Sunday, December 22, 2019

আনন্দবিজয়া

কে বলে মা চলে যায় চিরভাসানে
নিরাকারে আছে সে তো হৃদয়াাা


শান্তির বার্তাবহনের মধ্যেও এতো সব হন্তারক হাত বিস্তৃত যে শরতের সাদা-নীল সাজের
আনন্দধারার উজানে বাঁধ দিতে হলো
ময়ালের দেয়ালে লুকানো সি সি ক্যামেরায় ধরবে অশুভ মুখ ৷ এ সময় কী অসুরের  কাল?
মনে হয় আনন্দও ক্রমশ চলে যাচ্ছে বিশ্ববাজারে
সেখান থেকে ওজন দরে বিকোবে আগামী দিন
তার জন্যে মৌ চুক্তি চাই ৷

আমরা কী আনন্দহারা হয়ে যাচ্ছি দিন দিন

টাকার পতনের মতো জীবনের ডালপালাও

কী ভেঙে পড়ছে চাতালে পাতালে ৷ দূর থেকে 

আলোর রশ্মি ভেসে আসে বলে আমরা এখনও

বোধনের আলোয় স্নান করি ৷ জেগে থাকি শুধু সন্ততির মুখ দেখে ৷ প্রজন্মও এগিয়ে যায় সব চিরকথার তোরঙ্গ নিয়ে ৷ 


বিসর্জনের প্রত্নঢাক বিজয়ার বার্তা নিয়ে যায় জনমহলে ৷  আমরা বিজয়ের জন্যে বেঁচে থাকি ৷

বাস্তুহারা

গুঞ্জন



নির্জনে নাড়ো ডানা—

চোখ রাখো অস্থির শিবিরে ৷

কোমল কাতর রাত জেগে আছে 

কুসুমরঙিন পুব আকাশের দিকে চেয়ে


এইসময়

গুঞ্জন বাঁচিয়ে

দেয়ালটা শক্ত করো ৷

সময়ের দুর্দশায় পর্যটক তুমি

দূরত্বে থেকে সমুদ্রে হাওয়া খেতে থাক ৷


জেনে রাখো, এই সব ভন্ডামি

সকলেই ধরে ফেলে নকল হানিমুন, মুখোশশোভন পরিব্রাজনে চিরদিন

গা বাঁচিয়ে রাখা যায়না তঞ্চকতা ৷


ভেবেছ নদীর ঢেউ ধীরে বয়

বেঁধে ফেলেছ তার তীব্র বিক্ষোভ ৷

তোমার প্রচারপুষ্পকরথের চাকা

যতো এগোয় মনে করো তুমি

গুঞ্জনে তোমারই গুণগান গায় ৷


নদীও জানে আত্মগোপনের কৌশল

নদীও সমানতালে ঢেউয়ের সংগঠন

একদিন উপছে পড়বে তুমুল আওয়াজ

দুই তীরে উত্তাল ঢেউয়ের তীব্র আঘাত ৷


Friday, December 6, 2019

এভাবেই মুছে যাই

এভাবেই মুছে যাই, মুছে যেতে হয়
যারা ভালোবাসে আর কাছে টেনে নেয়
তাদেরই কেউ কেউ মুছে ফেলে আমাকে
আর অন্য যারা ভাসমান দোনামনায় আছে
তারাও অবসরবিনোদনের কালে পাঁজিপুথি দেখে
খুঁজছে মাহেন্দ্র কিংবা অমৃতযোগ
কখন ছেঁটে ফেলা যায় আমাকে
এইসব মোছামুছি আর ঘষাঘষির ফলে
আমার শরীরে এখন চুম্বনচিহ্নের মতো
শুধু ফ্যাকাশে ইরেজারের ঘষটানো দাগ

Thursday, November 28, 2019

স্ব প্ন

এটিএমের কিউমুখী কবিতা
হাঁপিয়ে উঠলে হাওয়ামিঠাই
রঙচঙে ও লোভনীয় হয়ে ওঠে

যেমন ব্রেক আপ মিটমাট হলে
জলদাপাড়া কিংবা কাজিরাঙা
যেখানেই যাই ঝালাই মিস্ত্রিরা
বখশিসের হাত বাড়িয়েই রাখে ৷

Monday, October 28, 2019

আর্ষপ্রয়োগ শব্দের অর্থ

ঋষি শব্দের বিশেষণ আর্ষ ৷ সাহিত্যক্ষেত্রে স্বনামধন্য কবি-সাহিত্যিকগণ ঋষিতুল্য ৷ তাঁদের রচনায় তাঁরা যদি কোনো ভুল করেন তাকে মেনে নিয়ে বলা হয় 'আর্ষ প্রয়োগ' ৷  'তাইতো তোমায় শুধাই অশ্রুজলে' ( রবীন্দ্রনাথ)  অশ্রুজলে শব্দটি আর্ষপ্রয়োগের উদাহরণ ৷

Sunday, October 27, 2019

ভো র

সন্ধ্যে হলেই মনে হয়
আমার একটা ভোর ছিল

সাকিনবিহীন বনপথের আঁধারে
আমার অনুপ্রবেশ অনিবার্য

Tuesday, October 15, 2019

অ সু খ

অসুখ নিয়েই কী আমাদের চলে যেতে হয়
হাত গুটিয়ে বসে থাকা অশ্বিনীসন্তান
কার নির্দেশ মান্য করে
কালঢেউ গুমরে উঠেও
নিস্তরঙ্গ গুজরান মেনে নেয়

অসুখ কে ছড়ায়?  কার ঝোলায় লুকোনো মারণ ভাইরাস?
চুম্বনের উষ্ণতা ধরে রাখার সাধ্য থাকে না
নিষাদের তির তাক করা
ফেঁসে যাওয়া কারবাইনও গর্জে ওঠে

অসুখের ভেতরেও পথে নামে মানববন্ধন
হাতে হাতে সংক্রামিত উত্তাপ হৃদয়গোলাঘরে
পদাবলির অক্ষর দেববৈদ্যের দরজায় সেঁটে যায়
'এই করুণসন্ধ্যার দীপাবলি ফুঁ দিয়ে নেভানো বারণ'

Sunday, October 13, 2019

ঘু ড়ি

সুতোতে মাঞ্জা দেওয়ায় পারদর্শী
তাই বড়াই করি আমার হাতযশের

কোনোদিন দেখা হবেনা জেনেও
প্রেম প্রেম অদৃশ্য নিবেদনে
নাটাইয়ের চাতুর্য দেখাই ৷

পরকিয়ার সংজ্ঞা নিরূপনের পথে
বৈষ্ণব পদাবলির তত্ত্ব বাতিল ঘোষিত

উজ্জ্বল নীলমণির পৃষ্ঠায় উঠে আসে
হালফিলের নীল নিবেদন ৷

আমার হাতে মাঞ্জা দেওয়া সুতোয়
আমিই ভোকাট্টা হই ৷

Wednesday, October 9, 2019

'পুত্র' অর্থ

এটা একটা অতি পাকনামি ৷ শব্দের অর্থ এবং উৎস না জেনে অর্বাচীন অর্থ নিয়ে মাতামাতি বা আঁতলেমি করা ৷ 'পুৎ' নামক নরক থেকে যে উদ্ধার করে সেই পুত্র ৷ সেজন্যেই বলা হয় 'পুত্রার্থে ক্রিয়তে ভার্যা' ৷ এখানে কী বলা হয়েছে এই উদ্ধারকারী ছেলেসন্তান না মেয়ে সন্তান ৷ আমি তো মনে করি আদিতে পুত্র বলতে সন্তানকেই বোঝাত ৷ কালক্রমে অর্থসংকোচের ফলে ছেলে অর্থেই বুঝিয়েছে ৷ কন্যা বা কন্যাসমারও যে উদ্ধারের জন্যে শাস্ত্রীয় ক্রিয়া অর্থাৎ তর্পনের উদাহরণস্বরূপ রামায়ণে তো দেখেছি ফল্গুনদীর জল দিয়ে সীতাকে তর্পণ করতে ৷ মিথ আছে সীতার এই ক্রিয়ায় মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার কারণে ফল্গুধারা শুকিয়ে যায়, ব্রাহ্মণের ব্রহ্মতেজ খর্ব হয় ৷ এখানে একটা যুক্তি হল সীতা ব্রাহ্মণকে সীতা ব্রাহ্মণকে অভিশাপ দেওয়ার সুযোগই পেতেননা যদি একাজটি বেআইনি হত ৷  এখন আমরা পুরুষসন্তানকেই তর্পণ করতে করতে দেখি ৷ আর যে দেবীর কাছে বরপ্রার্থনা করা হয়েছে তাঁর সৃষ্টিকথা তো আমরা সবাই জানি ৷ নারীর মর্যাদা দিয়েছেন বলেই তো ব্রহ্মা তাঁর তেজ থেকে দেবীর সৃষ্টি করেছেন ৷ কোনো পরাক্রমশালী দেব তো সৃষ্টি করেননি ৷
'পুত্র' শব্দের দ্বিতীয়ার বহুবচনে হয় 'পুত্রান' ৷ 'বহু সন্তানকে' ৷ সেকালে দলীয় শক্তিবৃদ্ধির জন্যে এবং উৎপাদনভিত্তিক জীবিকায় কর্মীর প্রয়োজনে গোষ্ঠীর }  ৷ আর নারী থাকলেই তো সদস্যসংখ্যাও বাড়বে ৷ সেকালের উর্বরতাকৃষ্টির বীজ তো এখানেই নিহিত ৷

Tuesday, October 8, 2019

ফেনী নদীর তথ্য ও জলবন্টন



ফেনী নদী: ভারতের পানি প্রত্যাহার এবং আরো ৫ টি তথ্য

মুন্নী আক্তার বিবিসি বাংলা, ঢাকা

6 অক্টোবর,2019


Image caption ভারতের ত্রিপুরায় উৎপন্ন হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ফেনী নদী

ফেনী নদী থেকে ১.৮২ কিউসেক পানি প্রত্যাহার করতে ভারতকে অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ।

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাবরুম অঞ্চলে খাবার পানির সংকট দূর করতে এই পানি ব্যবহার করা হবে বলে এ সম্পর্কিত সমঝোতা স্মারকে উল্লেখ করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চলমান ভারত সফরের সময় দু'দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

ফেনী নদীর উৎপত্তি কোথায়?

ফেনী নদীর উৎপত্তি নিয়ে একাধিক তথ্য রয়েছে। সরকারি ওয়েব সাইটে ফেনী নদীর উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এর উৎপত্তিস্থল খাগড়াছড়ি জেলার পার্বত্য এলাকা।

তবে ফেনী নদীর উৎপত্তিস্থল নিয়ে ভিন্ন তথ্য দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়াতে।

আরো পড়ুন:

সেখানে বলা হয়েছে যে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে অবস্থিত পর্বত শ্রেণিতে ২৩°২০´ উত্তর অক্ষাংশ ও ৯১°৪৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে উৎপন্ন হয়েছে।

এ সম্পর্কে নদী বিষয়ক সংগঠনের রিভারাইন পিপলের মহাসচিব শেখ রোকন বলেন, মাটিরাঙ্গা অঞ্চলে পাহাড় থেকে কিছু ছড়া ফেনী নদীতে গিয়ে পড়েছে। এ কারণে অনেকে বিভ্রান্ত হয় যে, ফেনী নদীর উৎপত্তি বাংলাদেশ থেকে। কিন্তু আসলে তা নয়।

তাঁর মতে, ফেনী নদীর প্রধান উৎপত্তিস্থল ওই স্থান থেকে আরো আড়াই কিলোমিটার ভেতরের দিকে দেউটামারা পাহাড় থেকে।

ফেনী নদীর প্রবাহ পথ কী?

বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ফেনী নদী।

বাংলাদেশ সরকারের ওয়েব সাইটে দেয়া তথ্য বলছে, ফেনী নদীটি ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া, সোনাগাজী, খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা এবং চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এছাড়া এটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যেও প্রবাহিত হয়েছে।

বাংলাপিডিয়ার তথ্য মতে, ত্রিপুরার পূর্বাঞ্চলীয় পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার বেলছড়ি নামক স্থান দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

বাংলাদেশে প্রবেশের পর নদীটি খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি ও মিরসরাই এবং ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও সোনাগাজী উপজেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।

ফেনী নদীর পানি নিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারককে স্বাগত জানিয়েছে ত্রিপুরার সাবরুম এলাকার বাসিন্দারা

প্রবাহ পথের অনেকটুকু জুড়েই নদীটি চট্টগ্রাম ও ফেনী জেলার সীমান্ত বরাবর প্রবাহিত হয়েছে।

নদীটির মোট দৈর্ঘ্য ১১৬ কিমি।

এতে আরো বলা হয়, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মধ্যে সীমানা চিহ্নিতকারী ফেনী নদী বাংলাদেশের অন্তর্গত। কিন্তু ১৯৬০ সাল থেকে ভারত সরকার নদীটির মধ্যভাগ পর্যন্ত নিজেদের দাবি করে আসছে।

কী পরিমাণ পানি রয়েছে?

নদীর পানি পরিমাপের দুটি একক রয়েছে। একটি কিউসেক এবং অপরটি কিউমেক। অর্থাৎ একটি হিসাব করা হয় প্রতি সেকেন্ডে কত ঘনফুট পানি যাচ্ছে কোন একটা জায়গায় সেটার উপর। আর অপরটি হচ্ছে প্রতি সেকেন্ডে কত ঘনমিটার পানি প্রবাহিত হয় সে অনুযায়ী।

বাংলাদেশের সাথে ভারতের নতুন চুক্তি অনুযায়ী, ফেনী নদী থেকে ১.৮২ কিউসেক পানি ভারত তুলে নিতে পারবে।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, শুকনা মৌসুমে ফেনী নদীর পানির গড় পরিমাণ ৭৯৪ কিউসেক এবং বার্ষিক পানির গড় পরিমাণ প্রায় ১৮৭৮ কিউসেক।

এতে বলা হয়, ফেনী নদীর ১.৮২ কিউসেক করে পানি প্রত্যাহার শুষ্ক মৌসুমের গড় পানি প্রবাহের মাত্র ০.২৩ শতাংশ।

তবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২০০৫ সালে প্রথম প্রকাশিত "বাংলাদেশের নদ-নদী" বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শুকনো মৌসুম অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ফেনী নদীতে ১.৩৫ কিউবিক মিটার বা ৪৭ কিউসেক পানি থাকে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এর গুরুত্ব কতখানি?

নদীর দু'পাশে বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল এবং সমতলে ফেনী নদীর প্রবাহ পথের দুই পাড়ের মানুষদের জীবনের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে ফেনী নদীর।

পার্বত্য এলাকা ও খাগড়াছড়ি থেকে বেশ কয়েকটি উপনদী এসে ফেনী নদীর উপর এসে পড়েছে। এরমধ্যে মুহুরি নদী উল্লেখযোগ্য।

পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা (ওয়ারপো)'র সাবেক মহাপরিচালক প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক বলেন, "এটি আসলে অনেকগুলো নদীর একটি অববাহিকা। যেটা ফেনী জেলাকে এবং উজানে খাগড়াছড়ি জেলার মানুষ এর দ্বারা উপকৃত।"

"ফেনী নদীর পানি কমে গেলে এই উপনদীগুলোতেও পানি প্রবাহ কমে যাবে। যার কারণে ফেনী নদীর সাথে সাথে হুমকির মুখে পড়বে এসব নদীর জীব-বৈচিত্র্য এবং এর স্থানীয় বাসিন্দারাও।," তিনি বলেন।

 ফেনী নদীর বন্যায় আক্রান্ত হয় এর দুই পাড় বসবাসকারী মানুষরা

পানি দেয়ার কারণে কী ধরণের প্রভাব পড়বে?

ফেনী নদী থেকে শুষ্ক মৌসুমে ভারত পানি প্রত্যাহার করলে তা ওই এলাকা এবং পরিবেশের উপর কি ধরণের প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে মিশ্র মতামত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক ইনামুল হক বলেন, "ভারত যদি বেশি পরিমাণে পানি তুলে নেয় তাহলে মুহুরি সেচ প্রকল্প ও পরিবেশগত যে প্রকল্প আছে সেটার উপর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ"।

নদী বিষয়ক সংগঠন রিভাইরাইন পিপল এর মহাসচিব শেখ রোকন বলেন, "শুষ্ক মৌসুমে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসে ভারত যদি ১.৮২ কিউসেক পানি তুলে নেয় তাহলে তা পরিবেশের উপর তেমন কোন প্রভাব ফেলবে না। কারণ ওই সময়ে ফেনী নদীতে এর চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ পানি থাকে।"

অর্থাৎ পানি তুলে নেয়ার পরও পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি থাকবে নদীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য।

পানি সম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বলেন, এ পরিমাণ পানি তুলে নিলে আসলে তা পরিবেশ এবং আশপাশের বসতির উপর কোন প্রভাব ফেলবে না।

"বাংলাদেশের ভাটিতে এই নদীর উপর মুহুরি সেচ প্রকল্প আছে। আমি মনে করি না এই প্রায় দুই কিউসেক পানি উত্তোলন করলে তা পরিবেশের উপর কোন ধরণের প্রভাব ফেলবে," তিনি বলেন।

মি. নিশাত বলেন, দুই দেশের মধ্যে অভিন্ন নদীর সমন্বিত ব্যবস্থাপনা দরকার। যাতে খাবার পানি, নৌ-চলাচল, সেচ এবং নদীর স্বাস্থ্য বিবেচনা করে প্রতিবেশের জন্য পানি, মাছের জন্য পানি যাতে নিশ্চিত করা যায়, সে লক্ষ্যে দুই দেশ আরো ৬টি নদীকে একটা যৌথ ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে চাইছে।

ত্রিপুরার সাবরুমে কী প্রভাব ফেলবে ফেনীর পানি?

ত্রিপুরার সাবরুম মূলত একটি স্থলবেষ্টিত শহর।

পানীয় জল হিসেবে সাবরুমে ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহার করা হয়। যাতে আয়রনের পরিমাণ অনেক বেশি। এসব কারণ মিলিয়ে ওই অঞ্চলটিতে দীর্ঘদিন ধরেই পানি সংকট চলছিল।

এই চুক্তির পর ওই অঞ্চলটির পানীয় জলের অভাব অনেকাংশেই পূরণ হবে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা।

ফেনী নদীতে যখন বন্যা। ছবিটি ভারতের ত্রিপুরা থেকে ২০১৮ সালে তোলা।

সাবরুমের বাসিন্দা এবং লেখক ও গবেষক অশোকানন্দ রায়বর্ধন বলেন, ফেনী নদীর পানি নিয়ে সমঝোতা চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে ওই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ।

এর আগে থেকেই ফেনী নদীর পাড়ে পানি শোধনাগার তৈরির কাজ অনেক দিন ধরেই চলছিল।

কিন্তু দুই দেশের মধ্যে নদীর পানি ব্যবহার নিয়ে কোন ধরণের সমঝোতা চুক্তি না থাকায় জলের উৎস নির্ধারিত হচ্ছিল না। যার কারণে এই শোধনাগারের কাজ আটকে ছিল।

মি. রায়বর্ধন বলেন, এই চুক্তির মাধ্যমে এই কাজ এখন থেকে পুরো দমে এগিয়ে যাবে।

এদিকে, ফেনী নদীর পানি উত্তোলন ছাড়াও আরেকটি বড় ইস্যু হচ্ছে এর পরিবেশ বিপর্যয়।

গবেষক মি রায়বর্ধন বলেন, ফেনী নদীর উৎসস্থল অর্থাৎ ত্রিপুরার পার্বত্য এলাকায় গাছ কেটে বন-নিধন শুরু হওয়ার কারণে সেখানকার মাটিতে জলধারণ ক্ষমতা কমে গেছে। যার কারণে কমেছে নদীর নাব্যতাও।

এসব কারণে নদীর গভীরতা কমে যাওয়া এমনকি এই অবস্থা চলতে থাকলে এক সময় মানচিত্র থেকে ফেনী নদী মুছে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।

এ অবস্থা থেকে নিষ্কৃতি পেতে হলে উভয় দেশের সরকারকেই নদীর নাব্যতা বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে হবে বলে উল্লেখ করেন মি. রায়বর্ধন।


Tuesday, September 24, 2019

ভেঙে মোর ঘরের চাবি

গতকাল সন্ধ্যায় আগরতলা চেকপোস্টের সর্বশেষ বাধা অতিক্রম করে যখন বাইরে এসে দাঁড়ালেন বাংলাদেশের সম্মাননীয় অতিথিবর্গ তখন আপনমনেই বলে উঠলেন  এই সময়ের শক্তিমান কথাকার, জলজীবনের নিবিড় উন্মোচক শ্রদ্ধেয় হরিশংকর জলদাস , 'ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে' ৷ ভাবছিলাম, হঠাৎ করেই কী এই রবীন্দ্রসূক্ত উচ্চারিত হল তাঁর ওষ্ঠদ্বয়ে ? স্বীয় ভূখন্ড পেরিয়ে এসে আর এক ভূমিতে চরণচিহ্ন দিয়েই তিনি যেন অনুভব করলেন বৃহতের আহ্বান ৷ আবহমানকাল ধরে  প্রবাহিত যে রক্তধারা, যে সংস্কৃতির স্রোতস্বী পুরুষানুক্রমে তিনি বহন করে চলেছেন তারই প্রতিফলন যেন এই অমোঘগোধূলির মায়াঅন্ধকারে এই ভূমিভাগেও চিরবিচ্ছুরণ ঘটছে ৷ এখানেই নিজেকে হৃদয় উজাড় করে মেলে ধরা যায় ৷ এখানে তাঁর অন্তর্গত ভদ্রাসন থেকে বেরিয়ে এসে বৃহদালয়ে প্রবেশের কাঙ্ক্ষার তীব্র আর্তি উৎসারিত ৷ মানুষের জীবনের প্রতিমুহূর্তের ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে, প্রতিপলের  সুখ আহ্লাদের সঙ্গে ও তার বিপরীতে মানবিতার চরম অসম্মানের দগ্ধক্ষণের সঙ্গে  নিবিড়ভাবে জড়িয়ে থেকে সাহিত্য ও সংস্কৃতির  বিশাল ভুবনের মকরন্দের আস্বাদটি যাঁরা নেন তাঁদের কাছে আপননিলয়টি অনেক পেছনে পড়ে থাকে ৷ এক তীব্র যন্ত্রণা থাকে অসীমের মহালয়ের সঙ্গে মিলনের ৷ আরো আরো বড়ো জগৎটার সঙ্গে মিলিত হবার ৷ একজন জীবনসন্ধানী নিজেকে ভেঙে আসার আকুতি আজীবন বয়ে চলেন ৷ একজীবনভর খুঁজে ফেরেন সেই সত্যপিরকে যিনি ক্ষুদ্রকায় প্রায়ান্ধকার অলিন্দ থেকে তাঁকে বিশ্বপ্রাসাদের বিরাট আঙিনায় পোঁছে দিতে পারেন ৷ আর সেই মধুঅঙ্গনের সঙ্গে বহুপরিচিত 'মোর ঘরের' সাথে কোনো মিল থাকেনা ৷ সেখানেই তো জীবনের আসল আনন্দযজ্ঞ ৷ অকৃত্রিম প্রতিবেশ ৷ জীবনসন্ধানী সে পথ দিয়েই পায়ে পায়ে এগিয়ে যান ৷ তার জন্যে কম্পাস সেই অন্তর্পুরুষ ৷ যিনি পারেন ঘরছাড়া করাতে প্রতিটি সৃজনকর্মীকে ৷

সেপ্টেম্বর একুশ, দুহাজার আঠারো

Sunday, September 22, 2019

শব্দব্যবহার

Sankha Sengupta  আগে আগামতর্পন:
আগে একটা পরিচিত চুটকি মনে করিয়ে দিই ৷ একযুবক একটা সেলুনে ঢুকেছে দাড়ি কাটানোর জন্যে ৷ ক্ষৌরকার তার একগাল কামিয়ে দিয়ে যুবকের গায়ে দেওয়া এ্যাপ্রনটা খুলে ফেলল ৷ যুবক বলল, কী ব্যাপার?  আমার আর একগাল? ক্ষৌরকার উল্টোদিকের আর একটা সেলুন দেখিয়ে দিল ৷ ওটা ওই দোকানে হবে ৷ কেন?  এখানে নয় কেন?  তরুণ ক্ষৌরকর্মী উত্তর দিল, আমি যে বছর এই কোর্সটা করি সেবছরের পরীক্ষায় ডান গালটা কমন ছিল ৷
গতসন্ধ্যায় আমার শহর সাব্রুমের বাজারে একটা ঘোষণা হয় ৷ তার সংক্ষিপ্ত বয়ানটা তুলে ধরছি ৷ 'বিগত কিছুদিন আগে সাব্রুম বাজারের ব্যবসায়ী.......... প্রয়াত হয়েছেন ৷ তাঁর আত্মার সদ্গতি কামনার্থে আগামীকাল সন্ধ্যায় এক শোকসভার  আয়োজন করা হয়েছে ৷ উক্ত সভায় বাজারের সমস্ত ব্যবসায়ীদের উপস্থিত
থাকার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে ৷ ধন্যবাদান্তে সাব্রুম বাজার ব্যবসায়ী কমিটি ৷
এর কিছুক্ষণ পরে আমি যখন সান্ধ্য আড্ডার উদ্দেশ্যে বাজারে আসি তখন আমার কয়েকজন প্রাক্তন ছাত্র ও পরিচিত যুবক আমাকে বিনয়ে প্রশ্ন করল, স্যার এনাউন্সটা কি ঠিক হয়েছে?  আমি জিজ্ঞাসা করলাম,  কী হয়েছে?  তখনও ঘোষণাটা চলছিল ৷ একজন বলল, ওই যে বলছে, 'বিগত কিছুদিন আগে' আর 'ধন্যবাদান্তে' ৷ 'কিছুদিন আগে' বলল, আবার 'বিগত'ও বলল ৷ আর শোকসভার জন্যে কী ধন্যবাদ জানিয়ে আমন্ত্রণ করা ঠিক হল?  আমিও মজা করে বললাম, তোমাদের যখন পড়াই তখন কী এরকম কিছু সিলেবাসে ছিল?  ওরা সন্তুষ্ট হলনা আমার কথায় ৷ না স্যর ৷ মজা করবেননা ৷ সিরিয়াসলি বলছি ৷ কেউ যাতে মনে কষ্ট না নেয় তারজন্যে একটু মোলায়েম করেই আমাকে ব্যাখ্যা করতে হল যে, মৃতের প্রতি শ্রদ্ধাবশত আহ্বানটা ধন্যবাদান্তে না হয়ে শোকাহত বা শোকসন্তপ্ত হওয়াই কাম্য ৷ এরকম নিতান্ত নগণ্য সহবতগুলো আমাদের বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচী থেকে শিখতে হয়না ৷ অন্তরের শিক্ষকই শিখিয়ে দেন ৷ সেই মুর্শিদের নূর না পেলেই যতই বিদ্যার বড়াই করি না কেন জীবিত মানুষটিরও অমরত্ব কামনা করে ধ্বনি দেব আমরা ৷ আর পরিবেশিত বিষয়কে পোক্ত করার জন্যেই পাশাপাশি সমার্থক শব্দের ব্যবহার লক্ষ করা যায় ৷
নামবিকৃতিপ্রসঙ্গ:  এই যে প্রসঙ্গটা উঠল আমি এটাকে বিকৃতি বলবনা ৷ এই পরিবর্তন যেমন পূর্ববঙ্গীয় বাংলা উচ্চারণে রয়েছে তেমনি পশ্চিমবঙ্গীয় বাংলায়ও রয়েছে ৷ আমরা যেমন দুলাইল্লা/ দুলাইল্যা তেমনি পশ্চমবঙ্গেও দুলালে ৷ মনে করোনা শ্রীরামকৃষ্ণের সেই বিখ্যাত সংলাপ—  রাখালে, গিরীশ আমাকে দেড়খানা নুচি খাইয়ে এমন গালাগাল দিলে রা ! রাখাল এখানে 'রাখালে' ৷ আমরা পূর্ববঙ্গীয়রা বলতাম 'রাখাইল্লা' বা 'রাখাইল্যা' ৷ সবটাই কিন্তু ব্যাকরণের নিয়ম মেনে হচ্ছে ৷ বেশি লম্বাচওড়া রাস্তায় না গিয়ে সংক্ষেপে বলি ৷ মূল নামপদ রাখাল থেকে পরিবর্তিত দুটো রূপ পেলাম ৷ রাখাল>রাখালে>রাখাইল্লা/রাখাইল্যা ৷ প্ৰথম পরিবর্তনটাকে বলা হয় অভিশ্রুতি ৷ আর দ্বিতীয় রূপটি হল অপনিহিতি ৷ এরকম পরিবর্তন ক্রিয়াপদেও লক্ষ করা যায় ৷ অভিশ্রুতির উদাহরণ রাঢ়ী অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গীয় বাংলায় পাই ৷ এবং অপিনিহিতির লক্ষণ বঙ্গালী অর্থাৎ পূর্ববঙ্গীয় বাংলায় পাই ৷ এইধরনের লক্ষণ চাকমা ভাষায়ও আছে ৷ যেমন বিমইল্লা কিংবা বরপেদা ইত্যাদি ৷ নামের সঙ্গে এই বাংলা প্রত্যয়ের যোগ করে উচ্চারণে দুটো মানসিক প্রভাব পড়তে পারে ৷ এক-আন্তরিকতা বা সম্পর্কের নৈকট্য ৷ দুই- বিরোধ বা অশ্রদ্ধা ৷ তবে ব্যবহার ব্যাকরণসম্মত ৷
* দীর্ঘ লেখাটায় একটাও বানান ভুল থাকলে মার্জনা চাই ৷ বিস্তৃত না লেখায় ব্যাখ্যা অস্পষ্ট থাকতে পারে ৷ সাক্ষাতে পরিশ্রুত হব ৷

Saturday, September 21, 2019

শ র ৎ

তোমার চোখ
      শিউলি ফুলের মতো
           আকাশমুখী
##################
           চলো হে সই
        যেখানে পাহাড়ের
           সঙ্গমে মেঘ
###################   
          সহেলির চুমু
       আঁচড় কেটে গেছে
         আঁচলে ঢাকো
###################
           বর্ষার তাড়া
         ঘরছাড়া হয়েছে
            শরৎকাল
#############

Friday, September 20, 2019

সেতু

আমাদের সংসারে
মা, প্রাচীন  সাঁকো

নড়বড়ে সেতুটা
ভাঙলো বলে

আর সংসারের
শেষ বাঁধনও

মা

বিছানায় সাদা থান জড়িয়ে
মৌন শয্যায় পবিত্রতা

কাত হয়ে দেখেন
চিলেকোঠার আকাশ

অলীক ক্যানভাসে ভাসে
অতীতের সন্ততিবর্গ

মেঘলা মনে
অনিকেত ডাকঘরের
খাম হাতড়ে ফিরছেন

আমার মা
ক্রমশ সুদূরে সরে যাচ্ছেন
আমাদের নিঃস্ব করে

Friday, September 13, 2019

ঘু ঙু র লি পি


রাতঘুঙুরের সুরবাহারি শিসে জেগে ওঠে সুপ্ত তারা
মেঘের জমাট জীবাশ্মের শরীর ছুঁয়ে হেঁটে যাই নিঝুম
স্নায়ুর ভেতর বেজে ওঠে বুনো মাদল দুরন্ত আওয়াজে
হরিনীরা ঈশ্বরীর মতো ঘুরে বেড়ায় জোছনার ঘাসবনে

প্রাচীন ঘরের সব দরোজায় শেকল টেনে বেঁধে রেখে
আত্মপ্রসাদে নিশ্চিন্ত হই কাঁটাতারের আড়ালে
বিষাগোধূলির ভদ্রাসন ভুলে পর্ণমোচী সুখের ইসারায়
জমি- জিরেত, পুকুর-কুটুম্ব ফেলে যাই ৷ গ্রস্ত হই নিকষ আঁধারে ৷

শতাব্দীপ্রবীন ভূভাগের বুক জুড়ে যখন কান্নার সুর বাজে
দেখি যতো পিতৃপুরুষেরা গান ধরেন বিচ্ছেদী উঠোনে
আমরা পরস্পর চোখে চোখ রাখতে পারি না কেন যে
চেয়ে থাকি দিগন্তের দিকে কখন ভেসে উঠবে আলোকের গান

মাঝে মাঝে ঘুম ভাঙে ৷ প্রাগৈতিহাসিক ঘুম টুটে আমাদের ৷
তখন হৃদয়ে আলোড়ন তুলি, আমরা সব কাতর কবিয়াল ৷

Tuesday, August 13, 2019

শি কা র

পাখির ঠোঁটে যে খড়কুটো থাকে
তাতে অনেকগুলো আবাসনের মালমশলা
পাখির ঠোঁটে যে শস্যবীজ বন্দী থাকে
তারসঙ্গে অনেক অনেক প্রাণের মহিমা বসত করে ৷

সমস্ত পাখিদের সংসারে কিছু মানব লুকিয়ে থাকে
সে মানব সহিংস হতে জানেনা ৷
ব্যথা ও বেদনায় কেবল অনশনে উপশম খোঁজে৷

শিকারীর তুণীরে তবুও কোনো সৎ পুঁথি রাখেনা ৷

Monday, July 22, 2019

'চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে' গানটির ব‍্যাখ‍্যা

এই গানে গল্পের ছলে সংখ্যা ব্যবহার করে বাউলতত্ত্বের বেশ কিছু বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে ৷ জীবাত্মা-পরমাত্মার অভেদতত্ত্বের উল্লেখসহ ৷ প্রথম পংক্তি 'চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে আমরা ভেবে কী'র সাধারণ মানে শ্যামচাঁদ আর রাইচাঁদের যুগলমিলন হয়েছে ৷ এই যুগনদ্ধ রূপ দেখে অধীন ভক্ত বিস্ময়াকুল হওয়া ছাড়া আর কী করতে পারেন ৷ বাকি বুঝ জন যে জান সন্ধান ৷ মুখোমুখি আলোচনা ছাড়া সবটা ব্যাখ্যা সম্ভব নয় ৷
এ এক অপূর্ব মানবদর্শন—আত্মদর্শনের এমন দুর্বোধ্যতম গান অন্তত বাংলাসাহিত্যে নেই। আমার যা মনে হয় :
চাঁদ : চাঁদ যৌবন। চাঁদের গায়ে চাঁদ লাগা—রজরূপ চাঁদ উদিত হ‌ওয়া।
ছয় মাসের কন্যা : আত্মতত্ত্বের ৬ রিপু।
ঝি : জীবনের স্থূল আকার।
তিন সন্তান : দেহতত্ত্বের তিন ধারা।
নয় মাসের গর্ভবতী : মানবদেহের ৯টি দ্বার।
এগারো মাস : এগারো রুদ্র (দেহের ১১টি দ্বার !)
মাকে ছুঁলে ছেলে মরে : শিশ্ন ছেলে, শুক্রপাত মরণ।
ঘর : মাতৃজঠর।
আমার মনে হয় বাউল আধ্মাতিকতা অতি মাত্রায় সাংখ্য দর্শনের পূরুষ ও প্রকৃতি তত্বের ওপর ভিত্তি করে উঠেছে।পুরুষ এবং প্রকৃতি যখন নিজেদের আত্মদহন করে প্রেমের মাধ্যমে স্বরূপ বোধে স্থিতি লাভ করে রস অর্থাৎ আনন্দের সৃষ্টি করে তখন পরোক্ষানুভূতি সম্পন্ন সাধারন যোগীর মনের বেদনার প্রকাশক এই গান ।

Friday, July 12, 2019

জ্ব র

মাথুরকাঙাল ভাষায় খুলে দেওয়া সব কাঁটাবিষ
ঝরনাপ্রবণ  উচ্ছ্বাসে ঝাঁপ দেবার আদিসূত্র
ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত হলে কবিতাও বুঝি থমকে যায়

প্রেমের জন্যে জ্বর হলে দেখি কবিতার বাড়বাড়ন্ত

মূক ফেনির মুখর পাঁচালি

একটি বহুল প্রচারিত বাংলা প্রবাদ ‘ভাগের মা গঙ্গা পায়না’ ৷ প্রবাদটির মধ্য দিয়ে মায়ের অসহায়ত্বের যন্ত্রণাটিই ব্যক্ত হয়েছে ৷একাধিক পুত্রকন্যার মা শেষ বয়সে কার কাছে থাকবেন, কার যত্ন-আত্যি পেয়ে শেষ দিনগুলো কাটিয়ে জীবনের পরিসমাপ্তি টানবেন তা নিয়ে  অধিক সন্তানের মায়েদের ক্ষেত্রে  থাকে অনিশ্চয়তা ৷ থাকে টানা পোড়েন ৷ একজন একজনের উপর দায়িত্ব অর্পনের অছিলায় মাকে কাটাতে হয় নিসঙ্গ জীবন ৷ এমনকি তাঁর মৃত্যুকালীন সময় ও পরবর্তীকালের পারলৌকিক কার্যাদিও সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়না সেই ভাগাভাগির কারণেই ৷ সেই অর্থেই গঙ্গা পাওয়া অর্থাৎ স্বর্গপ্রাপ্তি ঘটেনা ‘ভাগের মায়ের’ ৷ গঙ্গা যেমন একটি নির্দিষ্ট নদীর নাম তেমনি পরবর্তীকালে তার অর্থবিস্তারের ফলে সমস্ত নদীকেই গঙ্গা নামে অভিহিত হতে দেখা যায় ৷ সেই হিসেবে গঙ্গাকে যেমন পবিত্র নদী হিসেবে মান্য করা হয় এবং তাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সাংস্কতিক আচার-আচরণ পালন করা হয় তেমনি গঙ্গা অববাহিকা থেকে দূরবর্তী স্থানে বসবাসসকারী লোকসাধারণ গঙ্গানদীকে সহজে কাছে না পাওয়ার কারণে ও দারিদ্র্যহেতু ব্যয়সংকোচের পরিকল্পনায় নিজেদের জনপদের নিকটস্থ নদীটিকে গঙ্গাতুল্য মান্য করে এবং লৌকিক-সাংস্কৃতিক-ধর্মীয় আচারসমুহ পালন করে থাকে ৷ ফলে যে কোন নদীই বৃহত্তর অর্থে ‘গঙ্গা’ ৷ এই গঙ্গা থেকেই উদ্ভুত বাংলাশব্দ ‘গাঙ’ ৷ নদী অর্থে ৷ সেকারণেই ত্রিপুরার নদীগুলোর স্থানীয় নাম—মনুগাঙ, দেওগাঙ, জুরিগাঙ, ধলাইগাঙ, মুহুরীগাঙ ইত্যাদি ৷ সাধারণত নদী অর্থে গাঙ,দরিয়া, স্রোতস্বিনী, প্রবাহিনী, তটিনী,তরঙ্গিনী, ইত্যাদি শব্দ ব্যবহৃত হয় ৷ নদী শব্দের উৎস হিসেবে বলা হয় যে, যে প্রবাহিনী নাদ অর্থাৎ গম্ভীর ধ্বনি সৃষ্টি করে প্রবাহিত হয় তাই নদী ৷ নদী শব্দের পুংলিঙ্গে বলা হয় ‘নদ’ ৷ নদ বা নদীর বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতা নিয়ে বিশেষজ্ঞগণ পুরুষবাচক ‘নদ’ শব্দটি সৃষ্টি করেছেন ৷ উভয়ে মিলে নদ-নদী ৷

নদী, জীবন ও লোকজীবন :

পৃথিবীর সমস্ত আদি সভ্যতা নদীকেন্দ্রিক ৷ নদীকে কেন্দ্র করে নদীতীরবর্তী অঞ্চলেই গড়ে উঠেছিল পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতা ৷ যেমন— নিলনদের তীরে মিশরিয় সভ্যতা, ইরাকের ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস নদীর তীরে সুমেরিয় সভ্যতা, হোয়াংহো ও ইয়াংসি নদীর তীরবর্তী চিনসভ্যতা, ভারতের সিন্ধু নদীতীরবর্তী মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পা সভ্যতা ৷ এই নদীতীরবর্তী সভ্যতাসমূহ গড়ে ওঠা এবং শ্রীবৃদ্ধির প্রধান কারণ ছিল নদীতীরবর্তী উর্বরাভূমি এবং এই ভূমিতে চাষাবাদের অফুরন্ত নদীজল ৷ জীবনের অপরিহার্য পানীয়জলের উৎসও এই নদী ৷ তাছাড়া নদীগুলোর নাব্যতা থাকার ফলে প্রাচীন মানুষ যাতায়াতের সুলভ মাধ্যম হিসেবে নদীকে বেছে নিয়েছে ৷ তার ফলশ্রুতিতে নদীকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে বহু জনপদ ও ব্যবসাকেন্দ্র ৷ নদনদীর ছুটে চলার গতির সঙ্গে মানুষও তার চলার গতি মিলিয়ে নিয়েছে বহু প্রাচীনকাল থেকে ৷ পাহাড়-পর্বত থেকে নেমে আসা নদী যেমন সাগরে মহাসাগরে মেশার আকুলতায় ছুটে চলে তেমনি যেন মানবস্রোতধারা জীবনপ্রবাহ বয়ে ধেয়ে যায় অসীমের সঙ্গে মিলনের আকাঙ্ক্ষায় ৷ নদী ও জীবনের এক অদ্ভুত মিল এখানে ৷ এই নিরন্তর ছুটে চলার ধর্মে একে অন্যকে জড়িয়ে  ধরেছে সহোদরের মতো ৷ মানবজীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, উত্থান-পতনের অমরগাথা বুকে নিয়ে নদী অবিরাম ছুটে চলে মোহনা পর্যন্ত ৷
          লোকজীবনে নদীর প্রভাব অসীম ৷ নদী একটি জাতির ঐতিহ্যের স্মারক, ধারক ও বাহক হয়ে থাকে ৷ জনপদের উপর দিয়ে প্রবাহিত নদীসমূহ তাদের স্রোতধারার সঙ্গে বয়ে নিয়ে চলে কিংবদন্তী, লোকগাথা,  লোকশিল্প, লোকসঙ্গীত, অন্যান্য লোকসাহিত্যের উপাদান, সংস্কৃতি ও ইতিহাস ৷ নদী তার উৎস, অবস্থান, গতিপ্রকৃতি সব মিলিয়ে লোকজীবনকে সমৃদ্ধ করে ৷ এক একটি নদীকে ঘিরে নিবিষ্ট সন্ধানে উঠে আসে বহুবিধ লোক-উপাদান, ইতিহাস, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রত্নচিহ্ন ৷

ত্রিপুরার জনজীবন ও নদী :

ত্রিপুরারাজ্যে বাঙালি জনগোষ্ঠী ও জনজাতির লোকজন সাংস্কৃতিক ও সামাজিকভাবে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের সঙ্গে সুদীর্ঘকাল ধরে বসবাস করে আসছে ৷ ফলে এই রাজ্যে একটা মিশ্র সংস্কৃতির বাতাবরণ তৈরি হয়েছে ৷ পার্বত্য নদীবিধৌত এই রাজ্যের জনগণ পারস্পরিক সহাবস্থানের মাধ্যমে স্ব স্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারণ, লালন ও চর্চা করে আসছে তাতে অন্যান্য প্রাকৃতিক পরিমন্ডলের সাথে সংযোগের পাশাপাশি নদী তার বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে ৷ রাজ্যের বিভিন্ন নদীর তীরেই জনপদ, শহর ও বাণিজ্যকেন্দ্রগুলো গড়ে উঠেছে ৷ একসময় রাজ্যের প্রায় প্রতিটি নদীরই নাব্যতা ছিল ৷ পণ্য পরিবহনের মাধ্যম ছিল এই নদী ৷পার্বত্যভূমিতে উৎপন্ন কৃষিজ ফসল অর্থাৎ ধান, পাট, তিল, সরিষা, কার্পাস ইত্যাদি নদীপথেই নৌকাযোগে বিভিন্ন বাজারে তোলা হত ৷ অপেক্ষাকৃত সমতলভূমিতে পলিমাটিপুষ্ট উর্বর নদীতীরবর্তী অঞ্চলের ভূমিতে চাষবাস করে ফসল উৎপাদন করা হয়৷ নদীর জলে জলসেচের সুযোগও রয়েছে ৷ প্রায় প্রতিটি নদীই ত্রিপুরার পাহাড়-পর্বত থেকে সৃষ্টি হয়ে রাজ্যের পার্বত্য ও সমতলভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে ৷ কোনো কোনো নদী ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্ত বরাবর প্রবাহিত হয়েছে ৷ আবার কোনো কোনো নদী ত্রিপুরার অভ্যন্তর থেকে উৎপন্ন হয়ে নিম্নমুখে প্রবাহিত হয়ে রাজ্যের বা বাংলাদেশের অভ্যন্তরের কোনো নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে ৷ ফলে বহু প্রাচীনকাল থেকেই নদীর মাধ্যমে এই দুই ভূখন্ডের মানুষের  পরিবহন ও পরিযায়নের মাধ্যমে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধনও তৈরি হয়েছে ৷ ফলে রাজ্যের জনগণের যে লৌকিক ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাস সবকিছুতেই নদীর প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় ও আশ্রয় রয়েছে ৷ ত্রিপুরার নদীকে কেন্দ্র করে রয়েছে লোকসঙ্গীত ৷ রয়েছে রাইমা সাইমা লোককাহিনির মতো নদীর উৎসকথা, বিজয়নদের তীরে গৌড়ের সুলতান হুসেন শাহের সঙ্গে ত্রিপুরার রাজার সৈন্যদের বীরত্বব্যঞ্জক লড়াইয়ের গাথা, ‘ফান্দে পড়িয়া বগা’র ধলাই নদীর পাড়ে কান্নার বিষাদগীতি, মনু নদীর তীরে সর্বস্ব হারানো রাজা অমরমাণিক্যের আত্মহননের কথা, অমরপুরের গভীর অরণ্যে গোমতীর তীরে পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা বিরল প্রত্নচিহ্ন ইত্যাদি ৷ সময়ের প্রবাহে মানুষের বন কেটে বসত করার তাগিদে, সীমাহীন লোভের আস্ফালনে আজ রাজ্যের নদীগলো তাদের নাব্যতা হারিয়েছে ৷ এমনকি তাদের অস্তিত্ব আজ প্রশ্নের সম্মুখীন ৷ নদী যেদ লোকঐতিহ্যের ধারক ও বাহক এবং জীবনস্বরূপা তা আধুনিক মানুষ ভুলতে বসেছে ৷ অথচ একদিন এই নদীগুলো জীবনপ্রবাহে প্রাণবন্ত ও বেগবান ছিল ৷ ছিল নদীর উদার উপাখ্যান ৷ যথাযথ সংগ্রহের ও সংরক্ষণের অভাবে নদীকেন্দ্রিক লোকঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যময় বহু উপাদান কালগর্ভে হারিয়ে যেতে বসেছে ৷ অনেককিছু হারিয়েও গেছে ৷
  
            ত্রিপুরারাজ্যের ভূখন্ডের উপর দিয়ে যে সমস্ত নদী প্রবাহিত হয়েছে তার অনেকগুলোকে নিয়ে কিংবদন্তী, লোককথা ও ইতিহাস রয়েছে ৷ সমস্ত নদীকে কেন্দ্র করে বিস্তৃত আলোচনা এখানে সম্ভব নয় ৷ ত্রিপুরারাজ্যের দক্ষিণ প্রান্তের যে নদীটি  পুরোপুরি ভারত ও বাংলাদেশের সীমানাকে চিহ্নিত করে প্রবাহিত হয়েছে সেই ফেনী নদীকে কেন্দ্র করে আলোচনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াস নেওয়া হবে ৷
ত্রিপুরা রাজ্যের প্রান্তিক নদী ও রাজন্য ত্রিপুরা এবং বর্তমান রাজনৈতিক ভূখন্ডের সীমানির্দেশক প্রাকৃতিক চিহ্ন হিসেবে ফেনী নদীর উল্লেখ পাওয়া যায় কিছু কিছু প্রাচীন গ্রন্থ ও পুঁথিসাহিত্যে ৷

উৎস, গতিপথ  ও অধিবাসী  :

    ফেনী নদী ত্রিপুরারাজ্যের কালাঝারি পাহাড় থেকে ক্ষীণ স্রোতধারার আকারে প্রবাহিত হয়ে গোমতী জেলার করবুক মহকুমার জলেয়াতে আরো কিছু ছোটো ছোটো ঝরনা, ছড়ার জলে পুষ্ট হয়ে ফেনী নাম নিয়ে 23°20’ উত্তর অক্ষাংশ ও 91°47’ পূর্ব দ্রাঘিমারেখার উপর দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুমের আমলিঘাট পর্যন্ত ত্রিপুরারাজ্যের দক্ষিণ সীমানাকে চিহ্নিত করে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে 22°50’ উত্তর অক্ষাংশ ও 91°27’ পূর্ব দ্রাঘিমারেখাতে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে ৷ উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত ফেনীনদীর দৈর্ঘ 153 কিলোমিটার ৷ এই নদী ভারতের ত্রিপুরারাজ্যের গোমতী জেলা এবং দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার পার্বত্যভূমির প্রান্ত দিয়ে এবং বাংলাদেশের খাগড়াছড়ি পার্বত্যজেলার প্রান্ত ধরে প্রবাহিত হয়ে ত্রিপুরার আমলিঘাট জনপদের পর  বাংলাদেশে প্রবেশ করে ওই দেশের ফেনী জেলা ও দক্ষিণ চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই উপজেলাকে বিভক্ত করেছে ৷পার্বত্য অঞ্চল ও সমভূমি এলাকায় ফেনীর দুইপারে বিস্তীর্ণ জনপদ, বর্ধিষ্ণু গ্রাম ও বাণিজ্যকেন্দ্র রয়েছে ৷ নদীতীরের ভূমিও খুব উর্বরা ৷ ফেনীনদীর নিম্নাঞ্চলে বাংলাদেশের ভেতর জেলাসদরও ফেনী নামে পরিচিত ৷ এই শহরও বেশ প্রাচীন ৷ ফেনীনদীর পার্বত্য অংশের ভারতীয় অংশে ও বাংলাদেশের দিকে দীর্ঘকালব্যাপী মিশ্র জনবসতি রয়েছে ৷জনজাতির জনগণের মধ্যে ত্রিপুরি, মগ ও চাকমা জনগোষ্ঠীর লোকজনই তুলনামূলকভাবে বেশি ৷ বাঙালি অংশের মানুষজনের বসতি শুধুমাত্র বর্ধিষ্ণু জনপদ এবং বাণিজ্যকেন্দ্রেই বেশি ৷ সমভূমি অংশে বাঙালি জনগোষ্ঠীরই প্রাধান্য রয়েছে ৷

ফেনী নদীর উৎস নিয়ে সৃষ্টিকথা  :

ভূবিজ্ঞান অনুযায়ী ফেনী নদীর উৎস ও গতিপথ সম্বন্ধে যে চিত্র উপরে তুলে ধরা হয়েছে  তা আধুনিক কালের বিজ্ঞানসচেতন  মানুষের প্রত্যক্ষ অনুসন্ধানলব্ধ তথ্য ৷কিন্তু আদিম মানুষ কোনো বস্তু, প্রাণী বা বিষয়ের উৎস সম্বন্ধে একধরণের সৃষ্টিকথা লোকমুখে প্রচলিত রাখত ৷ এগুলোকে বলা হয় লোকপুরাণ ৷ ফেনী নদী সম্বন্ধেও এখানকার প্রাচীন অধিবাসীদের মধ্যে একটি লোকপুরাণ প্রচলিত আছে ৷ জনজাতীয় জনগোষ্ঠীভেদে কিঞ্চিৎ রূপান্তর আছে কোথাও কোথাও ৷ নোয়াখালি চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাঙালি জনগোষ্ঠীর মধ্যেও সামান্য রূপান্তর ঘটিয়ে এই কাহিনিটি প্রচলিত ৷
        প্রাচীন এই লোকপুরাণ অনুযায়ী জানা যায় যে, এক জুমিয়ার দুটি কন্যা ছিল ৷ তারা ছিল মাতৃহীন ৷ জুমিয়া বাবা তাদের, মায়ের মতো আদর স্নেহ দিয়ে লালন পালন করত ৷ দুইবোনও বাবাকে যথাসাধ্য সাহায্য করত ৷ বাবা জুমে খেতের কাজে গেলে তারা তাদের টংঘরে রান্নাবান্না করে বাবার জন্যে খাবার  নিয়ে যেত জুমে ৷ বাবাকে খাইয়ে দাইয়ে টংএ ফিরত ৷ একদিন তারা দুবোন বাবার জন্যে খাবার নিয়ে রওনা হয়েছে কিন্তু পথে পড়ল হাতির পাল ৷ ওরা দলবদ্ধ হয়ে রামকলাগাছ খাচ্ছিল ৷ যতক্ষণ হাতির পাল সরে না যায়, দুবোন অপেক্ষা করতে লাগল ঝোপের আড়ালে ৷ এদিকে সারাদিনের পরিশ্রমে জুমিয়া ক্লান্ত হয়ে অপেক্ষা করছে খাবারের জন্যে ৷ বেলা যায় ৷ কিন্তু মেয়েরা আসছেনা ৷ ক্ষুধায় পিপাসায় কাতর হয়ে জুমিয়া টিলার উপর উঠে দেখতে লাগল চারিদিক ৷ কিন্তু মেয়েদের দেখা যাচ্ছেনা ৷ একসময় খাদ্য ও পানীয়ের জন্যে কাতর হয়ে জুমিয়া পাহাড়ের উপরেই মৃত্যুবরণ করল ৷ একসময় হাতির পাল সরে গেলে শেষবেলার দিকে মেয়েরা বাবার জুমখেতে আসে ৷ কিন্তু বাবাকে দেখতে পায়না তারা ৷ এদিকে পাহাড়ের আড়ালে সূর্য ডুবে আসছে ৷ অন্ধকার হয়ে আসছে চারিদিক ৷ দুইবোন জোরে জোরে ডাকতে লাগল বাবাকে ৷ কিন্তু ওদের আকুল ডাক পাহাড়ে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে এল ৷ বাবাকে খুঁজতে খুঁজতে তারা পাহাড়ের মাথায় উঠে এল ৷ দেখল সেখানে তাদের বাবা পড়ে রয়েছে ৷ গায়ে হাত দিয়ে দেখল বাবার শরীর ঠান্ডা ৷ ওরা বুঝল ওদের বাবা মারা গেছে ৷ মাকে তো ওরা অনেক আগেই হারিয়েছে ৷ এবার বাবাকেও হারিয়ে তারা একেবারে অনাথ হয়ে গেল ৷ দুবোন পাহাড়ের চুড়োয় বসে দুজন দুদিকে ফিরে কাঁদতে লাগল ৷ ওদের চোখের জল গড়াতে লাগল পাহাড়ের চুড়ো থেকে দুইদিকে দুই ঢাল বেয়ে ৷ওদের কান্নার অশ্রু থেকে জন্ম নিল দুটি নদী ৷ পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসা এই দুটি নদী দুবোনের নামে সৃষ্টি হয়েছে— কর্ণফুলী ও ফেনী ৷ কাহিনির শেষে বলা হয়, দুইবোনের বাবা যেহেতু খাদ্য ও পানীয়ের অভাবে মারা গেছে সেকারণে তাদের চোখের জলে সৃষ্ট নদী মানুষকে খাদ্য ও পানীয় যোগাবে ৷ ফেনী নদীর সৃষ্টিকথার এই কাহিনির মধ্যে  নারীজীবনের এক গভীর মর্মসত্য নিহিত রয়েছে ৷ বাপের বাড়িতে বোনেরা একসাথে বড়ো হলেও বিবাহের পর কে কোথায় সংসার করতে চলে যায় তা বলা যায়না ৷ দূরদেশে বিয়ের ফলে কদাচিৎ বোনে বোনে দেখা হয় বা মোটেই হয়না ৷ ফেনীপারের মানুষের মধ্যে একটা লোকপ্রবাদ প্রচলিত আছে—নদীএ নদীএ দেআ অয়, ভইনে ভইনে দেআ অয় না ৷ পাহাড়ের দুইধার দিয়ে বয়ে যাওয়া দুইবোন ফেনী আর কর্ণফুলীর মধ্যে আর কোনোদিন দেখা হয়নি ৷ যেমন হয়না বাস্তবজীবনে দুইবোনের মধ্যে ৷ সেজন্যেই তো নদী ও জীবন, নদী ও সংস্কৃতি আর নদী ও নারী এক অবিচ্ছিন্ন সম্পর্কে জড়িয়ে রয়েছে মানুষের জীবন জুড়ে ৷ ফেনী নদীর লোকপৌরাণিক ব্যঞ্জনা জীবনবোধেরই প্রকাশ ৷

ফেনী নদীর নামকরণ  :

         ড. আহমদ শরীফ তাঁর ‘চট্টগ্রামের ইতিহাস’ গ্রন্থে লিখেছেন, “ প্রাচীনকালে আধুনিক ফেনী অঞ্চল ছাড়া নোয়াখালির বেশির ভাগ ছিল নিম্ন জলাভূমি ৷ তখন ভুলুয়া ( নোয়াখালির আদিনাম)  ও জুগিদিয়া (ফেনী নদীর সাগরসঙ্গমে অবস্থিত)  ছিল দ্বীপের মতো ৷ ছাগলনাইয়া নামকরণ সম্পর্কে কেউ কেউ বলেন যে, ইংরেজ আমলের শুরুতে  (Sagor) শব্দটি ভুলক্রমে ( Sagol) নামে লিপিবদ্ধ হয়েছিল ৷ তাই ছাগলনাইয়া শব্দটি প্রচলিত হয়ে ওঠে ৷ উল্লেখ্য ইংরেজ আমলের পূর্বে কোনো পুঁথিপত্রে ছাগলনাইয়া নামের কোনো স্থানের নাম পাওয়া যায়না ৷’ কোনো কোনো গবেষকদের মতে, একসময় সাগরনাইয়ার আংশিক  এলাকা, সোনাগাজি ও ফেনী সদরের পুরোটাই বঙ্গোপসাগরের উপকূলের চরভূমি ছিল ৷ তখন সাগরের ফেনায় ঢাকা থাকত মোহনা অঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন নদীটি ৷ তার থেকে নদীর নাম হয় ‘ফেনী’ ৷ কেউ কেউ বলেন ‘ফেনী’ নামে কোনো রাজার নাম অনুসারে এই অঞ্চলের নদীটির নাম হয় ‘ফেনী’ ৷ তবে ইতিহাসে তেমন কোনো রাজার নাম পাওয়া যায়না ৷
        সমুদ্রগুপ্তের আমলের শেষভাগে (375-414খ্রি.) চিনা পরিব্রাজক ফা-হিয়ান ভারত সফরকালে  চট্টগ্রামে আসেন এবং সমুদ্রতীরবর্তী এই অঞ্চলে কিছুদিন অবস্থান করেন ৷ তাঁর ভ্রমণকাহিনিতে ‘ভুলুয়া’ নামে একটি বিখ্যাত জনপদ ও সমুদ্রবন্দরের কথা উল্লেখ করেছেন ৷ এই অঞ্চলে তাঁর অবস্থানহেতু তাঁর নামানুসারে কালক্রমে ‘ফা-হিয়ানী’ থেকে ‘ফেনী’ হয়েছে বলে কেউ কেউ বিশ্বাস করেন ৷

ফেনী নদীর নামকরণে লোকভাষা  :

    ফেনী নদীর তীরবর্তী বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বসবাসকারী মগ জনজাতীয়রা এই নদীর নাম তাদের দেওয়া বলে দাবি করেন ৷ তাঁরা বলেন, ‘ফোয়ে-নি-রে’ অর্থাৎ ‘গোসাপের আবাস’ বা ‘এখানে গোসাপ থাকে’ বলতে যে শব্দগুচ্ছ তাঁরা ব্যবহার করেন তা থেকে কালক্রমে পরিবর্তিত হয়ে ‘ফেনী’ শব্দটি এসেছে বলে এই জনগোষ্ঠীর জনগণ দাবি করেন ৷ পর্বতসংকুল ফেনী নদীর পারে ঝোপেঝাড়ে একসময়  প্রচুর গোসাপের আড্ডা ছিল বলে জনশ্রুতি রয়েছে ৷ ফেনী নদীর উচ্চগতিতে পার্বত্য অঞ্চলে বাংলাদেশের অংশে নদীর পাড় থেকে কিছুটা দূরে একটা পার্বত্য জনপদ রয়েছে যার নাম ‘গুইমারা’ ৷ স্থানীয় বাংলায় গোসাপকে ‘গুইল’ বলা হয় ৷ সম্ভবত এখানে গোসাপ বা গুইল মারা পড়ত বলে স্থানটির নাম ‘গুইলমারা’থেকে ‘গুইমারা’ হয়েছে ৷ শিকারে ধরা পড়া এবং মারা যাওয়া বন্যপ্রা‌ণীর নামানুসারে স্থাননামের উদাহরণ ত্রিপুরায় বহু রয়েছে ৷ যেমন— বাঘমারা, হাতিমারা, হাতিমরাছড়া, হরিণমারা, কাউয়ামারা ইত্যাদি ৷ গুইমারাও সেরকম একটি স্থাননাম ৷
     চাকমা ভাষাতেও ‘ফেনী’ শব্দটি পাই  প্রত্যাবর্তন অর্থে ৷ যেমন, চাকমা লোককাহিনি রাধামন-ধনপুদি পালায় রয়েছে— ‘দোমে বাজায় ধোল দগর/ ফেনী যেইয়ুং নুরনগর’ ৷ এখানে ‘ফেনী যেইয়ুং নুরনগর’ বলতে  নুরনগর ফিরে যাওয়ার কথা বোঝাচ্ছে ৷ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ফেনী নদীর উজান এলাকায়  ত্রিপুরা ও পার্বত্য চট্টগ্রামে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে চাকমা জনজাতির বাস রয়েছে ৷ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশাল এলাকা একসময় চাকমা রাজাদের অধীন ছিল ৷ ত্রিপুরারাজ্যের রাজাদের সঙ্গে চাকমা রাজাদের বিবাদ-বিরোধের তেমন কোনো নিদর্শন ইতিহাসের পাতায় পাওয়া যায়না ৷ চাকমা রাজারা সম্ভবত তাঁদের রাজ্যসীমা ফেনী নদীর পাড় পর্যন্ত রেখেছিলেন ৷ফেনী নদীর পাড় পর্যন্ত তাঁদের রাজ্যসীমা চিহ্নিত করে তাঁরা তাঁদের রাজ্যের অভ্যন্তরভাগে ফিরে গেছেন ৷ এই বক্তব্যের সূত্র ধরে এই নদীর নাম ফেনী বলে চাকমাগোষ্ঠীর জনগণের অনেকে মনে করেন ৷ ফেনী নদীর পাড়ে বাংলাদেশে দেওয়ানবাজার নামে একটি স্থান আজও রয়েছে ৷
    ইতিহাস, পুরাকথা, লোককাহিনি, লোকভাষা ইত্যাদির মধ্যে যেমন ফেনী নদীর নামকরণের বৈচিত্রময় উৎস খুঁজে পাওয়া যায়, তেমনি ফেনীপারের অনেক স্থাননামের সঙ্গে পৌরাণিক স্থাননামের সাজুয্য খুঁজে পাওয়া যায় ৷ যেমন, এই নদীর উজানভাগে বাংলাদেশ অংশে রয়েছে  অযোধ্যা, রামগড় আর ভাটির দিকে রয়েছে কালিদহ, চম্পকনগর ইত্যাদি নামের বহু প্রাচীন জনপদ ও বাণিজ্যকেন্দ্র ৷ আবার কিছুদূরেই চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উপর সীতাকুন্ড নামে একটি উষ্ণ প্রস্রবন রয়েছে ৷ শুধুমাত্র ফেনী নদীই নয়, নদীর দুইপাড়ে কাছে দূরে অনেক স্থানই  নানা নামমাহাত্ম্য বহন করে চলেছে ৷ যেমন একটু দূরে ভারতের দিকের পাহাড়টির নাম তুলসীটিলা ৷ আর  পাহাড়ের মধ্যে জোড়া পাহাড় ‘মামা-ভাগিনার টিলাকে নিয়েও রয়েছে মিথ ৷ এই পাহাড়কে স্থানীয় উপজাতীয়রা ‘রানির টিলাও বলে থাকেন ৷আর একটি জনপদ রয়েছে তার নাম ‘ঋষ্যমূক’ (স্থানীয় উচ্চারণে ঋষ্যমুখ) ৷ এমন অনেক পৌরাণিক অনুষঙ্গ জড়িয়ে রয়েছে ফেনিতীর ৷

ফেনী নদী  : প্রাচীন গ্রন্থ ও পুঁথিসাহিত্যে  :

মহারাজা ধর্মমাণিক্যের আমলে (1431-62খ্রি.) শ্রীহট্ট জেলার অন্তর্গত দক্ষিণ পরগণার ঠাকুরবাড়ি গ্রামের অধিবাসী দুজন পুরোহিত শুক্রেশ্বর ও বাণেশ্বর বাংলা পয়ার ছন্দে রাজমালা রচনা করেন ৷ তাঁরা ধর্মমাণিক্যের আমন্ত্রণে তাঁর পূর্বপুরুষের কীর্তিকাহিনি  শোনার বাসনায় বাংলা হরফে একটি সংস্কৃত পুঁথি রচনা করেন ৷ তার নাম ‘শ্রীরাজরত্নাকরম’ ৷ এই পুঁথিতে লেখকের নাম বা রচনার কোনো সন-তারিখ উল্লেখ নেই ৷ তবে এর রচনাকাল 1462 খ্রি.র মধ্যে কোনো এক সময়ে হয়ে থাকবে ৷ সেই পুঁথির শেষাংশ অর্থাৎ দ্বাদশ সর্গের শেষভাগে রাজচন্তাই দুর্লভেন্দ্রর বয়ানে ত্রিপুরার সীমাবর্ণনা রয়েছে এইভাবে—
                                      দুর্লভেন্দ্র উবাচ
                অতিপ্রাচীনমেবেদং রাজ্যং ত্রিপুরসংজ্ঞিতম৷
                মহাদেবং বিহারার্থং ব্রহ্মণা নির্মিতং পুরা ৷৷ 94
                ত্রিপুরেশবনং পুণ্যং-প্রসিদ্ধং সত্যকালতঃ ৷
                কিরাতনিচয়াস্তত্র নিবাসং চক্রিরে পুরা ৷৷ 95
                তে কালে বিপুলং রাষ্ট্রং কৃতবন্তো ধনুর্ধরাঃ ৷
                ভবানী কৃপয়া রাজন্ ত্রেতায়ামিতি শুশ্রূমঃ ৷৷ 96
                ব্রহ্ম-কিরাত-ভূভাগ পূর্বসীমা প্রকীর্তিতা ৷
                দেশস্তু কচ্ছলিঙ্গাখ্যঃ সীমাগ্নেয়ী প্রকীর্তিতা ৷৷ 97
                ফেনবতী নদী তস্যস্থিতা দক্ষিণ সীমনি ৷
                নৈঋত্যাং কচ্ছরঙ্গো হি তস্য সীমোচ্যতে জনৈঃ ৷৷98
( দুর্লভেন্দ্র বললেন—ত্রিপুর নামক রাজ্যটি অতি প্রাচীন ৷পুরাকালে ব্রহ্মা মহাদেবের বিহারার্থ এই রাজ্য  নির্মান করেছিলেন ৷ ৷94৷ সত্যযুগ থেকেই ত্রিপুরেশের পবিত্রবন হিসেবে এই রাজ্য প্রসিদ্ধ ৷ (অবশ্য) পুরাকালে কিরাতগণ এখানে নিবাস স্থাপন করেছিল ৷ ৷95৷ হে রাজন, ধনুর্ধর কিরাতেরা কালক্রমে এক বিপুল রাজ্য নির্মান করেন ৷ শোনা যায়, ভবানীর কৃপায় ত্রেতাকালে এই ব্যাপারটি সম্ভব হয়েছিল৷৷96৷ ব্রহ্ম ও কিরাতদেশে এর পূর্বসীমা বলে প্রকীর্তিত ৷ কচ্ছলিঙ্গ নামক দেশ এ রাজ্যের শুভ আগ্নেয়ী (পূর্ব-দক্ষিণ) সীমা বলে সুবিদিত ৷৷97৷ এর দক্ষিণ সীমায় ফেনবতী নদী প্রবাহিত ৷ কচ্ছরঙ্গ দেশের নৈঋত দিকে অবস্থিত বলে লোকত প্রসিদ্ধ ৷৷98৷ এখানে স্পষ্ট বোঝা যায়, ত্রিপুরা রাজ্যের দক্ষিণ সীমা নির্দেশক ‘ফেনবতী’ নদীটিই বর্তমানের ফেনী নদী ৷
         মধ্যযুগের কবিদের রচিত পুঁথিসাহিত্যে একটিবিশেষ নদীর জলধারা এবং খেয়া পারাপারের জন্যে ব্যবহৃত ঘাট হিসেবে ‘ফনী’ শব্দটির উল্লেখ দেখতে পাওয়া যায় ৷ পঞ্চদশ শতকের শেষ ও ষোড়শ শতকের প্রথমার্ধে চট্টগ্রাম শাসন করেন আলাউদ্দিন হোসেন শাহ (1494-1519খ্রি.) ও তাঁর পুত্র নসরৎ শাহ (1519-1533খ্রি.) ৷ এইসময় চট্টগ্রামে শাসক ছিলেন লস্কর পরাগল খাঁ ও তাঁর পুত্র ছুটি খাঁ ৷ সেসময় চট্গ্রামের প্রশাসনিক কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছিল পরাগলপুরে যা লস্করপুর নামেও খ্যাত হয় ৷ এখানে রাজধানী স্থাপন করে লস্কর পরাগল খাঁ ও তাঁর পুত্র ছুটি খাঁ প্রায় ত্রিশ বছরের বেশি সময় চট্টগ্রামে শ্রীকর নন্দী ৷ মধ্যযুগে বাংলাসাহিত্যচর্চার এক প্রধান কেন্দ্র হয় ওঠেছিল তখন পরাগলপুর বা লস্করপুর ৷ প্রথমজন অর্থাৎ কবীন্দ্র পরমেশ্বর রচনা করেছিলেন পরাগলী মহাভারত এবং দ্বিতীয়োক্ত শ্রীকর নন্দী ছুটি খাঁর নির্দেশে পয়ার ও ত্রিপদী ছন্দে মহাভারতের অশ্বমেধ যজ্ঞ বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন ৷ তাঁর এই অনুবাদকর্ম ছুটি খানি মহাভারত নামে বাংলাসাহিত্যে সমাদরের সঙ্গে আলোচিত হয় ৷ কবি শ্রীকর নন্দী পরাগলপুর বা লস্করপুরের পরিচয়প্রসঙ্গে বর্ণনা করেছেন—

                                চাটিগ্রাম নগরের নিকট উত্তরে
                                চন্দ্রশেখর পর্বত কন্দরে ৷৷
                                চারুলোল গিরি তার পৈতৃক বসতি
                                বিচিত্র নিরমিল তাক কি কহিব অতি ৷৷
                                পরি বর্ণ বসে লোক সেনা সন্নিহিত
                                নানা গুণে প্রজা সব বসএ তথাত ৷৷
                                ফেনী নদী নামে এ বেষ্টিত চারিধার
                                পূর্বদিকে মহাগিরি পার নাহি তার ৷৷
                                লস্কর পরাগল খানের তনয়
                                সমরে নির্ভএ ছুটি খান মহাশয় ৷৷
          স্পষ্টই বোঝা যায় যে মধ্যযুগে লস্করপুর বা পরগলপুর নামের নগরটি ফেনী নদীর তীরে অবস্থিত ছিল ৷ আর এই নদীর তীরের এই শহরটি একদিন বাংলা ভাষাসাহিত্য ও জ্ঞানচর্চার প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছিল ৷
          সতেরো শতকের আর একজন কবি মির্জা নাথান-র ফার্সি ভাষায় রচিত ‘বাহারিস্তান-ই-গায়েবী’-তে ‘ফণী’ শব্দটি ফেনীতে পরিণত হয়ে গেছে ৷ আঠারো শতকের শেষভাগে কবি আলী রেজা বা কানু ফকির তাঁর পিরের বাসস্থান হাজিগাঁওর অবস্থান বর্ণনাকাল উল্লেখ করেছেন,
                             
                                   ‘ফেনীর দক্ষিণে এক ষর উপাম
                                    হাজিগাঁও করিছিল সেই দেশের নাম’
       কবি মোহাম্মদ মুকিম তাঁর পৈতৃক বাসস্থানের বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন, ‘ফেনীর পশ্চিমদিকে যুগিদিয়া দেশে……’৷ এখানে লক্ষ্যণীয় যে এই কবিগণও নদীটির নাম বোঝাতে ‘ফেনী’রই ব্যবহার করেছেন ৷
        আনুমানিক 1712 খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ শিক পরগণার কৈয়রা গ্রামে সমসের গাজির জন্ম হয় ৷1784 খ্রিস্টাব্দে ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী সমসের গাজির অধিকারভুক্ত হয় ৷ তখন থেকে  বারো বছর তিনি ত্রিপুরা রাজ্যের সর্বময় কর্তা ছিলেন ৷ সমসের গাজির জীবনের আকস্মিক উত্থান-পতনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাঁর মৃত্যুর পর শেখ মনুহর গাজি নামে এক পল্লীকবি  রচনা করেন ‘গাজিনামা’ ৷ 1813 খ্রিস্টাব্দে নোয়াখালির সেরেস্তাদার মৌলবি খবির মুদ্রিত করেন এই গাজিনামা ৷ এটি ত্রিপুরার ইতিহাসাশ্রিত কাব্যগ্রন্থ ৷ ‘গাজিনামায়ও সমসের গাজির গড় জগন্নাথ-সোনাপুর গ্রামের বর্ণনায় পাই—

                             দক্ষিণে ফেনী নন্দী       পূর্বে গিরি মুড়াবন্দী
                                         উত্তরেতে এহেন জলধি ৷
                             পশ্চিমে মলয়াপানি       তার মধ্যে ভদ্রাখানি
                                         মধ্যে যেন খিরুদের দধি ৷৷

      এখানেও সমসের গাজির গড়বন্দী গ্রামের সীমা প্রসঙ্গে ফেনী নদীর উল্লেখ রয়েছে ৷ ফেনীপারের এই বিদ্রোহী বীরের উত্থানে সেদিন ত্রিপুরার রাজসিংহাসন কেঁপে উঠেছিল ৷ ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে সমসের গাজির কেল্লা এবং বিশাল দীঘিটি আজও দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুম মহকুমার পশ্চিম প্রান্তস্থ সীমান্ত গ্রাম আমলিঘাটে বিদ্যমান ৷ আমলিঘাট থেকেই ফেনী নদীর নিম্নগতির শুরু এবং প্রশস্ত জলপ্রবাহের রূপ ধরে দক্ষিণাভিমুখী হয়ে বাংলাদেশের সমতলক্ষেত্রের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে ৷

ফেনী নদীর তীরের জনপদে ইতিহাস ও কিংবদন্তীর মেলবন্ধন  :

        ফেনী নদীপ্রবাহের ভারতভূখন্ডের শেষ প্রান্তিক জনপদ আমলিঘাট ৷ আমলিঘাট ও তার পার্শ্ববর্তী লোকালয় ঘিরে বেশ কিছু প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শন ও লোককাহিনি জড়িয়ে রয়েছে ৷ আমলিঘাটের একপ্রান্তেই সীমান্ত ঘেঁষে রয়েছে এই অঞ্চলের কৃষক বিদ্রোহের নায়ক সমসের গাজির দীঘি ও কেল্লার ধ্বংসাবশেষ ৷ কেল্লাটি আজ জঙ্গলাকীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে ৷ দীঘির বৃহত্তর অংশই কাঁটাতারের ওপারে, যার একাংশ বর্তমানে বাংলাদেশ ভূখন্ডের অন্তর্ভুক্ত ৷ দীঘিটির তেমন সংস্কার নেই ৷ পাড় কেটে অনেকে চাষের জমি বানিয়ে ফেলেছে ৷ এই দীঘিকে কেন্দ্র করে লোককাহিনিও প্রচলিত ছিল একসময় লোকমুখে ৷ দীঘির পাড়ে তালিকা রেখে মানত করলে নাকি বাসন-কোশন পাওয়া যেত উৎসব অনুষ্ঠানে নেমনতন্নের কাজ সমাধা করার জন্যে ৷ দীঘির একটা কোনা থেকে একটা সুড়ঙ্গপথ সমসের গাজির কেল্লা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে, যা এখন বনজঙ্গল ঘেরা এবং বাদুড়,চামচিকে, সরীসৃপের আবাসস্থল ৷ লোকপ্রচলিত কথা আছে, এই সুড়ঙ্গপথ দিয়ে সমসের গাজির কেল্লার অভ্যন্তরের পর্দানসীন মহিলারা দীঘির জলে স্নান করতে আসতেন ৷
       সমসের গাজির এই দীঘিটির চারধারে যে উর্বর নিম্ন সমভূমি রয়েছে এবং যা বর্তমানে বাংলাদেশের অংশের চাষের ভূখন্ড তার নাম ‘কালিদহ’ ৷ এই কালিদহকে কেন্দ্র করেও একটি পুরোনো লোককথা প্রচলিত রয়েছে ৷ সেই অনুযায়ী জানা যায় যে এই কালিদহেই নাকি চাঁদ সওদাগরের সপ্তডিঙা ডুবেছিল ৷ বছর চল্লিশেক আগেও এখানকার ভূমিতে প্রোথিত নৌকার গলুইয়ের মতো কিছু একটার ঊর্ধ্বভাগ দেখা যেত ৷ এটাকে ধারনা করা হত চাঁদ সওদাগরের ডুবে যাওয়া নৌকার গলুইয়ের অংশবিশেষ ৷ এই বস্তুটি 1974 সালে এই প্রতিবেদক এবং ত্রিপুরার বিশিষ্ট লোকগবেষক ড. রঞ্জিত দে প্রত্যক্ষ করেছেন ৷ গ্রাম্য ললনারা এখানে  দীর্ঘদিন ধূপ-দীপ জ্বালাতেন ৷ পাশের (বর্তমান বাংলাদেশের অন্তর্গত) গ্রামটির নাম চম্পকনগর ৷ বলা হয়, এখানে চাঁদ সওদাগরের বাড়ি ছিল ৷ আমলিঘাট প্রায় এক দেড় কিলোমিটার ফেনী নদীর উজানের দিকে নদীতে একটি গভীর খাত রয়েছে ৷ এখানে বিশাল এলাকা জুড়ে জলঘূর্ণির সৃষ্টি হয় ৷ জলের এই পাকের মধ্যে কিছু এসে পড়লে কুন্ডলী পাকিয়ে জল তা অনেক দূরে নয়ে ফেলে ৷ এই স্থানটিতে জলের গভীরতাও প্রচুর ৷ পঞ্চাশ-ষাট হাত লম্বা বাঁশ ফেলেও ঠাঁই পাওয়া যায়না ৷ এখানে প্রচুর মাছ পাওয়া যায় বলে মৎস্যশিকারীদের জন্যে লোভনীয় স্থান এটি ৷ এই জায়গাটির নাম ’মেরুকুম’ ৷ সন্নিহিত জনপদের নাম ‘মেরুপাড়া’ ৷ এখানে বিস্তৃত চরভূমি রয়েছে ৷ মেরুকুমের এই চরভূমিতে দাঁড়িয়ে বিকেলবেলার সূর্যাস্তের দৃশ্য অত্যন্ত নয়নমুগ্ধকর ৷ লোকশ্রুতি আছে এখানেই নাকি মনসামঙ্গলখ্যাত বেহুলার বাবা সায়বেনের বাড়ি ছিল ৷ একসময় এই মেরুকুম পর্যন্ত সমুদ্রের জোয়ারের জল আসত ৷ ফেনী নদীর বাঁকে অবস্থিত এই মেরুকুম-আমলিঘাট-কালিদহ-চম্পকনগর ও তৎসন্নিহিত অঞ্চল নিয়ে সত্যিই মনসামঙ্গলে বর্ণিত কাব্যিক পরিবেশ সৃষ্টি করে ৷ এই আমলিঘাটের পাশেই ফেনী নদীর পারে একটি নাতিউচ্চ পাহাড়ে রয়েছে একটি প্রাচীন শিবমন্দির ৷ এই মন্দিরকেও কেন্দ্র করে রয়েছে মিথ ৷ কথিত আছে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের বিখ্যাত শৈবতীর্থে যাওয়ার আগে ভক্তরা এখানে বিশ্রাম করতেন ৷ এই পাহাড়টায় প্রচুর বেলগাছ রয়েছে ৷ বলা হয় এই বেলগাছ আপনতেই গজায় ৷ কেউ লাগাতে হয়না ৷ কেউ কেউ বলেন খানে শিবপার্বতী বিশ্রাম করতেন ৷ প্রতি বছর শিবচতুর্দশীতে এখানে বিরাট মেলা বসে ৷ এটাও চন্দ্রনাথ শিবতীর্থের ক্ষুদ্ররূপ ৷

ফেনী নদীর পাড়ের লোকমেলা  :

      ফেনী নদীকে ঘিরে দুই পারের জনগণের সামাজিক-সাংস্কৃতিক-ধর্মীয় অনুষ্ঠানও চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরেই ৷ বিবাহ-অন্নপ্রাশন ইত্যাদি পারিবারিক অনুষ্ঠান ও পুজো -উৎসবের ঘট পূর্ণ করা হয় ফেনী নদীর জলে বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে ৷ ফেনী নদীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান বারুণীমেলা ৷ ফেনী নদীর গতিপথের তিনটি স্থানে জমজমাট মেলা বসে ৷ সেগুলো হল, ত্রিপুরার সাব্রুমে ও আমলিঘাটে এবং বাংলাদেশের শুভপুরে ৷ তবে দক্ষিণ ত্রিপুরার মহকুমাশহর সাব্রুমের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ফেনী নদীর বারুণীস্নান ও মেলা খুবই প্রাচীন ও প্রচুর লোকসমাগম হয় এখানে ৷
     প্রতিবছর চৈত্রমাসের কৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে হয় বারুণীস্নান ৷ এদিন হিন্দু সনাতন ধর্মাবলম্বী জনগণ নদীর পুণ্যসলিলে স্নানান্তে পূর্বপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পন করেন ৷ এই উপলক্ষে সাব্রুমের সীমান্ত নদী ফেনীর পাড়ে বসে মেলা ৷ নদীর দুই পাড়ে দুই জনপদ ৷ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রুম আর বাংলাদেশের রামগড় ৷ ত্রিপুরা রাজ্যের ভারতভুক্তির বহু আগে থেকেই ফেনীর দুই পাড়েই এই উপলক্ষ্যে মেলা বসে আসছে ৷ ভারতভুক্তির পর সীমান্তে কড়কড়ির ফলে দুদেশের মানুষের অবাধে আসা-যাওয়ায় প্রতিবন্ধকতা আসে ৷ কিন্তু বারুণীর দিন কিছুক্ষণের জন্যে সব বাধা যেন ছিন্ন হয়ে যায় ৷ দুই পাড় দুই রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হলেও যাঁরা তদানিন্তন পূর্বপাকিস্তান থেকে উদ্বাস্তু হয়ে ত্রিপুরায় আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা ওপারের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ থেকে বঞ্চিত হন তাঁরা বারুণীর দিন পরস্পরের সঙ্গে সাক্ষাতের কিঞ্চিৎ সুযোগ পান কিছুক্ষণের জন্যে ৷
          ঠিক এভাবেই একাত্তরের বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় যাঁরা এদেশে এসে আর ফিরে যাননি, যাঁরা ফিরে গেছেন সবাই এদিন মিলিত হন প্রিয়জনদের সাথে এই বারুণীমেলাতে ৷ এই দিনটিকে কেন্দ্র করে দূরদেশে বিয়ে হওয়া মেয়েরা ফেনী পারের গ্রামে বাপের বাড়িতে ‘নাইঅর’ আসে ৷ বাপের বাড়িতে বেড়াতে আসে আর সেইসঙ্গে মেলাটাও সেরে নেয় ৷ সারাবছরের ঘরগেরস্থালির টুকটাক উপকরণ এই বারুণীমেলা থেকেই সংগ্রহ করে নেয় ৷ কিছুক্ষণের জন্যে দুপারের মানুষের মিলিত অশ্রুধারা ফেনীর জলে, মিশে ভাটির দিকে বয়ে যায় সমুদ্রের সন্ধানে ৷ ঐতিহ্যের শেকড়ের খোঁজে ৷ ফেনী নদী এভাবেই এই অঞ্চলের বাঙালিদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে বুকে ধরে নীরবে বয়ে যায় ৷

ফেনীকেন্দ্রিক সঙ্গীত  :  প্রসঙ্গ মুক্তিযুদ্ধ

         এই ফেনী নদী একটি নবীন রাষ্ট্রের উত্থানের প্রত্যক্ষ সাক্ষী ৷ একাত্তরের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়  ফেনী নদীর পারেই গড়ে ওঠে মুক্তিযুদ্ধের এক নম্বর সেক্টরের প্রধান কার্যালয় ৷ হরিনাতে গড়ে ওঠে বেস ক্যাম্প ৷ সেখান থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিসেনারা ফেনী নদী পেরিয়ে আক্রমন শানিয়েছিল সেদিন বাংলাদেশের করের হাটে, ছাগলনাইয়ায় ৷ ফেনীপারের মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের কাহিনি নিয়ে রচিত গ্রাম্য কবিদের কবিতা সুর করে গ্রাম্য হাটে বিক্রি করতেন লোককবিরা ৷ হাটে ফেরি করে বিক্রি করা হয় বলে অধুনালুপ্ত এই কবিতাগুলোকে বলা হয় ‘হেটো ছড়া’ বা’হেটো কবিতা’ ৷ প্রতিবেদকের কৈশোরে শোনা একটি হেটো ছড়ার বিস্মৃতপ্রায় কয়েক পংক্তি উদ্ধারের প্রয়াস নেওয়া গেল ৷

                  বলি বীরের কথা, শুনেন বার্তা, শুনেন দিয়া মন
                  স্বাধীন বাংলা পাইবার তরে এক হইলো জনগণ
                   হইলো মুক্তি যোদ্ধা ৷
                   হইলো, মুক্তিযোদ্ধা স্বাধীন যোদ্ধা বাংলার যুবদল
                   জয় বাংলা জয় বাংলা বলি চলিল সকল
                   নিল বন্দুক হাতে,
                   নিল বন্দুক হাতে হরিনাতে ট্রেনিং দিবার পর
                   দল বাঁধিয়া পার হইল ফেনী নদীর চর
                   গেল রামগড়েতে ৷
                    গেল রামগড়েতে, তারপরেতে শুভপুরে যায়
                     গ্রেনেড মারি সেইখানেতে ফেনীর পুল উড়ায়…..ইত্যাদি ৷

ফেনীর মাছ  : সংস্কৃতি ও জীবন

নদী যেমন জীবনকে ধরে রাখে তেমনি নদীর বুকের সম্পদও জীবনের রসদ যোগায় ৷ নদীর মাছ বাঙালির খাদ্যসংস্কৃতির এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য ৷ পূর্ববাংলার মানুষ অর্থাৎ বাঙালদের যেমন ইলিশ মাছ বিশেষ প্রতীক আর পশ্চিমবাংলার মানুষদের কাছে গলদা চিংড়ি সাংস্কৃতিক প্রতীক ৷ মোহনবাগান আর ইস্টবেঙ্গলের খেলার দিন তা বিশেষভাবে প্রকট হয়ে ওঠে ৷ ফেনী নদী একসময় দুই সংস্কৃতিকেই বহন নেজের বুকে ৷ ইলিশ মাছ আর গলদা চিংড়ি এখানে প্রচুর পাওয়া যেত ৷ এভাবে সংস্কৃতির সমন্বয়ের ধারা রক্ষার ক্ষেত্রে নদীর ভূমিকা ফেনী নদীছাড়া আর দেখা যায়না ৷

ফেনীনদী ও অর্থনৈতিক জীবন  :  সেকাল ও একাল

         রাজন্য আমলে ফেনীর তীরবর্তী অঞ্চলে  রাজারা তাঁদের রাজত্বের তদারকি করার জন্যে তখনকার সময়ের সমতল ত্রিপুরা অর্থাৎ চাকলা-রোশনাবাদকে ব্যবহার করে আসতেন ৷ সে সময়ে উদয়পুরের পরে রাজ্যের দক্ষিণাঞ্চল ক্রমান্বয়ে গভীর থেকে গভীরতর অরণ্য ছিল ৷ তখনকার সময় কুমিল্লা থেকে ফেনী হয়ে মুহূরীগঞ্জ স্টেশনে এসে তাঁরা নামতেন ৷ সেখান থেকে ফেনী নদীর উজান বেয়ে নৌকাযোগে তাঁরা আমলিঘাট ও ছোটোখিলের রানিগঞ্জ বাজারে নামতেন ৷ রানিগঞ্জ বাজারসংলগ্ন এলাকায় তাঁদের একটি ছোটো কাছারিবাড়িও ছিল ৷  কাছারিবাড়ির দুটি দালানের মধ্যে একটি বর্তমান প্রজন্মের মালিকদের হাতে ধ্বংস হয়ে গেছে ৷ অন্যটি এখনও আছে ৷ তবে খুবই জরাজীর্ণ অবস্থায় ৷ রানিগঞ্জ কাছারিবাড়িতে তাঁরা খাজনা আদায়ের কাজ সারতেন ৷বিশেষ দিনে খাজনা আদায় উপলক্ষে এখানে ‘পুণ্যাহ’ অনুষ্ঠিত হত ৷এখান থেকে হাতির পিঠে চড়ে তাঁরা সাব্রুমে আসতেন ৷ সাব্রুমে একটি তহশিল কাছারি ছিল ৷ এই তহশিল অফিসটিও ছিল ফেনীনদীসংলগ্ন ৷ এই তহশিল কাছারিতে বসেই রাজারা তাঁরা ফেনীর উজানের পার্বত্য অঞ্চলের তাঁদের রাজপাটের তদারকি, খাজনাআদায় ও প্রশাসনিক কাজকর্ম পরিচালনা করতেন ৷
        ফেনী নদীর দুই তীরে তখন মূল্যবান বৃক্ষের গভীর অরণ্য ছিল ৷ শিলাছড়ি, ঘোড়াকাপা, মাগরুম,কাপতলি ইত্যাদি ছিল ঘন বনে ঢাকা ৷  ফেনীর দুইপারের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মানুষজন এখান থেকে মূল্যবান কাঠ, বাঁশ,ছন ইত্যাদি বনজ সম্পদ কেটে নিয়ে যেত ৷  তা দিয়েই তারা বাসগৃহ ও গৃহস্থলীর সামগ্রী নির্মান করত ৷ ত্রিপুরা রাজ্যের এ অঞ্চলসংলগ্ন যে বৃটিশ অধিকৃত ভূখন্ড এবং ত্রিপুরার রাজাদের জমিদারি   ছিল সেই অঞ্চলের মানুষেরা এই বিস্তীর্ণ অঞ্চল থেকে গাছ কাটার ফলে শুধু গাছের কাটা গোড়াটাই পড়ে থাকত ৷ ‘গোড়া কাটা’ থেকেই এখানকার একটি স্থাননাম গোড়াকাবা> ঘোড়াকাপা হয়েছে ৷ এই অঞ্চলে চাকমা জনজাতির বাস বহু প্রাচীনকাল থেকে ৷ ফলে এই স্থাননামের উপর চাকমাভাষার প্রভাব থাকা অস্বাভাবিক নয় ৷ চাকমা ভাষায় ‘কাটা’ বে কেটে ফেলাকে ‘কাবা’ বলে ৷ সেই অর্থে ‘গোড়াকাটা’ থেকে ‘গোড়াকাবা’ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল ৷ পরবর্তী সময়ে বঙ্গীকরণ হয়ে ‘ঘোড়াকাঁপা’ হয়েছে ৷ এই নামের পক্ষে যুক্তি হল ম্যালেরিয়াপ্রবণ এই এলাকায় জ্বরের প্রকোপে ঘোড়া পর্যন্ত কাঁপত ৷ যার ফলেই হয়ত রাজারা সেদিকে আর পা বাড়াতেননা ৷ সাব্রুম তহশিল অফিস থেকেই তাঁদের কাজকর্ম চলত ৷ একসময় ত্রিপুরার রাজারা ত্রিপুরার বনজসম্পদ বাইরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কর আরোপ করা শুরু করেন ৷ ফলে ত্রিপুরার নদীপথের প্রায় প্রত্যেকটা সীমান্ত অঞ্চলের  ও অন্যান্য নদীর পাড়ে স্থাপন করা হয়েছিল ‘বনকর’ ঘাট ৷ সেসময়ে ত্রিপুরার দশটি বনকর ঘাট ছিল—
মুহুরীঘাট  2. গোমতীঘাট 3. হাওড়াঘাট 4. বুড়মাঘাট 5. সোনাইঘাট 6. খোয়াইঘাট 7. ধলাইঘাট 8. মনুঘাট 9. থালজুরিঘাট এবং 10. ফেনীঘাট ৷
এই বনকরঘাটগুলিতে তিনধরনের কর আদায়ের প্রচলন ছিল ৷ তার মধ্যে প্রকৃত বনকর অর্থাৎ বনজসম্পদ রপ্তানির অনুমতির জন্যে প্রদেয় সাধারণ কর ৷ ‘ছনখলা’ অর্থাৎ নদীতীরের অভ্যন্তরের বনভূমি থেকে ছন সংগ্রহ করে তা রপ্তানির জন্যে ঘাটের কাছাকাছি যে জায়গায় জড়ো করা হত সেই জায়গার ভাড়া বাবদ কর দিতে হত ৷ আর ‘খোতগারি অর্থাৎ রপ্তানিযোগ্য বনজসম্পদের মূল্য নির্ধারণের জন্যে ঘাটের কাছাকাছি নিয়ে আসার অনুমতি বাবদও কর সংগ্রহ করা হত ৷
        কর আদায়ের জন্যে ফেনী নদীর যে ঘাটটি ছিল তা ছিল আমলিঘাটে ৷ রাজন্যআমলে এই অঞ্চলের বর্ধিষ্ণু জনপদ ছিল এই আমলিঘাট ৷ যেহেতু ফেনী নদী ত্রিপুরা ও চট্টগ্রামের সীমারেখা ছিল সেকারণে বৃটিশ সরকারকে ঘাটের আয়ের ছয় আনা অংশ দিতে হত ৷ 1886 সালের পূর্ব পর্যন্ত একজন বৃটিশ অফিসার এই কর আদায় করতেন ৷ করের হার নির্ধারণের নীতি ছিল পরিবাহিত পণ্যসামগ্রীর আনুমানিক মূল্যের দশ শতাংশ ৷ ত্রিপুরার রাজার ভাগের দশ আনা অংশ রাজস্ব মহারাজার নিকট পাঠিয়ে দেওয়া হত ৷ ত্রিপুরারাজ্যের ভূভাগ থেকে তখন বনজসম্পদ ছাড়াও জুমে উৎপাদিত  বিশেষ বিশেষ প্রজাতির ধানের মধ্যে খাসা, বিন্নি, কাওনসহ পাট, তিল, সরিষা, কার্পাস ইত্যাদি ফেনী নদীপথে পরিবহন করা হত ৷ জুমে উৎপাদিত কার্পাস ও তিলের এক চতুর্থাংশ খাজনা হিসাবে মহারাজাকে দিতে হত ৷ ফেনী নদীতে অতীতে নাব্যতা ছিল ৷ মুহুরীগঞ্জ, ধুমঘাট থেকে প্রায়শই নৌকা উজানের দিকে আসত ৷পঞ্চাশ-ষাটের দশকেও ফেনী নদীতে নৌকা চলাচল করতে দেখা গেছে ৷ সেসময় শিলাছড়ি-ঘোড়াকাপা থেকে নৌকাভর্তি ধান, পাট, কার্পাস, তিল, সরিষা ইত্যাদি ভাটির দিকের হাটগুলোতে আসত ৷ ষাটের দশকের শেষ দিকেও হাটবারের দিনে ফেনী নদীর পাড়ের ত্রিপুরার মহকুমাশহর সাব্রুম ও বাংলাদেশের উপজেলাশহর ও বিখ্যাত গঞ্জ রামগড় বাজারের ঘাটে ত্রিশ চল্লিশটি করে নৌকা বাঁধা থাকত ৷ এই অঞ্চলে উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে কার্পাস ও তিলের খুব কদর ছিল ৷ নদীপথে কার্পাস প্রথমে নিয়ে যাওয়া হত নারায়ণগঞ্জে ৷ সেখান থেকে পাঠানো হত কোলকাতায় ৷ এই অঞ্চলের বনজ সম্পদকে কেন্দ্র করে ব্যবসার জন্যে ফেনী নদীর তীরবর্তী পার্বত্য অঞ্চলে এসে পরবর্তীসময়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেছিলেন অনেকে ৷ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নোয়াখালি ইত্যাদি অঞ্চলের বহু ব্যবসায়ী ব্যবসার সূত্র ধরে প্রায় এক-দেড়শো বছর আগে এসে ফেনীর উজান অঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে গেছেন ৷ যাঁদের উত্তরাধিকারীরা আজও এ অঞ্চলে বসবাস করছেন ৷পঁচাত্তর থেকে একশো বছর আগে বেশ কয়েকঘর মারোয়াড়ি ব্যবসায়ী প্রথমে রানিগঞ্জবাজার ও পরে সাব্রুমে ব্যবসা করতে ৷ কেউ কেউ রামগড়েও ছিলেন ৷
        ত্রিপুরার অন্যান্য অঞ্চলের নদীগুলোর মতো ফেনী নদী দিয়েও প্রচুর পরিমানে বাঁশ, ছন রপ্তানি হত ৷ বিগত শতাব্দীর আশির দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ফেনী নদী দিয়ে প্রচুর পরিমানে বাশ, ছন রপ্তানি হত ৷ প্রচুর পরিমানে বাঁশ নদীর উপর বিছিয়ে ভেলার মতো করে পর পর একসঙ্গে বেঁধে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া হত ৷ এই বাঁশের উপর তখনকার সময় এই অঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষের এক অংশের রুটি-রুজি নির্ভর করত ৷ বাঁশের ব্যবসার উপর বৈষ্ণবপুর, সাব্রুম, মনুঘাট এবং আমলিঘাটের গ্রামীন অর্থনীতি নিয়ন্ত্রিত হত ৷ যাঁরা নদীপথে এই বাঁশ পরিবহন করতেন সেইসব শ্রমিকরা দিনের পর দিন ঝড়-বৃষ্টি মাথায় করে খোলা আকাশের নীচে বাঁশের ভেলার উপর দিন কাটাতেন ৷ সেখানেই তাঁদের রান্নাবান্না, আহারনিদ্রা সারতে হত ৷ আশির দশকের শেষদিকে বাঁশবহনকারী শ্রমিকদের উপর উগ্রপন্থীদের চাঁদার জুলুম, দুপারের সীমান্তরক্ষীদের আর্থিক উৎকোচ গ্রহণের জন্যে  মারধর, বাঁশ ছিনিয়ে নেওয়া ইত্যাদি জোরজুলুম ও নদীর নাব্যতা কমে স্থানে স্থানে চড়া পড়ে যাওয়ার কারণে নদীপথে বাঁশ পরিবহন বন্ধ হয়ে যায় ৷ রাজ্য সরকারও রাজস্ব আদায়ের একটা উৎস থেকে বঞ্চিত হয় ৷ পাশাপাশি বন থেকে বাঁশ আহরণকারী  দরিদ্র পরিবারগুলির আয়ও প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়ায় ৷ একসময় ফেনী নদীতে লঞ্চও চলত ৷ আজ আর সেসব দেখা যায়না ৷
        এভাবেই দীর্ঘ শতাব্দী ধরে বয়ে চলা ইতিহাস ও সংস্কৃতির ধারা বহন করে একদিন প্রাণোচ্ছল ছিল ফেনী নদী ৷ কিন্তু কালের বিবর্তনে  আজ সেই ইতিহাস স্তিমিত  ৷ একদিন ফেনী নদীর জলে পুষ্ট তীরভূমির জমি থেকে ফসল উঠলে চাষার ঘরে আনন্দের হিল্লোল বয়ে যেত ৷ নবান্নের উৎসবে মেতে উঠত জনপদ ৷ বেচা-কেনার তুমুল ধুম পড়ে যেত  দুপারের গঞ্জের হাটগুলোতে ৷ নৌকো বাঁধা থাকত সারি সারি নদীতীরের বাজারের ঘাটগুলোতে ৷ ছিল নানা প্রজাতির অফুরন্ত মাছের ভান্ডার ৷ একদিনের সেই রূপসী, জলচঞ্চলা ফেনী নদী আজ নিঃস্ব,  রিক্ত ৷ তার সমস্ত অতীত গৌরব হারিয়ে আজ উদার আকাশের নীচে শীর্ণ শরীর বিছিয়ে অত্যন্ত ক্ষীণধারায় বয়ে চলেছে ইতিহাসের মূক সাক্ষী হয়ে ৷ অকাল বার্ধক্য গ্রাস করেছে তাকে ৷ সভ্যতার নামে মানুষের নির্বিচার
অত্যাচার, প্রকৃতির উপর আগ্রাসন আজ ফেনী নদীকে তার ভবিষ্যৎ স্থায়িত্ব সম্পর্কে  হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷  শুরুতে যে প্রবাদের উল্লেখ করেছিলাম তারই যেন বিপরীত প্রভাব পড়েছে ফেনী নদীর উপর ৷ ভাগের মা যেমন গঙ্গা পায়না তমনি ভাগের গঙ্গাও যেন কদর পায়না ৷ সীমান্ত নদী হওয়ার ফলে এই নদীকে দুপারের জনগণ যথেচ্ছ ব্যবহার করছে ৷ কোনো পরিকল্পনা নেই ফেনী নদীকে নিয়ে ৷ এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই এই উপমহাদেশের মানচিত্র থেকে ফেনী নদী মুছে যাবে ৷
এতোসব দৈন্যতার মধ্যেও এক আশার আলোর সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে ৷ ত্রিপুরার সাব্রুম এবং বাংলাদেশের রামগড়ের মধ্যে ফেনী নদীর উপর তৈরি হচ্ছে মৈত্রী সেতু ৷ অত্যন্ত দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে এর নির্মান কাজ ৷ অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এই সেতুর উপর দিয়ে দুই দেশের সংযোগ সাধিত হবে ৷ প্রকল্প রয়েছে এই সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগের দ্বার উন্মোচনের ৷ তাতে হয়তো ফেনীর তীরবর্তী এই অঞ্চল আবার প্রণবন্ত হয়ে উঠবে ৷ তাতে কী ফেনী নদীর এই শরসয্যার মুক্তি ঘটবে?  আদৌ নয় ৷ এখনও সময় আছে ৷ সেতু নির্মানের পাশাপাশিযদি যথাযথপরিকল্পনার মাধ্যমে যদি নদীর ভরাট বালি অপসারণের মাধ্যমে   নাব্যতা ফিরিয়ে আনা যায়, যদি সীমান্ত নদী দিয়ে পণ্য পরিবহন করা যায় ৷ সেইসঙ্গে যদি এই নদীপথে প্রমোদভ্রমণের বা ভারত ও বাংলাদেশে ভ্রমণের সুযোগ সৃষ্টি করা যায়, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে পণ্য ফেনী নদীর মোহনা পর্যন্ত এনে সেখান থেকে নদীপথে অভ্যন্তরভাগে প্রেরণ করা যায় তাহলে মৃতপ্রায় ফেনী আবার জেগে উঠবে ৷ নিজের বুক পেতে দেবে দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্প্রীতি সমন্বয়ের লক্ষ্যে ৷ রূপায়িত হবে আগামী ইতিহাস ৷ তার জন্যেই ফেনী ‘নদীর জলে থাকি রে কান পেতে/কাঁপে রে প্রাণ পাতার মর্মরেতে' ৷
                          —-—————--——--0———————

সহায়ক গ্রন্থ ও অন্যান্য তথ্যপঞ্জী

1.শ্রীরাজমালা (ধন্যমাণিক্য খন্ড) —শুক্রেশ্বর ও বাণেশ্বর

2.রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস—কৈলাসচন্দ্র সিংহ

3.রাজরত্নাকরম— অজ্ঞাত

4.ত্রিপুরার ইতিহাস—ড.জগদীশ গণচৌধুরী

5.চট্টগ্রামের ইতিহাস—আহমদ শরীফ

6.নোয়াখালির মাটি ও মানুষ—ড. দীনেশচন্দ্র সিংহ

7.রাজন্যশাসিত ত্রিপুরা ও চট্টগ্রাম—ড. রঞ্জিত দে

8.গাজিনামা—শেখ মনুহর গাজি

9.আরণ্য জনপদে—আবদুস সাত্তার

10.ত্রিপুরার লোকসমাজ ও সংস্কৃতি—অশোকানন্দ রায়বর্ধন

11.ত্রিপুরার মগজাতির ইতিহাস ও সংস্কৃতি—অশোকানন্দ রায়বর্ধন

12.চট্টগ্রামের ইতিহাস—উইকিপিডিয়া

13.নোয়াখালি জেলা—উইকিপিডিয়া

14.মীরসরাই উপজেলার পটভূমি—চট্টগ্রাম জেলা
     ( mirsharai.chittagong.gov.bd>site )