Wednesday, October 22, 2025

গাড়ুই ব্রত

 গাড়ুই ব্রত

           গাড়ুই ব্রত লৌকিক ব্রত । এর প্রতি পরতে পরতে লোকজীবনের ছাপ রয়েছে ।ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম ধানের অস্তিত্বের সন্ধান পাওয়া যায় নব্য প্রস্তর যুগে ( ৭০০০-৬০০০ খ্রি.পূ. ) ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে । এরপর সিন্ধু সভ্যতায় (৩০০০-২৫০০ খ্রি. পূ.) ধান চাষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন । এটি একটি গ্রীষ্মকালীন ফসল হিসেবে চাষ করা হত । প্রত্নতাত্ত্বিক ক্ষেত্র সমূহের উপর সর্বশেষ গবেষণায় জানা গেছে যে, সিন্ধুসভ্যতায় ধারণার চেয়েও আগে থেকেই ধান চাষ হত । গবেষণা আরও জানাচ্ছে যে, সিন্ধুসভ্যতার মানুষেরা মিশ্রকৃষির ক্ষেত্রেও অগ্রগণ্য ছিল । তারা গ্রীষ্মকালে ধান, মিলিট ও শিম্ব জাতীয় শস্য উৎপাদন করত এবং শীতকালে গম, বার্লি ও ডাল জাতীয় শস্য উৎপাদন করত ।

প্রাচীন ভারতীয় ধর্মগ্রন্থসমূহে ধানকে 'ব্রীহি' বলা হত । ঋগ্বেদ ও যজুর্বেদসহ বিভিন্ন বৈদিক গ্রন্থে এটিকে একটি প্রধান খাদ্যশস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে । বৈদিক যুগে ধানকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষিপণ্য বিবেচনা করা হত এবং ব্যাপকভাবে চাষ করা হত । বৈদিক ধর্মীয় ভাবাপন্ন হওয়ার আগে কৌম মানুষেরা লৌকিক দেবদেবীর পূজার্চনা করত । সেখানে বৈদিক ব্রাহ্মণের প্রবেশ ঘটেনি । পরবর্তীসময়ে এইসব ব্রাত্য দেবদেবীরা দেবদেবীতে রূপান্তরিত হয়ে গেছেন । বাংলার লোকধর্মীয় পূজাপদ্ধতিতে নৈবেদ্য বা পূজার উপকরণ হিসাবে গৃহস্থের উৎপাদিত ফসলের অংশ বা প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত সহজলভ্য উপকরণগুলোকেই নিবেদন করতে দেখা যায় । এরকম পূজায় বা আচার অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত অনেক বিষয়ের মধ্যেই আমাদের অতিক্রম করে আসা প্রাচীন সভ্যতার কিছু কিছু বিষয় অজান্তেই থেকে যায় । এরকম শিলনোড়ার ব্যবহার প্রস্তরযুগের নিদর্শন, পূজার সামগ্রী কোশাকুশি তাম্রযুগের স্মৃতিবাহক । গাড়ুই ব্রতে জুমের চালের ব্যবহার বাঙালির কৌমজীবনের অধ্যায়ের ক্ষীণ নিদর্শন । বাঙালি যতই জাতের বড়াই করুক । আদিতে তারা কৌম ও সংকর জাতি । বিবর্তনের সেই অধ্যায়টা অজানা বলে আমরা ভাইয়ে ভাইয়ে লড়াই করে মরি । পূজার উপকরণ আমাদের অতীতকে স্মরণ করিয়ে দেয় যাতে আমরা বুঝি ।

No comments:

Post a Comment