Tuesday, March 31, 2020

মেইলবক্স খুলে দেখতে চাইছি কে আজ বোকা বানাল এদিনেতেমন কোনো হাস্যকর প্রয়াসের কোনো ছাপ নেইকেবল পাতার পর পাতা জুড়ে কান্নার মাতমঅশ্রুসিক্ত ইমোজি সব উঠে আসছে ওস্তাদজির সানাই হয়েআর টাইমলাইনের পাতা জুড়ে ঘন ঘন ট্যাগভয়ংকর উল্লাসে ফেটে পড়া সব হিংসাময় সব বসন্তকথাআমার চারপাশের বাতাস ভারি হয়ে আছেপঞ্চাশ হাজার মুখের করুণ বৃত্ত প্রশ্নচিহ্ন হয়ে দুলছেএ ভূখন্ড সীমিত হওয়ায় কেউই অপরিচিত নয়,সবারই হাল হকিকৎ জানা ৷ উনিশ বিশ সবাই সমান বিত্তবান ৷আমার জনপদে এখন মন্বন্তরের নীরবতা নেমেছেআশাহত কুপিবাতি হাওয়ায় কাঁপছে, কখন বুঝি নিভে যায় ৷এই অন্ধকারেই দেখি একদল মর্ষমান শরীর ডঙ্কা বাজিয়ে মশালনাচে নেমেছে ৷ কী তীব্র তাদের হল্লাবোল! ক্রমশ পাথর হয়ে খসে পড়ে যাচ্ছে অজস্র কান্নামুখ আর উল্লসিত হিংস্র অবয়বগুলো শ্বাপদ হয়ে বেরিয়ে পড়ছে ৷প্রতিবেশী বলে আর কেউ নেই মানুষের শরীর নিয়েলক্ষ্মণরেখার দুইপাশে অসহিষ্ণু খাদক এবং অসহায় খাদ্যআজ বসন্তপুষ্পের দিনে এভাবেই সাজানো আমার প্রোফাইল ৷

Tuesday, March 17, 2020

#আত্মবিলাপ



আজ যাদের উপর আঘাত হানা হল ওরা আমার সন্তান ৷ আমার পরমজন ৷ আমার আত্মীয় ৷ আমার স্বজন ৷ আমার প্রতিবেশী ৷ আমার সতীর্থ ৷ আমার ছাত্র ৷
আমিও আহত ৷ আঘাত আমার বুকেও লেগেছে ৷

 সাঁইত্রিশ বছর শিক্ষকতা করেছি ৷ একবছর আধিকারিকতা ৷ বহু ছাত্রের সান্নিধ্যে এসেছি ৷ বহু ছাত্র সতীর্থ হয়েছেন ৷ প্রশিক্ষণ কর্ম সম্পাদনের সুবাদে বহু সতীর্থ ছাত্র হয়েছেন ৷ কাজকর্ম দেখার সুযোগ পেয়েছি একদম পাশে থেকে ৷ হাতে গোনা ব্যতিক্রমী দুচারজন ছাড়া কাউকে দেখিনি পেশায় গাফিলতি করতে ৷ দশহাজার তিনশো তেইশও তার ব্যতিক্রম নয় ৷ দীৰ্ঘদিন তাঁরা ছিলেন শিক্ষক ৷ আজকের মতো সংখ্যায় চিহ্নিত নন ৷ এঁদের চাকুরির শুরুতে পাঁচদিনের একটা প্রশিক্ষণ হয়েছিল ৷ সেই প্রশিক্ষণে আমারও কিছু দায়িত্ব ছিল ৷ সেদিন তাদের উজ্জ্বল জোড়া জোড়া চোখে দেখেছিলাম প্রত্যয় ৷ একদিকে নিজেদের অভাবী সংসারে হাসি ফোটানো, বাবামায়ের স্বপ্নকে সফল করা আর রাজ্যের দুর্বল শিক্ষাপ্রবাহকে চাঙ্গা করা ৷ আমাদের উদ্দীপক বাক্যে তাঁরা তৈরি হয়ে গেছেন শিক্ষকতার জন্যে ৷ যার ফলশ্রুতিতে তাঁদের শিক্ষাদানকর্মে, পেশাগতক্ষেত্রে কোনো দুর্বলতার উদাহরণ কেউ তুলতে পারেনি আজও ৷ আর্থিক দৈন্য ও প্রতিকূলতার মধ্যেই পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছেন ৷ ছাত্রদরদী হয়েছেন ৷ অনেকে প্রশাসনিক দায়িত্বও পালন করেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে ৷অনেকসময় নিজের গোনাগুনতি আয়ের অর্থ ব্যয় করে ৷ প্রশিক্ষণ শেষের সন্ধ্যায় হাজারো মশাল জ্বালিয়ে যে পবিত্র শপথ তাঁরা সেদিন নিয়েছিলেন তার অন্যথা হয়নি আজও ৷ আজ যখন তাঁদের রোজগারের নিরাপত্তায় টান পড়েছে ৷ তাঁরা যখন ক্রমশ অসহায়তার অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে চলেছেন পরিবার পরিজনদের নিয়ে, যখন তাঁদের জীবনের মোড় ঘোরানোর দিন পেরিয়ে গেছে , অনিশ্চয়তা যখন প্রতিটা মুহূর্তকে রাহুর মতো গ্রাস করে চলেছে  সেসময়ে তাঁরা উচ্চকিত হয়েছেন ৷ 'বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান' নিয়ে তাঁরা  পথে নেমেছেন ৷ শিক্ষক তো তাঁরা ৷ তাই অহিংস আবেদনের পথে হেঁটেছেন তাঁরা ৷ তাঁদের এই পথহাঁটা একদিনের নয় ৷ আকস্মিকও নয় ৷ কিন্তু  রাজা আসে ৷ রাজা যায় ৷  ডিজিটাল যুগে সংখ্যাভুক্ত শিক্ষকদের দিন বদলায়না ৷ সময়ে পার্শ্বচর ৷ অসময়ে পশ্চাদাঘাত ৷ এই তাঁদের পরিণতি ৷ 

আর আজ যা ঘটে গেল এই নিরীহদের উপর তার জন্যে বোধহয় নিন্দাকেও মুখ লুকোতে হবে লজ্জায় ৷

 ভাবছি ৷ কীভাবে বাঁচবেন এই মানুষগুলো ৷এই শিক্ষকগণ ৷ এই ক্রমাঙ্কচিহ্নিত নুয়েপড়া প্রাণ ৷ আরো সহস্র উৎকণ্ঠিত প্রাণ নিয়ে ৷ কোন্ পথে?

কী  স্বপ্ন দেখিয়েছিলাম আমি সেদিন এই মানুষগুলোকে ৷ 'সে যে মিথ্যা কতদূর'!  আমার সেই সন্ধ্যায় মোমবাতিধরা আঙুলগুলো তখনি পুড়ে যায়নি কেন?

Saturday, March 14, 2020

রি পু দ ল ন



    ছুটছে ৷ছুটছে ৷ একটি শিশু ছুটছে ৷ একটি কিশোরী ছুটছে ৷ একটি যুবতী ছুটছে ৷ এক প্রৌঢ়া ছুটছে ৷ এক বিগত জরতী  ছুটছে ৷ আফটার অল একটি নারী ছুটছে ৷ 

'অপনা মাসে হরিণা বৈরী', 
আপন যোনিতে নারী ৷

একবিংশ শতাব্দীতে একদল শ্বাপদ পথে বেরিয়ে পড়েছে ৷
তারা সব বিপরীত লিঙ্গের ৷ বিকৃত লিঙ্গেরও ৷ তাদের বাড়বাড়ন্ত মহল্লায় ও মলে ৷ তাদের রাজত্ব আসমভূমিপর্বত ৷ তাদের লিঙ্গের উল্লাসে আকাশ ফাটে বাতাসে কাঁপন ধরে ৷ পশুরা লজ্জা পায় ৷ পুরুষরা দেখেও দেখেনা ৷ ধার্মিক চোখ বুঁজে ইষ্টনাম জপে ৷ জননায়ক স্বগোত্রের গন্ধ খোঁজে ৷ রমণীকুল ফুঁপিয়ে কাঁদে ৷ চিৎকার করে কেঁদেও থই পায়না ৷ দ্রৌপদীর শাড়ি খুলতেই থাকে খুলতেই থাকে ৷ পুরুষোত্তম লুকিয়ে পড়ে নিকুঞ্জবনে ৷

গবেষণাগার ৷ আসে শিশুটি ৷ আসে কিশোরী ৷ আসে যুবতী ৷ আসে প্রৌঢ়া ৷ আসে জরতী ৷ মূলত আসে নারী ৷ অষ্টাদশ দিবসরজনী অষ্টাদশ অক্ষৌহিনী দ্বিতীয় লিঙ্গের প্রাণপাত চলে ৷ রিরংসাদমনের প্রতিষেধক পেয়ে যায় গোপন গবেষণায় ৷

ছুটছে ৷ছুটছে ৷ একটি শিশু ছুটছে ৷ একটি কিশোরী ছুটছে ৷ একটি যুবতী ছুটছে ৷ এক প্রৌঢ়া ছুটছে ৷ এক  জরতী  ছুটছে ৷ আফটার অল একটি নারী ছুটছে ৷
 
এবারে আর প্রাণভয়ে নয় ৷ সুর্পনখার মতো ইন্দ্রজালে ৷ নকল প্রাণভয়ে ৷ গোপন লুকোচুরি খেলায় ৷ রিরংসুকদলের আগে আগে ৷ ধরা পড়ে যায় ওরা ৷ শুয়ে পড়ে তারা ৷ হাজারো নখরের আঁচড় শরীরে ৷ চরমক্ষণের অপেক্ষা ৷ উত্তেজনা চরমে ৷ হাজারো উচ্ছৃত লিঙ্গ ও অন্ডকোষ এগোতে থাকে ৷ গুপ্তধনের দিকে ৷ কোষাগারের দরজায় আঘাত হানার সঙ্গে সঙ্গে......৷ গগনভেদী চিৎকার ৷ কুরুক্ষেত্রের কোলাহল ৷ ছিটকে যায় হাজারো লিঙ্গ আর অন্ডকোশের কার্তুজ ৷ ইতিউতি ছড়ানো লিঙ্গহীন পুরুষের লাশ ৷ শিশুকিশোরীযুবতীপ্রৌঢ়াজরতী একসঙ্গে উঠে আসে ৷ গলা মিলিয়ে হাসে ৷ প্রাণ খুলে ৷ লাশপ্রান্তরে ৷ বলির বাজনা বাজনা বেজে ওঠে আকাশমন্ডপে ৷

কোথায় যেন গুমরে কাঁদে তেমন একটা দিন! !

Wednesday, March 11, 2020

দা ঙ্গা



এত রাতে কাকে পাবে সে ৷ কদিন ধরে চারদিক থেকে যা খবর আসছে ৷ পাড়ার সবাই তটস্থ হয়ে আছে ৷ দিনের বেলাও ঘর থেকে কেউ বেরুচ্ছেনা ৷ রাতে তো অসম্ভব ৷ কেলাব ঘরে বিকেলে একটা মিটিন হয়েছিল পাড়ার সবাইকে নিয়ে ৷ বউয়ের এই অবস্থার কথা জানিয়ে যায়নি মিটিনে ৷ তবে সবার যা মত তাতে সে সহমত পোষণ করে বলে জানিয়েছে ৷ পাড়ার অনেকেই জানে তার সমস্যার কথা ৷ তাই তাকে রেহাই দেওয়া হয়েছে ৷

মিটিনে বয়স্ক দুএকজন সম্প্রীতির কথা বললেও কয়েকটা উটকো বহিরাগতের উস্কানিতে পাড়ার কয়েকটা ছেলে হৈ হল্লা করে সভা পন্ড করে দিয়েছে ৷ ওরা বলেছে মিস্টি কথায় চিরা ভিজনের দিন গেছেগা ৷ ওরা বলছে মারের বদলে মার দিতে হবে ৷
বুড়োরা যেন ঘরে গিয়ে বসে থাকে ৷ এখন জোয়ানদের দিন ৷ ওপর থেকে খবর এসেছে ওগুলোকে ঝাড়ে বংশে শেষ করে দেওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই ৷ ছেলেগুলোর মিলিত চিৎকারে সন্ধ্যার পাখিগুলো কিচিরমিচির করে উঠল বাসা ছেড়ে দিয়ে ৷ পাড়ার ঘরে ঘরে একটা গুমোট আতঙ্ক ৷

রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার বউয়ের শরীর আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে ৷ ব্যথায় ককিয়ে উঠছে বউটা ৷ আর অসহায় দৃষ্টি মেলে তাকাচ্ছে তার দিকে ৷ উঠে দাঁড়ায় সে ৷ একটা কিছু করতে হবে ৷

অনেক রাতে হন্যে হয়ে ঘুরে কোনো যানবাহনে দেখা পেলনা ৷ হতাশ যখন ফিরে আসছে তখন একটা একটা ঝুপড়ির পাশে একটা রিক্সা পড়ে রয়েছে দেখতে পেল ৷ কাছে গিয়ে চালক বা সওয়ারি কাউকে দেখতে পেলনা ৷ একটু ভেবে সে নিজেই রিক্সাটা টেনে নিয়ে চলল বাসার দিকে ৷ কাজ সেরে আবার রেখে দেবে সেখানেই ৷ সকালে মালিককে বুঝিয়ে কিছু টাকা দিয়ে দেবে ৷

পাড়ার কাছাকাছি পৌঁছুতেই দেখল পাড়ায় আগুন চারদিকে ৷ লোকজনের চিৎকার ৷ মার ৷ মার ৷ ধর ৷ ধর ৷ কাইট্টা ফালা ৷  আগুনের আলোয় দেখা যাচ্ছে একদল লাঠিসোটা দা কিরিচ নিয়ে ধাওয়া করছে ৷ বাঁচাও ৷ বাঁচাও ৷ আর্তনাদ চিৎকারে একটা থমথমে পরিবেশ ৷ ওর বুকের ভেতর মোচড় দেয় ৷ বউয়ের জন্যে ৷ আর একটা স্বপ্নের জন্যে ৷ দ্রুত পৌঁছে যায় তাদের বাড়ির কাছাকাছি ৷ আর দুএকটা বাসার পরে ওদের ঘরে লাগবে আগুন ৷ দ্রুত ছড়াচ্ছে ৷

—এই....এই....খাড়অ ৷ শালার শালা ৷ কই যাইতাছচ ৷ 
—ধর তারে ৷ ভাগতাছে ৷ 
সে দাঁড়িয়ে পরে ৷ না না ভাই ৷ আমি ভাগতাছিনা ৷
 ভাগতাছৎনা ৷ বাল ফালাইতাছৎ ৷ রিসকা লইয়া কিতা করতাছৎ?
—না দাদা ৷ আমার বউ ৷ ব...অ...উ... ৷
—পুন্দেদা দিমু তর বউ ৷ বান তারে ৷ কাইট্টাঅই লামু আজগা তরে ৷
দাদা ৷ আমারে মাইরেননা ৷ আমি প্রাণভিক্কা চাই আপনেরার কাছে ৷ আমার কথাডা হুনেন ৷
চিৎকার চেঁচামেচিতে শোনা যায়না তার কথা ৷ পিছমোড়া বেঁধে ফেলে তাকে ৷ তার বাসার সামনে ৷ সে অসহায় চেয়ে থাকে বাড়ির দিকে  ৷
দড়িতে টান পড়ে ৷ চল আজগা তোর শেষদিন ৷

ঠিক এই সময় বাড়ির ভেতর থেকে কান্না ভেসে আসে দুটি মানুষের— মা মা ৷ ওঙা ওঙ্গা ৷ মা..ওঙ্গা...মা...ওঙ্গা ৷ আর আর্ত চিৎকারভরা বীভৎস রাতের আকাশ থেকে যেন প্রতিধ্বনিত হচ্ছে— দাঙ্গা...দাঙ্গা...দাঙ্গা...৷

জীবনদাত্রী







জাতীয় সড়কে গাড়িঘোড়া এখন আর নিজের ইচ্ছে মতো চলাফেরা করতে পারেনা ৷ নির্দিষ্ট সময় ধরে সিআরপিএফ এর এসকর্ট বেষ্টিত হয়ে চলাফেরা করতে হয় ৷ যখন গাড়িগুলো চলে তখন মনে হয় বিশাল কনভয় চলছে ৷ এভাবেই প্রধান দুটো পাহাড়ই আধা সামরিক বাহিনীর কঠোর অনুশাসনের মধ্যে চলাচল করতে হয় ৷ দিনে দুবার মাত্র এই সুযোগ থাকে গাড়গুলোর এবং  যাত্রীদের ৷

কিন্তু আজ কিছুতেই প্রথম এসকর্টটা ধরতে পারলনা প্রবাল ৷ গতরাতে বাড়িতে অনুষ্ঠান ছিল ৷ ঘুমোতে অনেক দেরি হয়ে গেছে ৷ উঠতে পারেনি সময়মতো ৷ কাজেই জাতীয় সড়কপথে যাওয়ার আশা ছেড়েই দিল ৷ রাধানগর বাসস্ট্যান্ট থেকে গাড়ি ধরল ৷ এপথে এসকর্ট নেই ৷ নিয়মশৃঙ্খলার ঘেরাটোপ নেই ৷ সময়ও কম লাগে ৷ তবে রিস্কি ৷ কিছু করার নেই প্রবালকে আজ অফিস ধরতেই হবে ৷ নতুন একটা প্রজেক্টে ভিজিটার্স আসবে ৷ ইম্প্লিমেন্টিং অফিসার সে ৷ যেতে বাধ্য সে ৷

গাড়িতে যাত্রীদের যথেষ্ট ভিড় ছিল ৷ সিটের প্যাসেঞ্জার ছাড়াও দাঁড়ানো যাত্রী ছিল অনেক ৷ সারাদিনে এরাস্তায় এখন দুটি গাড়ি চলে ৷ মোহনপুরে পৌঁছানোর পর অধিকাংশ যাত্রীরা নেমে যায় ৷ গাড়িটা ফাঁকা ৷ সাকুল্যে আটজন যাত্রী ৷ প্রবালই একমাত্র বাঙালি ৷ আর সবাই উপজাতি অংশের ৷ ড্রাইভার এসিস্টেন্টও ৷ প্রবালের পাশের সিটে জানলার ধার ঘেঁষে বসেছে এক উপজাতীয় তরুণী ৷ কিছুদূর চলার পরই সহযাত্রী দুজনের মধ্যে টুকটাক কথাবার্তা হয় ৷ মেয়েটি বিবাহিত ৷ খোয়াই সুভাষপার্ক বাড়ি ৷ ওখানেই ওর বরের বইয়ের দোকান ৷ ও  নিজে স্কুল টিচার ৷ চম্পাবতী নাম ৷ চম্পাবতী দেববর্মা ৷ বেশ মিশুকে ৷ নিজেই কথাবার্তা বলে গেছে অনর্গল ৷ জেনে নিয়েছে প্রবাল কেন কোথায়  যাচ্ছে ইত্যাদি ৷

গাড়িতে কয়েকজন বলাবলি করছিল গতকাল নাকি সুবলসিংএ গাড়ি থামিয়ে  কয়েকজনকে নামিয়ে নিয়ে গেছে ৷ পরিস্থিতি থমথমে ৷ প্রবালের ধূমপানের অভ্যেস আছে ৷ গাড়িটা চড়াই উঠতে শুরু করার পরই প্রবাল বলে উঠল, স্যরি, আমি একটু পেছনে যাচ্ছি ৷ কিছু মনে করবেননা ৷ আমার একটু বদঅভ্যাস আছে ৷

প্রবা গিয়ে পেছনের লম্বা ফাঁকা সিটটায় জানলার ধারে বসে একটা সিগারেট ধরাল ৷ ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে সে বাইরে তাকিয়ে আঁকা বাঁকা রাস্তাটা দেখছে ৷ দূরের উঁচু পাহাড় দেখছে ৷

ঢালু পথে নামতে নামতে হঠাৎ গাড়িটা জোরে ব্রেক কষল ৷ বেশ কিছু লোক মুহূর্তে গাড়িটা ঘিরে ধরল ৷ ওদের সবার হাতে ধারাল দা, টাক্কাল ৷ কিছু বুঝে ওঠার আগেই চম্পাবতী নিজের সিট ছেড়ে ছুটে ওর কাছে চলে এল একমুহূর্তে ৷
— এই মশাই আপনার সবকিছু জানা হয়ে গেছে ৷ বাঁচতে হলে তাড়াতাড়ি নামটা বলুন ৷
—প্রবাল, প্রবাল মিত্র ৷
—কোথায় থাকেন?
—আগরতলা ৷ জয়নগর ৷ নন্দা অপটিকসের পেছনের বাড়ি ৷
— ঠিক আছে ৷ আপনি কোনো কথা বলবেননা ৷ একদম চুপ থাকবেন ৷
 বলে একদম প্রবালের গা ঘেঁষে বসল ৷
ততক্ষণে বেশ কটা গাট্টাগোট্টা গাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়ল ৷ যাত্রীদের নড়াচড়া করতে নিষেধ করে সোজা পেছনের সিটে গিয়ে প্রবালের সামনে দাঁড়াল ৷
— এ্যাই ৷ কি নাম তর?
—প্রবাল মিত্র ৷ জবাব দেয় চম্পাবতী ৷
— তুমি উত্তর দিছস ক্যারে?
— হ্যা ত আমার স্বামী লাগে ৷
একটা তরল স্রোত বয়ে যায় প্রবালের শরীর বেয়ে ৷
—বারি কই তার ? নক্ বিয়াং?
—আগরতলাঅ ৷
—বিয়াং থানাই? 
—খোয়াইঅ ৷
ওরা আর প্রশ্ন করেনা ৷ নেমে গিয়ে গাড়িটা ছেড়ে দেয় ৷ 

গাড়ি চলতে থাকে ৷ কৃতজ্ঞতায় প্রবাল চম্পাবতীর দুটো হাত মুঠো করে ধরে ৷

Thursday, March 5, 2020

আঁ চ ল



সকল বাকদান ব্যর্থ হয়
কারো জন্যে শব্দের ইমারত ওঠে না
তবুও কলম নিয়ে নির্বাক বসে থাকা

সময়কে ঠেলে পেরিয়ে যাব বলে
দ্রুত ছুটে চলা এক হঠকারি সিদ্ধান্ত
যতোই স্পন্দন সুস্থির আছে বলে বিশ্বস্ত
কালচত্বর বেয়ে ঘুণের রাজত্ব বেড়েছে গোপনে

শরীরের অনেক প্রত্যঙ্গ বাজিতে হেরে বসে আছি
 দেউলিয়া হবার আগে সব দেনা
শোধ করে যেতে হবে, ফিরে যেতে হবে
সেই নির্ধারিত নদীর প্রস্তাবিত চরের আঁচলে

এতো জল খেলাম সাত ঘাটের, সাত ধারার নামে
তবুও অনন্ত তৃষ্ণা গেল কই?
সুবর্ণ পিপাসাই বুঝি টেনে টেনে রাখে
তুমি কী তারই ভাড়াখাটা জনমজুর
আমার পিপাসু বুকে হাতুড়ি পেটাও অসময়ে ৷