Wednesday, September 24, 2025

My Pension From April 25

FOR FEB21 : BP=40500 DA=00 COMM=6300 FMA= 500 NET = 34700



FROM MAR21 : BP= 40500 DA( 3% )=1225 REC=00 COMM=6300 DIS=00 IR=00 OLD=00 FMA=500 TDS=00 NET=35925 PNBHOGBD

FROM JULY22 : BP=40500 : DA (8% )=3240 REC=00
COMM=6300 DID=00 IR=00 OLD=00 FMA=500 TDS=00 NET=37940
40500 -6300 = 34200+ 500 + 38240 ( 8% DA ) =37940

FROM DEC22 : BP=40500 : DA ( 12% )= 8100 REC = 00 COMM = 6300 DID = 00 IR = 00 OLD = m00 FM 500 TDS = 00 NET = 42800
40500 - 6300 = 34200 + 500 + 8100 ( 20% DA ) = 42800

FROM JAN24 : BP=40500 : DA ( 25% )= 10125 REC =<00 COMM = 6300 DID=00 IR = 00 OLD = 00 FMA= 500 TDS = 00 NET = 44825

FROM NOV24 : BP = 40500 : DS ( 30% ) = 12150 REV = 00 COMM : 6300 DID = 00 IR = 00 OLD = 00 FMA = 500 TDS = 00 NET = 46950

FROM APRL25 : BP = 40500 : DS ( 33% ) = 13365 REV = 00 : COMN : 6300 DID = 00 : IR : 00 OLD = 00 FMA = 500 TDS = 00 NET = ( 53865 - 6300 +500 ) = 48065

Thursday, September 18, 2025

দুর্গাপূজায় লৌকিকতা ও সামাজিকতা : অতীত ও বর্তমান

দুর্গাপূজায় লৌকিকতা ও সামাজিকতা : অতীত ও বর্তমান 

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

বাঙালি হিন্দুদের প্রধানতম উৎসব ও শ্রেষ্ঠ পূজা হল দুর্গাপূজা । পুরাণ শাস্ত্রকারদের মতে দেবী দুর্গা আদ্যাশক্তি মহামায়া, উমা, চন্ডী, ভগবতী, ভবানী, অম্বিকা, পার্বতী, শিবানী, কাত্যায়নী, মহিষাসুরমর্দিনী, অদ্রিজা প্রভৃতি বহু নামে পরিচিত ও পূজিত হন । ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, কালিকাপুরাণ, দেবীপুরাণ, দেবী ভাগবত ইত্যাদি গ্রন্থে কিছু কিছু পার্থক্য থাকলেও দেবী দুর্গার কাহিনী ও লীলা বর্ণনা সর্বত্রই দেখতে পাওয়া যায় ।

দুর্গাপূজা বাঙালির কাছে শুধু দেবীআরাধনেই নয় । এটি বাঙালির প্রাণের উৎসব । এর মধ্যে যেমন আছে পৌরাণিক বিশ্বাস, মিথ তেমনি রয়েছে শিল্প-সংস্কৃতি, লোকাচার ও সামাজিকতার গভীর মেলবন্ধন । সুদূর প্রাচীনকাল থেকে বাঙালির জীবনে উৎসব এবং শ্রেষ্ঠতম পূজা হিসেবে দুর্গাপূজার প্রচলন রয়েছে । বাংলার অন্যতম প্রাচীন দুর্গাপূজা হল বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের মৃন্ময়ী মন্দিরের পূজা । দেবী মৃন্ময়ী ছিলেন মল্লভূম রাজ্যের রাজরাজেশ্বরী মল্ল রাজবংশের কুলদেবী । মল্লরাজ জগৎমল্ল ৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে এই পূজার প্রবর্তন করেন । মল্লরাজবাড়ীর পূজায় দেবীপটের যে ব্যবহার দেখা যায় তা অনেকটা ভিন্ন প্রকৃতির । বাংলার সাধারণ দুর্গাপূজায় এমন পটের ব্যবহার দেখা যায় না ।

 দুর্গাপূজার সূচনা কাল নিয়ে বহু মত থাকলেও বাংলায় ষোড়শ শতাব্দীতে সম্রাট আকবরের শাসনামলে প্রথম পূজা শুরু হয় বলে অনেকে মনে করেন । ১৫৮২ সালে রাজশাহীর তাহেরপুরের জমিদার বাংলার বারো ভুঁইয়ার অন্যতম কংসনারায়ণ রায় তাঁর মনোবাসনা পূরণের লক্ষ্যে রাজসূয় ও অশ্বমেধ যজ্ঞের বিকল্প হিসেবে মার্কন্ডেয় পুরাণের দুর্গাপূজার প্রবর্তন করেন । তিনি সেসময়ে দুর্গাপূজায় ৮ লক্ষ টাকা ব্যয় করেছিলেন বলে জানা যায় । ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের পর কলকাতার শোভাবাজার রাজবাড়িতে রাজা নবকৃষ্ণ দেব রবার্ট ক্লাইভ এর সম্মানে দুর্গাপূজার মাধ্যমে বিজয় উৎসবের আয়োজন করেছিলেন । সেকালে পূজা ও অনুষ্ঠানে বিপুল অর্থ ব্যয় হত বলে প্রথম দিকে মূলত রাজরাজড়া ও জমিদারদের মধ্যে দুর্গাপূজার আয়োজন সীমাবদ্ধ ছিল । ধীরে ধীরে বাঙালি জমিদারদের মধ্যে এই দুর্গাপূজার প্রচলন শুরু হয় ।

 সাম্প্রতিককালে প্রচলিত দুর্গাপূজা দুই ভাবে হয়ে থাকে । ব্যক্তিগতভাবে পারিবারিক কাঠামোতে যেখানে পূজার শাস্ত্রীয় বিধান নিয়মনিষ্ঠা অধিক পালন করা হয় । এবং বারোয়ারি বা সর্বজনীনভাবে এলাকায় ভিত্তিক দুর্গোৎসব আয়োজন করা হয়ে থাকে । ১৭৯০ সালে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার গুপ্তিপাড়ার ১২ জন বন্ধু মিলে চাঁদা তুলে সর্বপ্রথম দুর্গাপূজার আয়োজন করে । ১২ ইয়ার বা ১২ বন্ধুর পূজা নামে পরিচিত এই পূজা একসময় বারোয়ারী নামে প্রতিষ্ঠা পায় । ১৮৩২ সালে কাশিমবাজারের রাজা হরিনাথ বারো ইয়ারের এই পূজা পদ্ধতি কলকাতা শুরু করেন । পরবর্তীতে উচ্চবর্ণীয় হিন্দু জমিদারদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে বারোইয়ারী পূজা । ১৯১০ সালে সনাতন ধর্মীয় উৎসাহিণী সভা, ভবানীপুর বলরাম বসু ঘাট লেনে, রামধন মিত্র লেন ও সিকদার বাগানে বারোয়ারী পূজা হয় । অনেকের মতে একদিন দুর্গোৎসবের মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতাকে অস্তমিত করার উৎসব পালিত হয়েছিল । আবার স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় দুর্গাপূজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেখা যায়  ১৯২৬ সালে অতীন্দ্রনাথ বোসের দুর্গোৎসবে । তিনি জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে দুর্গাপূজার উৎসবে আমন্ত্রণ জানান । স্বাধীনতা সংগ্রামে দুর্গা পূজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল । কবি নজরুলের 'আনন্দময়ীর আগমনে' কবিতা এবং বঙ্কিমচন্দ্রের 'বন্দেমাতরম' সংগীত যার গুরুত্ব অপরিসীম । সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র বন্দেমাতরম গানটি দেবী দুর্গার ভাবনা থেকেই রচনা করেছিলেন যা একসময় ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূলমন্ত্র হয়ে উঠেছিল ।

 শরৎকালে যে দুর্গাপূজা হয় সেক্ষেত্রে পৌরাণিক কাহিনি বা রীতি রেওয়াজ থাকলেও বাঙালি জনজীবনে তা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ । সেকালের বাঙালিজীবনের ক্ষেত্রে দেখা যেত, এই সময়টা ফসল তোলার প্রাকমুহূর্তের অবসরকাল । মাঝে মাঝে তখন সবুজ ধানের ক্ষেতে ফসলের পুষ্টতা এসেছে । প্রকৃতি ও অপরূপ সাজে সজ্জিত । নীল আকাশে হালকা হালকা সাদা মেঘের আনাগোনা । নদীর চড়ায় বালির স্তুপে কাশফুলের দোলা । ইত্যাদি মিলে প্রকৃতি তার বর্ষণঋতু অতিক্রম করছে । এই সময় শ্রমজীবী মানুষের বিশ্রামের মধ্যে কিছুটা বিনোদনের উৎস খুঁজে নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকে । সেই হিসেবে শরৎঋতুর এই দুর্গোৎসব বাঙালির জীবনের অবসরের শূন্যতাকে পূরণ করে ।

দুর্গাপূজার শুরুর কাল থেকেই এই পূজার মধ্যে একটা সর্বজনীনতা ছিল । সেকালে এই পূজা উপলক্ষে সাধারণ জনগণ এবং রাজা ও জমিদারবর্গের পরিবারের সদস্যরা কাছাকাছি আসার সুযোগ পেত । দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে রাজা ও প্রজাদের মধ্যে বিরাজ করা ভীতি ও দূরত্ব তখন অপসারিত হয়ে যেত । সেকালে বাঙালি জীবনে সামাজিক সম্প্রীতির সূচনার ক্ষেত্রে দুর্গাপূজার মুখ্য ভূমিকা ছিল । অর্থনৈতিক কারণে দুর্গাপূজা বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভ পর্যন্ত ধনী ও অভিজাত শ্রেণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল ।
সাধারণ মানুষের আর্থিক সংগতি না থাকলেও বিভিন্নভাবে তারা তাদের বিভিন্ন পেশার মাধ্যমে দুর্গাপূজার বিশাল কর্মকান্ডের অংশীদার হওয়ার সুযোগ ছিল । প্রতিমা নির্মাণ, মণ্ডপসজ্জা ইত্যাদিতে হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে শিল্পীরা অংশগ্রহণ করতেন । সেকালের দুর্গাপূজা ছিল মূলত পরিবারের সম্প্রদায়ের ও স্থানীয় জনগণের নিজস্ব উদ্যোগে সম্মিলিত আয়োজন । গ্রামের জমিদার এবং অভিজাত সম্প্রদায় দুর্গাপূজার প্রাক্কালে তার প্রজাদের উদার আহ্বান জানাতেন এই বিরাট কর্মযজ্ঞে সহায়তা করার জন্য । ফলে এই উৎসবকে কেন্দ্র করে বেশ কিছুদিন আগে থেকেই গ্রামের জমিদার ও বর্ধিষ্ণু ব্যক্তিত্বের বাড়িতে লোকসমাগম হত । গ্রামের দুর্গাপুজায় কয়েকদিন ধরে পুজামণ্ডপে ঢোলের বাজনা, আরতি, শঙ্খ, উলুধ্বনি, ধুনুচি নাচ, সিঁদুর খেলা ইত্যাদিতে মুখরিত থাকত । এছাড়াও সেই পূজাকে কেন্দ্র করে কীর্তন, রামায়ণ গান, যাত্রাপালা ইত্যাদি সাংস্কৃতিক কার্যক্রম থাকত । এইসব বিনোদনমূলক আয়োজন গ্রামীণ সংস্কৃতিকে জীবন্ত রাখত । দেবী দুর্গার পূজায় যেমন আছে ভক্তি ও পৌরাণিক তাৎপর্য তেমনি আছে লৌকিক আনন্দ, সামাজিক ঐক্য ও মানবিক সহমর্মিতা এবং সেবার বহুমুখী দিক । দেবী দুর্গা যেন গ্রাম বাংলারই কোন গৃহস্থ পরিবারের কন্যা যাকে দূর দেশে বিবাহ দেওয়া হয়েছে । এই ঘরের মেয়ে পূজার সময় সন্তান-সন্ততি সহ শ্বশুরঘর ছেড়ে বাপের বাড়িতে যান । দশমীতে সকলকে কাঁদিয়ে মেয়ে আবার কৈলাসে তার স্বামীর বাড়িতে ফিরে আসেন । গ্রামীন সংস্কৃতিতে পূজার কয়েক দিন বিবাহিতা কন্যাকে বাপের বাড়িতে নাইওর আনার রীতি রেওয়াজ এখনও রয়েছে । প্রসঙ্গত বলে রাখা যায়, মা দুর্গার চালচিত্রের যে বর্তমান রূপ সেখানে দেবী তার চার সন্তান–লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক গণেশসহ বিরাজমান । এর মধ্য দিয়েও দেবীপ্রতিমায় এক পারিবারিক রূপের প্রকাশ ঘটে । এই পূজার আনন্দেরই অঙ্গ হিসেবে দশমীর দিন গৃহস্থ ঘরে ভালো খাবার দাবারের আয়োজন করার রীতিও রয়েছে । সংবৎসরের পরিশ্রমী কৃষিজীবী মানুষ কাজের তাড়ায় ভালো কিছু খাওয়ার সুযোগ পান না বা অর্থনৈতিক সামর্থ্য আসেনা । পুজোর এই কয়দিন আনন্দের ফাঁকে তাঁরা রসনার তৃপ্তি করে থাকেন এই উৎসবের মাধ্যমে । গ্রামের পূজোয় দেবীর পূজারমন্ডপ তৈরি, প্রতিমানির্মাণ থেকে শুরু করে বিসর্জন পর্যন্ত প্রতিটি কাজেই গ্রামের সমস্ত মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সম্পন্ন করে থাকেন ।

শহরের দুর্গাপূজা অনেক বেশি আধুনিক এবং ব্যয়বহুল । সেখানে দুর্গাপূজায় থিমভিত্তিক প্যান্ডেল, আলো ও প্রতিমার চমকপ্রদ উপস্থাপনা লক্ষ্য করা যায় । প্রতিমানির্মানে ও মন্ডপসজ্জায় যেমন সৃজনশীলতার ছোঁয়া থাকে তেমনি সামাজিক বার্তা ও সমসাময়িক বিষয়ও উঠে আসে । দেবী দুর্গা এখানে শুধু মহিষমর্দিনী, অসুর বিনাশিনী নন । তিনি নারীশক্তির প্রতীক । সমাজের অন্যায়, অবিচার, বাল্যবিবাহ, পণপ্রথা ইত্যাদি বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনের প্রতীক হিসেবেও উপস্থাপিত হন । পূজা-ভাবনা বা দেবীভাবনার ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন বাঙালির চিন্তাভাবনার বিবর্তনের সুকুমার দিকটাকে তুলে ধরে । আজকের দিনের দুর্গাপূজায় সঙ্গীতানুষ্ঠান, শিশুদের মধ্যে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, সমাজ সচেতনতামূলক সিনেমা প্রদর্শনী ও নানারকম সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় । এর মাধ্যমে পূজায় ধর্মীয় দিকটা পালনের পাশাপাশি বিনোদনের ক্ষেত্রেও আজকের দিনে গুরুত্ব দেওয়া হয় । বর্তমান সময়ে দুর্গাপূজা প্রাঙ্গণে রক্তদান শিবির, বস্ত্র দান, দুস্থ শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষণসামগ্রী বিতরণ, স্বাস্থ্যপরীক্ষা ইত্যাদি সামাজিক কর্মসূচির মাধ্যমে দুর্গাপূজাকে আরো বেশি করে মানবসেবার উৎসব হিসেবেও পরিগণিত করার প্রয়াস নেওয়া হয় । দুর্গা পুজোকে কেন্দ্র করে সাহিত্যচর্চা, বইমেলা, শারদসংখ্যা প্রকাশ আজকের দিনের নিয়মিত চর্চার বিষয় । পূজার সময় বিভিন্ন পূজা কমিটি শারদোৎসব উপলক্ষে বিশেষ স্মরণিকা প্রকাশ করে থাকেন । তাতে পাড়ার খুদে লেখকলেখিকা থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিকদের লেখালেখি প্রকাশ করার একটা সুযোগ থাকে । পূজাকে কেন্দ্র করে  সাহিত্যসংস্কৃতিচর্চার আবহ সৃষ্টির এই দিকটিও অনেক মূল্যবান ।

দেবীপূজা বা দেবীভাবনার এই বিবর্তনকে লক্ষ্য করলে দেখি যে, দীর্ঘ পথ পেরিয়ে দুর্গোৎসব আজ এই পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে । দুর্গাপূজা আজ শুধু বাংলাদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে নয়, পৃথিবীর যে প্রান্তেই বাঙালিরা আছেন সেখানেই তা যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়ে আসছে । ইতিহাসবিদরা মনে করেন যে প্রায় ২২ হাজার বছর পূর্বে ভারতের প্যালিওলিথিক জনগোষ্ঠীর হাতেই দেবী পূজার প্রচলন হয় হরপ্পা মহেঞ্জোদারো সভ্যতা তথা সিন্ধু সভ্যতায় এসে তা আরো গ্রহণযোগ্য ও বিস্তৃত হয় । মাতৃ তান্ত্রিক দ্রাবিড় সভ্যতায় বিভিন্ন মাতৃ দেবীর পূজার প্রচলন ছিল । তারই ক্রম বিবর্তন আজকের দুর্গোৎসব । অতীত ও বর্তমানের দুর্গাপূজার মধ্যে বেশ কিছু ফারাক থাকলেও তার মূল স্রোত কিন্তু একই ধর্মীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সমাজের বিবর্তন দুর্গাপূজার রূপকে বিভিন্ন সময়ের প্রেক্ষিতে পরিবর্তিত করছে এবং নতুন ভাবে উপস্থাপন করছে । দেবীপূজার পাশাপাশি বাঙালির মননেও চিন্তা ভাবনায় নানা কল্যাণকর ভাবনা যে রূপ পাচ্ছে এবং তা নতুন নতুন ভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে সেটাই হল পূজার আধুনিকতা । দুর্গাপূজা বাঙালির কাছে এক চিরন্তন উৎসব যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বাহিত হয়ে চলছে এবং প্রতিনিয়ত নতুন নতুন রূপ পরিগ্রহ করছে । ফলে দুর্গাপূজা শুধুমাত্র দেবী আরাধনা নয় নানাবিধ নতুন নতুন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দুর্গাপূজা মানবসেবার উৎসবে পরিণত হচ্ছে এবং প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শুরু করে আলো ঝলমলে শহরে প্যান্ডেলের সর্বত্রই দুর্গাপূজা একতা ও সম্প্রীতির বাণী প্রকাশ করছে ।

Friday, September 12, 2025

লোকসংসকৃতির উন্নিদ্র প্রহরী ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রুমের একজন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব থেঙ্গাফ্রু মগ । তিনি ১৯৫৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সাব্রুমের মনুবাজারের দক্ষিণ কালাপানিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর বাবার নাম প্রয়াত অংগিয় মগ ও মা প্রয়াতা নিবাইফ্রু মগ । তিনি মনু এইচএস স্কুলের প্রাথমিক বিভাগে পড়াশোনা শুরু করেন এবং এই বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৬ সালে দ্বিতীয় বিভাগে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হন । ১৯৭৮ সালে সাব্রুম উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হন । ১৯৮৩ সালে বিলোনিয়া কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে বিএ পাস করেন । ১৯৯১ সালে ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন । ১৯৭৮ সালের ১৬ জুন একজন প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে তিনি ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের শিক্ষাদপ্তরে চাকরিতে যোগদান করে ক্রমান্বয়ে উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করে ২০০২ সালে প্রধান শিক্ষক পদে উন্নীত হন । দীর্ঘদিন সুনামের সাথে শিক্ষকতা করার পর ২০১৯ সালের ৩০ শে নভেম্বর মনু উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন । তাঁর অসাধারণ কণ্ঠসুষমার জন্য তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি সংগীতের ক্ষেত্রে ও বিশেষ সুনাম অর্জন করেন । রাজ্যের ও রাজ্যের বাইরে তিনি সংগীত পরিবেশন করে ভুয়সী প্রশংসা অর্জন করেছেন । মগ জনজাতির সংগীত, নৃত্য ও লোকসংস্কৃতির একজন বিদগ্ধ ব্যক্তিত্ব তিনি । তাঁর নিজের সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান 'ফোক কালচারাল একাডেমি'র মাধ্যমে তিনি লোকনৃত্য, মনিপুরী নৃত্য ইত্যাদির চর্চা ও প্রসার ঘটিয়ে চলেছেন । ঐতিহ্যবাহী মগ লোকনৃত্যকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রেও তাঁর বিরাট ভূমিকা রয়েছে । তাঁর গুরু নীরেন্দ্রনাথ আচার্জির মতো তাঁরও অসংখ্য গুনমুগ্ধ শিক্ষার্থী রয়েছে । জীবনসায়াহ্নে এসে তিনি সংগীত ও নৃত্য চর্চার মাধ্যমেই সুকুমারচর্চা করে দিন যাপন করছেন ।

Thursday, September 4, 2025

'ত্র্যহস্পর্শ'– লুপ্ত 'অ'

'ত্র্যহস্পর্শ' শব্দের উচ্চারণ

উচ্চারণটা হবে 'ত্রঅস্পর্শ' (ত্রয়স্পর্শ ) ।  মূল শব্দটি ত্র্যহস্পর্শ । এখানে সন্ধির নিয়মের মাধ্যমে শব্দটি গঠিত হয়েছে । ত্রি+ অহ+ স্পর্শ = ত্র্যহস্পর্শ । তিনটি তিথি যেখানে স্পর্শ করেছে । স্বরসন্ধির নিয়ম অনুসারে পূর্বপদের 'ই' ও পরপদের 'অ' মিলে 'য' ফলা হয়েছে । বাংলা উচ্চারণে 'য' ফলাটি উহ্য হয়ে যায় । সংস্কৃত শব্দ বাংলা লিপিতে হ এর মতো একটি বর্ণ লেখা হয় এবং এই 'হ' বর্ণটি লুপ্ত 'অ' বর্ণ বলে পরিচিত হয়েছে । যেমন- 'সোহহম' ( সোঅহম ) । লুপ্ত 'অ' বর্ণটি অর্ধমাত্রাযুক্ত হ বর্ণ দিয়ে বোঝানো হয় । এটিকে হ এর মতো উচ্চারণ করা ঠিক হবে না । বাংলাবর্ণমালায় এই বর্ণটি নেই । তবে সংস্কৃত বর্ণমালায় রয়েছে এবং তার ব্যবহারও রয়েছে । এই লুপ্ত 'অ' এর উচ্চারণ 'হ' উচ্চারণ করতে যতটা জোর বা শ্বাসাঘাত হয় ততটা হয় না । অনেকটা 'অ' এর মতো বা তার চেয়ে কম জোর দেওয়া হয় ।

Wednesday, September 3, 2025

অশোকানন্দ রায়বর্ধনের পরিচয়পঞ্জী

আমার সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জী ও সাহিত্যকর্ম
১) নাম : অশোকানন্দ রায়বর্ধন
২) বাবাi ও মার নাম : প্রয়াত মনোরঞ্জন বর্ধন, ঊষারানি বর্ধন
৩) জন্মের তারিখ : ১১ জানুয়ারি, ১৯৫৬

৫) পেশা : অবসরপ্রাপ্ত সরকারি বিদ্যালয় পরিদর্শক
৬) শিক্ষাগত যোগ্যতা : বাংলা
ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ও বিএড 
৭) সংক্ষিপ্ত পরিচয় :
জীবনের প্রথম পাঠ শুরু ডিব্রুগড় শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ প্রতিষ্ঠিত অখণ্ডমণ্ডলেশ্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে । পরবর্তী সময়ে বাবার চাকরির সুবাদে ত্রিপুরার পেচার‌থল, বক্সনগর,কুলাইসহ বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন ধলাই জেলার কুলাই হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে ষষ্ঠ থেকে একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন  ( ১৯৭৩ )। বিলোনিয়া মহাবিদ্যালয় ( অধুনা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাবিদ্যালয় ) থেকে ১৯৭৬ সালে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেছেন । ১০৭৯ সালে সহকারী শিক্ষক হিসাবে সাব্রুম উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয় যোগদান করেন । পরবর্তী সময়ে পদোন্নতি পেয়ে প্রধানশিক্ষক পদে দায়িত্ব পালন করেন জয়কুমার রোয়াজা পাড়া উচ্চ বুনিয়াদি বিদ্যালয় এবং উত্তর দৌলবাড়ি উচ্চ বনিয়াদী বিদ্যালয়ে । ২০১৫ সালে বিদ্যালয়ের পরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতি পান এবং সরাসরি বিদ্যালয় পরিদর্শক পদে যথেষ্ট  নিষ্ঠার সাথে কাজ করে ২০১৬ সালে অবসর গ্রহণ করেন ।


৮ ) সাহিত্যকর্ম : 

সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় বিদ্যালয়ের মুখপত্র 'আন্তর'-এ কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে তাঁর লেখালেখি শুরু । নবম শ্রেণিতে পাঠকালীন বিদ্যাiukলয়ের মুখপত্রের সম্পাদনার দায়িত্ব পান । কবি হিসেবে পরিচিতি শুরু হলেও তিনি রাজ্যের একজন সাহিত্যসমালোচনা ও সমাজবিষয়ক প্রবন্ধরচনাকার । লোকসংস্কৃতি ও আঞ্চলিক ইতিহাসবিষয়ক গবেষণাকর্মে রত ।ইতোমধ্যে তাঁর বহু কবিতা, গল্প ও গবেষণামূলক প্রবন্ধ দেশের ও দেশের বাইরে নানা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে । অনেকগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনারে তিনি তাঁর গবেষণামূলক প্রবন্ধ পাঠ করে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছেন । ইন্টারনেট ব্যবস্থার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ার ফলে ইতোমধ্যে ভারতে ও ভারতের বাইরের বিভিন্ন স্থানের বেশ কয়েকটি  সাহিত্য ও লোকসংস্কৃতি বিষয়ক ওয়েবিনারে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি । এই বয়সেও সংস্কৃতি ও আঞ্চলিক 
ইতিহাস নিয়ে নিরন্তর গবেষণা ও লেখালেখিতে রত আছেন। নিজের গবেষণা সংক্রান্ত কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি না থাকলেও রাজ্যের বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট গবেষকের গবেষণাপত্র রচনা ক্ষেত্রে ক্ষেত্রসমীক্ষা ও অন্যান্য বিষয়ে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তিনি ।সংশ্লিষ্ট গবেষকগণও তাঁদের গবেষণাপত্রে তাঁর সাহচর্য বিষয়ে বেশ যত্ন সহকারে উল্লেখ্য করেছেন । সেই সুবাদে সম্প্রতি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষিকা ইশিতা ভৌমিকের গবেষণাপত্রের সহতত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব ও পালন করেছেন তিনি । 
তিনি নাটক লেখা ও অভিনয়েও দক্ষ ।জীবনে বহু নাটকে অভিনয় করেছেন । নাটক লিখেছেন । নাট্যকর্মশালায় প্রশিক্ষণের দায়িত্ব পালন করেছেন । 'ভাঙন' ও 'রাঙামাটির পথে' নামে ত্রিপুরার দুটি টেলিফিল্মে অভিনয় করে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেন ।
রেছেন ।বর্তমানে তিনি বেশ কয়েকটি সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত রয়েছেন । তিনি ত্রিপুরা ওয়ার্কিং জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের রাজ্য কমিটির উপদেষ্টামন্ডলীরও অন্যতম সদস্য । সামাজিক কাজকর্ম, সাহিত্যসৃষ্টি ও গবেষণাকর্মের মধ্যে ডুবে থেকেই তিনি তাঁর বর্তমান অবসর জীবন অতিবাহিত করছেন ।

৯) প্রকাশিত গ্রন্থের তালিকা :

    ক) ত্রিপুরার লোকসমাজ ও সংস্কৃতি ( প্রবন্ধ ), ভাষা, আগরতলা ২০০২ 
    খ) বিনীত চুম্বন ( কবিতা ),  89স্রোত, কুমারঘাট, ২০০৭ 
     গ) ত্রিপুরার লোকসংস্কৃতির তত্ত্বরূপ সন্ধান ও বিষয়বিন্যাস ও বিষয় বিন্যাস (প্রবন্ধ ), স্রোত, কুমারঘাট ২০১৩ 
      ঘ) ত্রিপুরার মগ জনজাতির ইতিহাস ও সংস্কৃতি ( প্রবন্ধ সম্পাদনা ), স্রোত, কুমারঘাট, ২০১৬
i        চ ) জোছনার হাওরে বলিরেখা ( কবিতা ), ত্রিধারা, ২০২২ 
        ছ )  অন্তরে দহন অনন্ত ( মুক্তগদ্য ), ত্রিধারা, ২০২৩ 
         জ ) কুসুমে কুসুমে রেখে যাওয়া চরণচিহ্ন :99 ত্রিপুরায় রবীন্দ্র পদার্পণের ১২৫ বছর ( প্রবন্ধ ), স্রোত, ২০২৩ 
          ঝ ) ফেনী নদীর প্রত্নকথা ও মানুষের উপখ্যান ( আঞ্চলিক ইতিহাস ), স্রোত, ২০২৩ 
          ঞ ) ত্রিপুরার লোক ধর্ম ও লোকাচার ( প্রবন্ধ ) অন্যপাঠ , ২০২৩

১০)  সম্মান,পুরস্কার ও স্বীকৃতি :

           ক ) অগ্রণী পুরস্কার, বিলোনিয়া, ত্রিপুরা ১৯৭৫
           খ ) সংবাদ সাহিত্য পুরস্কার, আগরতলা, ১৯৯৫ 
            গ ) লোকসংস্কৃতি সম্মাননা, মনুবাজার,২০১৫
             ঘ ) সাহিত্য সম্মান– তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর, ত্রিপুরা সরকার ২০১৭
            ঙ ) সমভূমি সাহিত্য সম্মান, বাইখোরা,  দ. ত্রিপুরা ২০১৭
             চ ) সৃজন সাহিত্য সম্মান, ইসলামপুর, উত্তর দিনাlজপুর, প. বঙ্গ, ২০১৮
             ছ ) স্রোত রজতজয়ন্তী প্রকাশনা উৎসব সম্মাননা, সুকান্ত একাডেমি আগরতলা, ২০১৯ 
             জ ) বনতট সাহিত্য সম্মান, কাঞ্চনপুর, উত্তর ত্রিপুরা ২০২০ 
             ঝ ) দেবদ্বীপ সম্মান, শান্তির বাজার, ২০২২ 
              ঞ ) গবেষক সংবর্ধনা, ত্রিপুরা রবীন্দ্র পরিষদ, উদয়পুর ২০২৩
              চ ) বরিষ্ঠ সাংবাদিক সম্মাননা, ত্রিপুরা ওয়ার্কিং জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন, আগরতলা, ২০২৪
               ছ )ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সম্মাননা, বিশ্ব বাঙালি সংসদ বাংলাদেশ, ঢাকা ২০২৪
               জ) সৃষ্টি সাহিত্য সম্মান ২০২৪, সৃষ্টি সাহিত্য পত্রিকা, নলুয়া বিলোনিয়া ।
               সলিলকৃষ্ণ দেববর্মণ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ( ত্রিপুরা সরকার ) ২০২৪

এছাড়া জাতীয় শিশু বিজ্ঞান কংগ্রেসের 'প্রজেক্ট গাইড' হিসেবে রাষ্ট্রীয় সম্মান ২০০৩ প্রাপক ।