Wednesday, March 11, 2020

জীবনদাত্রী







জাতীয় সড়কে গাড়িঘোড়া এখন আর নিজের ইচ্ছে মতো চলাফেরা করতে পারেনা ৷ নির্দিষ্ট সময় ধরে সিআরপিএফ এর এসকর্ট বেষ্টিত হয়ে চলাফেরা করতে হয় ৷ যখন গাড়িগুলো চলে তখন মনে হয় বিশাল কনভয় চলছে ৷ এভাবেই প্রধান দুটো পাহাড়ই আধা সামরিক বাহিনীর কঠোর অনুশাসনের মধ্যে চলাচল করতে হয় ৷ দিনে দুবার মাত্র এই সুযোগ থাকে গাড়গুলোর এবং  যাত্রীদের ৷

কিন্তু আজ কিছুতেই প্রথম এসকর্টটা ধরতে পারলনা প্রবাল ৷ গতরাতে বাড়িতে অনুষ্ঠান ছিল ৷ ঘুমোতে অনেক দেরি হয়ে গেছে ৷ উঠতে পারেনি সময়মতো ৷ কাজেই জাতীয় সড়কপথে যাওয়ার আশা ছেড়েই দিল ৷ রাধানগর বাসস্ট্যান্ট থেকে গাড়ি ধরল ৷ এপথে এসকর্ট নেই ৷ নিয়মশৃঙ্খলার ঘেরাটোপ নেই ৷ সময়ও কম লাগে ৷ তবে রিস্কি ৷ কিছু করার নেই প্রবালকে আজ অফিস ধরতেই হবে ৷ নতুন একটা প্রজেক্টে ভিজিটার্স আসবে ৷ ইম্প্লিমেন্টিং অফিসার সে ৷ যেতে বাধ্য সে ৷

গাড়িতে যাত্রীদের যথেষ্ট ভিড় ছিল ৷ সিটের প্যাসেঞ্জার ছাড়াও দাঁড়ানো যাত্রী ছিল অনেক ৷ সারাদিনে এরাস্তায় এখন দুটি গাড়ি চলে ৷ মোহনপুরে পৌঁছানোর পর অধিকাংশ যাত্রীরা নেমে যায় ৷ গাড়িটা ফাঁকা ৷ সাকুল্যে আটজন যাত্রী ৷ প্রবালই একমাত্র বাঙালি ৷ আর সবাই উপজাতি অংশের ৷ ড্রাইভার এসিস্টেন্টও ৷ প্রবালের পাশের সিটে জানলার ধার ঘেঁষে বসেছে এক উপজাতীয় তরুণী ৷ কিছুদূর চলার পরই সহযাত্রী দুজনের মধ্যে টুকটাক কথাবার্তা হয় ৷ মেয়েটি বিবাহিত ৷ খোয়াই সুভাষপার্ক বাড়ি ৷ ওখানেই ওর বরের বইয়ের দোকান ৷ ও  নিজে স্কুল টিচার ৷ চম্পাবতী নাম ৷ চম্পাবতী দেববর্মা ৷ বেশ মিশুকে ৷ নিজেই কথাবার্তা বলে গেছে অনর্গল ৷ জেনে নিয়েছে প্রবাল কেন কোথায়  যাচ্ছে ইত্যাদি ৷

গাড়িতে কয়েকজন বলাবলি করছিল গতকাল নাকি সুবলসিংএ গাড়ি থামিয়ে  কয়েকজনকে নামিয়ে নিয়ে গেছে ৷ পরিস্থিতি থমথমে ৷ প্রবালের ধূমপানের অভ্যেস আছে ৷ গাড়িটা চড়াই উঠতে শুরু করার পরই প্রবাল বলে উঠল, স্যরি, আমি একটু পেছনে যাচ্ছি ৷ কিছু মনে করবেননা ৷ আমার একটু বদঅভ্যাস আছে ৷

প্রবা গিয়ে পেছনের লম্বা ফাঁকা সিটটায় জানলার ধারে বসে একটা সিগারেট ধরাল ৷ ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে সে বাইরে তাকিয়ে আঁকা বাঁকা রাস্তাটা দেখছে ৷ দূরের উঁচু পাহাড় দেখছে ৷

ঢালু পথে নামতে নামতে হঠাৎ গাড়িটা জোরে ব্রেক কষল ৷ বেশ কিছু লোক মুহূর্তে গাড়িটা ঘিরে ধরল ৷ ওদের সবার হাতে ধারাল দা, টাক্কাল ৷ কিছু বুঝে ওঠার আগেই চম্পাবতী নিজের সিট ছেড়ে ছুটে ওর কাছে চলে এল একমুহূর্তে ৷
— এই মশাই আপনার সবকিছু জানা হয়ে গেছে ৷ বাঁচতে হলে তাড়াতাড়ি নামটা বলুন ৷
—প্রবাল, প্রবাল মিত্র ৷
—কোথায় থাকেন?
—আগরতলা ৷ জয়নগর ৷ নন্দা অপটিকসের পেছনের বাড়ি ৷
— ঠিক আছে ৷ আপনি কোনো কথা বলবেননা ৷ একদম চুপ থাকবেন ৷
 বলে একদম প্রবালের গা ঘেঁষে বসল ৷
ততক্ষণে বেশ কটা গাট্টাগোট্টা গাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়ল ৷ যাত্রীদের নড়াচড়া করতে নিষেধ করে সোজা পেছনের সিটে গিয়ে প্রবালের সামনে দাঁড়াল ৷
— এ্যাই ৷ কি নাম তর?
—প্রবাল মিত্র ৷ জবাব দেয় চম্পাবতী ৷
— তুমি উত্তর দিছস ক্যারে?
— হ্যা ত আমার স্বামী লাগে ৷
একটা তরল স্রোত বয়ে যায় প্রবালের শরীর বেয়ে ৷
—বারি কই তার ? নক্ বিয়াং?
—আগরতলাঅ ৷
—বিয়াং থানাই? 
—খোয়াইঅ ৷
ওরা আর প্রশ্ন করেনা ৷ নেমে গিয়ে গাড়িটা ছেড়ে দেয় ৷ 

গাড়ি চলতে থাকে ৷ কৃতজ্ঞতায় প্রবাল চম্পাবতীর দুটো হাত মুঠো করে ধরে ৷

No comments:

Post a Comment