অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের কালীপূজা
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে অগ্নিযুগ শব্দটি এসেছে সেই সময়ের বিপ্লবী যুবকদের আত্মোৎসর্গ ও অনলস দেশপ্রেমের জন্য । এটি মূলত ১৯০৫ থেকে ১৯৩০ পর্যন্ত সময়কে নির্দেশ করে । যখন বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পর বাংলার যুবসমাজ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নেয় । এই বিপ্লবীদের মানসিক জগতের গভীরে যে শক্তি কাজ করেছিল তার অন্যতম উৎস ছিল মা কালিকা । সংহার, শক্তি ও মুক্তির চিরন্তন প্রতীক । তিনি রুদ্ররূপে ধ্বংস করেন অন্যায় । আবার মাতৃত্বের রক্ষা করেন সৃষ্টিকে । বিপ্লবীরা এই রূপেই দেখেছিলেন তাঁদের আদর্শ দেবীকে । যিনি অন্যায়ের বিনাশে অনুমোদন দেন, দাসত্বের বন্ধন ছিন্ন করার সাহস যোগান । তাঁরা বিশ্বাস করতেন যেমন কালী অসুর বধ করেন তেমনি পরাধীনতার অশুভ শক্তিকেও বিনাশ করতে প্রেরণা দেন ।
শোনা যায়, অনুশীলন সমিতি, যুগান্তর, এমনকি ছোটো ছোটো যুব বিপ্লবীগোষ্ঠী কালীপূজার রাতেই গোপনে অস্ত্র স্পর্শ করে প্রতিজ্ঞা করতেন । মেদিনীপুর শহরের কর্নেলগোলা কালীমন্দিরেই দীক্ষা নিয়েছিলেন বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু। ধুপের ধোঁয়া, প্রদীপের আলো, ঢাকের শব্দে মিশে যেত শপথের ধ্বনি । সেই পবিত্র অন্ধকারে জেগে উঠত আগুন । যা পরে জ্বালিয়ে দিত সাম্রাজ্যের শেকল ।
আজও যখন অন্যায় দেখি, নিপীড়ন দেখি, দুর্নীতি দেখি, তখন মনে হয় আমাদের দরকার সেই আগুন, সেই সাহস যা একদিন অগ্নিযুগের যুবকদের জাগিয়েছিল মা কালিকার আহ্বানে।
হে চেতনার যোদ্ধাগণ, চলুন আমরা আজও সেই মন্ত্র জাগি–
এলো আঁধার দিন ফুরালো, দীপালিকায় জ্বালাও আলো,
জ্বালাও আলো, আপন আলো, জয় করো এই তামসীরে ।।
No comments:
Post a Comment