Sunday, August 26, 2018

জীবনে বেঁচে থাকা, জীবন নিয়ে তুমুল হুটোপুটি করা, অভিযানমুখর করে তোলা,আনন্দে কোলাহলচঞ্চল হওয়া,বেদনায় ঝড়ে চুপসে যাওয়া পাখির বুকের মধ্যে অঙ্কুরিত আশার মতো জেগে ওঠার শুভঙ্কর প্রেরণা, নির্মম লাঞ্ছনায় তীব্র বিদ্রোহ করার দার্ঢ্য আর আবেগে গোপন কুঠুরির প্রিয়জনের কবোষ্ণ নৈকট্যের মতো আশ্রয়কানাৎ হলো কবিতা ৷ তান্ত্রিক অভিচারক্রিয়ায় একটা প্রক্রিয়া আছে যা সমস্ত কু থেকে যোগীর শরীরকে রক্ষা করে ৷ তাকে আভিচারিক ভাষায় গা-বন্ধ বলে ৷ কবিতা এমনই শরীরবন্ধের মাদুলি ৷ কবিতার সঙ্গে যার যাপন কিংবা যোগমিলন তার আত্মার মধ্যে এক বিশাল অন্তঃসলিলা শক্তি বিরাজ করে ৷ এই সুপ্ত শক্তিই কারো কারো জীবনের ওম ৷ কবি তো কবিতার শরীরনিসৃত সেই অমোঘওমে লালিত ৷ কবির ভাবনমন্ডল তাই কবিতাময়, যোগনাদমুখর হয়ে ওঠে ৷সৃজনকাতরতা কবিকে সৃষ্টির দিকে যাত্রার বাঁশিসংকেত করে ৷ কবির অনির্দেশযাত্রার সঙ্গী কবিতানাম্নী অলৌকিক সই ৷ যে কবির সঙ্গে হরপল লীলামুখরা ৷ কবি পায় কবিতায় অবগাহনসুখ ৷

Tuesday, August 21, 2018

স্ব  প  ন

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

নয়নে প্রাচীন নির্জনতা সই হৃদয়ে ভাদুর বাদল
মাঝরাতে বসে চোখর পাতায় রাই মায়াবি আদল
ঝিঁঝিঁদের মিলিত শিস নিঝুম আঁধারে বাজে কেন
কথা দিয়েও কথা রাখি নি মিথ্যাবাদী নই জেনো
স্বপ্নের রাতে মুখোমুখি বসে পেয়েছি তোমার ঘ্রাণ
না ডাকতেই কাছে পেলাম যদি কেন তবে আহ্বান
প্রতি রাতে যদি আঁধারশিয়রে  তোমার স্বপ্ন অভিযান
জটিলা কুটিলা হার মেনে যাবে  মায়ায় ঘুমাবে আয়ান

Sunday, August 19, 2018

সাগরের বুকে ভীষণ ব্যথা। জলেরা তোলপাড় করে.।
যন্ত্রণা দেয়। সাগর তার ঐন্দ্রজালিক হাত নেড়ে বলে
যা , সব উড়ে যা
জলেরা উড়ে গিয়ে মেঘ হলো

ভাদ্র মাস। নদীর ভরন্ত শরীর
অন্তরে তার অনন্ত দৌড়
তুমুল জলভাঁড়ার বুকে তার
চোখেও জলপ্রপাত  নেমেছে
কেন তবে পিপাসায় শুকায় আমার কণ্ঠ

বৃষ্টির ফোঁটা অভিমান ছেডে. নেমে এলো সাগরে
বললো, মা আমি তোমার কোলে ফিরে এলাম
সাগর মিলিয়ে দিলো তারে আপন অন্তরে

Sunday, August 12, 2018

ও মোর মাহুত বন্ধু রে......

ত্রিপুরা রাজ্যের পার্বত্য অঞ্চল একসময় হাতির জন্য বিখ্যাত ছিল ৷ পার্শ্ববর্তী পার্বত্য চট্টগ্রামেও ছিল হাতির প্রাচুর্য ৷ এই অঞ্চলে ছিল 'হাতির দোয়াল' অর্থাৎ হাতির বাসস্থল ৷ ত্রিপুরা রাজ্যে এমন বেশ কয়েকটি হাতির দোয়াল ছিল ৷ আগরতলা শহরের বড়দোয়ালি একসময় ছিল হাতির বড়সড়ো বিচরণক্ষেত্র ৷ ( বড় + দোয়াল + ই) হাতি ধরার জন্যে  বিশাল এলাকা নিয়ে তৈরি করা হত ফাঁদ ৷ হাতির প্রিয় খাদ্য কলাগাছের বাগানে ঘেরা থাকত এই ফাঁদ ৷ বাগানের মাঝে থাকত গভীর পরিখা ৷ যা নরম গাছ লতাপাতা দিয়ে ঢাকা থাকত ৷ কলাগাছের লোভে এসে বুনো হাতির দল এই গভীর পরিখায় পড়ে যেত ৷ তারপর পোষা হাতি দিয়ে এদের ধরা হত ৷ এই ফাঁদকে বলা হত 'খেদা' ৷ পরিখা বা গর্তের প্রতিশব্দ 'খাদ' ৷ এই 'খাদ থেকেই আঞ্চলিক উচ্চারণ 'খাদা' ৷ আরও বিকৃত হয়ে 'খেদা' শব্দটির সৃষ্টি ৷ এখানে ছিল প্রচুর 'খেদা' ৷ প্রাচীন পূর্ববঙ্গ গীতিকায় 'হাতি খেদার গান' নামে পালাগানে এই অঞ্চলের বর্ণনা আছে ৷ হাতি নিয়ে কিংবদন্তী, লোককাহিনিও রয়েছে ৷  ককবরক লোককথায় নিষেধ না মেনে যাদুপুকুরে  স্নান করায় শরীর ফুলে গিয়ে 'ভাইবোন হাতি হয়ে যাবার গল্প' রয়েছে ৷ লংতরাই পাহাড়ে খোঁড়া হাতি বিচরণের কিংবদন্তী রয়েছে ৷ ত্রিপুরা-চট্টগ্রামের পাহাড়ে যে শ্বেত হস্তী ছিল তারও প্রমান পাওয়া যায় প্রাচীন কাব্যগ্রন্থে ৷ রাজমালার ধন্যমাণিক্য খন্ডে আছে— 'ডাঙ্গর ফা রাজার কালে থানাংচিতে থানা ৷/ থানাংচি না মিলিলেক রাজাতে আপনা ৷৷/ থানাংচিতে এক হস্তি ধবল আছিল ৷/ হেড়ম্ব রাজায় তাকে চাহিয়া পাঠাইল ৷' সেই শ্বেত হস্তি তো আজ লুপ্ত হয়ে গেছেই ৷ হাতির দাবী নিয়ে মোগলদের সঙ্গে ত্রিপুরার রাজাদের সঙ্গে যুদ্ধও হয়েছিল ৷ গোবিন্দমাণিক্যের সময় সমতল ত্রিপুরা অর্থাৎ চাকলা রোশনাবাদ করদ রাজ্যে পরিণত হয় ৷ তখন থেকে মোগল বাদশাহকে পাঁচটি করে হাতি নজর দিতে হত ৷যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে এই হাতিও অচিরেই নিঃশেষ হয়ে যাবে ৷
(ছবি: - ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া)

Saturday, August 11, 2018

মানবিকতার মাহেন্দ্রপ্রতীক্ষা

মানবিকতার মাহেন্দ্রপ্রতীক্ষা


নিশিক্লান্ত পাখিরা ডেকে যায় রাতপাহারা শেষে ৷ যেন এক অন্ধজাগরণের সমাপ্তি ৷ আলোর আসন্নমুক্তির মাহেন্দ্রকাল ৷ যার প্রতীক্ষায় থাকে চরাচরের সমস্ত প্রাণী ৷ মধুপবন বয়ে যায় ৷ জেগে ওঠে বৃন্দনাদ ৷ ভুবনবিনিদ্র অন্ধকার মুছে আলোকসুন্দর ঊষাপেখম আকাশমোহনায় বিকীরণবিস্তারে বিমুগ্ধ ৷ পবিত্রতোয়া মেঘের সরোবরে অবগাহনস্নিগ্ধ শরীরে শরীর মেলে ধরে পয়ার ৷ জীবনের সুরুয়াত হয় কৃষ্ণাদশমীর চাঁদসরানো আকাশের অনতিআঁধারে ৷ পয়ার  জুড়ে জুড়ে দীর্ঘ কবিতা ৷ জীবনের মহার্ঘ উপকরণের সম্মিলিত সৌন্দর্য যেন উপছে পড়ে প্রবহমান কালপত্রিকায় ৷ শিউলিপ্রভাত উঁকিঝুকি দেয় বাহিরকার্নিশে ৷

সূর্য জেগে উঠলেই ঊষার উল্লাস ৷ প্রভাত উঁকি দেয় কিশোরীউঠোনে একপ্রান্তে বেড়ে ওঠা লাউডগার গায় ৷ দীর্ঘদেহী বৃক্ষের শরীরে  নিরাপদে বেড়ে ওঠা নবীন লতার মতো সদ্য বউ হয়ে আসা তরুণী বধূ যখন ভোরে উঠে উঠোন ঝাঁট দেয় তার মধুমতী হাতে কাঁকন বেজে যায় ভৈরবী রাগে ৷ তার মায়ের আঁচলের গন্ধ ভেসে আসে বাতাসে ৷ বুকের ভেতর বেদনাকাতর ধ্বনি জমাট হয় ৷ আসলে সকলেই দুঃখ বয়ে বেড়ায় নিজের অন্তরে ৷ বিষাদপাঁচালি আজীবন তুলে রাখা হয় প্রাচীন পুঁথির মতো ৷ প্রতিটি কবিও বিষাদের বর্ণমালা সাজায় বেদনার্ত কলমে ৷ যার যত বেশি বিষন্নতা তার সৃজনও তত নির্জনমুখর ৷ মানুষের দুঃখকে সারিয়ে তুলবার ব্রতকথা প্রতিদিনের পাঠে থাকলেও বেদনামোচনের বিশল্যকরণী নিয়ে শব্দপ্রতিমা গড়া হয়ে ওঠেনা ৷ নিরাময়ের লংমার্চ এগোয় সেই স্নিগ্ধ সকালের দিকে ৷ অনর্গল দৈবকবিতা সার বেঁধে আসে কবির কলমে ৷ প্রাচীন রেণুর মতো আণবিক শব্দ উঠে আসে পূর্বজ সিন্দুক থেকে ৷ মানুষের আঙিনায় প্রিয় হয়ে ওঠেন সুজনপ্রতিম কবি ৷ অক্ষরকপর্দকই হয় তার পারানি ৷

অমোঘজীবন জুড়ে কস্তুরীঘ্রাণ বিলিয়ে  তৃপ্ত হতে চায় না  কোনজন্? আজীবন শুভসংলাপ শরীরের গ্রন্থি থেকে মননের মোহনায় পৌঁছে দেওয়ার জন্যে ধীরে ধীরে দারুপুতুল নির্মান হয় ৷ অগ্নিকার্তুজ কোমলনিষাদের মতো নরম হয় ৷ পুরানো শিকড় কথা বলে ওঠে, প্রিয় ঐতিহ্যের কথা ৷ কাঁচের আলমারি থেকে উঁকিঝুকি দেয় রবীন্দ্রসম্ভার ৷ সেই রচনার পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় বিশ্বাস মুদ্রিত আছে ৷ ঘোড়সওয়ারের অস্থিরতা যখন সময় ও জীবনকে ধ্বস্ত করে তখনই প্রয়োজন পড়ে প্রাচীনপুরুষের ৷ সমকালের আহত আত্মার বাহক কবি নিশিদিন খুঁজে ফেরে সেই দীর্ঘদেহী আর্যপুরুষকে ৷ মানবতার নিদারুণ লাঞ্ছনায় যিনি শান্তির মরূদ্যান ৷ যিনি এক পরিণত অনন্তমানব ৷

ভোরের বার্তা

সময় এখন বড়োই খারাপ সময় মিতবাক
হাজার চোখে দেখেও দেখেনা অন্ধের চিচিং ফাঁক
আকাশ থাকে স্তব্ধ হয়ে বাতাস বধির প্রায়
মুখ গুঁজে সব বালির বুকে যার যাবে তার যায় ৷

ক্রুদ্ধ হবে?  প্রতিবাদটা করবে কেমন করে
সাদা পোষাক রাজার সেপাই চারদিকে যে ঘোরে
গোপন হুকুম চুপ থাকো সব বন্ধ রাখো চোখ
হল্লা শুধু করতে পারবে রাজার আপন লোক ৷

শোকের মহড়ায় ব্যস্ত মহল্লা নীরবতার পরোয়ানা
শব্দ তোলা বারণ কেন আরোপিত অজানা
বুকের ভেতর দামামা বাজে সমুদ্রের গর্জন
হচ্ছে বোধন হাজার ঘরে দেবীর আবাহন ৷

সময় ভীষণ খারাপ এখন সময় গতিহারা
তবুও এক নিঃস্ব বাউল শূন্য মাঠে ঘুরে
জাগরণের গানের সুরে কণ্ঠ বাঁধনহারা
মধ্যরাতের বাথান পেরোয় ভোরের আশা করে ৷

Tuesday, August 7, 2018

বাইশে শ্রাবণ

ফিরে এল সেই রিক্ততার বক্ষ দীর্ণ করা অশ্রুবিধৌত ক্ষণ , মহীরুহকে হারানোর দিন , বাইশে শ্রাবণ । এ দিনটি আমাদের শুধু বেদনায় আপ্লুত করে না ,আমাদের অন্তরে প্রাণের পরশও দেয় , নতুন জীবনের উত্সাহ সঞ্চার করে ।  নিদারুণ দুঃখরাতে মৃত্যুঘাতেও আমরা বিচলিত হই না । যাবতীয় ভয়-ভীতি , হতাশা-নিরাশা , যন্ত্রণা ও দ্বিধা-দ্বন্দ্বকে অতিক্রম করার সঞ্জীবনী মন্ত্র পাই । চিরায়ত নিয়মে বাইশে শ্রাবণে রবীন্দ্রনাথকে না পেলেও তাঁর মননকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি । তাঁর রেখে যাওয়া সৃষ্টির মধ্যে ফিরে ফিরে পাই কবিকে । ' তোমায় নতুন করে পাব বলে, হারাই ক্ষণে ক্ষণে/ ও মোর ভালোবাসার ধন ।'

Wednesday, August 1, 2018

নিজের কথা

অনেকদিন পরে যেন ঘরে ফিরলাম বিধ্বস্ত সৈনিকের মতো । আসলে কী ফিরলাম ঘরে ? দু হাজার আটে পদোন্নতির ফলে সাব্রুম দ্বাদশ শ্রেণি বিদ্যালয়ের উঁচু ক্লাসে পড়ানোর পাঠ চুকিয়ে গিয়েছিলাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সর্দারি করতে । ভাগ্যের প্রথমটা আশাহত হয়েছিলাম । পরে জেদ চেপে বসে , কিছু করে দেখাতে হবে। প্রত্যন্ত মিশ্র জনবসতি এলাকায় জয়কুমার রোয়াজা পাড়া স্কুলে ঢুকেই হাত দিলাম কাজে ।সকল সহকর্মীর মধ্যে নিয়মানুবর্তিতা আনা দরকার । নিজেকে দিয়েই শুরু হোক । দুর্গম এলাকায় সময়মতো গাড়ির অভাবে স্কুলে পৌঁছাতে কষ্ট হতো । উপায়ান্তর না দেখে জিপিএফ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা তুলে একটা লাল বাইক কিনলাম । এই লালুকে নিয়ে স্কুলসহ হাজারো কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লাম । পর পর আই এস হিসেবে যাঁদের পেয়েছি রণজিত মজুমদার , অর্জুন শর্মা , সমরেন্দ্রনাথ দাস এবং বর্তমানের সঞ্জিত মালাকার সবাই আমার অনুজপ্রতিম । স্কুলের উন্নয়নে যখন যা দরকার আবদার করেছি কেউ ফেরান নি আমাকে । যার ফলে স্কুলটাকে রাজ্যের মধ্যে একটা জায়গায় দাঁড় করাতে পেরেছি । অনুজ ও সন্তানপ্রতিম কজন তরুণ শিক্ষককে পেয়েছি যাঁরা আমাকে সর্বক্ষণ সাহচর্য দিয়ে গেছেন । টিমওয়ার্ক যে কীভাবে গঠনমূলক চিন্তাকে ফলপ্রসূ করতে পারে তার উদাহরণ ৷ ( 2. 8. 2014. তে লেখা আমার দিনলিপি)

চ শ মা

দুঃখকে মোছার জন্যে মায়াকথা সাজে রঙিন আলোয়
টুপ টুপ বৃষ্টি নীরবে বইলে কান্নার সমান
মঞ্চের আলোর পুকুরে ডুবে যায় সন্ধ্যার বাউল বসন

মিলিমিশি নাটকে আমার দুর্বল সংলাপ,
পোষাক পাল্টাই বারবার সাধুর ভণিতায়
কেবল ভুলে যাই চশমার কাঁচ পাল্টাতে
বনেদি সাধবাজারে আমি বেকুফ ক্লাউন

হালফিল ম্যারাথনের সাথে আমি বড়োই বেমানান
গবেট প্রাচীন আমি মায়াময় আলোয়
গুহামানবের মতো উবু হয়ে শান্তির প্যারেড করি ৷

সৃ জ ন

এই হন্তারক কালে কী গুহাজীবন গন্তব্য
ইতর জীবেরও থাকে মৌসুমি রমণ সৃজনের তরে
কেবল  শ্রীচরণযুগল জানে না ভালোবাসার মানে

দেহিপদপল্লবের আর্তির বদলে ভগচিহ্নের স্বপ্নবিভোর

পাশে সব কাপুরুষ বলেই তো
একাকী জেগে ওঠে দ্রৌপদীর আঁচল
বেড়ে় যায় বেড়ে যায় অনন্তের পথে
সম্ভ্রম রাখার ইজারা একমাত্র বহুব্যবহৃত পট্টবস্ত্র

আর সব সাজানো সারি সারি বার্বিডল ৷