরার বিশিষ্ট গল্পকার ও প্রকাশক বিল্লাল হোসেনের এক দাদার বাড়ি মোহাম্মদপুরে যাই তার সঙ্গে দেখা করার জন্যে । বিল্লালের দাদা মোঃ এমরান ঢাকা জগন্নাথ কলেজের মাস্টার্স করা যুবক বর্তমানে ডেভেলাপার । বড়ো ব্যবসা রয়েছে তাঁর । তিনি একা বাড়িতে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন । আমরা যাওয়ার পর তিনি তাঁর আতিথেয়তায় কোন ত্রুটি রাখেননি । আমরা বারবার উঠতে চাইলেও তিনি আমাদের উঠত দিচ্ছিলেন না । আমাদের সঙ্গে জমাটি আড্ডায় মজে ছিলেন সারাক্ষণ । দুপুরে তাঁর পরিপাটি আয়োজনে আতিথেয়তা গ্রহণ করে আমরা যখন বিকেলের দিকে ফিরে আসছিলাম তখন তিনি বিল্লালের হাতে দুই শিশি 'জমজমের পানি' তুলে দেন । একটি আমার জন্যে । আসার পথে আমি অবাক হয়ে ভাবছিলাম আমার তো ছোটোবেলা থেকে 'আবে জমজমে'র প্রতি একটা আগ্রহ ছিল । বাবার স্বাস্থ্যদপ্তরে সরকারী চাকুরীসূত্রে আমার শৈশব ও কৈশোর কেটে ছিল ধলাইয়ের কুলাইতে । সেখানে চিকিৎসক ছিলেন ডা.  কাজী আবদুল মান্নান । তাঁর এক ছোটোভাই কাজী কামাল উদ্দিন আমার সহপাঠী ছিল । একবার আমার ডাক্তারকাকুর বড়োভাই কাজী আব্দুল ওয়াহাব কুলাইতে তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার আরামবাগের গোলানন্দপুর গ্রাম থেকে আসেন । তিনি সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন 'আবে জমজম' এবং আরবের খেজুর । সেই থেকেই আবে জমজমের এবং আরবের খেজুরের প্রতি আমার একটা আগ্রহ তৈরি হয়েছিল । আবে জমজম কখনো না দেখলেও আমার বড় শ্রীমানের এক বন্ধুর আরবে চাকরি করার সুবাদে সেখানকার খেজুরের আস্বাদ গ্রহণ করার সুযোগ আমি পেয়েছি । একবার বিল্লাল হোসেনকেও বলেছিলাম আবে জমজমের প্রতি আমার দুর্বলতার কথা । আর সেটা আজ সত্যিই পরিণত হল । আসলে একটা প্রবাদ আছে, যে যারে চায়, ভজিলে সে পায় । আমার ভাগ্যে এভাবেই এ প্রাপ্তিটা লেখা ছিল বোধহয় ।

মুসলমানদের পবিত্র স্থান কাবা শরীফ । পবিত্র কাবা শরীফের কাবাঘর থেকে মাত্র ২১ মিটার দক্ষিণপূর্বে 'জমজম' নামে একটি কূপের অবস্থান । ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই জমজমের জল অত্যন্ত পবিত্র । তাঁদের বিশ্বাস, জমজমের পানি শুধুমাত্র তৃষ্ণা নিবারণ করে না । এই পানি পানের মাধ্যমে ক্ষুধা দূর হয় এবং রোগবালাই থেকেও নিস্তার পাওয়া যায় । ঠিক আমরা সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যেমন গঙ্গার জলকে পবিত্র মনে করি । রোগ নিরাময়ের উপায় হিসেবে গঙ্গার জল পান করি । গঙ্গাজল ছিটিয়ে কোনো স্থানকে পবিত্র করি । এমনকি মৃত্যু পথযাত্রীর মুখে ও শেষ বারিবিন্দু হিসেবে গঙ্গার জল তুলে দিই ।

হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে কপিল মুনির শাপে ভস্মীভূত সগর রাজার ষাটহাজার পুত্রদের আত্মার মুক্তির জন্য ভগীরথ শিবের কাছ থেকে প্রার্থনা করে গঙ্গাকে মর্তে নিয়ে এসেছিলেন ও পবিত্র গঙ্গাজল দিয়ে তাঁর ষাটহাজার পূর্বপুরুষের আত্মার শ্রাদ্ধকর্মাদি সম্পাদন করে তাঁদের আত্মাকে মুক্ত করেছিলেন । ভগীরথের গঙ্গা আনয়নের  মিথের মতো ইসলামিক মিথেও রয়েছে জমজম কূপ সৃষ্টির কথা । সেখান থেকে জানা যায়, আজ থেকে প্রায় চারহাজার বছর পূর্বে হযরত ইব্রাহিম আল্লাহর আদেশে তাঁর স্ত্রী হাজেরা বিবি ও শিশু পুত্র ইসমাইলকে মক্কার জনমানবহীন পাহাড়ের পাদদেশে নির্বাসন দেন । হযরত ইব্রাহিমের রেখে যাওয়া খুব সামান্য খাদ্যদ্রব্য ফুরিয়ে যাওয়ার ফলে শিশুপুত্র ইসমাইল একসময় ক্ষুধাতৃষ্ণায় কাতর হয়ে কান্নাকাটি করতে থাকে । এতে মায়ের মন চঞ্চল হয়ে ওঠে । নিরুপায় হয়ে বিবি হাজেরা তাঁর শিশুসন্তানের ক্ষুধাতৃষ্ণা নিবারণের জন্য জলের খোঁজে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছোটাছুটি করতে শুরু করেন । বিবি হাজেরা জলের খোঁজে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত সাতবার চক্কর কেটে ফেলেও ব্যর্থ হয়ে ক্লান্ত শরীরে আবার শিশুপুত্রের কাছে ফিরে আসেন । সেখানে এসে তিনি দেখতে পান তাঁর শিশুপুত্র ইব্রাহিমের পায়ের গোড়ালির ঘষায় মাটিতে যেটুকু গর্ত হয়েছে সেখানে মাটির নিচ থেকে জল উঠছে এবং সেখানে একটি ঝরনার সৃষ্টি হয়েছে । এই ঝরনাটি পরবর্তী সময়ে 'জমজমে'র কূপ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে । ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা জমজমের জলকে আল্লাহ তায়ালার বিস্ময়কর কুদরত বলে মনে করেন । হজ ও ওমরাহ পালনকারীরা দেশে ফেরার পথে পরিবার-পরিজনদের জন্য এই জমজমের পানি নিয়ে আসেন । ঠিক আমরা যেমন আনি গঙ্গাজল তীর্থপর্যটনে গেলে ।

অতীতকালে মানুষ প্রকৃতির উপাসক ছিলেন । প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদানের শক্তি সম্বন্ধে অজ্ঞতা হেতু মানুষ তাঁদের পূজা করতেন । সেই হিসেবে সূর্য, চন্দ্র, বায়ু, জল, ঝড়-বৃষ্টি, বজ্র,বিদ্যুৎ ইত্যাদি মানুষের উপাসনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়ায় । অতীতকাল থেকে মানুষের জল সম্বন্ধে একটা গুরুত্বপূর্ণ ধারণা ছিল । জলের জীবনদায়ী ক্ষমতা যেমন মানুষের জীবন রক্ষা করত তেমনি তার কৃষিজ সম্পদকে ফুলেও ফসলে ভরিয়ে দিত । আবার অতিরিক্ত জল প্লাবনের সৃষ্টি করত । তার এই ক্ষমতাকে নিয়ে সুন্দর বুননে গড়ে উঠেছে পৃথিবীর নানা অংশের মানুষের মধ্যে  নানা মিথ । এভাবেই অনেক আদিম লোকপুরাণ, লোকাচার ও লোকবিশ্বাস কালক্রমে ধর্মের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় । হিন্দু-মুসলমান ছাড়া খ্রিস্টান ও ইহুদীদের পবিত্র নদী জর্ডান । তার জলও পবিত্র । সারা বিশ্ব থেকে মানুষ এখনো জর্ডান নদীতে ব্যাপ্টিজম নিতে আসে । জলের পবিত্রতার ভাবনা তারই উদাহরণ । বিশ্বের প্রতিটি ধর্মেই তাই জলের গুরুত্ব ও পবিত্রতার অনুভূতি রয়েছে । আজকের বিশ্বব্যাপী পানীয় জলের যে সংকট সে ক্ষেত্রেও জলের গুরুত্ব নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে আমাদের । হাজার হাজার বছর আগের মানুষের মনে জল সমন্ধে লোকসাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পবিত্র অনুভব আজকের দিনেও আমাদের ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু ।

Sunday, April 14, 2024

চৈতপরবের পাঁচন : লোকচিকিৎসার পাঠ

চৈতপরবের পাঁচন : লোকচিকিৎসার পাঠ

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

বৈশাখ থেকে চৈত্র । এই বারোমাস নিয়ে বাঙালির বর্ষচক্র । তাকে ঘিরে রয়েছে নানা উৎসব । নানা পার্বণ । বাঙালির যাপনের উৎসে রয়েছে কৃষিকর্ম । তাই প্রতিটি পূজাপার্বণ, উৎসবে জড়িয়ে রয়েছে কৃষি ভাবনা । হলকর্ষণ, বীজ বপন থেকে শুরু করে ফসল সংগ্রহ ও নতুন ফসলের প্রথম আস্বাদগ্রহণ, এই প্রক্রিয়াগুলোর প্রতিটি পদক্ষেপে রয়েছে এক একটি বিশেষ বিশেষ আচার অনুষ্ঠান। বিশেষ বিশেষ তিথিতে বিশেষত, দুই মাসের মধ্যবর্তী সময়ে সংক্রান্তিতে কিংবা বর্ষারম্ভ ও বর্ষশেষে পালন করা হয় এইসব অনুষ্ঠান । সব অনুষ্ঠানেই কৃষিজ ফসল, ফলমূল, শাকসবজিকে গুরুত্ব দেওয়া হয় । পরিবারের বা সমাজে কৃষিজ বা প্রকৃতি থেকে সহজলভ্য লতাপাতা, ফলমূল বিশেষ বিশেষ দিনে খাওয়ার রীতি বাঙালি সমাজে বহুদিন যাবত প্রচলিত । এগুলো নানা অঞ্চলে নানা নামে পরিচিত । যেদিনের যে ফল বা যে ফসল পাওয়া যায়, তা আনুষ্ঠানিকভাবে খাওয়ার মাধ্যমে সেই বস্তুটির গুণাগুণ উপলব্ধি করার বার্তা নিহিত থাকে । এই ফলমূল, ফসল ভক্ষণের অনুষ্ঠান বাংলা ও বাঙালি অধ্যুষিত বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে পরিচিত । শ্রীহট্টীয় অঞ্চলে তার নাম 'আটআনাজ' । ঢাকা, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ত্রিপুরায় 'অন্নকূট' । নোয়াখালি, চট্টগ্রাম ও দক্ষিণ ত্রিপুরায় 'পাঁচন' ইত্যাদি । ঐতিহাসিক কারণে প্রাচীন বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের জনগোষ্ঠী বর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়লেও তার সংস্কৃতি সে সঙ্গে বয়ে নিয়ে গেছে ।

সেই সুবাদে নোয়াখালি, চট্টগ্রাম ও সন্নিহিত দক্ষিণ ত্রিপুরার মানুষের সংস্কৃতিতে বর্ষশেষের দিন অর্থাৎ চৈত্র মাসের শেষদিনের শিবের গাজনোৎসব চড়কপূজার পাশাপাশি পারিবারিকভাবে কিছু আচার-অনুষ্ঠান পালন করার রীতি রেওয়াজও রয়েছে । তার মধ্যে খাদ্য সংক্রান্ত উৎসবও রয়েছে । এদিন প্রতি ঘরে পাঁচন রান্না করা হয় । মূল 'পঞ্চব্যঞ্জন' শব্দ থেকে এসেছে পাঁচন শব্দটি । প্রতি বাড়িতে মুড়ি, চিড়া, খই, খইয়ের সাথে দই, ছাতুর নাড়ু ইত্যাদি ঘটা করে খাওয়া হয় । মূলত, এইসব উপাদানের প্রত্যেকটিই মূল কৃষিজ ফসল ধান থেকে প্রস্তুত করা হয় । বেশ কদিন আগে থেকে বাড়িঘরে মুড়ি, চিড়া, খই, খইয়ের ছাতু, সেই ছাতু দিয়ে নাড়ু অর্থাৎ লাবণ বানানোর প্রস্তুতি চলতে থাকে । কৃষিজ বীজ থেকে প্রস্তুত দ্রব্য ভক্ষণের মধ্যে আদিম প্রজননচিন্তা কাজ করে । বীজভক্ষণের মাধ্যমে মানুষ নিজেকে প্রজননক্ষম করার লোকবিশ্বাস বহন করে । তাছাড়া, এই বীজ উৎপাদন করতে গেলে গোষ্ঠীসদস্যের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি আন্তঃসংহতিরও প্রয়োজন পড়ে । উর্বরতাকৃষ্টির সঙ্গে যুক্ত হয় সংহতিচেতনাও । দক্ষিণ ত্রিপুরা অঞ্চলে এই যাদুবিশ্বাসজনিত কারণে নাড়ু বা লাবণ বাঁধার সময় গৃহস্থ বন্ধুরা লৌকিক ছড়া আওড়ে থাকেন– 'টেঁআ বান্ধিয়ের, হ ইসা বান্ধিয়ের, ধন বান্ধিয়ের, জন বান্ধিয়ের........' ইত্যাদি নানাকিছু বন্ধনের কথা বলে । 'জন বান্ধিয়ের' মানে গোষ্ঠীর জনগণের মধ্যে সংহতির বন্ধন সৃষ্টির কথাই বলা হয় । আবার আভিচারিক ক্রিয়ার 'বন্ধন' মন্ত্রের মাধ্যমে অদৃশ্য শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করার আচারের কথাও স্মরণ করিয়ে দেয় ।

কৃষিজ ফসলের পাশাপাশি নানাবিধ সবজির একটি ঘন্ট তৈরি ও খাওয়ার রেওয়াজ আছে এদিন । এই ঘন্টর মূল উপাদান এঁচোড় । তার সঙ্গে নানাবিধ কৃষিজ ফসল শাক, লতাপাতা, ডাঁটা,মূল, তেতো, বুনো লতাগুল্ম, ছোলা, মটর, সিমের বীজ, কন্দ ইত্যাদির মিশ্রণে তৈরি হয় এই পাঁচন । আসলে পঞ্চব্যঞ্জনের কথা থাকলেও মা-বোনেরা বনবাদাড় ঢুঁড়ে সংগ্রহ করেন শতাধিক রকমের উপাদান । চৈত্রসংক্রান্তির প্রস্তুতি আগের দিন থেকেই শুরু হয় । সংক্রান্তির আগের দিনকে বলা হয় 'ফুলবিষু' । এদিন ভোরবেলা উঠেই সংগ্রহ করা হয় ফুল, ফুলের কলি । এগুলো দিয়ে বিকেলের দিকে মালা তৈরি করা হয় । বিকেলের শেষভাগে সন্ধ্যার প্রাকমুহূর্তে বাড়ির উঠোনে বিশকাটালি, বেলকাঁটা, কুলের কাঁটা, মনকাঁটা, শিয়ালমুত্রা গাছ, দ্রোণফুলের গাছ ইত্যাদি রাস্তার, ঝোপঝাড়ের পাশে গজানো বিভিন্ন আগাছা একত্রিত করে তাতে আগুন ধরিয়ে সেই তাপ ও ধোঁয়া শরীরে নেওয়া  হয় । লোকবিশ্বাস এর ফলে শরীরে চর্মরোগসহ অন্যান্য রোগব্যাধি আক্রমণ করতে পারে না । এই লোকাচারটিকে 'জাগ পোড়ানো'  বলা হয় । ঠিক একই রকম লোকাচার বাড়ির দেউড়ির বাইরে করা হয় ।এগুলো পোড়ানোর সময় আগের দিন সন্ধ্যাবেলা শিশুবৃদ্ধ সবাই মিলে সুর করে ছড়া কাটেন–'জাগ রে জাগ, টেঁআ জাগ, হইসা  জাগ, ধন জাগ, জন জাগ' ইত্যাদি বলে । আর সংক্রান্তির দিন ভোরের ছড়া হল– দূর অ রে দূর অ । মাথা বেদনা, গা বেদনা দূর অ । মহামারী দূর অ । ওলাওঠা দূর অ । জ্বরজারি দূর অ ইত্যাদি ।  তারপর স্নান সেরে বাড়ির গৃহপালিত পশুদেরও স্নান করানো হয় । তারপর আগেরদিন গেঁথে রাখা মালাগুলো বাড়ির সদর দরজায়, গৃহপালিত পশুদের গলায় পরিয়ে দেওয়া হয় । এককথায় পরিবারের সকল সদস্যদের পাশাপাশি গৃহপালিত পশুদেরও কল্যাণকামনা করা হয় এদিন । চৈত্রসংক্রান্তির দিন নিমপাতা, হলুদ, গিলে ইত্যাদি ভেষজ উপাদান বেটে গায়ে মেখে স্নান করার পর বাড়ির সদর দরজায় কচি আমের উপর খইয়ের ছাতু ছড়িয়ে দিয়ে আম বলি দেওয়ার রীতি রয়েছে । একে 'শত্তুর ওড়ানো' বা 'শত্তুর কাটা' বলা হয় । লোকবিশ্বাস এতে অশুভশক্তির দমন হয় । এরপরেই মুড়ি, চিড়া, খই, দই, কলা, খইয়ের ছাতু ইত্যাদি সহযোগে ফলাহারের পালা । মধ্যাহ্নে আহার্য হিসেবে নেওয়া হয় বহুবিধ সবজির ঘন্ট অর্থাৎ পাঁচন । এই পাঁচন তৈরি হয় বহুবিধ ভেষজ উপাদান দিয়ে । এই ভেষজ উপাদান গ্রহণের মাধ্যমে শরীর সুস্থ রাখার বিষয়টি নিহিত থাকে । তার মানে এই নয় যে, বছরে একদিন পাঁচন খেলে সারা বছর সুস্থ থাকা যাবে । এর মূল অর্থ, প্রতিটি শাক, লতাপাতা একদিন রান্না করে বাড়ির বয়স্ক মায়েরা তাঁদের উত্তরসূরীদের এগুলোর ভেষজ গুণ সম্বন্ধে পাঠ দিয়ে থাকেন । শারীরিক প্রয়োজনে বছরের অন্য সময়ও যাতে তা ব্যবহারের কথা স্মরণে আসে । আজকের দিনে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে 'আমার স্বাস্থ্য আমার অধিকার' বলে যে ভাবনা প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে তা যে সুদূর অতীতেও আমাদের পল্লীজীবনে নিহিত ছিল তা স্পষ্টই বোঝা যায় । এভাবেই আগেকার দিনে স্বাস্থ্যসচেতনতা গড়ে তোলা হত ।

হালখাতা বা গদিসাইদ : হারিয়ে যাওয়া বাণিজ্যসংস্কৃতি

হালখাতা বা গদিসাইদ : হারিয়ে যাওয়া বাণিজ্য সংস্কৃতি

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

চৈত্র সংক্রান্তির পরদিন শুরু হয় নববর্ষ । নতুন বছরের সূচনালগ্নে প্রতিটি বাঙালি পরিবারে ভালো খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করা হয়ে থাকে । আমাদের খাদ্যকেন্দ্রিক সমস্ত সংস্কৃতিই কৃষিভিত্তিক জীবনের নিদর্শন । একদিন বাঙালির গোলাভরা ধান, পুকুরভরা মাছ ছিল । আর ছিল গৃহপালিত পশুপাখি ও নানারকম বাগিচা ফসল । অতীতের বাঙালির যৌথপরিবার ভাঙতে ভাঙতে আজ পায়রার খোপের মত ফ্ল্যাটবাসী হয়ে গেছে । সেই বিস্তীর্ণ-জমিজিরেত কবেই হারিয়ে গেছে । সর্বশেষ প্রজন্ম নিজের ভদ্রাসনটুকুও প্রোমোটারের হাতে তুলে দিয়েছে নগদ কিছু অর্থ আর একটি বা দুটি ফ্ল্যাট বাড়তি প্রাপ্তির হাতছানিতে । এ যুগে বিশাল ভূখণ্ড সামলানো যেমন দুরূহ তেমনি ফ্ল্যাটের অভ্যন্তরে ছোটো পরিবারের কিছুটা হলেও নিরাপত্তা আসে । এত শত পরিবর্তনের মাঝেও বাঙালি তার সংস্কৃতি নিয়ে বাঁচতে চায় । যতটা সম্ভব লোকাচার পালন করে । জোমাটো ও স্যুইগির হাতছানি থাকলেও অন্তত এই দিনটিতে নিজের মত করে খাবার তৈরিতে মনোযোগ দেয় । মর্যাদা দেয় বাঙালিয়ানাকে ।

কৃষিকেন্দ্রিক জীবনের কারণে এককালে বাঙালির বাণিজ্য কৃষিজ পণ্য নিয়েই শুরু হয়েছিল । বাংলার বণিকেরা কৃষিজ পণ্য ও উপজাত দ্রব্য নিয়ে বাণিজ্যে যেতেন । আমাদের মধ্যযুগীয় কাব্য ও পুঁথিসাহিত্যে সাহিত্যে বাঙালি বণিকদের বাণিজ্যযাত্রার বহু নিদর্শন পাওয়া যায় । চাঁদ সওদাগর, ধনপতি প্রমুখ বণিকেরা মধুকর কিংবা চোদ্দো ডিঙা সাজিয়ে নৌ-বাণিজ্যের মাধ্যমে কৃষিজ পণ্য দেশে-বিদেশে নানা স্থানে নিয়ে যেতেন । কি অন্তর্দেশীয়, কি বহির্দেশীয়, উভয় প্রকার বাণিজ্যে সেকালে বাঙালি বণিকদের একটা শক্ত ভিত্তি ছিল । এই সময়ে বাংলার অর্থনীতির মূল ভিত্তি ছিল কৃষিজ সম্পদ । বাংলা নববর্ষের প্রথমদিন থেকেই তাঁদের বাণিজ্য শুরু হত । বাণিজ্যের হিসাবপত্র খাতায় সংরক্ষণের ব্যবস্থাটিও শুরু হত এদিন থেকেই । প্রাচীন রাজা-জমিদাররাও এদিন তাঁদের রাজকোষ বা কাছারিবাড়িতে সংবৎসরের আদায়কৃত খাজনা লিপিবদ্ধ করতেন । এইদিন প্রজাদের নিমন্ত্রণ করে আপ্যায়ন করা হত । আগেরদিন অর্থাৎ চৈত্রের শেষদিন প্রজারা রাজকোষে সারাবছরের খাজনা জমা দিত ও রাজবাড়ি বা জমিদার বাড়িতে অবস্থান করত । পরদিন অর্থাৎ পয়লা বৈশাখ রাজা-জমিদারগণ প্রজাদের ভুরিভোজে আপ্যায়ন করতেন । এই দিনটিকে বলা হত 'পুণ্যাহ' । তদ্রূপ এদিন ব্যবসায়ীরা তাঁদের নতুন খাতা মহরত করতেন । এটাকে বলা হত 'হালখাতা' । এদিন ব্যবসায়ীরা নতুন খাতা নিয়ে কোন দেবমন্দিরে গিয়ে দেবতার পাদস্পর্শ করিয়ে আনতেন । তাঁদের ব্যবসাকেন্দ্রও এদিন সুন্দর করে সাজানো হত । ব্যবসাকেন্দ্রে বা ব্যবসায়ীর গদিতে সিদ্ধিদাতা গণেশের পূজো এবং লক্ষ্মীপূজো করা হত । খাতার ভেতর আশীর্বাদী ফুল দূর্বা রাখা হত । প্রাচীন মোহর বা রূপার টাকায় সিঁদুর,হলুদ, চন্দন মাখিয়ে তার ছাপ পর পর খাতার প্রথম পৃষ্ঠায় রাখা হত । সিঁদুর দিয়ে আঁকা হত পবিত্র স্বস্তিক চিহ্ন । ব্যবসায়ীর ব্যবসাকেন্দ্র বা গদিতে এই ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আচার পালন করা হত বলে একে 'গদিসাইদ' ও বলা হত । 'সাইদ' একটি আরবি শব্দ । তার অর্থ সৌভাগ্যবান বা মহান । গদিসাইদের মাধ্যমে সৌভাগ্যের সূচনা করাহয় । 'গদিসাইদ' উপলক্ষে এদিন অপরাহ্নে ব্যবসায়ীরা তাঁদের গ্রাহকদের নেমন্তন্ন করতেন এবং মিষ্টিমুখ করাতেন । গ্রাহকও মিষ্টিমুখের পর পুরোনো হিসাব নিকাশ শেষ করতেন এবং নতুন বছরের হিসেবের খাতায় তার নাম উঠিয়ে নিতেন । নতুন খাতায় হালনাগাদ  বা বউনি করার নামই হলো 'গদিসাইদ' ।

হালখাতা শব্দটির উৎস খুঁজতে গিয়ে আমরা দুটি ভাষাতাত্ত্বিক সূত্র পাই । সংস্কৃত 'হল' শব্দ থেকে 'হাল' শব্দটির সৃষ্টি বলে অনুমান করা হয়। 'হল' বা 'হাল' হল আদিম কৃষিযন্ত্র । জমির মাটি কৃষিউপযোগী করে তোলার জন্য হালের ব্যবহার করা হয় । হাল বা 'লাঙ্গল কাঁধে কৃষক'কে বলা হয় হলধর । হালচাষের মাধ্যমে উৎপন্ন পন্য ক্রয়বিক্রয়ের হিসেব যে খাতায় রাখা হয় তাই 'হালখাতা' । আবার ফারসি 'হাল' শব্দের অর্থ 'বর্তমান সময়' । যেমন– হাল আমল, হাল ফ্যাশন, হাল-হকিকত, হালনাগাদ, হালসন ইত্যাদি । হাল সনের হিসেবের যে খাতা তাই 'হালখাতা' । এই হালখাতা উপলক্ষে অনেক ব্যবসায়ী আমন্ত্রণপত্র ও তৈরি করতেন । গ্রাহকদের মধ্যে সেই আমন্ত্রণপত্র বিলি করা হত । এই হালখাতা বা গদিসাইদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও ক্রেতার মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কের বাইরেও একটা সামাজিক সম্পর্ক তৈরি হত । কোন কোন ব্যবসায়ী আবার অক্ষয় তৃতীয়ার দিন এই অনুষ্ঠান পালন করতেন । আগরতলা শহরে অবাঙালি ব্যবসায়ীদের গদিতে রামনবমী তিথিতে এই অনুষ্ঠান পালন করা হয় । মফস্বল থেকে ব্যবসায়ীরা এদিন তাঁদের গদিতে গিয়ে বউনি করেন । বাংলা নববর্ষ এভাবেই একদিন বাঙালি ব্যবসায়ীদেরও সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছিল । আজ আর ততটা দেখা যায় না । শপিং মল আর অনলাইন ব্যবসার দৌলতে এই সংস্কৃতিও হারিয়ে যেতে বসেছে ।

Tuesday, April 2, 2024

My pension from Jan 24

FOR FEB21 : BP=40500 DA=00 COMM=6300 FMA= 500 NET = 34700



FROM MAR21 : BP= 40500 DA( 3% )=1225 REC=00 COMM=6300 DIS=00 IR=00 OLD=00 FMA=500 TDS=00 NET=35925 PNBHOGBD

FROM JULY22 : BP=40500 : DA (8% )=3240 REC=00
COMM=6300 DID=00 IR=00 OLD=00 FMA=500 TDS=00 NET=37940
40500 -6300 = 34200+ 500 + 38240 ( 8% DA ) =37940

FROM DEC22 : BP=40500 : DA ( 12% )= 8100 REC = 00 COMM = 6300 DID = 00 IR = 00 OLD = m00 FM 500 TDS = 00 NET = 42800
40500 - 6300 = 34200 + 500 + 8100 ( 20% DA ) = 42800

FROM JAN24 : BP=40500 : DA ( 25% )= 10125 REV =<00 COMM = 6300 DID=00 IR = 00 OLD = 00 FMA= 500 TDS = 00 NET = 45825