Saturday, February 12, 2022

সরস্বতীর স্তনবন্দনা

সরস্বতীর স্তনবন্দনা

জয় জয় দেবী চরাচর সারে
কুচযুগ শোভিত মুক্তাহারে
--শৈশব থেকেই সরস্বতীর প্রণামমন্ত্রে তাঁর অনিন্দ্য স্তনযুগলের বন্দনা পাই ৷প্রথম বয়সে না বুঝে মন্ত্র আওড়ালেও বয়ঃসন্ধির কাল থেকে মন্ত্র উচ্চারণের পাশাপাশি দেবীর পয়োধরযুগলের দিকে অবচেতনে দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় ৷পাশাপাশি প্রথম প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া কিশোরীটির শ্রীঅঙ্গের পরিধিও কল্পনায় চলে আসে ৷ দেবীর এই অঙ্গ বর্ণনার প্রাধান্য প্রাচীন সাহিত্যে যত্র তত্র পাওয়া যায় ৷ ঋগ্বেদে বাক্ কে ধেনুরূপে উপাসনা করার বিধি আছে ৷ গাভীর মতো বাগ্দেবীরও চারটি স্তন কল্পনা করা হয়েছে ৷ স্বাহাকার,স্বধাকার,বষটকার এবং হন্তকার এই চার স্তনের যেটির উপাসনা করা হবে সেরূপ ফল প্রাপ্তি ঘটবে ৷ ঐতরেয় ব্রাহ্মণে সরস্বতীর দুটি স্তন--সত্য ও মিথ্যা ৷ ( বাচো বাব তৌ স্তনৌ সত্যানৃতে) ৷ শুক্ল যজুর্বেদে কবির প্রার্থনা (যস্তে স্তনঃ শশয়ো যো ময়োভুর্য্যো রত্নধা বসুবিদ্যঃ সুদত্রঃ ৷ যেন বিশ্বা পুষ্যসি বার্য্যানি সরস্বতী তামিহ ধাতবে'কঃ) অর্থাৎ তোমার যে স্তন উচ্ছল,যা অনন্দময়, যা দিয়ে পুষ্টকর যতো বরেণ্য সম্পদ, যা নিহিত করে রত্, আর খুঁজে পায় আলো, যা স্বচ্ছন্দে ঢেলে দেয়, হে সরস্বতী ৷ এইখানে তাকে বাড়িয়ে দাও পানের জন্য ৷
ষোড়শ শতাব্দীর ' সারদাতিলকতন্ত্র' গ্রন্থে রঘুনন্দন ভট্টাচার্য দেবীর ধ্যানমন্ত্রে উল্লেখ করেছেন' কুচভরনমিতাঙ্গী' রূপে ৷ এই বর্ণনায়  দেবীর উত্তমাঙ্গ স্তনের ভারে ঈষৎ নত হয়ে পড়েছে ৷ কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ সংকলিত 'তন্ত্রসার' গ্রন্থে সরস্বতী 'তুঙ্গস্তনী', কুচভারক্লান্তা, পীনোত্তুঙ্গবক্ষোরুহ ভরবিলসন্মধ্যদেশামধীশাম', 'প্রপঞ্চসার' গ্রন্থে দেবীকে প্রণাম জানিয়েছেন কবি 'স্তনজঘনভারাং ভারতীং নমামি বলে ৷ শিবপুরাণে সেই দেবীর পরিচয় 'পীনোন্নত পয়োধরাম্' বলে ৷ পরবর্তীকালের কবিদের মধ্যেও এই ধারাটি লক্ষ করা যায় ৷ এর প্রভাব পর্বতগাত্রে খোদিত প্রাচীন মূর্তিশিল্পেও পড়েছিল ৷

No comments:

Post a Comment