Wednesday, June 28, 2017

রথযাত্রার উৎস

রথোত্সব বা রথযাত্রার সঙ্গে বহুবিধ লোকসাংষ্কৃতিক বিষয় জড়িয়ে রয়েছে । রথযাত্রা সূর্যপূজারও ইঙ্গিত করে ।সূর্যের সপ্তাশ্ববাহিত রথে পরিক্রমণের কথা মনে করায় । আদিম মানুষ সূর্যকে দেবজ্ঞানে ভক্তি ও পূজা করত । আদিম মানুষ লক্ষ করেছিল সূর্যালোক শস্য উত্পাদনের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রয়োজনীয় ।জলবর্ষী মেঘের স্রষ্টা এবং ঋতুচক্রের নিয়ন্তা হল সূর্য । শষ্যোত্পাদনের জন্যে আলো ও জল অপরিহার্য ।  সে হিসেবে রথযাত্রা উর্বরতাকৃষ্টির সঙ্গেও জড়িত । বর্ষার সমাগমে এই উত্সব কৃষিউত্সবেরও রূপভেদ । ঋতুচক্রের পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও সূর্যের ভূমিকা প্রধান বলে আদিম মানুষ সূর্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়ণকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ঋতুউত্সবের আয়োজন করত ।আদিম মানুষের ধারনা ছিল সূর্যকে রথে চড়িয়ে অয়ঃচক্রে পরিভ্রমণ করালে সারা বছর সূর্যের গতিপ্রকৃতি ঠিক থাকবে এবং ফলস্বরূপ কৃষিজ উত্পাদনের সহায়ক ঋতুচক্রের আবর্তনের নিয়মেও কোন হেরফের হবে না ।

Tuesday, June 27, 2017

হে প্রিয়

আমাকে জাগানোর জন্যে তোমার নিদ্রা নেই
হে চিরপ্রণম্য আলোর দেবতা, তোমাতে নত হয়ে
আমি উঠে দাঁড়াই দিনলিপি হাতে নিয়ে
আমার শৃঙ্খলা ও শৌর্যের পাততাড়ি খোলা হয় এবেলা
যতোক্ষণ ডুবে থাকবো কর্মের পরিধির ভেতর
তোমারই অদৃশ্য বীজন আমার ক্লান্তি মুছে যাবে
আমি ভুলে গেলেও তুমি মার্জনার জন্যে
তৈরি থেকো সর্বক্ষণ,হে প্রিয় ক্ষমাসুন্দর

Monday, June 26, 2017

এসো মানুষ, এসো মানবতা


'
'বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি ' হলেও
রক্তবর্ষণে শান্তি অধরা রয়ে যায় চিরতরে
যে রক্তধারা ভিজিয়ে দেয় মৃত্তিকা, যে লোহু করে সর্বহারা
তারই উল্লাস বুঝি সভ্যতার বড়াই, বড়ো গর্ব
কী হিংস্র, কী বীভৎস উল্লাস ঘুম কেড়ে নেয় জনপদের
আবার যেন ফিরে আসে গুহাজীবনের আঁধার
গোষ্ঠীর লড়াই যেন জমির দখলসত্বের জন্যে
তাহলে কারা এতোকাল অজস্র ভালোবাসার বার্তা
পাথুরে পাহাড়ে, ভুর্জপত্রে,কাগজে কিংবা দেওয়ালে
লিখে গেছেন অবিরাম, অবিরত
কী তার প্রতিফলন সভ্যতার কাছে, মানুষের কাছে
কেন আজ হননে মেতে উঠেছে সভ্যতা
কোথায় চাতুরি করেছি আমরা অগ্রজের সাথে, পূর্বপ্রণম্যদের সাথে?
আসুন, আজ আবার এই বাসভূমির রক্তাক্ত কৃত্তির আসনে বসে, প্রিয়জনের লোহিত শরীর সামনে রেখে
মেলে ধরি সমস্ত ধর্ম ও পুরাণ গ্রন্থ
আবার পাঠ করি চেতনার গাঢ় অনুভবে সেইসব আর্ষবার্তা
খুঁজে দেখি নিবিড় চোখে প্রতিটি অক্ষর
মানুষের কল্যাণের কামনায় লেখা যে সব বর্ণমালা
মহার্ঘ সংগ্রহের মতো ছড়িয়ে দিই
আকাশে, বাতাসে, শহরেও জনপদে
হে প্রিয় মানুষেরা, হে সুন্দর অমৃতের সন্তানগণ
শুরু করি আবার ভালোবাসার পাঠ স্বীয় বর্ণমালায়
ভালোবাসার জন্যে, মানবতার প্রচারে হোক আর এক সম্মিলিত অভিযান ৷

ভালোবাসা বিষয়ক

অনেকে কী ভীষণ ভীষণ ভালো কথা বলে
ভালোবাসার কথাও অনর্গল বলে অনেকে
যেন এক একজন নির্বাহী তবিলদার তাদের
কোমরে গোঁজা খতিতে গিঁট মেরে রাখে উত্তম প্রণয়
এজমালি ভালোবাসা বিষয়ে দলিল প্রমান
হাতে রেখে আত্মম্ভর হাই তোলেন কতোজন ৷

আমি কাকভোর থেকে অপেক্ষা করি এক প্রাচীন বার্তার

যে অচেনা কন্ঠস্বর আর অদৃশ্য মুখ জেনে নেয়
আমার কুশল সমাচার , ছুঁড়ে দেয় উড়োচুমু
তাকে কী বলব,কেন সে পাঠায় সেলফি অহরহ?

সেও কী প্রেমের প্রমোশন,  সখি ' ভালোবাসা কারে কয় '?

এপ্রিল ফুল


মেইলবক্স খুলে দেখতে চাইছি কে আজ বোকা বানাল এদিনে
তেমন কোনো হাস্যকর প্রয়াসের কোনো ছাপ নেই
কেবল পাতার পর পাতা জুড়ে কানার মাতম
অশ্রুসিক্ত ইমোজি সব উঠে আসছে ওস্তাদজির সানাই হয়ে
আর টাইমলাইনের পাতা জুড়ে ঘন ঘন ট্যাগ
ভয়ংকর উল্লাসে ফেটে পড়া সব হিংসাময় সব বসন্তকথা

আমার চারপাশের বাতাস ভারি হয়ে আছে
পঞ্চাশ হাজার মুখের করুণ বৃত্ত প্রশ্নচিহ্ন হয়ে দুলছে
এ ভূখন্ড সীমিত হওয়ায় কেউই অপরিচিত নয়,
সবারই হাল হকিকৎ জানা ৷ উনিশ বিশ সবাই সমান বিত্তবান ৷
আমার জনপদে এখন মন্বন্তরের নীরবতা নেমেছে
আশাহত কুপিবাতি হাওয়ায় কাঁপছে, কখন বুঝি নিভে যায় ৷

এই অন্ধকারেই দেখি একদল মর্ষমান শরীর ডঙ্কা বাজিয়ে মশালনাচে নেমেছে ৷ কী তীব্র তাদের হল্লাবোল!

ক্রমশ পাথর হয়ে খসে পড়ে যাচ্ছে অজস্র কান্নামুখ
আর উল্লসিত হিংস্র অবয়বগুলো শ্বাপদ হয়ে বেরিয়ে পড়ছে ৷

প্রতিবেশী বলে আর কেউ নেই মানুষের শরীর নিয়ে
লক্ষ্মণরেখার দুইপাশে অসহিষ্ণু খাদক এবং অসহায় খাদ্য

আজ বসন্তপুষ্পের দিনে এভাবেই সাজানো আমার প্রোফাইল ৷

বর্ষণ

জল পড়ে পড়ে জল হৃদয় সাগর
মনে পড়ে পড়ে মনে প্রাচীন বাসর
একা একা গেয়ে যায় বৃষ্টির বিন্দু
ঝরে ঝরে গড়ে চলে বিষাদের সিন্ধু
প্রহরে প্রহরে শুনি কান্নাই শুধু
অতীত প্রণয়ে ভাসে ঘরভাঙা বধূ
সুখের স্মৃতির কাছে সংসার মেদুর
প্রেমকথায় কাছে আসে বিলুপ্ত সুদূর

বর্ষাবাস

কান্না কিংবা কীর্তন কী যে করো, বুঝি না বৃষ্টি
ভুমিতলে বিছিয়ে দিয়েছো আজব আরশি
চাঁদরঙা মুখ ধুয়ে কে এক অতৃপ্ত তরুণী
দেখ নেয় তার উপোশী সংকেত সেই মুকুরের স্বচ্ছতায়

জলের গমনধারায় চোখ রেখে রেখে সেখানেও
জলের গতি নামে ৷ আর ভেবে যায়
এই গতিময় জলের উজান বেয়ে তার
কাছে ছুটে আসবে উদ্দাম স্বীয়পুরুষ
যার কাছে সমর্পনে পর সেও বর্ষার রূপ নেবে ৷

ঘুড়ি

সুতোতে মাঞ্জা দেওয়ায় পারদর্শী
তাই বড়াই করি আমার হাতযশের

কোনোদিন দেখা হবেনা জেনেও
প্রেম প্রেম অদৃশ্য নিবেদনে
নাটাইয়ের চাতুর্য দেখাই ৷

পরকিয়ার সংজ্ঞা নিরূপনের পথে
বৈষ্ণব পদাবলির তত্ত্ব বাতিল ঘোষিত

উজ্জ্বল নীলমণির পৃষ্ঠায় উঠে আসে
হালফিলের নীল নিবেদন ৷

আমার হাতে মাঞ্জা দেওয়া সুতোয়
আমিই ভোকাট্টা হই ৷

Friday, June 23, 2017

বর্ষণ

জল পড়ে পড়ে জল হৃদয় সাগর
মনে পড়ে পড়ে মনে প্রাচীন বাসর
একা একা গেয়ে যায় বৃষ্টির বিন্দু
ঝরে ঝরে গড়ে চলে বিষাদের সিন্ধু
প্রহরে প্রহরে শুনি কান্নাই শুধু
অতীত প্রণয়ে ভাসে ঘরভাঙা বধূ
সুখের স্মৃতির কাছে সংসার মেদুর
প্রেমকথায় কাছে আসে বিলুপ্ত সুদূর

Saturday, June 17, 2017

কলহ


কাল রাতে আকাশ থেকে চন্দ্রাবলি মেঘ পালিয়ে
আঁধারে তমালকুঞ্জে কালিয়াবিলাসে মেতে
জেনে গেছে গোপযৌবনা কলহআঁচে তপ্ত

তাই ঘন ঘন বাজ পড়ার গর্জন,
বিজলির ছোবল মেঘের কলজে বরাবর

মেঘের বুক থেকে তালিম দেওয়া নগ্ন পায়ে
হজাগিরি নাচে দুলে ওঠে পার্বতী নর্তকী

একমাত্র বর্ষার নরম আকাশই ভিজিয়ে দেয়
মরমি কবির আকুল ঝরনাকলমের শীর্ষ ও শরীর

Monday, June 12, 2017

কোজাগরী

গৃহী বাউল হয়ে ভদ্রাসনের চৌকিদারী
সন্ততিরা চৌকাঠ ডিঙিয়ে ভুবনগঞ্জের মাঠে
ওরা আকাশ দেখে আর ইমারত গড়ে আকাশসমান ৷
হাতের মশাল নিবিয়ে রেখে বিলীয়মান ধোঁয়ায়
তাৎক্ষণিক চিত্রকথায় ভেসে যায় ভাঙা অতীত

সমস্ত দায়ভার স্বর্ণকুম্ভে তুলে নেওয়ার জন্যে
জীবন বাজি রাখেন সুন্দরী কমলা আজীবন
তার কোনো নথিবদ্ধ ইতিকথা লেখা হয় না

কে জাগে?  তোমরা জাগো কী আগামীর মহীরুহ যতো সব?
কে জাগে?  জাগে শুধু রক্তের ধারা, ভুলে বিত্ত ভুলে বৈভব

Thursday, June 8, 2017

শ্রম

আট ঘন্টার বস্তুবাদী লড়াইয়ের ময়দানে উর্বরতা নেই ৷

ফুল ও স্বপ্ন ফোটার চেয়ে তাওয়ায় ভেসে ওঠা রুটির পোড়া পিঠের ওপর চোখ যায় বরং

শব্দশ্রমিক অষ্টপ্রহর কলমে কাগজে আকাশ দেখে, আকাশগঙ্গা দেখে

রামধনু আঁকবার জন্যে পেয়ালা ছুঁড়ে মারে শূন্যে
গেরস্তগোলা থেকে সব শস্য পেড়ে এনে
আলপনা দেয় আশ্রমের উঠোনে

আশ্রমবালিকার ঝরনাকথনে বোধিধ্যান ভেঙে
কবিও কলমুখর ব্রহ্মপুত্র দৌড়বিদ

মানস সরোবরের অর্গল খুলে আছড়ে পড়ে স্বচ্ছ শব্দস্ফটিক

নুড়ি কুড়িয়ে নিয়ে শুধু স্মৃতির ঝাঁপি ভরে ওঠে হরেক রঙে

স্বেচ্ছাশ্রম নিপুন হয়ে উঠলে উঠোন ভরে যায় অলৌকিক রঙ্গোলিতে

কবিতা তখন তপোবন ও আশ্রমপ্রতিম ৷

Monday, June 5, 2017

হোলি গান

বেনামী কুটিরের গায়ে আলপনা এঁকে রেখে
বর্ষবিদায়ের পথে আবিরের চালচিত্র--

কতোটা ভালোবাসা রেখে গেলে শান্তি নামে ৷
সকাল সন্ধ্যার আঁটিবাঁধা খুচরো সংসারের তালিকায়,
তালুতে দাদনের স্বরলিপি সুরের জন্যে উসখুস ৷
নেতিয়ে পড়ে মেজাজি মালিকের জবাকুসুম চোখের সামনে,
যার গায়ের জামায় বিগত হোলির আদিম গন্ধ ৷

হোলি তবু আসে ৷ আসে প্রতি সন ৷
তার ঝোলায় থাকে প্রাচীন মেইজাইয়ের উপহার,
বিলোবার পরিবেশ পায় না ৷
অথবা খুঁজে পায় না কোনো পবিত্র সূতিকাঘর ৷