Tuesday, October 7, 2025

প্রবাসে দেবীর বশে : ব্যাঙ্গালোরে বাঙালির দুর্গাপুজো ( ৪ )

প্রবাসে দেবীর বশে :  ব্যাঙ্গালোরে বাঙালির দুর্গাপুজো ( ৪ )

সার্জাপুরের এক প্রান্তে ন্যাশনাল পাবলিক স্কুল কূডলুর পাশেই হচ্ছে বর্ষা বেঙ্গলি এসোসিয়েশনের পূজো । অসাধারণ সৌন্দর্যমন্ডিত তাদের এই পুজো মণ্ডপ । বাংলা এবং কর্নাটকের সংস্কৃতির মধ্যে এক আশ্চর্য মেলবন্ধনকে তুলে ধরার প্রয়াস নিয়েছেন তাঁরা । তাঁদের মণ্ডপসজ্জায় তাঁদের এবছরের পূজা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যে ভাবনাটি তুলে ধরেছেন তার নাম দিয়েছেন 'চিত্রাগাণা' । বাংলা এবং কর্ণাটকের দুইটি বিশিষ্ট লোককথাভিত্তিক চিত্রকলার সংমিশ্রণ এখানে ঘটিয়েছেন । তাঁদের মন্ডপের সামনের দিকটাতেই এই থিম এর মাধ্যমে বাংলার ঐতিহ্যবাহী পটচিত্র ছৌ মুখোশ এবং কর্নাটকের 'যক্ষগাণা'  ( Yakshagana ) চিত্রশৈলীর মুখোশের নিদর্শন রেখে দুটি প্রদেশের শিল্পমাধ্যমের মেলবন্ধন ঘটাতে চেয়েছেন উদ্যোক্তারা । পুরো মন্ডপ জুড়ে কর্ণাটকী লোককথা 'যক্ষগাণা' ও বাংলার ছৌ নৃত্যের মুখোশ । মন্ডপের ভেতরেও অসাধারণ সব কাজ ।পুজোর মাধ্যমে কর্নাটকের ও বাংলার ঐতিহ্য, শিল্প ও সংস্কৃতির পুনর্নির্মাণ ঘটিয়েছেন তাঁরা । এই সার্জাপুরের আর একটি পুজো করছেন SORRBA. তাঁরা এই পুজোর মাধ্যমে পঞ্চদুর্গা ও দশেরা  উদযাপন করছেন । প্রতিমাটি খুবই সুন্দর । কাঠখোদাই কাজের ধরনের । চারদিকের প্রাকৃতিক পরিবেশও মনোরম ।

ব্যাঙ্গালোর তথ্যপ্রযুক্তির মহানগর । ইলেকট্রনিক সিটি । কাজেই এখানকার পুজোতে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারিক চমক তো থাকবেই । ইস্ট বেঙ্গালুরু কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন ( EBCA ) এর এবারের পুজোর থিম "প্রযুক্তির আলোয় প্রথাগত পূজা"  । এবছর তাঁরা তাঁদের পুজোয় আলোড়ন সৃষ্টিকারী ভাবনা নিয়ে এসেছেন । এবার তাদের ভাবনা হল ত্রিমাত্রিক নবদুর্গা যা শুধু ভারতবর্ষে নয়, সারা পৃথিবীতেও আর কেউ কখনো উপস্থাপন করেনি বলে উদ্যোক্তারা দাবি করছেন । পূজা মন্ডপে নবদুর্গার নয়টি বিশেষ  প্রতিমার উপরের দিকে একটা করে কিউ আর কোড লাগানো আছে । পূজা মন্ডপে আগত দর্শণার্থীরা এখানে এসে তাদের মোবাইলে নবদুর্গার এই প্রতিকৃতিগুলির স্ক্যান করতে পারছেন এবং এই বিগ্রহ সমূহ তাদের মোবাইলের পর্দায় জীবন্ত দেখতে পারছেন । পরিবেশবান্ধব এই পুজোমণ্ডপ এবং দেবীপ্রতিমা নির্মাণ করেছেন কৃষ্ণনগরের এক শিল্পী কৌশিক দাঁ । ঠিক এমনই উত্তরণ সর্বজন সমন্বয়ের পুজোয় প্রতিমা তৈরি হয়েছে শিল্পী পৃথ্বীরাজ চৌধুরীর এক বিখ্যাত মা দুর্গার পেইন্টিংকে ভিত্তি করে চিত্রকরের 2D চিত্রকে 3D রূপে এখানে তুলে ধরা হচ্ছে প্রথমবার । আর সেই চিত্রকে মাথায় রেখে এবছর তাদের থিম হচ্ছে "কালীঘাটের চিত্রশিল্প"  । গুঞ্জুর লেক-এর উল্টোদিকে এস আর অক্ষতা প্যলেসে ( S R AKSHATA PALACE ) হচ্ছে ব্যাঙ্গালুরু সিলেটি কালচারাল এসোসিয়েশনের পুজো । এখানে  উত্তরপূর্বের শিলচর, করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি, পাথারকান্দি ও ত্রিপুরার ধর্মনগর, খোয়াই, কৈলাশহর ও কমলপুরের অনেকেই এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত আছেন । তাঁরা সবাই কর্মসূত্রে এখানে আছেন । কেউ স্থায়ী আবাস করে নিয়েছেন ।  বয়স্ক মাবাবাকে নিয়ে এসেছেন ।কেউ বছরে এক দুবার বাড়ি যান । এককথায় উত্তরপূর্বের এই বিস্তীর্ণ সিলেটি ভাষাভাষী মানুষ এখানে সম্মিলিত হন পুজোকে কেন্দ্র করে । সিলেটি সংস্কৃতি খুবই সমৃদ্ধ । তারই প্রতিফলন রয়েছে তাদের পুজোয় । তাদের পুজোর ব্যানারে সিলেটি নাগরী লিপির নিদর্শন রেখেছেন । যথাযথ নিয়মে হোম যজ্ঞ সহকারে এখানে তাঁরা পুজোর আয়োজন করেন । সেই সঙ্গে থাকে ঢালাও প্রসাদের ব্যবস্থাও । 
এছাড়া আরো অনেক পুজো সারা ব্যাঙ্গালোর জুড়ে রয়েছে । ভক্তি নিষ্ঠা থিম মিলিয়ে কোনোটাই এড়িয়ে যাবার মতো নয় । কিন্তু সব মন্ডপই  অনেক দূরে দূরে একটা দুটো দেখতে গেলেই দিনের একাংশ চলে যায় ।

No comments:

Post a Comment