Sunday, February 27, 2022

কোথায় আমার প্রিয়জন, কোথায় আমার নীড়
কেন এই যুদ্ধ  আর কেন অস্ত্রের ভিড় ।
তাক করবি ? মারবি আমায় ? ভয় পাইনা তোদের
হাতিয়ার রাখ, ওরে তোরা, মানুষ মারা বীর ।

বারবার নিঃস্ব করে নক্ষত্রেরা ফিরে ফিরে যায়,
সুরের পাখিরা বসে বুঝি আকাশের জলসায় ।
নিঃস্ব করে জাগছে রোজ শোকের প্রভাত,
অসহায় অপরাহ্নকালে ধরব কার হাত ?

যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা হলেও যুদ্ধটা যুদ্ধই তো বটে,
যে কোনো যুদ্ধই যুদ্ধ যদি প্রাণের বিনাশ ঘটে ।

এখানে শিল্প বলতে উদর বড়ো বালাই
বছর ঘুরে গেলে চরম শোকসংবাদ পাই ।

Friday, February 25, 2022

এসো শান্তি, এসো কল‍্যাণ

এসো শান্তি, এসো কল্যাণ
অশোকানন্দ রায়বর্ধন

আমি এই সৌন্দর্যের প্রতীক্ষায় থাকি ৷ 
আমি এই প্রতিবেশীর প্রতীক্ষায় থাকি
আমি সহমর্মীতার প্রতীক্ষায় থাকি
আমি এই অমলিন প্রিয়বোধের প্রতীক্ষায় থাকি ৷
আমি প্রতীক্ষায় থাকি সুজন স্বজনের
এই মধুর প্রতিযোগিতার জন্যে আমি রাত জেগে পাহারা দিতে প্রস্তুত আছি ৷

দেখো নাগরিক রাজনীতিবিদ আর বুদ্ধিব্রতীরা
কী কান্ডটাই না হচ্ছে দক্ষিণের জনপদে 
তোমরা একপথের পথিক না হলে
গালাগালিতে ভরে দাও 
প্রতিপক্ষের গায়ে থুথু ছিটাবার জন্যে পিচকিরি সাজাও
আর নিজেকে মতাদর্শের শ্রেষ্ঠ সমজদার বলে সমাজমাধ্যমে ঘোষণা দাও ৷

দেখো হে মহানাগরিক, করুণার ভাড়াঘরের অধিবাসী
দখিনা হাওয়া বইছে প্রান্তিক জনপদে
যে হাওয়ায় বিষ নেই ৷ যে হাওয়া স্বচ্ছ ও বিশুদ্ধ ৷ 

তোমাদের ক্রমাগত প্ররোচনায় যখন মানুষ প্রচন্ড বিষাদগ্রস্ত
তখন মৌসুমি হাওয়ায় উড়ছে শান্তির পতাকা
এখানে আশির দাঙ্গার রক্তাক্ত ক্ষত নেই ৷
এই জনপদ বুদ্ধের শরণাগত
 কোকিলও মেতে উঠেছে এই জঙ্গলমহলে বাসন্তী মৌতাতে ৷ 

এই মহল্লার এবারের বসন্তোৎসব হবে প্রীতির উৎসব ৷ হাতে হাত ধরে ৷
দীন আমন্ত্রণ রইল সাক্ষী হবার জন্যে ।

Thursday, February 24, 2022

মায়ালোক হতে ছায়াতরণী

মায়ালোক হতে ছায়াতরণী

বড়ো হাহাকৃত সময় । অস্থির, অবসন্ন, ক্ষীয়মাণ আর  উৎকেন্দ্রিক কাল এখন। চিরঐতিহ্যের শিকড় মূলত্রাণসমেত উৎপাটিত । বিশ্বের উন্মুক্ত আকাশ ঢেকে দিচ্ছে কৃষ্ণবাণিজ্যমাদল । মানুষের চিরায়তচেতনায় দখল নিচ্ছে বাণিজ্যস্বভাব, পণ‍্যকৃষ্টি । মু দ্রাপিপাসু জীবন কাগজের নোটের পিছনে হাওয়ায় ভাসছে দিকচিহ্নহীন । কবির সামনে তাই অনবরত পাল্টে যাচ্ছে দৃশ্যকল্প, চিত্রকল্প । ফলে তাঁর কবিতার অন্তর্প্রকরণ আসছে পরাভাষা । মুদ্রার টংকারের মতো ধাতব নয় এ ভাষা কবির  ভাষা হয়ে যাচ্ছে দূর পাহাড়ের নির্জন নিঃসঙ্গ নির্ঝরের নীরব ধ্বনিনিক্কন । নিরেট সভ‍্যতার জৌলুষকীর্তনের বিপরীতে বাস্তব অথচ বেদনায় আর্ত সত্যসংগীত । কালের কূটবয়নের মধ‍্যেই কবির সামনে মূর্ত কিংবা বিমূর্ত হয় চেতনাতালাশ । 

আত্ম চরাচরের বুকে বেদনার মন্ডল ঘিরে থাকলেও গীতিময় এক আবেশ আজও ব্যাপ্ত বলে প্রত্যাশিত জীবন। কবি তো চারণ । গীতিপ্রাণতার  মধ্য দিয়ে সময়কে চিনে নেন কবি নিজে । এটাকে কালচিহ্ন বলে অভিহিত করে তুলে ধরেন সবার কাছে । গড়ানো জলের মত যে বিসর্পিল গতি সময়ের । তার যে রহস্যময় অগ্রগমন,  তা দেশ ও কালের উপরিতলে পরিদৃশ্যমান নয় । অত্যন্ত গভীর সঞ্চালনশীল প্লেটের মত। যা সমাজকে নিয়ত ধ্বস্ত ও প্রকম্পিত করে  তুলেছে । সময়ের নিভৃত স্পন্দন কবির বোধের রিখটারে ধরা দেয় । কবির কারুকৃষ্টির কৃ্ৎকলা মুর্ত করে এই চিহ্নায়ণের ।  কালের বিস্তীর্ণ ক্ষতদাগ, পথচ‍্যুতি, বিচ্ছিন্নতা, মানবিকতার অবনমন ইত্যাদি কবি ব্যক্ত করেন তার মায়াবাচনে । 

নিস্পৃহা, নির্লিপ্তি অতিক্রম করে কবি তাঁর বয়নকে করে তুলতে চান হৃদয় ও মননের নান্দনিক মেলবন্ধনে সমৃদ্ধ । কবিতাবস্ত্রের জমিনে রচিত মায়াশিল্প, জাদুভাষা । পরাকথা ও পুরাকথা একাকার হয়ে ছায়ানৌকা ভেসে ওঠে জীবনের বুকে । ছায়াময় চিত্র ফুটে ওঠে তাঁর কবিতায় । ফলে তাঁর কবিতাও হয়ে ওঠে অচেনা অথচ অপরিচিত । ভাষা জানা অথচ ভাব অজ্ঞাত । নির্মাণ পরিচিত অথচ নির্মিতি অজানা । ইন্দ্রিয়ানুভূত কল্পে আসে নতুন নতুন ভাষ‍্য । নতুন বিমিশ্রণ । ভেঙে যায়।বাচনিক শৃঙ্খলা । চিন্তা ও চেতনার জগতে দ্বন্দ্ব চলে অহর্নিশ । সময়ের প্রতিগতিতে সময়ের ভাষ্য হতে গিয়ে কবিতা পড়ে দ্বন্দ্বে । কবি পড়েন দোটানায় । তাঁর কবিতায় ঐতিহ্যানুগত‍্য এবং উৎপাতিত বিচ্ছিন্নতা পাশাপাশি এসে পড়ে । কবি প্রকাশিত হযন দ্বন্দ্বে ও বন্ধনে । এড়ানো সম্ভব হয় না ঐতিহ্যের অস্তিত্বকে । ছাড়াবার উপায় নেই সমকালের অনুষঙ্গকে ।

নির্লিপ্তির মধ্যে কবিতা আসেনা । কবির বাইরের পারিপার্শ্বিকের বৈচিত্র‍্যে আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় কোন আলোড়ন নেই । আসলে তা নয় । পার্শ্বপৃথিবীর ছোট্ট বুদবুদ গভীর ভাবের ঘরে সমুদ্রসমান ঢেউ তোলে । তাঁর অন্তর্লোক তোলপাড় করে । কবির দৃষ্টি গভীরে যায় । শব্দকে কবি নিজের মতো সাজান । অন্তরের নিঃশব্দ ঝড়কে শব্দ দিয়ে অবলোকন করেন । শব্দ ব্যবহৃত হয় কবির অভীপ্সায়, অভিপ্রায়ে । নির্মেদ আর নিরাভরণ শব্দই কবিতায় হয় আভরণ । কলমে বিন্যস্ত হয়ে শব্দকুল সাংকেতিক হয়ে ওঠে । চাটুকারচর্চিত সমকালীন জগতে সাংকেতিক ভাষা ।  শব্দ তার গড্ডালিকারেখা অতিক্রম করে এবং চিরায়ত বৃত্তের দিকে অগ্রসর হয় । শূন‍্যতা ও আঁধারঘেরা কালখন্ডে জাগে সংকেতীশব্দখচিত কবিতার আকাশ । ভাসে কবির কবিতার অতলান্তিক রহস্যের কূটইঙ্গিত ।

কবিতা কর্ম এখন চারুখননক্রিয়া । বস্তুর পরিমণ্ডল থেকে পরাবস্তুর দিকে এগিয়ে যাওয়া । সেই পরাবস্তুর পথ অবচেতনলোকে কাল বদলাচ্ছে । বিজ্ঞান এসে বদলে দিচ্ছে কবির নান্দনিক অভিলোকন । যেমন চাঁদ কবির চেতনায় সুদূরের সৌন্দর্য । বিজ্ঞান ভেঙে দিচ্ছে সেই সৌন্দর্য । সত্যকে উদঘাটিত করে সে খুলে ফেলছে চাঁদের সৌন্দর্যসম্ভার । নির্মম হলেও মহাজাগতিক সত‍্যই এখানে প্রকাশিত হচ্ছে । ফলে থমকে যায় কবিতার নন্দনচেতনা । 'আট কুঠুরি নয় দরোজা'র মানবশরীর নিয়ে কবির অবিরাম খেলা । লোকায়তনন্দনে অভিলোকিত হয় এই খাঁচা । আর বিজ্ঞান দেহতাত্ত্বিক নশ্বরতার সত্যকে তোলার পাশাপাশি কাঠামোর বীভৎসতাও প্রকাশ করছে । তাহলে, কবিকে তো নতুন পথ নিতে হবে । নতুন সত্যসন্ধান করতে হবে । চাঁদের বিজ্ঞানবাস্তবতাকে অতিক্রম করে কবিকে যেতে হবে পরাবাস্তবতার পথে । শরীর কাঠামোর বস্তুজগৎ পেরিয়ে যেতে হবে হাড়ের অন্তর্লীন সৌন্দর্য আহরণের খনন তৎপরতায় ‌। হাড়ের তো বয়নশৃঙ্খলা আছে । আরো আরো সত্য আহরণের জন্য কবিতাভিযান অব্যাহত থাকবে কবির চর্চায় ।

সত্য নিয়ে বিজ্ঞানের সঙ্গে দ্বন্দ্বে যাওয়া কবির কাজ নয় । কাজ নয় অস্বীকার করাও । কবি শুধু খনিশ্রমিকের মত চেতন থেকে অবচেতন, বাস্তব থেকে পরাবাস্তব, অভিবাস্তবের খনিপ্রকোষ্ঠে বিচরণ করবেন । কলমগাঁইতিতে তুলে আনবেন সত্যঅতিক্রমী অভিসত‍্যকে । এ কাজে কবির যে জগৎ তৈরি হবে তাই মায়ালোক । এই আলোকিত অন্ধকারে ছায়াডিঙা বেয়ে কবি ভেসে বেড়াবেন । ভাসাবেন নিজেকে । কবি জানবেন নতুন করে 'আমি'কে । স্বীয় ও বিশ্ব সত্তাকে । জানবেন 'তুমি'কে । অনাদি অনন্তকে । এভাবেই কবি প্রতিনিয়ত নবীন হবেন । কবিতাও হবে নিত্যনতুন । কবিকার্যক্রম থেমে থাকবে না । কবিও গতিশীল হবেন । দৃষ্টিতে, নন্দনে । আহরণে ও সৃজনে ।

Monday, February 21, 2022

হরিনারায়ণ সেনগুপ্ত ও আমি

গতকাল শান্তিরবাজারে 'দেবদীপ' সাহিত‍্যপত্রের প্রকাশ অনুষ্ঠান উপলক্ষে সম্পাদক-কবি অনামিকা লস্করের আমন্ত্রণে উপস্থিত ছিলাম পত্রিকার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে । কালিবাজারের পঞ্চায়েত সাংস্কৃতিক মিলনায়তনে অত‍্যন্ত সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও নান্দনিক এই অনুষ্ঠানে এক প্রাণচঞ্চলতার স্ফুরণ ঘটেছিল । একেবারে তারূণ‍্যেরই প্রাধান‍্য লক্ষ করা গেছে পুরোটা অনূষ্ঠানে । মধ‍্যাহ্নভোজন পর্বটিও ছিল বনভোজনের পরিবেশে প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ‍্যে । আমাকে 'দেবদীপ সম্মান-২০২২ এ ভূষিত করে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছেন এই সাহিত‍্যপত্র পরিবার । তাঁদের মূল‍্যায়ন আমি চিরদিন মাথায় তুলে রাখব ।
 সাহিত‍্যপত্র পরিবার এদিন আমার হাত দিয়ে রাজ‍্যের বর্ষিয়ান কবি ও সাহিত‍্যসংগঠক হরিনারায়ণ সেনগুপ্ত মহোদয়কে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করলেন । আজকের প্রজন্ম হয়ত জানেনা হরিনারায়ণদা ষাটের দশক থেকে বিলোনিয়ায় সাহিত‍্যচর্চা ‌করে আসছেন । প্রচারবিমুখ অত‍্যন্ত নীরব সংগঠক দাদা সাতের দশকে নিজের সম্পাদনায় নিয়মিত 'অগ্রণী' সাহিত‍্যপত্র প্রকাশসহ বিলোনিয়ায় আরো বহু সাহিত‍্যপত্রের প্রকাশের ক্ষেত্রে উৎসাহ দিয়ে গেছেন । তাঁর প্রত‍্যক্ষ পরিচর্যায় এই কলমচিসহ বেশ কজন কবি ও গল্পকার পরবর্তীকালে রাজ‍্যের সাহিত‍্যক্ষেত্রে স্থান করে নিয়েছেন । সাতের দশকের প্রথমদিকে বিলোনিয়ার একনম্বর টিলায় সাড়া জাগানো সাহিত‍্য উৎসবের আয়োজন করাসহ বহু সৃজনশীল কাজে তিনি সেসময়ের অনেক তরুণকে উৎসাহিত করেছেন । সাহিত‍্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অনুজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর কোনো কার্পণ‍্য কোনোদিন ছিলনা । হরিনারায়ণদার প্রত‍্যক্ষ লালন না পেলে সাতের দশকের লাজুক কলেজপড়ুয়া ছেলেটা আজকের অশোকানন্দ হয়ে উঠতে পারতনা । আমার জীবনের প্রথম পুরস্কার 'অগ্রণী সাহিত‍্য পুরস্কার' সাতের দশকের মাঝামাঝি সময়ে হরিনারায়ণ দা আমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন । 'দেবদীপ সাহিত‍্য পত্রিকা' সাহিত‍্যের নিভৃত অলিন্দের এই কারিগরকে সম্মান জানিয়ে যথার্থ উত্তরসূরীর দায়িত্ব পালন করলেন । আমিও আমার সাহিত‍্যকর্মের গুরুকে শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পাওয়ায় গর্ববোধ করছি । আমি গতকাল আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলাম দাদাকে মঞ্চে পেয়ে । অগ্রজরা নতুন প্রজন্মের মাথায় হাত রাখলে প্রজন্ম এভাবেই এগিয়ে যায় ।

 আমাদের সবার প্রণাম নেবেন দাদা ।

Monday, February 14, 2022

ভ‍্যালেন্টাইন ডে

ভ‍্যালেন্টাইন ডে

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

রোজ বাগানে গিয়ে টুকিটাকি কাজ করা অলক্তর অভ‍্যেস ‌‌। টবে বসানো নতুন গোলাপ গাছটায় কিছুতেই ফুল টিঁকছেনা । কলি আছে অনেকগুলো ‌‌‌। কেনার সময় নার্সারির ছেলেটা বলেছিল, একদম টকটকে লাল ফুল হবে স‍্যর । আর বড়োও যথেষ্ট । অলক্ত ফুটন্ত ফুলওয়ালা গোলাপচারাই কেনে । নিশ্চিন্ত হওয়ার জন‍্য । নার্সারির সবাই দীর্ঘদিনের পরিচিত । বিশ্বাস করে ঠকল নাতো ! বউ সিঁথিও বলেছে, দেখো, ঠিক ঠকিয়েছে ওরা তোমাকে । জংলি গাছ গছিয়ে দিয়েছ । জংলি হলেও তো ফুল ফোটার কথা । অলক্ত আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করে ।

 সিঁথি...সিঁথি.... দেখে যাও ‌‌। দেখে যাও ।
কি শুরূ করলে সকালবেলা !
আরে এসোনা । দেখে যাওনা ‌‌।
রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসে সিঁথি । চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় করছো যে !
দেখোনা , গোলাপ গাছটায় ফুল ফুটেছে একটা ।
তাই নাকি? দেখি , দেখি ।
 সিঁথি কাছে গিয়ে অবাক চোখে ফুলটা দেখে । একদম টকটকে লাল, গোলাপটা ।
অলক্ত টুপ করলে ছিঁড়ে নেয় গোলাপটা ।
আহ্হা ! ছিঁড়লে কেন ফুলটা ? 
অলক্ত ফুলটা নিয়ে সিঁথির সামনে গিয়ে দাঁড়ায় । আজ অনেকদিন বাদে ফুলটা ফুটেছে গাছটায় ‌। এটা তোমার খোঁপাতেই মানাবে  তাই ।  
ছাই মানাবে । সিঁথি বলে ওঠে । 
আর আজতো ভ‍্যালেন্টাইন ডে । অলক্ত মনে করিয়ে দেয় । তাই ফুটেছে বোধহয় ।
আর বুড়ো বয়সে আদিখ‍্যেতা করতে হবেনা । সিঁথি বলল । অথচ শরীরটা ঝাঁকি দিয়ে পেছন ফিরেই দাঁড়াল ।

একটা মৌমাছি গুণগুণ করে উড়ে এসে বসল ফুলটার ওপর ।

Sunday, February 13, 2022

গাছ

গাছ

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

গাছেরা নিরবতার প্রেমিক-প্রেমিকা সব
হাওয়া না থাকলে গাছেরা গান গায়না ।

পাতাদের যতোরকম উল্লাস আর আন্দোলন
হাওয়ার বেগের সঙ্গে নির্ধারিত তাল ও ছন্দ ।

বিজনজোছনায় যে গাছটি একাকী 
দাঁড়িয়ে থাকে তার সংসার নিয়ে
তারও পাতারা ঝরে যায় আঁধারের মায়ায় ।

হলুদরঙা সন্তানেরা তার পায়ের নিচে গালিচার মতো,
ওদের চিরঘুম ভাঙাবার সাধ জাগে উলঙ্গ গাছের
টপটপ শরীর বেয়ে নামিয়ে দেয় অশ্রুশিশির পাতাদের গায় ।
তারপর আবার ডুবে যায় বনসংসারে।

শরীর নিংড়ে সৃষ্টি করা নতুন নতুন পাতা
একদিন গাছেদেরও বয়স বাড়ে । সৃজন থামে ।

সেদিনআর কোনো কথা হয়না গাছেদের বিছানায়
তারাও মানুষের মতো অন্ধকারে শেষডিঙির যাত্রী ।

Saturday, February 12, 2022

সরস্বতীর স্তনবন্দনা

সরস্বতীর স্তনবন্দনা

জয় জয় দেবী চরাচর সারে
কুচযুগ শোভিত মুক্তাহারে
--শৈশব থেকেই সরস্বতীর প্রণামমন্ত্রে তাঁর অনিন্দ্য স্তনযুগলের বন্দনা পাই ৷প্রথম বয়সে না বুঝে মন্ত্র আওড়ালেও বয়ঃসন্ধির কাল থেকে মন্ত্র উচ্চারণের পাশাপাশি দেবীর পয়োধরযুগলের দিকে অবচেতনে দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় ৷পাশাপাশি প্রথম প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া কিশোরীটির শ্রীঅঙ্গের পরিধিও কল্পনায় চলে আসে ৷ দেবীর এই অঙ্গ বর্ণনার প্রাধান্য প্রাচীন সাহিত্যে যত্র তত্র পাওয়া যায় ৷ ঋগ্বেদে বাক্ কে ধেনুরূপে উপাসনা করার বিধি আছে ৷ গাভীর মতো বাগ্দেবীরও চারটি স্তন কল্পনা করা হয়েছে ৷ স্বাহাকার,স্বধাকার,বষটকার এবং হন্তকার এই চার স্তনের যেটির উপাসনা করা হবে সেরূপ ফল প্রাপ্তি ঘটবে ৷ ঐতরেয় ব্রাহ্মণে সরস্বতীর দুটি স্তন--সত্য ও মিথ্যা ৷ ( বাচো বাব তৌ স্তনৌ সত্যানৃতে) ৷ শুক্ল যজুর্বেদে কবির প্রার্থনা (যস্তে স্তনঃ শশয়ো যো ময়োভুর্য্যো রত্নধা বসুবিদ্যঃ সুদত্রঃ ৷ যেন বিশ্বা পুষ্যসি বার্য্যানি সরস্বতী তামিহ ধাতবে'কঃ) অর্থাৎ তোমার যে স্তন উচ্ছল,যা অনন্দময়, যা দিয়ে পুষ্টকর যতো বরেণ্য সম্পদ, যা নিহিত করে রত্, আর খুঁজে পায় আলো, যা স্বচ্ছন্দে ঢেলে দেয়, হে সরস্বতী ৷ এইখানে তাকে বাড়িয়ে দাও পানের জন্য ৷
ষোড়শ শতাব্দীর ' সারদাতিলকতন্ত্র' গ্রন্থে রঘুনন্দন ভট্টাচার্য দেবীর ধ্যানমন্ত্রে উল্লেখ করেছেন' কুচভরনমিতাঙ্গী' রূপে ৷ এই বর্ণনায়  দেবীর উত্তমাঙ্গ স্তনের ভারে ঈষৎ নত হয়ে পড়েছে ৷ কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ সংকলিত 'তন্ত্রসার' গ্রন্থে সরস্বতী 'তুঙ্গস্তনী', কুচভারক্লান্তা, পীনোত্তুঙ্গবক্ষোরুহ ভরবিলসন্মধ্যদেশামধীশাম', 'প্রপঞ্চসার' গ্রন্থে দেবীকে প্রণাম জানিয়েছেন কবি 'স্তনজঘনভারাং ভারতীং নমামি বলে ৷ শিবপুরাণে সেই দেবীর পরিচয় 'পীনোন্নত পয়োধরাম্' বলে ৷ পরবর্তীকালের কবিদের মধ্যেও এই ধারাটি লক্ষ করা যায় ৷ এর প্রভাব পর্বতগাত্রে খোদিত প্রাচীন মূর্তিশিল্পেও পড়েছিল ৷

Tuesday, February 8, 2022

বাংলাভাষায় দ্রাবিড় শব্দের প্রভাব

বাংলাভাষায় দ্রাবিড় শব্দের প্রভাব


 কর্জ্যেণিটক র সরকারী ভাষা কন্নড় ৷ বাংলা ভাষার শব্দভান্ডারে প্রচুর কন্নড় শব্দ রয়েছে ৷ সে বিষয়ে যাবার আগে একটু পেছন ফিরে তাকাতে হবে ৷ ভারতবর্ষ বহু জাতিগোষ্ঠীর বাস ৷ তাদের ভাষা- সংষ্কৃতিতেও বিভিন্নতা রয়েছে ৷ ভারতের জাতিগোষ্ঠীর প্রধান দুটি ভাগ ৷ ইন্দো-আর্য ও দ্রাবিড় ৷আর্য জাতি উত্তর ভারতে দ্রাবিড়রা দক্ষিণ ভারতে বসবাস করেন ৷ এই দ্রাবিড়রা ভারতের প্রাচীনতম অধিবাসী ৷ খ্রি. পূ.2500 শতকে এই জাতি সিন্ধু নদের উপত্যকায় এক উন্নত সভ্যতা গড়ে তুলেছিলেন ৷ আর্যরা ভারতবর্ষে পা রাখার আগে সমগ্র ভারত উপমহাদেশে দ্রাবিড়দের বসতি ছিল ৷ পরবর্তীকালে আর্যদের দ্বারা বিতাড়িত হয়ে দ্রাবিড়গণ ক্রমশ দক্ষিণে সরে যান ৷ দ্রাবিড় জাতির ভাষার নামও দ্রাবিড় ৷ দক্ষিণ ভারতে দ্রাবিড় গোত্রের প্রধান চারটি ভাষা হলো - কন্নড়, মালয়ালি, তামিল ও তেলেগু ৷
বাংলায় একসময় এই দ্রাবিড় জাতিরও বাস ছিলো ৷ বাংলার প্রাচীন অধিবাসীরা হলো অস্ট্রিকভাষী আদি-অস্ট্রোলিয়রা ৷ এরা এবং তাদের সমসাময়িক মঙ্গোলয়েড গোত্রের কিরাতরাও ছিল সে সময় ৷ আর্যরা তাদের সাহিত্যে এই দুই জাতিকে হীনার্থে নিষাদ নামে পরিচিত করে ৷ অস্ট্রিক ও কিরাতদের পরে বাংল দেশে আসেন দ্রাবিড়রা ৷ প্রাচীন বাংলায় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মিশ্রণে যে সংকর জাতির সৃষ্টি হয়েছিলো তারাই বাঙালি ৷ বালার ভাষা-সংষ্কৃতি-ধর্মে দ্রাবিড় জনগোষ্ঠীর গভীর প্রভাব রয়েছে ৷
বাংলাভাষায় অস্ট্রিক শব্দের পাশাপাশি অনেক দ্রাবিড় শব্দও বাংলা শব্দভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে ৷একসময়ে সারা উপমহাদেশে দ্রাবিড় জনগোষ্ঠীর প্রাধান্যের ফলেই বাংলা ভাষায় দ্রাবিড় শব্দের প্রবেশ ঘটে ৷দ্রাবিড় ভাষার কাল (সময়) ,কলা, পুষ্প, মুকুল, পূজা, গণ, কোণ, নীল, ফল, উলু, অটবী, আড়ম্বর, তন্ডুল, কুন্ড, খড়্গ, দন্ড, বিল, ময়ূর, কাক কাজল, কোদাল, বালা, পল্লী, বেল, তাল, চুম্বন, কুটির, খাট, ঘুণ, কুটুম্ব, ডালিম্ব, নীল, মীন ইত্যাদি ৷ বাংলার বগুড়া, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি ইত্যাদি ড়া, গুড়ি-যুক্ত স্থাননামে দ্রাবিড় প্রভাব রয়েছে ৷ এছাড়া উর, পুর, খিল তালক, পাঠক এগুলোও দ্রাবিড় শব্দ প্রভাবিত ৷ বাংলা ব্যাকরণের অনেক নিয়ম দ্রাবিড় ভাষাতত্ত্বের ভিতের উপর গড়ে উঠেছে ৷
ধর্মীয় ক্ষেত্রেও বাংলার উপরে দ্রাবিড় প্রভাব অত্যন্ত গভীরভাবে রয়েছে ৷ বাংলার দেবাদিদেব মহাদেব তো দ্রাবিড় পশুপতিনাথ শিব ৷ আর শৈবসাধনা হলো যোগসাধনা ৷ দ্রাবিড়দের এই সাধনপদ্ধতি বাংলার আধ্যাত্মিক জীবনের গভীরে প্রোথিত ৷ এভাবেই দ্রাবিড় অনার্য দেবদেবীদের মধ্যে চান্ডী(চন্ডী), মঞ্চাম্মা (মনসা) প্রভৃতি এবং উমা, বিষ্ণু, জগন্নাথ,বাসুদেব, শক্তি, শীতলা, বৃক্ষপূজা, যগলমূর্তি পূজার প্রচলন এসেছে ৷
দ্রাবিড়রা নগরজীবনের পাশাপাশি কৃষিজীবনেও পারদর্শী ছিলেন ৷ সংষ্কৃত ব্রীহি ও তন্ডুল অর্থে ধান্য বোঝায় ৷ এদুটিই দ্রাবিড় ভাষা ৷ এতেই নিশ্চিত হওয়া যায় যে দ্রাবিড়রা প্রাচীন ধান চাষও করতেন ৷ এককথায় দ্রাবিড়রা বহুভাবেই প্রাচীন বাংলার জনজীবনকে সমৃদ্ধ করেছিলেন ৷

পিলসুজ

# পিলসুজ #

অশোকানন্দ রায়বর্ধন
--------------------------------
মৃৎপাত্র বেছে নেবার আগে তুলে দেবো সমস্ত প্রুফশিট
গোধূলির ওপারে দাঁড়িয়ে দিগন্তের ভেলাকে ইশারা করবো এবার নিঃস্বতম একান্তে
দান তো কিছু করিনি আজীবন তবু ঝোলা উপছে
কেন পড়ে মহার্ঘ মাধুকরী মাড়িয়ে যাওয়া পথের ধূসরতায়
সূর্যাস্তের সাথে সাথে যে প্রদীপ জ্বলে ওঠে আকাশে ও ভূমিতে
তাকেই বড়ো বেশি নিজের মনে হয়,  তার কাছে গেলেই যেন সুখ 

 আমি আভোরসন্ধ্যা প্রতীক্ষায় আছি কখন বুকে নেবে
নীরব সেই সাঁঝবাতির ঘোমটাটি তার পিলসুজের ছায়ায় ৷

Sunday, February 6, 2022

সহস্র বরষার উন্মাদনার মন্ত্র

সহস্র বরষার উন্মাদনার মন্ত্র

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

মানবিকতা হল মানুষের আচরণের এক সুন্দর প্রকাশ যা মানব কল্যাণের উদ্দেশ্যকে সমৃদ্ধ করে । মনুষ্যসৃষ্ট সমাজ কাঠামোর কারণে এবং প্রকৃতিসৃষ্ট কারণে সমাজে বৃহৎ একশ্রেণির মানুষ দুস্থ ও অসহায় হয়ে পড়েন । সেই অসহায় মানুষজনের বেদনাদায়ক আর্তিতে বিচলিত হন কিছু মানুষ । কিছু মানুষ সুযোগ নেন মানুষের অসহায়তার । নিপীড়িত, লাঞ্ছিত, বঞ্চিত, ক্ষুধা-দারিদ্র্য, রোগ-ব‍্যাধি আর বাস্তুহারা মানুষ অসহায় চোখে চেয়ে থাকে সমাজের দিকে । সামান্য সহায়তার জন্যে । পাশে দাঁড়ানোর জন্যে । তাদের অসহায়তার উৎস তারা চেনে না । আর চিনলেও তারা তাকে চিহ্নিত করে না বা প্রতিবাদ করেনা । অদৃষ্ট নামের এক কাল্পনিক চাঁদমারিকে দোষারোপ করে । তাদের দুঃখদৈন‍্যবর্ষিত অন্ধকারে সামান্য সাহায্য নিয়ে কেউ পাশে দাঁড়ালে তাকে তারা দেবদূত মনে করে । তখন এই দুখি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নামই মানবিকতা । সম্মিলিত মানবিকতা একটি দর্শন । একটি বিশ্ববীক্ষা । মানুষের অভিজ্ঞতা বলে, মানব প্রকৃতির দুটি দিক আছে । একটি আত্মকেন্দ্রিক । যার নাম স্বার্থসিদ্ধি । আর অপরটি নৈতিকতার দিক । যার নাম মানবিকতা ।

 মানবসমাজে একেকটা সময় আসে যে সময়টাকে বলে যুগসন্ধিক্ষণ । যে সময়ে একদিকে চলে মানবিকতার অবমূল্যায়ন । আর্ত মানুষের হাহাকার আর কান্নায় ভরে যায় বিশ্বজনপদ । বিশেষ কোনো রাষ্ট্রনৈতিক কিংবা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কখনো কখনো মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে । এই ব্যাপক অসহায়তার সুযোগে একশ্রেণির মানুষ প্রসারিত করে তার লোভের  থাবা । অর্থবিত্ত আর প্রতাপের দম্ভে সুযোগ-সন্ধানী মানুষেরা নিজের স্বার্থে ভূলুণ্ঠিত করে মানবাত্মা । এই মানুষগুলোর লোভের কাছে, অর্থগৃধ্নুতার কাছে শোষিত ও নিঃশেষিত হতে থাকে আর্ত মানুষ । বিচারবুদ্ধি লোপ পাওয়া মানুষগুলো নির্মম হয়ে ওঠে এই সময়ে । যুগে যুগে মনীষীগণ মানবপ্রেমের বার্তা নিয়ে গেলেও একদল স্বার্থমগ্ন মানুষের কানে পৌঁছায় না সে বাণী। আর একদল মানুষ এই দুঃসময়ে নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকে অবহেলা করে এগিয়ে আসে মানুষের পাশে । আর্তের সেবায় । পরের জন্য  জীবন-মৃত‍্যুর ব‍্যাবধান ঠেলে সরিয়ে নিজেকে উৎসর্গ করে । তাদের কাছে জীবন আসে মানবিকতার রূপে । মানুষের কল্যাণ, সমাজের কল্যাণে তারা খুঁজে পায় জীবনের মহামন্ত্র । এভাবেই অন্ধ তিমির ভেদ করে আসে নতুন ভোর । নিরাশার বিপরীতে আশার প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করা এক নতুন সমাজ ।

আজকের সময়েও বিশ্বব‍্যাপী চলছে এক মহাসংকট । হারিয়ে যেতে বসেছে মানুষের বিচারবুদ্ধি, মূল‍্যবোধ । এই সময় চলেছে এক অনিশ্চিত হননের পথে । কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে জীবনের নন্দন । প্রত্যয়ের অন্বেষা । মূল্যবোধ ও ঐকান্তিক বিষয়গুলো যেন মহার্ঘ হয়ে পড়ছে । চেতনার প্রকোষ্ঠে বাসা বাঁধে সংকীর্ণতা, লোভ আর নাশকতা । আত্মকেন্দ্রিক সুখ আর ভোগের উল্লাস প্রকট সর্বত্র । মননের সন্ন‍্যাস নেই । অল্পসুখের শান্তি নেই । বাহ্যিক চাকচিক‍্যের প্রতিযোগিতা প্রতিনিয়ত । বিচ্ছুরণ নেই জীবন দর্শনের । অস্বচ্ছতায় আচ্ছন্ন জীবনবোধের গৈরিক বৈরাগ্য । কোথায় সুশৃংখল আত্মনিয়ন্ত্রণ ! কোথায় বিবেকের উজ্জ্বল আলোক ! ক্রমশ বেড়ে চলেছে নেতির মিছিল । চারিদিকে আলোহীন আশাহীনতার দরুন যন্ত্রণার আর্তনাদ । হতাশায় কুঁকড়ে যাওয়া মানবাত্মা, প্রান্তিক মানুষের উপর নির্যাতন, লোভের আঘাত, পারস্পরিক বিশ্বাসহীনতার বাতাবরণ, পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও ভাঙন, মারণ রোগ, দারিদ্র, ক্ষুধা, ক্ষমতার দম্ভ, শক্তির আস্ফালন,সহিষ্ণুতার অভাব, সন্ত্রাসবাদ, অতিমারীর ঢেউয়ের পরে ঢেউ, ধ্বংসাত্মক প্রবৃত্তি, আত্মহননের প্রবণতা সমস্ত বিশ্বকে আজ অন্ধকার পথে তাড়িয়ে নিয়ে চলেছে ।

এক অতিমারীর কবলে আজ বিশ্রস্ত গোটা বিশ্ব । গত দু'বছর যাবৎ পৃথিবী  করোনা নামক এক মারণ ভাইরাসের আক্রমণে জবুথবু । জীবন বিপর্যস্ত । সভ্যতা দাঁড়িয়েছে হুমকির মুখে ‌।  এই মারণ ভাইরাসের আক্রমণে বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ আজ ত্রস্ত । সংশয়াপন্ন । এও এক ক্রান্তিকাল । সেই চিরাচরিত চিত্রটি আজও আবার প্রকট হয়ে উঠেছে । চারিদিকে আর্তরব । ত্রাসে, সংশয়ে, কর্মহীনতায়, প্রবাসে, রোগপ্রকোপে, চিকিৎসার অভাবে । সমাজবিচ্ছিন্ন অবস্থায় । এই দোলাচলে  স্বার্থান্বেষী মানুষ জেগে উঠেছে আবার আত্মমগ্নতায় । মানবতার লাঞ্ছনায় । দুর্দশাগ্রস্ত মানুষ চেয়ে থাকে কবে যে 'সম্ভমামি যুগে যুগে' বাস্তবতা লাভ করে ।  কবে জানি 'ঐ মহামানব আসে' । শুনে আসা মানবিকতার পুরাকথা কবে প্রাণ পাবে করোনজর্জর পৃথিবীতে। হ‍্যাঁ । তুমুল অসহায়তার এই অথৈ পারাবারে সত‍্যিই দেখা গেছে মানবিক মুখ । কী এক অনুপ্রেরণায় মহল্লায় মহল্লায় তরুণ প্রজন্মের মানবিক মুখ ছুটে গেছে আর্তের পাশে । আক্রান্তকে পৌঁছে দিয়েছে নির্ধারিত চিকিৎসালয়ে । যোগাড় করেছে জীবনদায়ী ঔষধ, রক্ত । রাতবিরেতে ছুটে গেছে অক্সিজেনের সিলিন্ডার কাঁধে বয়ে । নিভৃতবাসে যারা রয়েছে সেই উপার্জনহীন মানুষগুলোর কাছে পৌঁছে দিয়েছে নিত‍্যপ্রয়োজনীয় খাদ‍্যপণ‍্য ও ঔষধ । প্রতিবেশীর অসম্মানজনক ব‍্যবহার ও বেদনাজনক আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে জুগিয়েছে 
সাহস । মৃত‍্যুর নিশ্চিত সম্ভাবনা জেনেও চিকিৎসক ও স্বাস্থ‍্যকর্মীরা নিঃস্বার্থে দিয়ে গেছে সেবা । চোখের সামনে সতীর্থকে আক্রান্ত হতে দেখেছে । চিরতরে হারিয়েও গেছে কতজন । তবুও থেমে থাকেনি তারা । সেবা আর মানবিকতায় জীবন-মৃত্যুর পার্থক‍্যকে ঘুচিয়ে দিয়েছে তারা । করোনাকাল আবার মনে করিয়ে দিয়েছে মানবিকতার বার্তা । শুনিয়েছে মানবতার মুখ । মূল‍্যবোধের অবলুপ্তির আশংকায় কৃষ্ণগহ্বরের অতলে ডুবে গিয়েছিল মানবিকতার লক্ষ্মীপ্রতিমা । করোনামারীর ধ্বংসাত্মক রূপ মানুষকে প্ররোচিত করেছে মানবিকতার সন্ধান করতে । মানুষের সম্মিলিত বিবেকের সমুদ্রমন্থনেই উঠে এসেছে কমলাসনা মানবিকতা । অগণিত মৃত‍্যুর পরিসংখ‍্যানের অন্ধকারের বিপরীতে মানবিকতা উজ্জ্বল মুখ এই সময়ের প্রতিটি মানুষ তা চাক্ষুস করেছেন ‌। দেখছেন 'অসংখ‍্য মানুষের হাহাকার' নিবৃত্ত করে আবার জীবন জাগছে 'আলোয় আলোয়' ।

Saturday, February 5, 2022

বুকিং, প্রি-বুকিং, ফ্রি-বুকিং

দূরদেশে ভ্রমণকালে যানবাহন, থাকার ব্যবস্থা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সংরক্ষণ বা আগাম টিকিট কেনার কাজকে ইংরেজিতে 'বুকিং' বলে । এই পদ্ধতিতে নগদ অর্থ প্রদানের মাধ্যমে অথবা বিনি পয়সায় শুধুমাত্র যোগাযোগের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংরক্ষণও করা যায় । সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নীতি অনুযায়ী তা ফ্রি হবে না নগদ হবে তার তারতম্য ঘটে । এই পদ্ধতি হল 'বুকিং' অর্থাৎ 'আগাম সংরক্ষণ' । 'প্রি-বুকিং' বলে কিছু হয়না ।  ব‍্যবসায়ীগণ কোনো পণ‍্য উৎপাদনের পূর্বে 'বুকিং' করে নিশ্চিত হয়ে নেন তাঁর উৎপাদিত পণ‍্যের বাজার কতটা আছে এবং কতটা তিনি উৎপাদন করবেন । আর দ্বিতীয় ব‍্যবসায়িক বিষয় হলো উৎপাদক নিজের পুঁজি ব‍্যবহার না করে অথবা কম পুঁজি ব‍্যবহার করে এবং ব‍্যবসায়িক ঝুঁকি সম্পর্কে আগাম নিশ্চিত হয়ে পণ‍্যটি বাজারে তুলবেন । কম পুঁজিতে বা বিনা পুঁজিতে লাভের এটা একটা ব‍্যবসায়িক কৌশল । বাণিজ্য বিভাগের স্নাতক স্তর পর্যন্ত সামান্য পড়াশোনার মাধ্যমে এটুকু জেনেছি । বয়স হয়েছে তো ভুল হতে পারে ।