Sunday, July 15, 2018

স্ব প ন


নয়নে প্রাচীন নির্জনতা সই হৃদয়ে ভাদুর বাদল
মাঝরাতে বসে চোখর পাতায় রাই মায়াবি আদল
ঝিঁঝিঁদের মিলিত শিস নিঝুম আঁধারে বাজে কেন
কথা দিয়েও কথা রাখি নি মিথ্যাবাদী নই জেনো
স্বপ্নের রাতে মুখোমুখি বসে পেয়েছি তোমার ঘ্রাণ
না ডাকতেই কাছে পেলাম যদি কেন তবে আহ্বান
প্রতি রাতে যদি আঁধারশিয়রে তোমার স্বপ্ন অভিযান
জটিলা কুটিলা হার মেনে যাবে মায়ায় ঘুমাবে আয়ান

Saturday, July 14, 2018

আমার শহর

এ শহর পাখিদের মুক্তাঞ্চল ৷ এ শহর ফুলেদের নাচঘর ৷ এখানের আকাশ উদোম কিশোর ৷ রাতের তারাদের অ্যাকোরিয়াম ৷ মাঠের ফসল লুটোপুটি খায় আত্মদানের আনন্দে ৷ মন্দিরময় এ শহর যেন সহজ মানুষের হরিবাসর ৷একমাত্র মসজিদটাকেও বুক দিয়ে আগলে রাখে , চিরাগ জ্বালায় এ শহরেরই সব ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ ৷ প্রান্তিকনদী ফেনির ওপার থেকে দখিন সমীরণ বয়ে আনে ওপারের আজানধ্বনি ৷এপার থেকে সংকীর্তনসসুর উত্তুরে হাওয়ায় পাখা মেলে উড়াল দেয় ওপারে ৷ সীমান্তবর্তী হয়েও অসীমান্তিক এ শহর স্বচ্ছতার শহর ৷ মুক্তমনের শহর ৷ বুকের ভেতর স্বপ্ন লালন করে আছে এশহর ৷ কোনদিন উদার আহ্বান জানাবে, 'আজি দখিন দুয়ার খোলা' ৷ 'এসো আমার ঘরে এসো, আমার ঘরে' ৷ এক বিশ্বপ্রেমিক আত্মার বাসভূমি আমার শহর সাব্রুম ৷

মনে পড়ে গেল ছোটোবেলার দাড়িয়াবান্ধা খেলার কথা ৷ দাড়িয়াবান্ধা খেলার জন্যে মাঠে একটা বড়ো বর্গাকার ঘরকে আরো কতগুলো ছোটো বর্গাকার কোঠায় ভাগ করে সেগুলোতে আড়াআড়ি একজন খেলোয়াড় দাঁড়িয়ে পড়ে ৷ প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা ওদের ডিঙিয়ে একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে যাওয়ার চেষ্টা করে ৷ কোঠার মালিকরা দুপাশে হাত ছড়িয়ে দিয়ে ওদের বাধা দিতে চেষ্টা করে ৷ প্রতিপক্ষকে ছুঁয়ে দিতে পারলে সে 'মর' ৷ ফাঁক গলে ছিটকে বেরিয়ে যেতে পারলে সে জিতে যায় ৷ এই ব্যাপারটাও অনেকটা এরকমই ৷ আকাশে সূর্যের সামনে বড়ো সড়ো মেঘ এসে পড়লে সূর্যের আলো বাধা পাওয়ার ফলে সামনের দিকটা অন্ধকার লাগে ৷ আর সূর্যের চারপাশের কিরণের কতক মেঘের চারপাশ দিয়ে ক্ষীণ আকারে বেরিয়ে আসতে চায় ৷ সূর্যের বৃত্তাকার বিকীরণের জন্যেই মেঘের চারদিকে আংটির মতো আলোর রশ্মি  দেখা যায় ৷ অনেকটা বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণের মতোই ৷ আর মেঘ যখন সরে যেতে শুরু করবে তখন কয়েক মুহূর্তের জন্যে একদিকে আলোর দ্যুতি হিরের আংটির মতোই ঝলসে উঠবে এও এক বিরল দৃশ্য ৷ পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সময় এই অবস্থাকে বলা হয় 'হীরকঙ্গুরীয়' বা 'ডায়মন্ড রিং' ৷ এখানে মেঘস্তরটির মাঝখানেও ফাঁক থাকায় সেখান দিয়েও সূর্যের আলো বেরুচ্ছে ৷ আশঙ্কার বিষয় হলো এ মেঘ সাধারণ মেঘ না হয়ে বায়ুদূষণের ফলে সৃষ্ট কালো ধোঁয়ার গভীর স্তর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ৷ ফলে এ মেঘ সরতে সময় নেয় ৷

Wednesday, July 11, 2018

বিলুপ্তপ্রায় লোকক্রীড়া 'লাঠিখেলা'

সংস্কৃত 'যষ্ঠি' শব্দ থেকে প্রাকৃতায়িত হয়ে বাংলায় লাঠি হয়েছে ৷ একসময় বিনোদন ও আত্মরক্ষার উপকরণ ছিল এই লাঠি ৷  যাঁরা লাঠিচালনায় পারদরশী তাঁদের বলা হয় লাঠিয়াল বা লেঠেল ৷ একসময় জমিদাররা আত্মরক্ষায়, জমিরক্ষায় কিংবা জমি দখল নিতে লাঠিয়াল নিয়োগ করতেন ৷ সেসময়ে বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ও মেলায় বিনোদনের অঙ্গ হিসেবে লাঠিখেলার আয়োজন করা হত ৷ বেশ উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হত এই লাঠিখেলাকে কেন্দ্র করে ৷ অপরাধীকে শায়েস্তা করার জন্যে 'লাঠ্যৌষধম্' প্রয়োগ করা হত ৷ প্রবাদ আছে, 'লাডিরে ভূতেও ডরায় ৷ বাংলাসাহিত্যে লাঠিয়াল বা লাঠি খেলার অনেক প্রসঙ্গ আছে ৷ লাঠিয়াল চরিত্রের মধ্যে প্রমথ চৌধুরীর 'মন্ত্রশক্তি' গল্পের 'ঈশ্বরী পাটনী' বিখ্যাত হয়ে আছে ৷ তেমনি বিখ্যাত তার উক্তি, 'হুজুর,  নেশায় শরীরের শক্তি যায় কিন্তু গুরুর কাছে শেখা বিদ্যে তো যায়না' ৷  বাংলার অধুনালুপ্ত এই খেলা বাংলার মার্শাল আর্টের বিশেষ উদাহরণ ৷রাজ্যের তরুণ গবেষক ও বিশিষ্ট কবি-সম্পাদক গোপাল দাস এই লোকক্রীড়াকে আবার তুলে এনেছেন পাদপ্রদীপের আলোয় ৷ তিনি তাঁর গবেষণাধর্মী লেখায় তুলে এনেছেন, লাঠি খেলা
গোপালচন্দ্র দাস

সিলেটের অঞ্চলের বিনোদনের এক অংশ ছিলো এই লাঠি খেলা।বাজারে ঢোল পিটিয়ে লাঠিখেলার স্থান সময় বলে দেওয়া হতো।বিশেষ এক ধরনের বাঁশ যা আকারে বেশী বড় হয় না,ভেতরে ফাঁপা বা ছিদ্র কম থাকে( যাকে সিলেটি ভাষায় নিষ্ফুল্লা বলে)। এ ছারা কেউ কেউ টেটুয়া কনক‌ই অথবা কোন কারন বশতঃ বড় না হ‌ওয়া বরাক(ছিংলা বড়ুয়া) ও উক্ত খেলায় ব্যবহার করে থাকেন। গাড় বাসন্তি রঙ এর টেকস‌ই ও মজবুত বাঁশ। অমাবশ্যায় বিশেষ করে শনিবার অথবা মঙ্গলবার হলে তো আর কথাই নেই। লাঠি খেলার বাঁশ অন্যের বাঁশঝাড় থেকে বেশীর ভাগ‍ই চুরি করে কাটা হয়।একটি বড় বাঁশ চাইলে এমনিতেই দিয়ে দিতে পারে কিন্তু লাঠি খেলার বাঁশ দেবে না বা বিক্রিও করবে না।কেউ লাঠিতে তৈল মর্দন করেন আবার কেউ খেলার পূর্বে রীটা(এক ধরনের গাছের গুটা যা ক্ষারযুক্ত)দিয়ে লাঠি ও নিজ হাত ধুয়ে নেন যাতে হাত থেকে লাঠি পিছলে না যায়।
খেলার আগে, ও চলাকালিন সময়ে ঢোলের বাজনা চলে।ঢোলের তালে তালে অনেকটা মার্শাল আর্টের বুলির মতো খেলোয়ার বুলি আউরান।দুদিকে দুই খেলোয়ার খেলার লাঠি নিয়ে যার যার সাধ্যমতো কসরৎ ও বিদ্যার বাহাদুরি প্রদর্শন করে অনেক হাত তালি ও হর্ষধ্বণি পান।
এক লাঠি দিয়ে অনেকেই খেলেন,কেউ কেউ কানজোখা (মাটি থেকে কান পর্যন্ত)লাঠি ব্যবহার করেন কিন্তু আসল লাঠি খেলাতে বাঁশ খাড়া করে যে ব্যক্তি লাঠি খেলবেন সেই ব্যক্তি মাটি থেকে বত্রিশ মুষ্টি উপরে বাঁশ কাটবেন এবং ঐ লাঠি শুধুমাত্র ঐ ব্যক্তির জন্যে প্রযোজ্য অন্য কারো জন্যে নয়।খেলা শিখতে ওস্থাদ বা গুরু ধরতে হয়।
পুরো খেলাকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে,প্রতি ভাগে আট মুষ্টি। পুরো খেলা বত্রিশ মুষ্টি(৪×৮=৩২)।প্রথম ৮ কলা,উনি এক‌ই সাথে আটটি কলা কসরৎ প্রদর্শন করতে পারেন,এটা শিক্ষনীয় প্রাথমিক পর্যায়। এভাবে ১৬ মুষ্টি ২য়,২৪ মুষ্টি ৩য় ধাপ ও সর্বশেষ ৩২ মুষ্টি একজন পূর্ণ খেলোয়ার বা ওস্থাদ। উনি খেলা শিখাতে পারেন।উনি কঠোর সাধনা করেন ও সংযমী থাকেন।সাধারন হানাহানি মারামারিতে সেই কলা প্রয়োগ করেন না। শুধু প্রাণ রক্ষার্থে এই কলা ব্যবহার করতে পারেন।বত্রিশ মুষ্টির খেলোয়ারের অনেকের‌ই লম্বা চুল থাকে।নিজ চক্ষু প্রতিদ্বন্ধি খেলোয়ারকে দেখান না।পা ও চোখের দিকে তাকিয়ে অনেক সময় প্রতিদ্বন্ধি বুঝতে পারেন এখন শরীরের কোন অঙ্গে আঘাত আসতে পারে। খুব সাবধানে প্রতিটি অঙ্গ সঞ্চালন ও সতর্কতার সহিত প্রতিটি পা ফেলতে হয়।
একজন পূর্ণ খেলোয়ার খেলা শুরু হ‌ওয়ার পূর্বে সোনা রুপা তুলসী ও আতপ দুধ দিয়ে লাঠিকে শোধন করে নিজ কলা ,ওস্থাদ ,ও লাঠিকে যেমন সন্মান করেন তেমনি কিছু তুকতাক্ ,টোটকাও করে থাকেন।অমাবশ্যা শনিবার,অভাবে শুধু শনিবার অথবা শুধু অমাবশ্যায় মৃত ব্যক্তির দাহকাঠি(সিলেটি ভাষায় খুঁছিবারি)তে লেগে থাকা অঙ্গার খেলার লাঠির দুই মাথায় প্রবেশ করিয়ে পিতলের বাট লাগিয়ে বশিকরণ মন্ত্র তিনবার উচ্ছারণ করেন। আবার কেউ খেলা শুরুর প্রাক্ মুহূর্তে পূর্ববন্ধি করেন:- উত্তরে হিমালয় বন্ধি,হরগৌরী বন্ধি,পশ্চিমে জগন্নাথ বন্ধি,দক্ষিণে কালিদয় সাগর বন্ধি,পাতালে বাসুকির চরণ বন্ধি,পর্ব্বতে রাক্ষুসী বন্ধি,যে আমারে হিংসা করবো রাক্ষুসী তারে খাইবো। তিনবার লাঠিতে ফু দেওয়া হয়। লাঠি খেলা নিয়ে সিলেটি ভাষায় ক'লাইন দেওয়া হলো:-
মুঠির উপরে মুইট
যে ধরবা লাঠি
তান বত্তিশ মুইট।
সোনা রুপা তুলসী
লাঠিত ঘষাও আওয়া দুধ
বেটিন্তর কাপরের নীচেদি
যাইও নারে পুত।
মায় মুরব্বির আশিব্বাদ ল‌ও
উস্থাদ ধর সাইচ্ছা
চুক নায় বুদ্ধি দিয়া দেখ
শত্রু তোমার সামনে বাইচ্ছা।
                শুধু শক্তি দিয়ে উত্তেজিত হয়ে এই খেলায় জয়লাভ করা যায় না। আত্ম সংযম, কলা কুশলী, বুদ্ধির সঠিক ব্যবহার করতে হয়।
লাঠি খেলাকে কেন্দ্র করে গ্রামে গঞ্জে ছোটখাটো মেলা বসে।ছোট বড় সবাই এই খেলা ও মেলাকে উপভোগ করেন।
এই খেলায় শর্তশাপেক্ষে না হয়ে যদি খোলা মেলা রীতি অনুযায়ী হয় ,তাহলে অনেকের‌ই  হাত মাথা ফেটে যায়,এবং খেলা শেষে প্রতিদ্বন্ধিকে সহনুভূতি সহ মলম পট্টি করাতে দেখা যায়। বাস্তবে এটা একটা বন্ধুত্বপূর্ণ খেলা,যা আজকাল লুপ্তপ্রায়। ( লাঠিখেলা - গোপালচন্দ্র দাস) ৷

11-07-2018
পারমিতার জন্যে
সম্পাদক:- অমিশা দাস

মোটেই গল্পও না ৷ বানিয়েও বলা না ৷ এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি আমিও হয়েছি বার কয়েক ৷ একদিন দুপুরে মিড ডে মিল খাওয়ার একটি মেয়ে এসে বলল, ছার বাই খাইছেনা ৷ আমি যতোটা বুঝতে পারি ওর কথা ৷ বলি, তোমার ভাই না খাইলে খাওয়াইয়া লও ৷ কি হইসে ৷ ভাত দিছে না তারে?  না ছার, হেতে ত' গরে আছে?  আমি রেগে গিয়ে বলেও ফেললাম,  তারে কী বাড়িত গিয়া ভাত খাওয়াইয়া আইতে অইবো নি?  স্কুলে আইছেনা কেরে?  ছোটো মেয়েটি যতটুকু পারে বুঝিয়ে বলল, ভাত খাইছেনা ছার ৷ এলাইগা স্কুলে আইত পারেনা ৷ আমি সম্বিত ফিরে পেলাম ৷ বুঝলাম ব্যাপারটা ৷ একটা পলিপ্যাক যোগাড় করে রান্নার মহিলাদের বলে ওর ভাইয়ের জন্যে ভাত তরকারির ব্যবস্থা করে পাঠালাম ৷ শিক্ষকতার জীবনে এমন বহু অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয় ৷ অনুভবের হৃদয় লাগে ৷ শুধুমাত্র চাকরি করতে গেলে এইসব যন্ত্রণা চোখে পড়েনা ৷

Saturday, July 7, 2018

একদিন মাটির ভিতর....

ক্রমাগত শোকের মাইলস্টোন পেরিয়ে আমাদের পথচলা ৷ এক,  দুই, তিন...প্রিয়জন, স্বজন, বন্ধুজন ৷ এভাবেই মহাপ্রস্থানের পথে, অচিনপথের যাত্রী, নিরুদ্দেশের পথিক হয়েযেতে হয় ৷ একজীবন কর্মকান্ডের শেষে মিশে যেতে হয় পঞ্চভূতে ৷ এক একটা ঢেউ এসে মুছে দিয়ে যায় বালিয়াড়ির বুকে লেগে থাকা পদচিহ্ন ৷ আর পরবর্তী পদছাপ অপেক্ষায় থাকে মুছে যাবার ৷ প্রতীক্ষায় ভীরু দিন গুজরান ৷ তারপর ৷ তারপর কে ৷ কে হারিয়ে যাবে দিকচক্রবালের অন্তরালে ৷ ফর হোম দি বেল টোলস্ ৷
গতকাল চলে গেলেন আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু সঙ্গীত শিক্ষক অরুণ নন্দী ৷ এই ছোট্ট শহরের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের উজ্জ্বল মাণিক্য ৷ বছরের প্রায় সময়ই কোনো না কোনো সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে রাখতেন নিজেকে ৷ কতো গীতিনাট্য, নৃতনাট্যের স্ক্রিপ্ট করিয়ে নিয়েছেন আমাকে দিয়ে ৷  অত্যন্ত সৃজনশীল মনের শিল্পী ছিলেন তিনি ৷ তাঁর মঞ্চ উপস্থাপনা ছিল নিখুঁত ৷ সাব্রুমের বৈশাখি মেলায় অরুণ নন্দীর সংস্থার উপস্থাপনা মানে জনঢল ৷ দর্শকের বাঁধভাঙা উপস্থিতি ৷ আর ছিল অসাধারণ কৃতজ্ঞতাবোধ ৷ অনুষ্ঠানমঞ্চে নিজে মাইক্রোফোন নিয়ে ঘোষণা করতেন মঞ্চে নৃত্যনাট্য কিংবা গীতিনাট্যটি স্ক্রিপ্ট রচনাকার হিসেবে এই অধম কলমচির নাম ৷ যা অনেকের কাছ থেকে আমি পাইনি কোনদিন ৷ চুপচাপ আমার কাছ থেকে লেখা নিয়ে নীরবে কাজ সারেন ৷ অনেকে নিজের নামে ছাপাবার জন্যেও লেখা নেন ৷ আমিও লিখে দিয়েই থাকি ৷ আমি তো আর লিখে অন্ন যোগাই না ৷ স্নেহভাজন কারো যদি উপকারে আসে মন্দ কী ৷ মরা মরা করেও যদি রামনাম মুখে আনে ৷ ধীরে ধীরে নিজের মধ্যে যদি লেখার অনুপ্রেরণাটা আসে ৷ এই আশায় ৷ কিন্তু ওরা আত্মতৃপ্তিটাকেই মোক্ষম মনে করে ৷ কিন্তু অরুণ ছিলেন একদম অন্যরকমের ৷ অনুসন্ধিৎসা ছিল ভীষণ ৷ একবার চন্ডিদাস নৃত্যনাট্য লেখার সময় বাঁশুলিসেবক কথাটি ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে আমাকে রীতিমতো শাস্ত্রপাঠ করিয়ে ছেড়েছিলেন ৷ বাংলাসাহিত্যের ইতিহাস পড়ার সময় চন্ডিদাস বাঁশুলিসেবক এইটুকুই জেনেছিলাম ৷ তার গভীরে যাইনি ৷ অরুণের জন্যে অনেকটা পড়াশুনো করতে হয়েছিল আমাকে ৷ মনে পড়ে সাব্রুমে সুভাষদা ( সঙ্গীতার প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত প্রধানশিক্ষক এবং এই সময়ের ত্রিপুরার খুদে আইকন সঙ্গীতশিল্পী রোদ্দুর দাসের পিতামহ) , প্রণব মজুমদার ( রাজ্যের বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব)  অরুণ নন্দী প্রমুখ সঙ্গীতের আসরে বসলে রাত শেষ হয়ে যেত ৷ সেইসব আসরে কিছুদিনের জন্যে রাজ্যের বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও ঋজু ব্যক্তিত্ব শুভংকর চক্রবর্তীও থাকতেন ৷
অরুণ নন্দী জীবিকানির্বাহের জন্যে তবলা ও সঙ্গীত শিক্ষাদানকে বেছে নিয়েছিলেন ৷ একটি বাইসাইকেলকে সম্বল করে সারাটা সময় শহরের এমাথা থেকে ওমাথা ট্যুইশানি করে দিনগুজরান করতেন ৷ অন্যসময় টুকটাক কাজ করতেন ৷ এতো টানাটানির মধ্যেও শিল্পসত্তাকে বিসর্জন দেননি ৷ আমার সঙ্গে একটা 'পাৎরাজি'র ( অম্লমধুর)  সম্পর্ক ছিল ৷ আমাকে 'বড় মাস্টর',  'বড় লেখক' বলে খেপাতেন ৷ আমরা দুজনে কথাবার্তা বলতাম গ্রামের উপজাতিদের উচ্চারিত বাংলাভাষায় ৷ 'আর ত' কতা অইত' না রে অরুণ তোমার লগে ৷'
সাতাশি অষ্টাশি সালের একদিন ৷ সেদিন ছিল একত্রিশে মার্চ ৷ আমি সাব্রুম হায়ার সেকেন্ডারিতে লম্বা হলরুমটাতে দ্বিতীয় ঘন্টায় একাদশ বা দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস নিচ্ছি ৷ অরুণকে দেখলাম আমাদের স্টাফ রুমের দিকে যাচ্ছেন ৷ একটু যেন আমার দিকে তাকালেন ৷ বারোটা পঁচিশে আমার ক্লাশ শেষ হওয়ার পর বেরিয়ে স্টাফরুমে যেতে সবাই আমাকে ঘিরে ধরলেন ৷ বললেন এক্ষুনি অরুণের সঙ্গে উদয়পুর ট্রেজারিতে যেতে ৷ অরুণ সাব্রুম থানার কোন একটা কাজ করেছিল তার বিল এসেছে আজই ৷ ট্রেজারিতে বিল জমা দিয়ে টাকা তুলতে হবে ৷ আজই অর্থবছরের শেষদিন ৷ কিন্তু ওর বিলে ট্রেজারির উল্লেখ রয়েছে উদয়পুর ৷ কাজেই সাবরুম ট্রেজারি থেকে তোলা যাবেনা ৷ থানা থেকে উদয়পুরে যোগাযোগ করেছে ৷ বলেছে তিনটার মধ্যে উদয়পুর ট্রেজারিতে জমা করতেই হবে বিল ৷ তখন সাবরুমে যানবাহনও কম চলত ৷ শুধু একটার টিআরটিসি টা আছে ৷ সেটা তিনটায়ও পৌঁছাবেনা ৷ আমি যদি আমার স্কুটার নিয়ে তার উপকার করি ৷ সবাই বলছেন ৷ হেডস্যারও স্কুলের বিভিন্ন প্রোগ্রামের সুবাদে অরুণকে চিনতেন ৷ এই বিপদে তিনিও এগিয়ে এলেন ৷ আমাকে ছুটি দিলেন ৷ তাঁরাও জানতেন আমার সেই যৌবনের দিনগুলোতে অনেক অসাধ্যসাধন করেছি ৷ স্কুটারে গিয়ে উদয়পুর থেকে প্রয়োজনীয় ঔষধ এনে দিয়েছি অনেককে ৷
  সেদিন অরুণের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজনের পর স্কুটার হাঁকালাম ৷ পথে কোথাও থামিনি ৷ কিন্তু বীরচন্দ্র মনু পেরিয়ে লাচি ক্যাম্পের সামনে স্কুটার গেল একেবারে অফ হয়ে ৷ হাতেও সময় কমে আসছে ৷ আমরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় ৷ বোকার মতো স্কুটার ধাক্কাচ্ছি ৷ ক্যাম্পের একজন জোয়ান এগিয়ে এলেন ৷ আমরা কোথা থেকে এসেছি জানার পর বললেন, অনেকদূর চলেছে বাইক ৷ ইঞ্জিন গরম হয়ে গেছে ৷ একটু বিশ্রাম নিলে আবার চলবে ৷ ঠিকই কিছুক্ষণ পরে আবার বাজাজ সুপার স্টার্ট নিল ৷ একটানে তিনটে বাজার তিন মিনিট থাকতে উদয়পুর ট্রেজারিতে পৌঁছলাম ৷ সাব্রুম থানা থেকে আগে যোগাযোগ করে রাখায় অরুণকে বেগ পেতে হলনা ৷ কাজ হয়ে গেল ৷ রাতটা আমার শ্বশুরবাড়িতে কাটিয়ে একদম রিল্যাক্স মুডে সাবরুম পৌঁছাই ৷  অরুণের সঙ্গে মহার্ঘ সেই দুটো দিনের কথা আমি কোনদিন ভুলবনা ৷
সাব্রুম একসময় যাত্রা নাটকের জন্যে বিখ্যাত ছিল ৷ যাত্রার আসরে অরুণের কনসার্ট, নাগারাটিকারার, কঙগো-বঙ্গোর ধ্বনি মূর্ছনা আজো বুকের ভেতর তোলপাড় হয় ৷ আর নাট্যানুষ্ঠানে ওর আবহরচনা নাটককে অন্য মাত্রায় নিয়ে পৌঁছাত ৷
একবার আকাশবাণী বিলোনিয়া থেকে স্টেশন ইনচার্জ মৃণালকান্তি দেববর্মণ দাদা আমাকে বললেন সাব্রুম থেকে দুএকজন শিল্পীকে পাঠাতে ৷ অরুণ নিজে গেলেন ৷ সঙ্গে নিয়ে গেলেন তাঁর ছাত্রী দূর্বা নন্দীকে ৷ দুজনেই মৃণালদার মন জয় করে ৷ অরুণের ছাত্রী দূর্বাতো পরে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে এম মিউজে স্ট্যান্ড করে ৷ বিবাহসূত্রে দূর্বা এখন রাজ্যের বাইরে আছে ৷ সেখানেও দূর্বা প্রতিষ্ঠিত শিল্পী ৷ তালিম দিয়ে যে কোনজনকে শিল্পী বানিয়ে ফেলতে পারা এবং প্রতিষ্ঠিত করিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে অরুণের অসাধারণ ক্ষমতা ছিল ৷ আমার সাম্প্রতিককালে দেখা সাব্রুমের সঙ্গীতশিল্পী গৌতম ঘোষ এবং রাজ্যের বিশিষ্ট চিকিৎসক ড. সুব্রত দেব তার উজ্জ্বল উদাহরণ ৷
কদিন আগেও অরুণ অনুষ্ঠান করেছেন ৷ মনে বয়নি এমন মারণব্যাধি তাঁকে তিলে তিলে নিঃশেষ করে দিচ্ছে ৷ সাব্রুমের সাংস্কৃতিকপরিমন্ডলের বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল অরুণের প্রয়াণ ৷ মনটা মেনে নিতে পারছেনা ৷ 'তবু যেতে দিতে হয়' ৷

Friday, July 6, 2018

ত্রিপুরা লিটল ম্যাগাজিন গিল্ড
     খসড়া সংবিধান
——————————————
ত্রিপুরা লিটল ম্যাগাজিন গিল্ড
হালাইমুড়া, কুমারঘাট, ঊনকোটি জেলা, ত্রিপুরা, ভারত

রেজি:  নং-                          তারিখ: -

1. নাম: - সংস্থার নাম:  ত্রিপুরা লিটল ম্যাগাজিন গিল্ড

2. ঠিকানা: -হালাইমুড়া, কুমারঘাট, ঊনকোটি জেলা, ত্রিপুরা, ভারত

3. কার্যালয়: - ত্রিপুরা লিটল ম্যাগাজিন গিল্ড এর কার্যালয় অস্থায়ীভাবে
হালাইমুড়া, কুমারঘাট, ঊনকোটি জেলা, ত্রিপুরা, ভারত এই ঠিকানা হিসাবে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয় ৷ পরবর্তী সময়ে সংগঠনের কলেবর ও সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি হলে রাজ্যের রাজধানী আগরতলাতে প্রধান কার্যালয় স্থাপন করে তার
ঠিকানা উল্লেখ করা হবে ৷

4.কার্যবর্ষ: - প্রতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কালকে সংগঠনের কার্যবর্ষ হিসাবে গণ্য করা হবে ৷

5. লোগো: - সংগঠনের লোগো হবে
( লোগোটা কপি করে বসানো হবে ৷

6.( ক) সদস্য: -  ত্রিপুরা রাজ্যের অন্তর্গত যে কোনো এলাকার সাহিত্য-শিল্প- সংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন অশ্লীলতা, অপসংস্কৃতি, কুসংস্কার ও প্রতিষ্ঠানবিরোধী যে কোন সাহিত্যপত্রের সম্পাদক ত্রিপুরা লিটল ম্যাগাজিন গিল্ডএর সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও আনুগত্য প্রদর্শন করা ও সংগঠনের গঠনতান্ত্রিক ও পরিচালনগত নিয়মাবলি মানার অঙ্গীকার করলে সংগঠনের সদস্যপদ প্রাপ্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন ৷ সংগঠনের কার্যকরী কমিটির বিবেচনা ও অনুমোদনের পর আবেদনকারীকে সদস্যপদ দেওয়া হবে ৷
(খ) এই সংগঠনের আত্মপ্রকাশকালে ও পরবর্তী সময়ে সংবিধান প্রণয়নের পূর্ব পর্যন্ত সংগঠনের সঙ্গে জড়িত লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদকগণ সরাসরি সদস্য হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হবেন ৷ এই বিধি সংগঠনের সৃষ্টির ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের কারণে রাখা হয়েছে ৷
( গ) "ত্রিপুরা লিটল ম্যাগাজিন গিল্ড "এর সদস্যপদ সংগ্রহের জন্য রাজ্যের লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদকদের সঙ্গে ব্যাক্তিগত এবং সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগ করা হবে।নতুন সদস্যের অন্তর্ভুক্তির জন্যে এককালীন ২০০০(দুই হাজার টাকা)মাত্র এবং মাসিক ১০০শত টাকা হিসেবে বার্ষিক ১২০০টাকাসহ মোট ৩২০০টাকা এককালীন বা অংশকালীন জমা দিতে পারবেন।

7. সংগঠনের উদ্দেশ্য :- ভারতের মহান সংবিধান এবং ত্রিপুরা লিটল ম্যাগাজিন গিল্ড এর সংবিধানের প্রতি আনুগত্য রেখে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক এই সংগঠন নিম্নলিখিত উদ্দেশ্য নিয়ে রাজ্যের সীমার মধ্যে তার কর্মকান্ড পরিচালনা করবে ৷

উদ্দেশ্য: -