Saturday, September 30, 2017

মহালয়া

"মহামায়ার মহালয়া

*************************
মহালয়া এক বিশেষ তিথি ৷ মহালয়া বলতে বোঝায় পিতৃপক্ষের শেষ এবং দেবীপক্ষের শুরু ৷ পিতৃপক্ষ সূচিত হয় প্রধানত দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে গণেশ উৎসবের পরের পূর্ণিমা তিথিতে ৷ শেষ হয় অমাবস্যা তিথিতে ৷অপরদিকে উত্তরভারত ও নেপালে ভাদ্রের পরিবর্তে আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষকে পিতৃপক্ষ বলা হয় ৷ সংস্কার অনুযায়ী ভাদ্রমাসের কৃষ্ণা প্রতিপদ তিথি থেকে আশ্বিনের কৃষ্ণা পঞ্চদশী অর্থাৎ অমাবস্যা তিথি পর্যন্ত সময়কে বলা হয় পিতৃপক্ষ বা প্রেতপক্ষ বা অমরপক্ষ ৷ হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, এই সময় প্রেতলোক থেকে পিতৃপুরুষবর্গের আত্মারা মর্ত্যলোকে নেমে আসেন নিজেদের ফেলে যাওয়া গৃহ ও পরিজনের প্রতি মায়াবশত ৷ মহালয়ায় তাঁরা সকলে মরজীবনের পরিবেশে ফিরে আসেন বলে অর্থাৎ তাঁদের বিদেহী আ়ত্মারা ফিরে আসেন বলেই তাঁদের জীবিত উত্তরপুরুষেরা সেই দিনটিতে তর্পনের দ্বারা তাঁদের বিদেহী আত্মার পরিতৃপ্তি বিধান করে প্রতিটি গৃহেই আনন্দোৎসব পালন করে থাকেন ৷ ' আলয় ' যেদিন 'মহ' অর্থাৎ আনন্দমুখর হয়ে ওঠে সেই দিনটাকেই বলাহয় 'মহালয়া' ৷
এতে বোঝা যায় যে মহালয়া হলো পূর্বপুরুষের পুজো বা প্রেতপুজোর এক বিশেষ তিথি ৷ এই পূর্বপুরুষ পুজো বা প্রেতপুজো মানবসংস্কৃতির ইতিহাসে মানুষের আদিম বিশ্বাসের সঙ্গে বহু প্রাচীনকাল থেকে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে ৷
পুরাণকাহিনিতে আছে, মহাভারতের যুদ্ধে কর্ণ যখন মৃত্যুমুখে পতিত হন তখন তাঁর আত্মাকে খাদ্য হিসেবে গহনা নিবেদন করা হয় ৷ কর্ণ বিস্মিত হয়ে এর কারণ অনুসন্ধানের জন্যে দেবরাজ ইন্দ্রের শরণাপন্ন হন ৷ ইন্দ্র জানান যে, কর্ণ তাঁর জীবদ্দশায় কখনো পূর্বপুরুষের প্রতি খাবার, জল ইত্যাদি উৎসর্গ করেন নি ৷ উপরন্তু দাতাকর্ণ শুধুমাত্র সোনাই দান করে গেছেন আজীবন ৷ আর তাঁর সেই কর্মফলের কারণেই তাঁর ক্ষেত্রে তারই প্রতিফলন ঘটেছে ৷ কর্ণ এই বিষয়টা জানতেন না বলে তাঁকে পনেরো দিনের জন্যে মর্ত্যে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিলো যাতে তিনি তাঁর পূর্বপুরুষদের জল ও খাবার উৎসর্গ করতে পারেন ৷ হিন্দু পুরাণ মতে, এই পিতৃপক্ষ সময়কালে তিন পূর্ববর্তী প্রজন্মের আত্মা পিতৃলোকে ( স্বর্গ ও মর্ত্যের মাঝামাঝি) অবস্থান করেন ৷ পরবর্তী প্রজন্মের কারও মৃত্যুর পর যমরাজা আত্মাকে পিতৃলোকে নিয়ে যান এবং প্রথম প্রজন্ম স্বর্গলোকে উন্নীত হয় ৷
পুরাণ মতে এদিন দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে ৷ অশুভ অসুরশক্তির কাছে পরাভূত দেবতারা স্বর্গলোক থেকে বিতাড়িত হন ৷ চারদিকে অশুভ শক্তির আস্ফালন ৷ এই অশুভ শক্তিকে বিনাশ করার লক্ষ্যে দেবতারা সমবেত হন ৷ অসুরশক্তির বিনাশে তাঁরা এক মহাশক্তির আবির্ভাবের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন ৷ দেবতাদের তেজোরশ্মি থেকে আবির্ভূত হলেন অসুরদলনী দেবী দুর্গা ৷ মহালয়ার কাল হলো ঘোর অমাবস্যা ৷ দেবী দুর্গার আবির্ভাবে তাঁর মহাতেজের জ্যোতিতে সেই অমাবস্যা দূরীভূত হয় ৷ প্রতিষ্ঠিত হয় শুভ শক্তির ৷ অসুরবিনাশিনী দেবী দুর্গা স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল তথা ব্রহ্মান্ডের অর্থাৎ 'মহানিকেতন'র অধিশ্বরী ৷ তাঁরই আগমনী তিথির নাম 'মহালয়া'

Monday, September 25, 2017

তোমার চোখ
      শিউলি ফুলের মতো
           আকাশমুখী
##################
           চলো হে সই
        যেখানে পাহাড়ের
           সঙ্গমে মেঘ
###################   
          সহেলির চুমু
       আঁচড় কেটে গেছে
         আঁচলে ঢাকো
###################
           বর্ষার তাড়া
         ঘরছাড়া হয়েছে
            শরৎকাল
#############

Sunday, September 24, 2017

তোমার সওদাগরি মুখোশের সীমানা বরাবর
আমার দেহাতি কুটীরের ছায়া বেড়ে যায়

তোমাকে কতো কথা বলার হিসেব নিকেশ করি

অথচ পাশে দাঁড়াবার সাহস নেই
আমার বুকের তোরঙ্গে

তুমি যদি না ওঠাও মুখোশের পর্দা
আমি হেরেই যাবো ইহকাল

**** মুখোশ ****
  অশোকানন্দ রায়বর্ধন

Monday, September 11, 2017

বারণ

সময়ের বস্তাবাঁধনের ঘূর্ণি থেকে
কী করে বিচ্ছিন্ন হতে হয়
সে কৌশল
কেউ শেখালো না
না স্যারেরা না কোনো দিদিমণি

বন্ধুদের দিকে যতো
বাড়াতে চাই
আমার আর্ত হাত
কে যেন টেনে নিয়ে
দুমড়ে মুচড়ে দেয়
সেই নাকি সময়

কেন এমন করে সময়
কোনো দিকে তাকাতে পারি না
ঘাড় ঘোরানোটাও বারণ

বলুন বন্ধুরা
সে কী আমার ঈর্ষাতুরা ঘরণি
কিংবা ছিটকে যাওয়া প্রেমিকা

ডানা


পাখির ডানার মধ্যে লুকানো স্বপ্ন আড়ালে বড়ো হয়/আর আকাশ ধরার জন্যে সে পাড়ি দেয় অনন্তপথ/সে পথের বার্তা কেবল জমাট তুলোর মেঘের প্রদেশ/তোলপাড় করেনা/সমস্ত সম্ভাব্য স্বপ্নকে বাঁচিয়ে দেয় নিষ্ঠ নিয়মে/

কবিয়াল বিষ্ণুরমণ দত্ত

গভীর মর্মাহত হলাম কবিয়াল বিষ্ণুরমণ দত্তের প্রয়াণে ৷ লোকসংস্কৃতির শক্তিশালী মাধ্যম কবিগান আজ প্রায় অস্তমিত ৷ এক সময় বাঙালি অধ্যুষিত গ্রাম ও মফস্বল শহরে বিনোদনের এক বিশেষ উপাদান ছিল কবিগান ৷ বাংলার জমিদার বাড়িতে দোল দুর্গোৎসবে কবিগানের আয়োজন করা হত ৷ ঊনবিংশ শতাব্দীর কবিওয়ালাদের মধ্যে বিখ্যাত ছিলেন ভোলা ময়রা, নিধুবাবু, হরু ঠাকুর, এন্টনি ফিরিঙ্গি প্রমুখ ৷ তার পরবর্তী সময়ে পূর্ব বাংলায় ছিলেন হরিচরণ আচার্য, রমেশ শীল প্রমুখ ৷ চট্গ্রামের কবিয়াল রমেশ শীলের শিষ্য ছিলেন তিনি ৷ ত্রিপুরার অল্প কয়েকজন হাতে গোনা কবিয়ালের তিনি ছিলেন অন্যতম আমাদের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক ছিল তাঁর ৷ আমাকে শ্বশুর এবং আমার গিন্নিকে শাশুড়ি ডাকতেন ৷ তাঁদের আদি নিবাস আমার মামাবাড়ি বাংলাদেশের নোয়াখালির বিষ্ণুপুর গ্রাম ৷ সেই সুবাদে তিনি আমার মাকে দিদি ডাকতেন ৷ ভাগনে হিসেবে এই অভাজনকে শ্বশুর সম্বোধন করতেন ৷ সাব্রুমের পশ্চিমাংশের কোন গ্রামে কবিগান গাইতে গেলে তাঁর অস্থায়ী আবাস ছিল আমাদের ছোটোখিলের বাড়ি ৷ আমার ঘরে থেকে খেয়ে কবির আসরে ছদ্ম অশ্লীল কাব্যভাষায় শ্বশুরের আদ্যশ্রাদ্ধ করতেন ৷ শ্রোতৃমন্ডলী খুব মজা পেতেন ৷ আমি আসরে মাথা নুয়ে থাকতাম বা আসর ছেড়ে পালাতাম ৷ আসর থেকে ফিরেই রাস্তা থেকে হাঁক দিতেন, শ্বশুর আমি আইয়ের ৷তোঁয়ার বইপত্র বাইর করি রাখো ৷ আঁই আইয়ের ৷ স্কুলে যাওয়ার সময় আমি বইয়ের আলমারির চাবি রেখে যেতাম ৷ তিনি স্নান করে খাওয়া দাওয়া সেরে দরজা বন্ধ করে বই পড়তেন আর প্রয়োজনীয় নোট নিতেন ৷ তাঁর কাছ থেকে বেদ পুরাণের অনেক তথ্য পেয়ে আমি সমৃদ্ধ হয়েছি ৷ একবার আমাদের বাড়িতে অবস্থানকালে গভীর রাত্রিতে ভীষণ অসুস্থ হয়ে দুর্বল হয়ে পড়েন ৷আমরা তিনভাই হাঁকডাক করে পাড়ার লোকজনকে ডেকে আনি ৷ ডেকে আনা হল আমার পিতৃদেবের সহকর্মী চিকিৎসক রমেশ সাহাকে ৷ তাঁর চিকিৎসায় ভোরের দিকে কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর সবার সামনে রসিকতা করে বলে ওঠেন, কাইল্লা রাইত্তা যদি মরি যাইতাম, আঁর শ্বশুর কইন্না দায় তুন মুক্ত অইতো না ৷ দুঃখে একঘর লোক হাসবে না কাঁদবে! এমনই রসবোধ ছিল তাঁর ৷ বড়ো খারাপ লাগছে ৷ তাঁর প্রয়াণে ত্রিপুরার লোকসংস্কৃতিচর্চার এক নান্দনিক মাধ্যমের যুগাবসান ঘটল ৷ যেখানেই থাকুন ৷ চিরশান্তিতে থাকুন