Sunday, July 30, 2023

কুপিবাতি

কুপি আমাদের ঘরে সবসময় ব্যবহার হত । মা রান্নাঘরে রান্না করতেন । আমরা পাশে মাটিতে চট পেতে বসে কুপির আলোয় পড়াশুনা করতাম । রেড়ির তেলের কুপির ব্যবহার অতি শৈশবে যা দেখেছি ততটা মনে নেই । কেরোসিন কুপি দেখেছি ও ব্যবহার করেছি । মাটির কুপি দেখেছি । আগে কাঁসা-পিতলের বাসনের দোকান পিতলের কুপি বিক্রির জন্যে রাখা হত । তাছাড়া ঝালাইকরের দোকানে টিনের কুপি পাওয়া যেত ।  একধরনের কাঁচের কুপির গঠনটা এমন ছিল যেটাকে উপুড় করলেও তেল চুঁইয়ে পড়ত না বা বেরিয়ে যেত না । কৈশোরে আমি নিজে কুপি বানাতাম । তখন আমরা ফাউন্টেনপেন ব্যবহার করতাম । তার জন্যে লাগত সুলেখা কালি । কালি থাকত বর্গাকার ছোটো শিশিতে । শিশির কালি শেষ হয়ে গেলে তার ঢাকনাটা খুলে সাইকেলচাকার টিউবে লাগানো হাওয়া দেওয়ার নজেলটি পুরোনো টিউব থেকে খুলে কালির শিশির ঢাকনায় লাগিয়ে নিতাম । তাহলেই হয়ে যেত সুন্দর কুপিবাতি । ব্যবহৃত ধুতির পাড় ছিঁড়ে কুপির সলতে বানানো হত । কুপি বাতি জ্বললে একটা মোটা কালো শিখা উপরের দিকে উঠত । কুপির মাথায় তারার মতো ছোটো ছোটো আলোর বিন্দু জমে থাকত ।

Wednesday, July 26, 2023

শখ  থাকলেও সবাই হিরো আলম হতে পারে না
হেরে ভূত হয়েও অনেকেই স্বঘোষিত হিরো বনে যায়

অন্ধকারের কড়চা

অন্ধকারের কড়চা

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

একেকটা বীভৎস ভিডিও বারবার ভেসে ওঠে আমার মোবাইলের পর্দায় । বারবার মুছেও উজবুকদের উৎসাহ এড়াতে পারি না । ছবিগুলো থেকে ভেসে আসা আর্ত চিৎকারে আমার শিশুটার ঘুম ভেঙে যায় ।

আমাদের হিরণ্ময় বিদ্রোহের দুপুরগুলো মহাসন্ধ্যার দিকে ঢলে পড়েছে, হিংস্র উল্লাসের চিত্রগুলো আমরা প্রতিক্রিয়াহীন দেখে যাই সমাজমাধ্যমে ।

ধর্ষণও হত্যার ছবি শেয়ার করে কি বোঝাতে চাই জানিনা নিজেও । জানিনা, কারণ আমার অবচেতনকে আমি চিনি না । আসলে এই ছবি দেখে প্রতিবাদ নয়, বিদ্রোহ, বিক্ষোভ নয়, অবচেতনের একটা সারমেয়র লালায়  মহাপ্রস্থানের পথ পিচ্ছিল হয় ক্রমাগত ।

স্বঘোষিত সমাজকর্মীদের দ্বারা বারবার শেয়ার করা ঘৃণ্য দৃশ্যাবলী বস্তুত বিবেককে স্থবির করে তোলে । আর হিংসার আগুন আরো আরো বাড়ে । যেমন জুমের আগুন ছড়ায় পাহাড় থেকে পাহাড়ে । লেলিহান শিখায় পোড়ে মাতৃতান্ত্রিক ঐতিহ্য । মানবতা মরে যায়, লাশ গড়ায়, আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে প্রমাণ লোপাট হয়ে যায় ।

আমাদের কবিতাগুলো নির্বাক শব্দই গেছে যায় ভাঙা ইমারতে । আর হাততালিতে উড়ে যায় লক্ষ্যহীন পথে  একদল পোষা কবুতর । দ্রোহময় শব্দগুলো নিরবে অপেক্ষায় থাকে কখন শেষ সতর্ক সংকেত দিয়ে আছড়ে পড়বে অনিবার্য ঝড় । সে ঝড়ের অপেক্ষায় কাগজের ঘরের কবিতা হাওয়ায় উড়তে থাকে ।

অবেলার বনপথ

অবেলার বনপথ

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

ও পাড়ার চা বাগান ঘুরে এলেই তোমার পায়ের ঝুমুর নাচের তালে টিপটিপ করে ওঠে বুক । তোমাকে ডেকে ডেকে পাড়া মাথায় করে অভিসারে যাব, নাকি চুপিচুপি পাতা ও কুঁড়িদের আভাস ঠেলে পৌঁছে যাব ইশারাঝোপের লুকোচুরি ছায়ায় । 

যেভাবে এগোই না কেন পায়ের চাপে শুকনো পাতারা কোলাহল করে ওঠে ।‌দৌড়ুলে শব্দ আরো বাড়ে । বেড়ালের মত টিপটিপ পায়ে এগোব সেও সাধ্যি নেই । মাথার উপর সতীনের মতো কোকিল ডেকে ওঠে আচমকা । তাকে বারণ করবে কার সাধ্যি ? বসন্ত এলে সেও খোঁজে নিজের সঙ্গী ।

এই টিলা বাড়িছাড়া আমার কোন চেনা পথ নেই । অথচ তোমার কাছে যাব বলেই আমি বেলা থাকতেই সব কাজ গুটিয়ে নিয়ে পশ্চিম আকাশের রাঙা মেঘ দেখেছি । সেই লাল রঙ আস্তে আস্তে গাঢ় কালোতে মিশতেই বনপথ ধরেছি এমন হতাশ হতে হবে জানলে আমি এই অর্থহীন বিকেলের জন্য কিছুতেই অপেক্ষা করে থাকতাম না ।

Monday, July 10, 2023

দিলীপ দাসের কবিতা ।

দিলীপ দাস আমাদের রাজ্যের অন্যতম কবি । তাঁর কবিতায় এ মাটির জলহাওয়া, মানুষ, প্রকৃতির নিবিড় একাত্মবোধী ভালোবাসা ও দ্রোহ ঘিরে থাকে । বর্ষার ভেজা জমি থেকে ওঠা পল্লীসুবাসের মতো মিথ ও মৃত্তিকার অন্যরকম ঘ্রাণ তাঁর কবিতা থেকে ছড়িয়ে পড়ে স্থানিক পোষাক নিয়ে ।

Sunday, July 2, 2023

তোমারে করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা

তোমারে করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা ।

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

রবীন্দ্রসৃষ্টির পরতে পরতে রয়েছে মনন ও চৈতন্য নির্মাণের গথিকশিল্প । ভারতবাসীর স্বদেশভাবনার মৌলিকতা । স্বাধীনতা লাভের পথ নির্দেশিকা । তিনিই সেদিন বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন, রাখিবন্ধন, জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে স্বদেশপ্রেমের প্রকৃত পরিচয় তুলে ধরেছিলেন দেশবাসীর কাছে । কিন্তু আজ এই মহামানবের মহান কীর্তিকে ভুলিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে অসুস্থ রাজনীতির মাধ্যমে । আজ এই সংকটাবর্তিত অন্ধকারে রবীন্দ্রালোকবর্তিকার একান্ত প্রয়োজন । আজ সোচ্চারকন্ঠে আওয়াজ তুলতে ইচ্ছে হচ্ছে–'মুক্ত করো ভয় ।'

আজ 'আন্তর্জাতিক রবীন্দ্রকাব্যপাঠ দিবস' । ১৯১০ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ । এই কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন । ১৯১২ সালের ৩০ শে জুন ইংল্যান্ডের বিদ্বজ্জনের সামনে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথকৃত গীতাঞ্জলির ইংরেজি অনুবাদের কয়েকটি পড়েছিলেন আইরিস কবি ইয়েটস । রবীন্দ্রনাথও সেদিন সেখানে উপস্থিত ছিলেন । ইংল্যান্ডের বিদ্যোৎসাহীদের মধ্যে তিনি সেদিন নিজের আসন পাকা করে নিয়েছিলেন । ১৯১২ সালের ১লা নভেম্বর, ইংরেজি গীতাঞ্জলির সীমিত সংস্করণ প্রকাশ করে লন্ডনের ইন্ডিয়া সোসাইটি । ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের ১লা মার্চ, ম্যাকমিলন প্রকাশ করে ইংরেজি গীতাঞ্জলির সুলভ সংস্করণ । 

১৯৮৫ সালের পয়লা জানুয়ারি কলকাতার 'টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট' এর উদ্যোগে সোমেন্দ্রনাথ বসু প্রমুখগণ কবি  ইয়েটস কর্তৃক রবীন্দ্রকবিতাপাঠের এই দিনটিকে স্মরণীয়  করে রাখার জন্য প্রতি বছর ৩০ জুন আন্তর্জাতিকভাবে রবীন্দ্রকবিতাপাঠের আবেদন করেন । কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রতিবছর ৩০ জুন দিনটিকে 'আন্তর্জাতিক রবীন্দ্রকাব্যপাঠ দিবস' হিসাবে পালন করে আসছে ।

আজকের এই হিংসাদীর্ণ পৃথিবীতে রবীন্দ্রনাথ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক । তাঁর কবিতাসহ সমস্ত জীবনস্পর্শী সৃষ্টিশীলতার মধ্যেই রয়েছে মানবিকতার জাগরণের সতীব্র কাঙ্ক্ষা । শুভবোধ ও মানবকল্যাণের অমিয়বাণীতে মুখর তাঁর কবিতা । কাল থেকে মহাকালে উত্তরণের পথ নির্দেশ তাঁর কাব্য ।

 আসুন, এই দুঃসময়ে মানবিকতার জাগরণের লক্ষ্যে ও মানবকল্যাণের উপায় সন্ধানের জন্য রবীন্দ্রকাব্য হাতে তুলে নিই । ত্রিপুরার সমস্ত শুভবোধোদীপ্ত কবিদের কাছে আবেদন রাখছি, আজ অন্তত একবার সায়াহ্নের অনন্ত মঙ্গলালোকে রবীন্দ্র কবিতা পাঠ করুন ।