Tuesday, October 11, 2022

নিপাট সজ্জনের গল্প

নিপাট সজ্জনের গল্প

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

মহামারীর কালে শান্তিপল্লীর মানুষেরা কত ই না কষ্ট করেছে । দুবেলা খাবার জোটেনি । প্রতিবেশীরাও কাছে আসে না কেউ কারো । অসুখে ঘরে পড়ে মরে যায় । চিকিৎসা হয় না । মৃতের সৎকারের লোক আসে না ।

এই দুঃসময়ে এক নিপাট সজ্জন মানুষ আসে পল্লীতে । তার সঙ্গে আরো কয়েকজন ভদ্র সভ্য মানুষ । সজ্জনের কথাবার্তায়, চলনে বলনে মার্জিত রুচির ছাপ আছে । মুখের ভাষায় যেন মধু ঝরে । এই দুর্দিনে তার কথায় সব দুঃখ ভুলে যেতে হয় ।  মানুষটি কি জাদু জানে ! দুঃখী মানুষগুলোর খোঁজখবর নেয় । পাশে এসে দাঁড়ায় । তার সঙ্গীরাও এগিয়ে আসে । তারা একেক সময় একেক রঙের মোমবাতি নিয়ে আসে । ওদের হাতের নানারঙের মোমবাতি জ্বলে ওঠে আর নানা রঙ ছড়ায় । ওরা অবাক হয়ে চেয়ে থাকে ।

 সেই নিপাট সজ্জন মানুষটি আর তার সঙ্গীরা তাদের সামনে মোমের রঙিন আলো মেলে ধরে । তাদের আলোর গল্প শোনায় । তাদের গাঁয়ের কথা বলে । সে এক স্বপ্নের গাঁ । স্বপনপুর যার নাম । শান্তিপল্লীর অভাবী মানুষদের নিয়ে যেতে চায় সেখানে । সুখ আর সুখ ! তাদের সুখের দেশে পৌঁছে দেবার হাজারো প্রতিশ্রুতি দেয় । তাদের রহস্যময় ভাষায় সম্মোহিত হয় শান্তিপল্লীর মানুষ । 

শহরতলী থেকে উঠে আসা প্রান্তিক মানুষেরা অচিন গন্তব্যের পথে পা বাড়ায় । রঙিন মোমের আলো ঝলমল করে তাদের পথ । গ্রাম ছাড়িয়ে অরণ্যের অভ্যন্তরে আঁকাবাঁকা পথের দু'ধারে অলৌকিক সব ব্যানার সাজানো । স্বপনপুরের তোরণের ছবি তাতে সাঁটা । দুধারে এত সজ্জা । অথচ সারাটা পথ কাঁটা ঝোপে ঘেরা । শ্বাপদ-সরীসৃপস সংকুল ।  সরল মানুষ হাঁটতে থাকে কন্টকময় পথেই । পা থেকে রক্ত ঝরে । গা থেকে ঘাম ঝরে । তবুও সামনে আরো আলো আছে । এই ভেবেই ।

 সেই সজ্জন মানুষটির আরেক দল অনুগামী তাদের পেছন পেছন চলে । তাদের দ্বিচক্রযানের শব্দে বনভূমি কম্পিত হয় । তারা এগিয়ে যাওয়া মানুষগুলোর ফেলে যাওয়া পদচিহ্ন মুছে ফেলে । তাড়িয়ে নিয়ে যায় সেইসব স্বপ্নকাম মানুষদের । আর ক্লান্ত মানুষদের সরিয়ে ফেলে পথ থেকে । চলতে চলতে একসময় এক শূন্যতার সামনে মানুষগুলো এসে দাঁড়ালে সজ্জন মানুষটি গম্ভীর কণ্ঠে বলে, হে গণদেবতাগণ ! আমরা সব প্রতিশ্রুতি পূরণ করে ফেলেছি । সামনে দেখো বিশাল উন্মুক্ত প্রান্তর । খোলা আকাশ । মুক্ত বায়ু । স্বপ্নকাতর পথচলা মানুষের দল গুঞ্জন তোলে, কোথায় স্বপনপুর ! দেখছি নাতো কিছুই ! এ যে মরুভূমি  সামনে ! 

নিপাট সজ্জনের চোখ লাল হয়ে ওঠে । কে বলে এই কথা ? আমাদের একশো শতাংশ কাজ শেষ । এবার মরুভূমিকে নিয়ে প্রকল্প হবে । দূর্বিনীত সব ! 

হে দ্বিচক্রযানারোহীগণ ! চালাও চাবুক ! হিসফিসিয়ে উঠে একশ চাবুক ।গর্জে উঠে একশো দ্বিচক্রযান ।

'ঘুরে দাঁড়াও'...'

 সবাই মুহূর্তে হাজারো কন্ঠে প্রতিধ্বনি করে ঘুরে দাঁড়ায় । শূন‍্যভূমি কেঁপে ওঠে জনগর্জনে ।

No comments:

Post a Comment