Wednesday, January 24, 2018

দক্ষিণ ত্রিপুরার লিটল ম্যাগাজিন চর্চার ইতিহাস



  লিটল  ম্যাগাজিন আধুনিক সময়কালের সাহিত্য আন্দোলনের এক তেজস্বী ধারা ৷ এর উৎস নিহিত রয়েছে বাংলা সাময়িকপত্রের প্রবহমান ইতিহাসের বুকে ৷ সে কারণে বাংলা সাময়িকপত্রের ইতিহাসকে বাদ দিয়ে বাংলা লিটল ম্যাগাজিনের ইতিহাস রচনার প্রয়াস অসম্পূর্ণ থেকে যায় ৷ সে হিসেবে ' দিগদর্শন' কে পর্থম বাংলা সাময়িকপতের হিসেবে ধরে নেওয়া যায় ৷ শ্রীরামপুর মিশনের উদ্যোগে শ্রীরামপুর থেকে 1818 সালের এপ্রিল মাসে প্রথম এই সাময়িকপত্রটি প্রকাশিত হয়েছিল ৷ এর সম্পাদক ছিলেন জন ক্লার্ক মার্শম্যান ৷ চার পৃষ্ঠার এই সাময়িকপত্রটি বাংলা- ইংরেজি দ্বিভাষিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশ পেয়েছিল ৷ বাঙালি সম্পাদক কর্তৃক প্রথম প্রকাশিত সংবাদপত্র হল ' বেঙ্গল গেজেট' ৷ এটি প্রকাশিত হয় 1225 বঙ্গাব্দ ৷1818 সালের মে মাসে শ্রীরামপুর মিশনারিদের দ্বারা প্রকাশিত প্রথম বাংলা সাপ্তাহিক ' সমাচার দর্পণের প্রায় সমসাময়িক  সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসেবে বেঙ্গল গেজেট প্রকাশিত হয় ৷ সম্পাদক ছিলেন গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য ৷ এখন পর্যন্ত  বেঙ্গল গেজেট এর কোনো সংখ্যা পাওয়া যায় নি ৷ ফলে এটির সঠিক প্রকাশকাল জানাযায় না ৷ 14 মে1818 প্রকাশিত বেঙ্গল গেজেট- এর একটি বিজ্ঞাপন থেকে জানা যায় যে এই সাপ্তাহিকটি ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে ৷ প্রথম প্রকাশিত এই পত্রিকাট সম্ভবত এক বৎসরকাল স্থায়ী হয়েছিল ৷ শ্রারামপুর মিশন থেকে প্রকাশিত জন ক্লার্ক মার্শম্যান সম্পাদিত বাংলাভাষার প্রথম সাপ্তাহিক সংবাদপত্র হল ' সমাচার দর্পণ' ( 1818-1852) ৷
ব্যতিক্রমী চিন্তাধারার সাহিত্য আন্দোলনকে মুদ্রিত আকারে রূপ দেওয়ার লক্ষে সৃষ্টি হয়েছে লিটল ম্যাগাজিন ভাবনা ৷ উনিশ শতকের প্রথমার্ধ থেকে ইউরোপ- আমেরিকায় লিটল ম্যাগাজিনের সূত্রপাত ঘটে ৷ Ralph Waldo Emarson  ও Margaret Fuller সম্পাদিত The Dial ( Boston,1840-1844)  এর মাধ্যমে ৷ Emarson এর নব্য দর্শন Transendentalism- এর যাঁরা অনুসারী তাঁরাই Dial ম্যাগাজিনে লিখতেন ৷ লিটল ম্যাগাজিনের প্রথম দিকের আর একটি পত্রিকা ছিল ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত 'Savoy' ৷  ভিক্টোরিয়ান পুঁজিবাদী ব্যবস্থা বিরুদ্ধে সোচ্চার উদারপন্থী ও সাম্যবাদী লেখকদের প্রধান মাধ্যম ছিল লিটল ম্যাগাজিন ৷ সাহিত্যক্ষেত্রে বিশ শতকের শুরুর দিকের সবচাইতে মূল্যবান লিটল ম্যাগাজিন ছিল Poetry:  A Magazine Of Verse (  Chicago-1912) ৷ এই পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন হেরিয়েট মুনরো এবং এজরা পাউন্ড ৷ 
পশ্চিমা ধারায় বাংলাদেশে প্রথম লিটল ম্যাগাজিনের স্রষ্টা প্রমথ চৌধুরী ৷ তাঁ সম্পাদিত ' সবুজপত্র' ( 1914)  - কে  বাংলা আধুনিক লিটল ম্যাগাজিনের প্রথম ফলক হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ৷ অবশ্য এ  নিয়ে দ্বিমতও রয়েছে ৷ অনেক সাহিত্য আলোচক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ' বঙ্গদর্শন' 1872) - কে বাংলাভাষার প্রথম লিটল ম্যাগাজিন হিসেবে দাবি করেন ৷ পরবর্তীকালে কল্লোল ( 1923) , শনিবারের চিঠি ( 1924) , কালিকলম ( 1927) , প্রগতি ( 1927) , পূর্বাশা ( 1932)  এবং কবিতা ( 1935)  ইত্যাদি লিটল ম্যাগাজিন প্রবাহে গতিসঞ্চার করে ৷
উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ত্রিপুরা থেকে ' ত্রিপুরা জ্ঞান প্রসারিণী' নামে একটি মাসিক সাময়িকপত্র প্রকাশিত হয় ৷ তবে এই পত্রিকাসহ পরবর্তী সময়ের বেশ কিছুটা কাল পত্রিকা প্রকাশের পিছনে রাজন্য পৃষ্ঠপোষকতা ছিল ৷ এমনি করেই মহারাজা বীরচন্দ্র মাণিক্যের আমলে রাধারমণ ঘোষের সম্পাদনায় ' বার্ষিকী' ( 1876)  নামে একটি সাহিত্যপত্র প্রকাশিত হয় ৷ মহারাজা রাধাকিশোর মাণিক্যের আমলে  হাতে লেখা ' পঞ্চপন্ডিত' নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয় ৷ তারপর মহারাজকুমার মহেন্দ্রচন্দ্র দেববর্মার সম্পাদনায় ' ধূমকেতু' ( 1903) , সুরেন্দ্র দেববর্মা সম্পাদিত ' বঙ্গভাষা' 1903) , চন্দ্রোদয় বিদ্যাবিনোদের সম্পাদনায় 'অরুণ' ( 1905) ,  ভূপেন্দ্রচন্দ্র সেন সম্পাদিত ' সাধনা' ( 1912)  ভারতচন্দ্র দেববর্মা সম্পাদিত ' শিক্ষণ' ( 1912)  ইত্যাদি সাময়িকপত্র প্রকাশিত হয় ৷ 1924 সালে মহারাজকুমার নরেন্দ্রকিশোর দেববর্মণ সম্পাদিত ' রবি' পত্রিকা সেকালের বাঙালি বিদগ্ধ পাঠকসমাজে বেশ আগ্রহের সঙ্গে স্থান করে নিতে পেরেছিল ৷ দেশের স্বাধীনতাকালে ত্রিপুরা স্বাধীন রাজ্য ছিল ৷ এই সময়ে বেশ কয়েকটি সাময়িকপত্র ত্রিপুরা থেকে প্রকাশিত হয়েছিল ৷ পরবর্তী সময়ে অসংখ্য সাময়িকপত্র ও লিটল ম্যাগাজিন ত্রিপুরার সাহিত্যকে পুষ্ট করে আসছে ৷ ত্রিপুরা রাজ্যের ভারতভুক্তির পরবর্তী সময় থেকে আজ পর্যন্ত গান্ধার, জোনাকি, নান্দীমুখ, সৈকত, অগ্রণী,গ্রুপ সেঞ্চুরি, বাংলা কবিতা, ভাষা সাহিত্য, জলজ, স্রোত ইত্যাদি প্রতিনিধিস্থানীয় লিটল ম্যাগাজিনগুলো সময়ে আন্দোলন সৃষ্টি করে চলেছে ৷
' জাতস্য হি ধ্রুবো মৃত্যুঃ
' বলে একটা চিরন্তন প্রবাদ রয়েছে ৷ লিটল ম্যাগাজিনের ক্ষেত্রেও যেন এ কথাটি অক্ষরে অক্ষরে সত্য ৷ চরিত্রের দিক দিয়ে সে যতোটা দৃঢ় হোক না কেন, আয়ুষ্কালের ক্ষেত্রে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই ৷ দক্ষিণ ত্রিপুরা থেকে প্রকাশিত ল্টল ম্যাগাজিনগুলোর ভবিষ্যৎও একই খাতে প্রবাহিত ৷ কোনোটা আতুড়ঘরেই কালের গর্ভে চলে গেছে ৷ আবার কোনোটা হাঁটি হাঁটি পা পা করে কিছুটা পথ হয়তো এগিয়েছে ৷ আবার সাম্প্রতিককালের: কোনোটা কিছুটা কোমর সোজা করে এগিয়ে চলেছে ৷ বিলোনিয়া,  সাব্রুম ও শান্তিরবাজার এই তিনটি মহকুমা নিয়ে দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলা হিসেবে নবীন হলেও জনপদ হিসেবে যথেষ্ট প্রাচীন ৷ এর মধ্যে বিলোনিয়ার রাজন্য সম্পৃক্ততার একটা ইতিহাসও রয়েছে ৷ অনান্য মহকুমাগুলোর চেয়ে এই মহকুমার বয়স কিছু বেশি ৷ ফলে শিক্ষা- সংস্কৃতি ও সাহিত্যচর্চার পরিমন্ডলটি এই মহকুমার কিছুটা বেশি ৷ সাহিত্যচর্চার আতুড়ঘর এবং মননচর্চার প্রাথমিক প্ল্যাটফরম  হিসেবে এই জেলার বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহের দেওয়ালপত্রিকা এবং মুখপত্রসমূহ অলক্ষ্যের কারিগর ৷ এই জেলার বিদ্যালয়গুলোর দেওয়ালপত্রিকার এবং মুখপত্রের একটা সমৃদ্ধ ইতিহাসও রয়েছে ৷  বিলোনিয়া সেক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়েই রয়েছে ৷ বৃহত্তর পরিসরে সাহিত্যচর্চার বিশেষ মাধ্যম হল লিটল ম্যাগাজিন ৷ লিটল ম্যাগাজিনের মাধ্যমে সাহিত্যচর্চার হাতেখড়ি দিয়েই বিলোনিয়ার প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হরিভূষণ পাল, হরিনারায়ণ সেনগুপ্ত, রাখাল মজুমদার, দেবাশিস চক্রবর্তী, দিবাকর দেবনাথ, মাধুরী লোধ প্রমুখ,সাব্রুমের ড. রঞ্জিত দে, কৃষ্ণধন নাথ, ড.ননীগোপালড
চক্রবর্তী, অশোকানন্দ রায়বর্ধন, তরুণতম কল্যাণব্রত বসাক ও সঞ্জীব দে প্রমুখ, শান্তিরবাজারের অমর মিত্র, তরুণদের মধ্যে  অভীককুমার দে ও অমরকান্তি সূত্রধর প্রমুখ রাজ্যের পরিমন্ডলে  পরিচিত হয়ে উঠে এসেছেন ৷ যেহেতু বিলোনিয়া মহকুমার বিলোনিয়া শহর দক্ষিণ ত্রিপুরা তথা রাজ্যেরও প্রাচীন শহরের মধ্যে একটি  সে কারণে জেলার মধ্যে এখানে লিটল ম্যাগাজিন চর্চার সূত্রপাত ঘটেছিল ৷ উল্লেখ্য যে বিলোনিয়া শহরে একসময় ছাপাখানা ছিল না ৷ ফলে শুরুর দিকে দীর্ঘদিন এখানে হাতে লেখা লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশিত হত ৷ হাতে লেখা হলেও এই সংখ্যাগুলোতে বেশ যত্নের ছাপ পরিলক্ষিত হত ৷ এই পত্রিকাগুলো শুধু গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা অন্যান্য রচনায় সমৃদ্ধ ছিল না ৷ দৃষ্টিনন্দন অলঙ্করণ ও ইলাস্ট্রেশনও এগুলোকে অন্যমাত্রায় প্রতিষ্ঠিত করত ৷ দেশবিখ্যাত ভাস্কর শিবপ্রসাদ চৌধুরী বিলোনিয়ার সন্তান ৷ তাঁর শিল্পকর্মের হাতেখড়ি এইসব ম্যাগাজিনে প্রচ্ছদ সহ অভ্যন্তরীণ অলঙ্করণের মাধ্যমে ৷ প্রতিটি সংখ্যার দু-তিনটে কপি করে যথাক্রমে বিলোনিয়া জনগ্রন্থাগার, তথ্যকেন্দ্র ও কোনো কোনো সময় বিলোনিয়া কলেজের লাইব্রেরির রিডিং রুমে রাখা হত ৷ ফলে এইসব লিটল ম্যাগাজিনের পাঠকরা অধিকাংশই ছিলেন স্থানীয় ৷ কর্মসূত্রে কোনো অগ্রহী পাঠক বিলোনিয়ায়  অবস্থান করার সুবাদে তাঁরাও পড়তে পারতেন  এইসব ম্যাগাজিন ৷  কোনো কোনো ম্যাগাজিনের শেষের দিকে পাঠকের মতামত প্রকাশের জন্যে কিছু সাদা পৃষ্ঠা জুড়ে দেওয়া হত ৷ পাঠকগণ সেখানে মতামতও প্রকাশ করতেন ৷


বিলোনিয়া থেকে প্রকাশিত লিটল ম্যাগাজিনের প্রাচীনতার সন্ধান করতে গিয়ে জানা যায় যে, কবি দুলাল ভৌমিক ও রাজ্যের বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক হরিভূষণ পাল তাঁদের দুটি নিবন্ধে জানিয়েছেন যে, বিলোনিয়ার প্রথম লিটল ম্যাগাজিন হল ' অভিযান ' ৷ প্রকাশকাল-1945 ৷ শ্রীদুলাল ভৌমিকের মতে তখন সম্পাদক ছিলেন গগন চক্রবর্তী ৷ হরিভূষণ পালের মতে মাণিক গাঙ্গুলি ও জগদীশ বসু ৷ প্রথম প্রকাশিত লিটলম্যাগাজিন হিসেবে এই পত্রিকার পক্ষে প্রাগুক্ত দুইজনের মতকেই সমর্থন করেন বিলোনিয়ার বিশিষ্ট কবি ও সংগঠক হরিনারায়ণ সেনগুপ্ত ৷ অবশ্য এর প্রকাশকাল হিসেবে 1943-44 বলে তিনি এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন ৷ সম্ভবত এই পত্রিকার প্রথম দিকে এই দুইজন সম্পাদক ছিলেন ৷ পরবর্তী বৎসরে হয়তো সম্পাদক ছিলেন গগন চক্রবর্তী ৷ মোদ্দা কথা বিলোনিয়ার প্রাচীনতম লিটল ম্যাগাজিন হিসেবে বিদগ্ধ মহলের কাছে ' অভিযান ' ই চিহ্নিত হয়ে আসছে ৷ এই ম্যাগাজিনটি কয়টি সংখ্যা প্রকাশ করেছিল সে বিষয়ে কিছু জানা যায় না ৷ 
   এরপর যতোটুকু জানা যায়, দীপক দে-র সম্পাদনায় ' শ্বেতপত্র ' প্রকাশিত হয় 1962 সালে ৷ এই শ্বেতপত্রকে প্রয়াত হরিভূষণ পাল বিলোনিয়ার সাহিত্যপত্র বলে স্বীকৃতি দিতে চান নি ৷ কারণ দীপক দে তখন কোলকাতায় থাকতেন ৷ম্যাগাজিনটিও সেখান থেকে প্রকাশিত হয় ৷ শুধুমাত্র্ প্রাপ্তিস্থান হিসেবে বিলোনিয়ার নামোল্লেখ ছিল ৷ দুলাল ভৌমিক অবশ্য এটিকে বিলোনিয়ার দ্বিতীয় সাহিত্যপত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন ৷ বিগত শতাব্দীর ছয়ের দশকেই বিলোনিয়ার সুরবিতান থেকে সত্যেন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের সম্পাদনায় ' অশ্লীলপত্র ' নামে হাতে লেখা  একটি সাহিত্য পত্র প্রকাশ করা হয়েছিল ৷হরিভূষণ পাল মহোদয় প্রতিষ্ঠান বহির্ভূত প্রথম সাহিত্যপত্রিকা হিসেবে দুলাল চক্রবর্তীর সম্পাদনায় প্রকাশিত 'অনির্বান' কে (1966)  স্বীকৃতি দেন ৷ এই পত্রিকাটির তিনটি সংখ্যা বের হয়েছিল বলে জানা যায় ৷ শ্রীহরিনারায়ণ সেনগুপ্তের সম্পাদনায় বিলোনিয়া জনগ্রন্থাগার ও তথ্যকেন্দ্র থেকে 1967-69এর মধ্যে ' শুক্লপক্ষ' ও ' বিষাণ'  নামে দুইটি হাতে লেখা সাহিত্যপত্র প্রকাশিত হয় ৷ এই সময়েই দুলাল ভৌমিকের সম্পাদনায় সাইক্লোস্টাইল করা সাহিত্যপত্র ' আকাশদুহিতা' প্রকাশিত হয় ৷' জোয়ার' তাঁর সম্পাদিত আর একটি সাহিত্যপত্র এই সময়ে প্রকাশিত হয় ৷ এই সময়েই মহিলাদের সংগঠন 'মিতালি' র উদ্যোগে 'তরঙ্গিনী' নামে একটি সাহিত্যপত্র প্রকাশিত হয় ৷ সাতের দশকের শুরুতে আশিসকুমার বৈদ্যের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ' ক্রান্তি' ৷ 1972 এর সেপ্টেম্বর মাসে শ্রী হরিনারায়ণ সেনগুপ্তের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় হাতে লেখা ' অগ্রণী' পত্রিকা ৷এর বর্ষপূর্তি সংখ্যা মুদ্রিত আকারে প্রকাশিত হয়েছিল ৷ মুদ্রিত অগ্রণীর তিনটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল ৷ তবে হাতে লেখা অগ্রণী পত্রিকা 1979 পর্যন্ত বিলোনিয়া জনগ্রন্থাগার ও তথ্যকেন্দ্রে প্রকাশ করা হয়ে আসছিল ৷ পরবর্তী সময়ে হাতে লেখা অগ্রণী রুমা পাল ও মল্লিকা বসুর সম্পাদনায় প্রকাশিত হত ৷ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য মল্লিকা বসু বিলোনিয়ার প্রথম প্রকাশিত সাহিত্যপত্র ' অভিযান' এর অন্যতম সম্পাদক জগদীশ বসুর কন্যা ৷ সে সময়ের অসম্ভব শক্তিশালী গল্পকার রুমা পাল পরবর্তী সময়ে লেখালেখির অঙ্গন থেকে হাত গুটিয়ে নেন ৷ স সময়ের গল্পকার রুমা পাল সাহিত্যচর্চা চালিয়ে গেলে বাংলা সাহিত্য নিশ্চিতই সমৃদ্ধ হত ৷ অগ্রণী বিলোনিয়ার সাহিত্য পরিমন্ডলে আলোড়ন সৃষ্টি করতে পেরেছিল ৷ অগ্রণীর সঙ্গে বিলোনিয়ার বাইরের লেখকদেরও নিবিড় যোগাযোগ ছিল ৷ এই পত্রিকায় কবিতা লিখতেন নচিকেতা ভরদ্বাজ ৷ এই সাহিত্যপত্রে পরামর্শ দিয়ে তিনি চিঠিপত্রও লিখতেন এবং তা অগ্রণীতে যত্ন সহকারে প্রকাশও করা হত ৷ 
1975 সালে অশোক দাশগুপ্তের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ' শৌনিক' এবং কুসুমকুমার পাল ও সুবোধ কংসবণিকের সম্পাদনায় 'কৌষিকী' ৷ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে নিভা পালের সম্পাদনায় কৌষিকীর বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল ৷ এই সময়ে কথাসাহিত্যিক সমরেশ বসু বিলোনিয়ায় এসেছিলেন ৷ এই পত্রিকায় তাঁর ছবিও প্রকাশিত হয়েছিল ৷ সম্ভবত বাবুল দে তাঁ একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন ৷ অরূপ রায়বর্মন ও তপন দাসের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় 'কল্লোল' ৷ কমলকৃষ্ণ বণিক ও দিবাকর দেবনাথের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ' আঞ্চলিক খবর'  স্থানীয় ইয়ুথ ক্লাবের রজত জয়ন্তী বর্ষ উপলক্ষে ৷ আটের দশকের মাঝামাঝি থেকে দেবাশিস চক্রবর্তীর সম্পাদনায় ' দেয়া'  পরপর মোট আটটি সংখ্যা প্রকাশ করে ৷ সমর বিশ্বাসের সম্পাদনায় ' আর্য' 1991 এ প্রকাশিত হয়ে অনিয়মিত হলেও  এখনো বেরুচ্ছে ৷ বিকাশ পালের সম্পাদনায় 1396 বাংলায় ' গ্রীণরুম' প্রকাশিত হয় ৷ 2009 সালে পত্রিকাটির দ্বিতীয় সংখ্যা প্রকাশিত হয় ৷ 1998 সালে তুষারকণা মজুমদারের সম্পাদনায় ' দীপসাহিত্য' প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে এখনো চলছে ৷ এটি এখন পর্যন্ত বিলোনিয়ার সর্বাধিক সময় প্রকাশিত সাহিত্যপত্রিকা ৷ 2003 সালে হরিভূষণ পালের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ' মুহুরীতট' ৷ 2005 সালে অজয় তিলকের ' ঐকতান' ৷ 2006 সাল থেকে প্রসেনজিৎ দে ও হরিপ্রসাদ মজুমদার প্রকাশ করেন ' প্রহরী' ৷ 2008 সালে টুটন চক্রবর্তীর ' মুহুরী' প্রকাশিত হয় ৷ 2009 সালে পিণাক দত্তের সম্পাদনায় ' সৃজা' নামে একটি পত্রিকা শুরু হয়ে দু তিনটে সংখ্যা প্রকাশের পর স্তব্ধ হয়ে যায় ৷
বিলোনিয়া শহর ছাড়া মহকুমার আরো কয়েকটি জনপদ থেকে লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশের তথ্য পাওয়া যায় ৷ 1985 সালে মতাই থেকে প্রকাশিত হয় রাখাল মজুমদারের সম্পাদনায় ' শব্দছবি' ৷ নলুয়া থেকে বছর দুয়েক ধরে বেরুচ্ছে ' সৃষ্টি' ৷ এবং কৃষণনগর থেকে বেরুচ্ছে ' উৎস'
৷ শান্তিরবাজার মহকুমার শান্তিরবাজার থেকে আটের দশকে অমর মিত্রের সম্পাদনায় প্রকাশ হত ' অঙ্কুর' ৷এই মহকুমার বাইখোরা থেকে নয়ের দশকে অর্পন ভৌমিকের সম্পাদনায় বেরুত ' সম্পর্ক ' ৷1995 এ গৌতম মজুমদারের সম্পাদনায় ' পূজা' ৷ তারাপ্রসাদ বণিকের সম্পাদনায় ' প্রতিবম্ব ' ( 2003)   প্রকাশ হত ৷  অভীককুমার দে ও অমরকান্তি সূত্রধরের সম্পাদনায় 2015 থেকে শুরু হয়েছে ' প্রাণের কথা ' ৷জোলাইবাড়ি থেকে গত কয়েক বছর যাবত বিপ্লব বৈদ্যের সম্পাদনায় বেরুচ্ছে 'পিলাক' ৷ কিছুদিন আগে সুরজিৎ সরকারের সম্পাদনায় শুরু হয়েছে ' দক্ষিণী কথা ' ৷
  দক্ষিণ ত্রিপুরার অন্য আর একটি মহকুমা সাব্রুম ৷ এই মহকুমায় লিটল ম্যাগাজিন চর্চার একটা অনিয়মিত ইতিহাস রয়েছে ৷ 1975 সালে ত্রিপুরার সরকারি কর্মচারীদের লাগাতর ধর্মঘটের সময় এপ্রিল মাসে  এই প্রতিবেদক ও বিভূতিভূষণ চক্রবর্তীর সম্পাদনায় বেরোয় 'স্পন্দন' নামে একটি হাতে লেখা পত্রিকা ৷ সেই পত্রিকার প্রচ্ছদে সেইসময়ে আন্দোলনে নিহত যুবনেতা নৃপেন্দ্র দেবনাথের ছবি থাকায় সাব্রুম তথ্যকেন্দ্র থেকে পত্রিকাটি উধাও হয়ে যায় ৷ এতে লেখা ছিল ড. রঞ্জিত দে, ড. ননীগোপাল চক্রবর্তী, কৃষ্ণধন নাথ, অনিল সরকার, নেপাল সেন ও এই প্রাবন্ধিক প্রমুখের ৷ প্রচ্ছদটি এঁকেছিলেন নাট্যজন প্রণব মজুমদার ৷ 1993-95 তিন বছর ভারত সংঘের প্রচেষ্টায় প্রকাশিত হয় ' ভারত সংঘ ' ৷ এর পৃষ্ঠপোষকতায় ছিলেন ত্রিপুরার প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী প্রয়াত কালিপদ বন্দ্যোপাধ্যায়  ও শংকর দে ৷ 1990   এর ফেব্রুয়ারিতে রাজ্যের বিশিষ্ট লোকসংস্কৃতিবিদ ড.রঞ্জিত দে-র সম্পাদনায় ত্রিপুরার একমাত্র লোকসংস্কৃতিবিষয়ক লিটল ম্যাগাজিন ' লোকসংস্কৃতি ' ৷ এটি অনিয়মিত ভাবে প্রায় সাত বছর বের করেছিলেন ড.দে সম্পূর্ণ নিজের প্রচেষ্টায়  এবং অর্থব্যয়ে৷  2001 এ সাব্রুম বইমেলায় এই প্রতিবেদকের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ' গ্রন্থী ' ৷ লিটল ম্যাগাজিনটি  ছাপার ক্ষেত্রে সর্বতোভাবে সহায়তা করেন পুলিন চক্রবর্তী ৷ এখানে স্থানীয় অনেকের ছোটো ছোটো লেখা ছিল ৷1418 বঙ্গাব্দ থেকে এই মহকুমার প্রত্যন্ত জনপদ সোনাই থেকে নিয়মিত প্রকাশ করে চলেছেন তরুণ কবি সঞ্জীব দে ' বিজয়া ' পত্রিকাটি ৷ 2013 সালে  বৈশাখি মেলা উপলক্ষে সাব্রুম থেকে ' কালিদহ ' এবং 2014 সালে বনকুলের বৌদ্ধ মেলা উপলক্ষে ' মহামুণি '  সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ও অর্থানুকুল্যে এই নিবন্ধকারের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ৷উল্লেখ্য এই প্রতিবেদক সম্পাদিত ম্যাগাজিনগুলোর একটিও আতুড়ঘর পেরুতে পারে নি ৷


সরাসরি বড়ো কোন আন্দোলন তৈরি করতে না পারলেও এই জেলায় লিটল ম্যাগাজিন চর্চা ঠিকই হয়ে আসছে ৷ এখানে কালস্রোতে হারিয়ে যাওয়া কিছু তথ্য সংরক্ষণের প্রয়াস নেওয়া হল মাত্র ৷ আগামী প্রজন্ম দায়িত্ব নিলে অনেক কাজ এগিয়ে যাবে ৷ ঋণস্বীকার  :
1.বিলোনিয়ার অস্বীকৃত পাতাগুলি - দুলাল ভৌমিক ( শৌনিক - সম্পা.অশোক দাশগুপ্ত - 1975)  
2. বিলোনিয়ার সাহিত্য প্রবাহ  : সেকাল একাল- হরিনারায়ণ সেনগুপ্ত ( আর্য - সম্পা. সমর বিশ্বাস,2014 শারদ সংখ্যা)  ৷
3. জনপদ বিলোনিয়ার ইতিবৃত্ত - হরিভূষণ পাল - 2009 4. চন্দন পাল ( কবি)  বিলোনিয়া, দক্ষিণ ত্রিপুরা ৷
4.ত্রিপুরার লিটল ম্যাগাজিন - সন্দীপ দত্ত ( প্রবন্ধ)
5. ত্রিপুরার লিটল ম্যাগাজিন - শ্যামল ভট্টাচার্য ( প্রবন্ধ)


Sunday, January 21, 2018

সরস্বতীপুজো : বাঙালির ভ্যালেন্টাইন

বাঙালি হিন্দুদের শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো ৷ তারপরই যার স্থান হল সরস্বতী পুজো ৷ দুর্গোৎসবের যে সর্বজনীনতা রয়েছে সরস্বতীপুজোয় কিন্তু শিশুকিশোরের প্রধান্য লক্ষ্যণীয় ৷ সরস্বতীকে জ্ঞান, বিদ্যা ও কলার অধিষ্ঠাত্রী দেবী হিসেবে মান্য করা হয় ৷ শিশুকিশোরদের সঙ্গে এই দেবীর একটা আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায় ৷ শিশুর বিদ্যালয়ের সঙ্গে পরিচয় ঘটে তার পাঠ শুরুর আগেই দিদির কিংবা পাড়ার বড়োদের হাত ধরে বিদ্যালয়ে আসার মাধ্যমে ৷ এর মধ্য দিয়ে তার বিদ্যালয়ভীতি অনেকটাই কেটে যায় ৷
     তারপর বিদ্যালয়ে পাঠগ্রহণকালীন সময়ে প্রতি বৎসরই সে সরস্বতীপুজোর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে ৷ সরস্বতীপুজোয় অংশগ্রহণে মধ্য দিয়ে তার ভেতরে দায়িত্ববোধ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি হয় ৷ সৃষ্টি হয় সামাজিকতাবোধও ৷ সবাই মিলে চাঁদা সংগ্রহ, ঠাকুর বায়না করা, পুজোর বাজেট, বাজার করা, প্যান্ডেল তৈরি, পুজোর সরঞ্জাম জোগাড় করা, পুজো নির্বাহ করা, প্রসাদের ব্যবস্থা করা সবকিছুই শিক্ষার্থীরা নিজে দায়িত্ব নিয়ে করে থাকে ৷ দেবী সরস্বতীর প্রতি প্রত্যেক শিক্ষার্থীরও একটা আনুগত্যবোধ লক্ষ করা যায় ৷ দেবীর কৃপার উপর তাদের পড়াশুনার ফলাফলের একটা প্রভাব রয়েছে বলে তারা মনে করে ৷ তাই অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে নির্জলা উপবাস থেকে তারা পুজোয় উপস্থিত থেকে পুজোর শেষে দেবীর চরণে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে আশীর্বাদ প্রার্থনা করে থাকে ৷ তাই বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আরাধনা বিদ্যায়তনগুলো ছাড়া ঘরে ঘরে, পাড়ায় পাড়ায়ও হয়ে থাকে ৷
     আর্যরা সরস্বতীকে বিদ্যার দেবী ছাড়া শস্যের দেবীরূপেও আরাধনা করতেন ৷ ভাগবতে আলোচিত সাতটি নদীর মধ্যে সরস্বতীকে একটি নদী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ৷ বৈদিকযুগে আর্যগণ সরস্বতী নদীর তীরে বসতি স্থাপন করে ওই নদীজলে পুষ্ট ভূমিতে চাষবাস করে শস্য উৎপাদন করতেন ৷ ফলে তিনি বৈদিক সূক্তে অম্বিতমে, নদীতমে, দেবীতমে অর্থাৎ জননীশ্রেষ্ঠ, নদীশ্রেষ্ঠ ও দেবীশ্রেষ্ঠরূপে বন্দিত হয়েছেন ৷ কিন্তু সরস্বতীর এইসব দৈবীকল্পনা ছাড়িয়ে কবে যে তিনি বাঙালির একান্ত ঘরোয়া বীণাধারিণী কলানিপুণা  ও বিদ্যাসাম্রাজ্যের তরুণী অধিশ্বরী হয়ে উঠলেন তার তথ্য বেদে নেই ৷ আমাদের লোকপুরাণ ও লোকবিশ্বাসই এই দেবীকে বাঙালির উঠোনে আসন পেতে দিয়েছে ৷ বাঙালির লৌকিক দেবদেবীরূপে যাঁরা সুপূজিত সেই হরপার্বতীর কন্যারূপেই অত্যন্ত ঘরোয়া সাজপোষাকেই শ্রীময়ী এই দেবী ৷
      বসন্ত সমাগমের প্রাকলগ্নে বাঙালি কিশোরীর শরীরে আসন্ন যৌবনসমাগমের বার্তাটিও বয়ে আনে এই সরস্বতীপুজো ৷ কিশোরীটি এদিনই প্রথম শাড়ি পরার ছাড়পত্র পায় ৷ নারী হয়ে ওঠার অভিষেক ঘটে এই দিনটিকে ৷ 'বনে যে ফুটল কুসুম' এই বার্তাটি পৌঁছে যায় পাড়ার নবীন কিশোরসখাটির কাছে ৷ তার এতোদিনের বালকবেলার খেলার সাথীটিকে সে নতুন চোখে দেখে এই দিনটিতে ৷ হাওয়ায় ওড়া কিশোরীটির চুলের মতো তার মনের ভেতর কী একটা অনুভূতি এদিন উড়াল দেয় ৷ হালফিল সরস্বতীপুজোর দিনটিকে বাঙালির 'ভ্যালেন্টাইন ডে'ও বলা হচ্ছে ৷ নবীন কিশোর কিশোরীর বুকের ভেতর প্রথম প্রেমের কুঁড়িটি নাকি এদিনই ফুটতে শুরু করে ৷ এদিন থেকেই নারীজীবনের কোন গতিপথ তৈরি হয় তা আজকের দিনের কবি জয় গোস্বামীর পংক্তি দিয়েই উচ্চারণ করি - 

আজ আরও ছোট হোক চুল
খাটো হোক অঙ্গের বসন
আরো যত্নে মাজা হোক ত্বক
আরো তীব্র বাঁকা হোক ভুরু
এইবার পথে বেরোলেই
কী জিনিস বেরিয়েছে, গুরু !

এইতো লক্ষ্মীশ্রী মুছে গেছে
আজ থেকে জেল্লা মার-মার
আজ থেকে স্বাধীনতা জারি
কাল ছিলে বধুমাতা, আজ
নারীমাংস, নারীমাংস, নারী...

পথে পথে সহস্র পুরুষ
মনে মনে নোংরা করবে তোকে
তাই নিয়ে অবুঝের মতো
গর্ব হবে তোর, হতভাগী

আমি কবি, দুর্বল মানুষ
কী ভাবে বাঁচাব তোকে, ভাবি...
( একটি দুর্বোধ্য কবিতা - জয় গোস্বামী )

Saturday, January 20, 2018

শেষবেলা


বিকেলের ডাকে যে চিঠি আসবে
তাতে ভ্রূণসন্ধ্যার সিঁদুর মাখিয়ে
সারাটা পরিক্রমার নিখুঁত দিনলিপি
গাঁথার পর খামবন্দী করে তারিখের
মোহরচিহ্নে প্রত্যয়িত করার কথা

সাতকাহনে সাজার পর অন্ধসন্ধ্যায়
বলে দেবে,তুমি ঘরে ফিরে যাও
তোমার বেলা বহুক্ষণ আগেই শেষ ৷

Thursday, January 18, 2018

বয়ন

গভীর রাতলিপি নিবিড় পাঠের পর
দরোজায় ঘন্টি বেজে যায় বিরতিবিহীন
রাতচরা সরীসৃপের অবোধ্য সংকেতের মাঝে
একটা সুতোবাঁধা  নির্দেশ গোপনে ছড়িয়ে যায়
ঘুমকাতর জনপদ ও জঞ্জালের অচেতন অবয়বে

আগামী রুটিন ঘুরে ফিরে আশা করে ভাবী বয়ন

গীতগোবিন্দম


বাইরের সংকেত জানানোর জন্যে দরোজায় রাখা কলিং বেল নিয়ম মেনেই কথা বলে যায় ৷ সারারাত ঘাসের ডগায় অপেক্ষা করে শিশির ভোরের সূর্যমুখের আশায় ৷ লাল আভায় নিজেকেও রাঙিয়ে নেওয়ার সুখস্নান ৷ নিকটকথা দিয়ে মুড়ে দেওয়া মনমতো জানালা পর্দাআঁটা সহবৎ শিখে নেয় ৷ অনবরত ডোরবেল বেজে গেলেও যদি দরোজার ওপার থেকে সাড়া না আসে তবে নিবেদনের জন্যে পদাবলি জেগে থাকবে কী সদরঘাটে?  রাধার নামে বাধারঘাটে যখন হুইসিল বাজিয়ে ছেড়ে যায় রাজধানীর ট্রেন আনন্দবিহারের উদ্দেশ্যে ৷ বিরহের মীড় যেখানে প্রবল গেঁথে যায় ধুলিজমিন ছুঁয়ে, ভেজা বালিতে কী লেখা যাবে পদপল্লবমের গোপন বাসনার কথা ৷ তাহলে তো আর একটা গীতগোবিন্দের জন্যে তুলট কাগজ কেঁদে যাবে ৷ তোমার তাতে কী সায় আছে রাই, সই?