Friday, June 30, 2023

ব্যাঙের ছাতা

ব্যাঙের ছাতা

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

বর্ষার শুরুতে ঝোপেঝাড়ে, খড়ের গাদায় একধরনের ছত্রাক হয় । দেখতে ছাতা আকৃতি । তাই একে ব্যাঙের ছাতা বলা হয় । পাতাল ফুঁড়ে বেরিয়েছে তাই তার আর এক নাম 'পাতালকোঁড় । 'পাতালকোঁড়' বর্তমানে মাশরুম নামে সুপরিচিত ।  পশ্চিমবঙ্গের কোথাও কোথাও বলে 'ছাতু' ।  আমরা নোয়াখালি-চট্টগ্রাম ও সন্নিহিত দক্ষিণ ত্রিপুরায় একে 'ওল' বলি । তবে ওলকচু নয় । এই অঞ্চলে যে কোনো ধরনের ছত্রাককে 'ওল' বলা হয় । ছত্রাক থেকেই এসেছে ছাতু । খাওয়ার 'ওল' অনেকরকমের হয় । ভোজ্য ওল সবাই চেনেন না । গ্রামের বয়স্ক অভিজ্ঞ মহিলা পুরুষ এই 'ওল' চেনেন । তাঁরাই চিহ্নিত করেন 'সন্ধ্যা ওল', 'কুইচ্চা ওল', 'বৈচা ওল', 'হাঁসা ওল', 'গাচ্ছা ওল' ইত্যাদি । রান্না গুণে এই ওল মাংসকেও টেক্কা দেয় ।

তোমারে করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা

তোমারে করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা ।

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

রবীন্দ্রসৃষ্টির পরতে পরতে রয়েছে মনন ও চৈতন্য নির্মাণের গথিকশিল্প । ভারতবাসীর স্বদেশভাবনার মৌলিকতা । স্বাধীনতা লাভের পথ নির্দেশিকা । তিনিই সেদিন বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন, রাখিবন্ধন, জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে স্বদেশপ্রেমের প্রকৃত পরিচয় তুলে ধরেছিলেন দেশবাসীর কাছে । কিন্তু আজ এই মহামানবের মহান কীর্তিকে ভুলিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে অসুস্থ রাজনীতির মাধ্যমে । আজ এই সংকটাবর্তিত অন্ধকারে রবীন্দ্রালোকবর্তিকার একান্ত প্রয়োজন । আজ সোচ্চারকন্ঠে আওয়াজ তুলতে ইচ্ছে হচ্ছে–'মুক্ত করো ভয় ।'

আজ 'আন্তর্জাতিক রবীন্দ্রকাব্যপাঠ দিবস' । ১৯১০ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ । এই কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন । ১৯১২ সালের ৩০ শে জুন ইংল্যান্ডের বিদ্বজ্জনের সামনে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথকৃত গীতাঞ্জলির ইংরেজি অনুবাদের কয়েকটি পড়েছিলেন আইরিস কবি ইয়েটস । রবীন্দ্রনাথও সেদিন সেখানে উপস্থিত ছিলেন । ইংল্যান্ডের বিদ্যোৎসাহীদের মধ্যে তিনি সেদিন নিজের আসন পাকা করে নিয়েছিলেন । ১৯১২ সালের ১লা নভেম্বর, ইংরেজি গীতাঞ্জলির সীমিত সংস্করণ প্রকাশ করে লন্ডনের ইন্ডিয়া সোসাইটি । ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের ১লা মার্চ, ম্যাকমিলন প্রকাশ করে ইংরেজি গীতাঞ্জলির সুলভ সংস্করণ । 

১৯৮৫ সালের পয়লা জানুয়ারি কলকাতার 'টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট' এর উদ্যোগে সোমেন্দ্রনাথ বসু প্রমুখগণ কবি  ইয়েটস কর্তৃক রবীন্দ্রকবিতাপাঠের এই দিনটিকে স্মরণীয়  করে রাখার জন্য প্রতি বছর ৩০ জুন আন্তর্জাতিকভাবে রবীন্দ্রকবিতাপাঠের আবেদন করেন কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রতিবছর ৩০ জুন দিনটিকে 'আন্তর্জাতিক রবীন্দ্রকাব্যপাঠ দিবস' হিসাবে পালন করে আসছে ।

আজকের এই হিংসাদীর্ণ পৃথিবীতে রবীন্দ্রনাথ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক । তাঁর কবিতাসহ সমস্ত জীবনস্পর্শী সৃষ্টিশীলতার মধ্যেই রয়েছে মানবিকতার জাগরণের সতীব্র কাঙ্ক্ষা । শুভবোধ ও মানবকল্যাণের অমিয়বাণীতে মুখর তাঁর কবিতা । কাল থেকে মহাকালে উত্তরণের পথ নির্দেশ তাঁর কাব্য ।

 আসুন, এই দুঃসময়ে মানবিকতার জাগরণের লক্ষ্যে ও মানবকল্যাণের উপায় সন্ধানের জন্য রবীন্দ্রকাব্য হাতে তুলে নিই । ত্রিপুরার সমস্ত শুভবোধোদীপ্ত কবিদের কাছে আবেদন রাখছি, আজ অন্তত একবার অনন্ত মঙ্গলালোকে রবীন্দ্র কবিতা পাঠ করুন ।

Wednesday, June 21, 2023

রথ ও নরদেহ ।

জগন্নাথ এর রশির নাম শঙ্কচুড়,
বলদেবের এর রশির নাম বাসুকি নাগ,
সুভদ্রার রথের রশির নাম স্বর্ণচূড়।।

প্রতীকী অর্থে মন-কে বলা হয় জগন্নাথের রথের রশি । রথ মূলত কায়াকল্প । দেহরথকে মনই তো চালনা করে । দেহরূপ রথে প্রাণরূপ জগন্নাথ সেখানে বসত করেন । মানবদেহে ২০৬ খানা হাড় । রথেও ২০৬ খানা কাঠ । ষোলো চাকার রথে পাঁচটি জ্ঞানেন্দ্রিয়, পাঁচটি কর্মেন্দ্রিয় এবং বাকি ছয়টি চাকা ষড়রিপুর প্রতীক । প্রবাদে দেখি, শরীরে কর্মক্ষমতা না থাকলে বলা হয় ' রথ চলে না' । বার্ধক্যে মৃত্যুকামনায় বলা হয়, 'হাতে-রথে যেতে পারলে হয়' । কঠোপনিষদে তাই বলা হয়েছে–' শরীরং রথমেব তু' । বলা হয় থাকে 'রথে তু বামনং দৃষ্টা পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে' । দেহরূপ রথে বামন অর্থাৎ সুক্ষ্মরূপ আত্মাকে দর্শন করলে আর পুনর্জন্ম হয় না ।

Thursday, June 15, 2023

সাব্রুমে যাত্রার এনাউন্সমেন্ট

একসময়ে সাব্রুমে যাত্রাগানের খ উঁচু ব রমরমা ছিল । কোলকাতা থেকে যাত্রা পার্টি আসত । মেলার মাঠে বড়ো প্যান্ডেল করে যাত্প্ররানুষ্থঠানের আয়োজন করা হত । প্রথমদিকে টিনের চুঙ্গা ফুঁকে এনাউন্সমেন্ট হত । মাইকে যাত্রার এনাউন্সমেন্টের যুগে আমার জানামতে দক্ষ দুজন অমর সরকার ও সুবীর দত্ত । গাড়িতে চড়ে সারা মহকুমা জুড়ে যাত্রার এনাউন্সমেন্ট চলত । আর সবশেষে মনুবাজারে এসে কড়া ঝালের দেশি মুরগির মাংস দিয়ে ভাত খাওয়া এটা কমন ব্যাপার ছিল । সুবীরদা বেঁচে নেই । মাইক্কে চিল্লিয়ে এনাউন্সমেন্ট করাটাও বেশ দমের ব্যাপার ছিল । টানা এনাউন্সমেন্ট করার ফলে সুবীরদা একবার অর্শরোগগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন । আমি দলে থেকে মাঝে মাঝে এনাউন্স করে তাঁদের বিশ্রামের সুযোগ দিতাম । তবে সাদা কাগজে এনাউন্সমেন্টের বয়ানটা লেখার বরাবর দায়িত্ব ছিল আমার ।