Tuesday, February 27, 2018

এসো শান্তি, এসো কল্যাণ

আমি এই সৌন্দর্যের প্রতীক্ষায় থাকি ৷
আমি এই প্রতিবেশীর প্রতীক্ষায় থাকি
আমি সহমর্মীতার প্রতীক্ষায় থাকি
আমি এই অমলিন প্রিয়বোধের প্রতীক্ষায় থাকি ৷
আমি প্রতীক্ষায় থাকি সুজন স্বজনের
এই মধুর প্রতিযোগিতার জন্যে আমি রাত জেগে পাহারা দিতে প্রস্তুত আছি ৷

দেখো নাগরিক রাজনীতিবিদ আর বুদ্ধিব্রতীরা
কী কান্ডটাই না হচ্ছে দক্ষিণের জনপদে
তোমরা একপথের পথিক না হলে
গালাগালিতে ভরে দাও
প্রতিপক্ষের গায়ে থুথু ছিটাবার জন্যে পিচকিরি সাজাও
আর নিজেকে মতাদর্শের শ্রেষ্ঠ সমজদার বলে সমাজমাধ্যমে ঘোষণা দাও ৷

দেখো হে মহানাগরিক, করুণার ভাড়াঘরের অধিবাসী
দখিনা হাওয়া বইছে প্রান্তিক জনপদে
যে হাওয়ায় বিষ নেই ৷ যে হাওয়া স্বচ্ছ ও বিশুদ্ধ ৷

তোমাদের ক্রমাগত প্ররোচনায় যখন মানুষ প্রচন্ড বিষাদগ্রস্ত
তখন মৌসুমি হাওয়ায় উড়ছে শান্তির পতাকা
এখানে আশির দাঙ্গার রক্তাক্ত ক্ষত নেই ৷
এই জনপদ বুদ্ধের শরণাগত
কোকিলও মেতে উঠেছে এই জঙ্গলমহলে বাসন্তী মৌতাতে ৷

এই মহল্লার এবারের বসন্তোৎসব হবে প্রীতির উৎসব ৷ হাতে হাত ধরে ৷
দীন আমন্ত্রণ রইল সাক্ষী হবার জন্যে ৷
(ছবিঋণ  : প্রসেনজিৎ বৈদ্য)

Sunday, February 25, 2018

বি স র্জ ন

ও পথ দিয়ে কদিন যাব না আর
একা দাঁড়িয়ে থাকবেন রবীন্দ্রনাথ
আমাদের মাথার ওপর ছায়া বিছিয়ে দিলেও
ঝড় জলের হাত৷থেকে মুক্তি নেই
তাঁর

ও পথ দিয়ে কদিন যাব না আর
সারি সারি চালাঘরের নিভৃত দীর্ঘশ্বাস
বইয়ের পাতা, শূন্য পেটি, ছেঁড়া চট
বিরহী তাক,খদ্দেরের আশায় দাঁড়ানো
ফ্ল্যাক্সের জৌলুশ গুটিয়ে ঝুলে থাকা
মনকে বাউল করে দিয়ে যে চলে যায় মেঠো আল ধরে ৷

ও পথ দিয়ে কদিন যাব না আর হাজারো অচেনা তরুণীর পায়ের ধুলো
বয়ফ্রেন্ডের কাঁধে হাত রেখে তোলা সেলফি
ভয়হীন ঘোষণার সুযোগ সোস্যাল সাইটে
নির্বাক শব্দ নিয়ে খুঁজবে কবিতার খাতা

ও পথ দিয়ে কদিন যাব না আর
আই জি এমের দেয়াল থেকে যেন
হাজার কোলাহলকবিতা তীব্র প্রতিধ্বনিতে
ফিরে আসবে উমাকান্তের ফাঁকা মাঠে
শুধু মোড়ের ট্রাফিক পুলিশ কদিনের চঞ্চলতা ভুলে
স্থবির হয়ে প্রাণায়ামের সুযোগ পাবে

ও পথ দিয়ে কদিন যাব না আর

স ন দ

উল্টোদেশ থেকে প্রস্তাব এনেছি আমি
সমস্ত রোবকারীতে উলটপুরাণের মোহর
প্রভুর সনদটাকে আঁকড়ে ধরেও করুণাহীন
দলিলে লেখা আমার বরাদ্দ লুব্ধ দালালজীবন
ভর্তুকিজড়িত হালফিলের তিক্ত
খোরপোষ

আমার রিটার্ণ টিকিট কাটা নেই ঊর্ধপদ হেঁটমুন্ডে প্রত্যাবর্তনের

Wednesday, February 21, 2018

সেনানায়ক



তোমার হাতে ধরা মশালের আলোয় / এতোকাল তো পথ চলে এসেছি ৷ / এগিয়ে যেতে যেতে সাবলীল হয়ে গেছে /   মিছিলের পায়ের নিয়ন্ত্রিত দাগ ৷ / মশাল হয়ে যায় সূর্যোদয়ের আবির ৷ /  বুকের ঘুমানো স্বপ্ন ভোরের আলোয় জেগে ওঠে ৷ /

চিরচেনা মশালের আলোতে পথ চলতে গিয়ে /  মাঝে মাঝে নেমে আসে আকস্মিক বিপর্যয় ৷/ দমকা হাওয়া ছুটে আসে প্রান্তর বরাবর /  যেখানে দলে দলে  স্বপ্নীল মানুষ ভোরের আশায় / রাতের সমুদ্র পাড়ি দেয় সংঘবদ্ধ প্রেরণায় ৷/

বাতাসের কাঁপনে যখন দুলে ওঠে মশালের শিখা / তোমার বাবরি চুলের প্রত্যয়ী আন্দোলনের মতো / লড়াকু মিছিলেও তখন দুর্বার সাহস ঢেউ খেলে যায় ৷ / গর্জে ওঠে হাজারো জনতা তোমার গানে / আর নিমেষে ছুঁড়ে ফেলে দেয় ভয়ের অশনি ৷/  জ্বলে ওঠে চোখের ফসফরাস বারুদের মতো ৷/

আজ পশ্চিমের প্রান্তরে যে ঝড়ো সংকেত / যে তীব্র ঝড়ে ওলোট পালোট মহামিছিলের গতি / ছিঁড়ে ফেলছে মালা ও বিশ্বাস ৷সেখানে তোমার /  আগুনের বীণ যেন বেজে ওঠে আরো একবার / সংলাপে যেন সংহতির কথা হয় উচ্চারিত ৷

হাজারো ভীরু বুকের কাছাকাছি থেকে  আর / পায়ে পা মিলিয়ে মাটিকে যদি আঁকড়ে ধরি / তোমার গান আর তসবির যদি সাথে থাকে / জয় আমাদের মুঠোয় আসবে একদিন /  সে স্বপ্ন নিশ্চিত হে কবি ও সৈনিকশিরোমণি ৷

Sunday, February 18, 2018

বিষাদসংলাপ

নিষাদেরও বিষাদ ছিল ক্রৌঞ্চমিথুন বধের পর
শ্লোকস্নাত আনন্দজল গা বেয়ে গড়ানোর কথা সে লিখে গেছে ভুজপাতার শরীরে ৷

আঁধারপৈঠায় একাকী মৌনগানের পর চাঁদ হেসে ওঠে দিলখোলা ভঙ্গিমায়৷
ধীরে ধীরে শরীর থেকে পাপ নেমে যায় পাতালের দিকে৷

উদোমকথা ধ্বনিত হয় ক্ষীরে গোলা চাঁদের মুখোমুখি -
'এই নাও বিষাক্ত ধনুকের ছিলা আর তীক্ষ্ণমুখ শায়কশলাকা
নষ্ট হবার আগে আমার আঙুলে তুলে দাও কিছু অমলিন শব্দ হে সোম! হে সুন্দর!

আকাশের সামিয়ানায় গাঁথা তারার পায়ে অঞ্জলি দিয়ে 
আমি গাইতে পারি অন্তিম ভজন ভুবনমন্দিরের জগমোহনে বসে' ৷ 

হে সুন্দর,  আমিও উৎকর্ণ অপেক্ষায় থাকব তোমার সংকেতের আশায় ৷

Saturday, February 17, 2018

ভোট চলছে ৷ কদিন ধরে মানসিক বিকারগ্রস্তদের যে তান্ডব উপভোগ করলাম নির্বাচন প্রচারের নামে চোখের ভাষায়, মুখের ভাষায়, শরীরী বিভঙ্গে ৷ ভাবছিলাম আসলে আমরা কী সুস্থ মানুষ?  প্রতিবেশ, পরিবেশে এক সন্দেহের বাতাবরণ ৷ একটা দূরত্ব ৷ সামাজিক সম্পর্কে অদৃশ্য ফাটল ৷ জানি না এই ব্যবধানটা ভোটের ফলাফলের পরেও বজায় থাকবে কিনা? রাজনীতির যূপকাষ্ঠে বলি হয়ে যাচ্ছে মানবিকতা ৷ বিগত দিনে ভোটের পরেও দেখেছি এই অস্বাভাবিক আচরণের ফল একদলকে কী নির্মমভাবে মিটিয়ে দিতে হয় ৷ যারা নিজের স্বার্থের জন্যে ভোটার নামক নিরীহ নাগরিকদের নাচায় তাদের মধ্যে যে আশানুরূপ ফল পায় না তারা মোবাইলের সুইচ অফ করে দিয়ে আত্মগোপন করে থাকে ৷ আর তার জন্যে স্বপ্ন দেখা, উন্মাদপ্রায় মানুষটিকে খেসারত দিতে হয় শারীরিক, মানসিক, আর্থিক ও সামাজিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে ৷ আর যার পক্ষে জয় যায় সে প্রত্যক্ষ বা নিরব উৎসাহ দিয়ে যায় উল্লাসে কিংবা উচ্ছৃঙ্খলতায় ৷ স্বপ্নের ফেরিওয়ালারা কদিন চলে যান নির্বিকল্প সমাধিতে ৷ চলে এক পাগল আর এক পাগলের দিকে ঢিল ছোঁড়াছুঁড়ি ৷ তার মধ্য দিয়েই আসে রণ, রক্ত, সফলতা ৷ ৷
এবারের ভোটের প্রচারকে কেন্দ্র করে বাকস্বাধীনতার নামে আমার রাজ্যের কিছু নাগরিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে, সাজমাধ্যমে একে অন্যের প্রতি যে ভাষায় নিরন্তর আপ্যায়ণ করে গেছেন তা দেশবাসীর কাছে এরাজ্যের শিক্ষাদীক্ষাসংক্রান্ত গর্বের পরিসংখ্যানটাকে প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে ৷ তবুও আমরা গণতন্ত্রের সেবক ৷ গণতন্ত্রের পূজারী ৷ ভোট দিই ৷ জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করি ৷সুখ, সমৃদ্ধি, শান্তি, কল্যাণের আশায় ৷ এই একটা সময়েই যাচাই করি কী চেয়েছি আর কী পেয়েছি ৷ কী পাইনি আর কী পেতে চাই এসবের ৷ বিগতদিনের প্রতিশ্রুতি আর রূপায়ণের মূল্যায়ন হয় এই সময়ে ৷
আর তা করতে গিয়ে কারো বুক খালি হয়ে যাবে, প্রিয়জন হারিয়ে যাবে অতল অন্ধকারে , স্বজন চিহ্নিত হয়ে যাবে দুর্জন হিসেবে, কেউ সুখের মৌচাকের চারপাশে আশ্রয় পাবেন আর বিরুদ্ধাচরণের কারণে নিকৃষ্ট নাগরিক হিসেবে বর্জিত হবেন একটা নির্দিষ্ট সময়ের সীমারেখায় ৷ এই চিহ্নায়নের জন্যে কী ভোট? গণতন্ত্রের আরাধনা? সর্বাধুনিক গণতান্ত্রিক উৎসব?
এই প্রক্রিয়ার কী আরো সংস্কার করা যায় না?  মনোনয়নের পুজোকে, মননের আরাধনাকে আরো পরিশীলিত করা হোক ৷ আরো প্রাণবন্ত করা হোক ৷পরাজিত জনও যাতে হাসতে হাসতে ঘরে ফিরতে পারে ৷ নির্বাচনের পরেও যাতে সুনাগরিকের গুণগুলোই প্রকট হয় এবং প্রখর হয় ৷

Sunday, February 11, 2018

শী ত সং ক্রা ন্তি


শীতের বেদনা প্রকট হয়ে ঝরে পড়ছে অশ্রুমেঘ
নির্বানের সময় হল নিয়মের ছাড়পত্রকথায়
চরাচর ধুয়ে যাব আতসভূমি রেখেছি এখন
ওই দেখো  শ্যামারঙ ল্যাজ দুলিয়ে
তরুণ দোয়েল গান গায় সজনির বুক বরাবর
মাটিও বিলায় মায়ের আঁচলের মতো সোঁদা ঘ্রাণ 
নওল বসন্ত তার বাহারি সাজ নিয়ে পারঘাটার কাছাকাছি

বোধনের বর্ষণের পর বাসন্তী ঊষায় পথে নেমে যাব
তরুণের গেঁথে রাখা নোঙর খুলে আমি ভাসাব ভেলা
ঋতুপথে ধাবমান ঢেউয়ের অবিরাম পরিক্রমায়